ঢাকা ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

‘প্রকৃতির নিয়ম রেখেছিল ঢেকে রাতের কালো, বিধাতার ডাকে বঙ্গবন্ধু এলো’

সোহেল সানী
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৯৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘প্রকৃতির নিয়মগুলো রেখেছিল ঢেকে রাতের কালো, বিধাতার ডাকে নিউটন এলো, সেই সাথে হয়ে গেল আলো।’ উক্তিটি আলেকজান্ডার পোপের। নিউটন সেই বিস্ময়কর প্রতিভাবান, যিনি বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম আবিষ্কার করেন। অনবধানতার অন্ধকার তাড়িয়ে মানুষের উপলব্ধির জগৎকে আলোকিত করে। 

নিউটনতত্ত্ব আবিষ্কৃত হওয়ার আগে একাধিক বিজ্ঞানী প্রকৃতির নিয়ম সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা দিতেন। কিন্তু নিউটন তত্ত্ব রূপবদ্ধ গাণিতিক সূত্র রূপে বিচ্ছিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যাকে একীভূত করে এক সাধারণীকৃত সার্বিক উপলব্ধিতে নিয়ে যায় বিশ্বজগৎকে। যেখানে পৃথিবীর যে কোন ধূলিকণা বা বস্তুখণ্ডের চলাচল আর আকাশের গ্রহদের গতি এক অভিন্ন নিয়মে অন্তর্ভুক্ত।

সব সৃজনশীল কর্মের মধ্যেই অন্তর্নিহিত যে সাদৃশ্য, তার মূলে আছে প্রতিভাবানদের দূরদৃষ্টি, মননশীলতা, স্বজ্ঞা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা। যা আপাতবিচ্ছিন্ন ঘটনামালার মধ্যে সাযুজ্য আবিষ্কার করে, উদ্ভাবন করে কার্যকরণের নিয়ম এবং তার বিশুদ্ধ প্রয়োগে উপনীত হয় দূরলক্ষ্যে।

অনেক স্তর অতিক্রম করতে হয় অসাধারণ বৈশিষ্ট্যে। সৃষ্টিশীলতার পক্ষে প্রথম প্রয়োজন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং দৃষ্টির স্বচ্ছতা ও সততা। অনুভবের মূল্যায়ন এবং কল্পনাশক্তি যা দিয়ে সৃষ্টি করা যায়, রূপান্তর ঘটানো যায় সর্বোপরি উদ্ঘাটন করা যায় ঘটনামালার মধ্যে নতুন সম্পর্ক।

উদ্ভাবন শক্তি, যা উদ্ভাবককে দেয় সম্পূর্ণ অভিনব ও ভিন্ন উপলব্ধি, বিশ্লেষণ শক্তি ও সংকট সমাধানের নতুন দৃষ্টি। সবশেষে প্রয়োজন বিচার ক্ষমতা। কখন কীভাবে, কী পরিমাণে তার যোগ্যতা, দক্ষতা ও শক্তি প্রয়োগ করতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সমন্বিতভাবে। এ গুণগুলো যখন দক্ষতমভাবে সমন্বিত হয় তখনই সৃষ্টি হয় প্রতিভা। প্রথিতযশা দার্শনিকের ভাষায় বলব, সৃজনশীল কাজের প্রতিটি ধাপ যেহেতু অভিনব ও সম্ভাবনার অনিশ্চিত পথ ধরে অগ্রসর হয়, একমাত্র সাফল্যই সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাপকাঠি।

অভিব্যক্তি প্রবহমান কালের মধ্যে, যা উন্মুক্ত, অপ্রত্যয়বর্তী ও সজীব। সৃজনশীলতাকে ধারণ করা যায় না একটি বদ্ধ ও পরিচিত সীমানার মধ্যে। সময়ের তীর সম্মুখদিকে ধাবমান। ঐতিহাসিক ঘটনাকে প্রত্যক্ষ ও বিশ্লেষণ করে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। কিন্তু যিনি ইতিহাসের নায়ক, ঘটনায় রূপকার, তাকে ঘটনার সম্ভাবনাকে উপলব্ধি ও অনুভব করতে হয় ঘটনা ঘটার আগে, অনিশ্চিত পথে।

স্বজ্ঞা ও কল্পনাশক্তি তাই প্রতিভাবান নেতৃত্বকে স্বপ্নদ্রষ্টা করে, সাধারণ্যে যা দুর্লভ। স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বের প্রতিভা উপলব্ধি করতে হলে সহজ পথ হলো, স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিযাত্রায় নেতার সামগ্রিক আয়োজন ও পরিচালনার সাফল্যের দিকে চোখ রাখা। বঙ্গবন্ধু তার দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রপঞ্চ ঘটনাকে যারা বিকৃতভাষ্যে উপস্থাপনের প্রয়াসী তারা অনর্থক নিজেদের বঞ্চিত করে। অথচ এদের জন্য মঙ্গল হতে পারে, যদি সহজ দৃষ্টিতে স্বাধীনতার উজ্জ্বল প্রতিভাসকে শুধু অবলোকন বা উপভোগ করে স্বাধীনতার সুফলগুলো-যেমনটি স্বদেশের বৃক্ষ ও প্রাণীরাও উপভোগ করে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে বিচ্ছিন্নভাবে বহু আন্দোলন হয়েছে। বিদ্রোহ হয়েছে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু বাঙালি জাতির শোষণ বঞ্চনা পশ্চাদপদতা ও পরাভব থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ যে স্বাধীনতা অর্জন এই উপলব্ধি ও তা অর্জনের জন্য জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করা এ মহৎ কর্মটি বঙ্গবন্ধু সম্পাদন করেন। এর শৈল্পিক ও সৃজনশীল, যার অপার মূল্য ও গুরুত্ব পরিমাপ্য শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের সাফল্যে। সৃজনশীল মনই বিচিত্র সব রঙের বিন্দু ও রেখাকে সমন্বিত করে অর্থপূর্ণ দৃশ্যে। লাখো প্রাণের মূল্যে, নিযুত মুক্তিযোদ্ধার আত্মোৎসর্গে, স্বাধীনতাকামী মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বহুমাত্রিক এক প্রতিভাস। দেশপ্রেমের আলোকিত আভা ও আত্মপ্রত্যয়ের উজ্জ্বল শিখা ও প্রতিরোধ- বিজয় অর্জনের উত্তপ্ত মশাল যিনি বাঙালি জাতির মনে প্রজ্বলিত করেন, তিনি শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির মনে যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আছে তাদের উদ্দীপিত ও উদ্ভাসিক করা যে সম্ভব এ সত্য তিনি উদ্ঘাটন করেন। স্বপ্ন দেখেও যা পারেননি শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। বাঙালির আত্মমর্যাদাবোধের আগুন প্রজ্বলিত করে মনের উত্তাপ ও উজ্জ্বলতায় শেখ মুজিব তা আবিষ্কার করেন। তিনি কতটা অপরিহার্য ছিলেন তার প্রমাণ-যখন দেখি, কত স্তিমিত ও অনুজ্জ্বল বাঙালি চেতনা সহস্র বছর ধরে। কী আশ্চর্য অন্ধকারে অসাধারণ উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপী মূলনীতিগুলো হারিয়ে যায় একটি মানুষের হত্যায়। আকাশের কোনো নক্ষত্রই কি এত উজ্জ্বল, যা নিভে গেলে আকাশসুদ্ধ অন্ধকার হয়ে যায়? বাঙালি তার ভাষা, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে অর্জিত জাতীয় চেতনায়, সেই মানুষগুলো তার প্রকৃত পরিচয় হারিয়ে রাতারাতি বাংলাদেশি হয়ে যায়, যেমনটি ঘটে ব্যবহৃত সামগ্রী যেমন আসবাবপত্র, কাপড়চোপড়, জুতার বেলায়। শব্দ পরিবর্তন কোনো নিরীহ ব্যাকরণের ব্যাপার নয়। প্রতিটি শব্দের অর্থ অর্জন করে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে, এক সজীব মিথস্ক্রিয়ায়। ভারী পরমাণুগুলো যেমন সৃষ্টি হয় অতিকায় নক্ষত্রের প্রচণ্ড উত্তপ্ত গহ্বরে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও তীব্র সব উপলব্ধি আবহে তেমনি সৃষ্টি হয়েছে নতুন কিছু শব্দ। বিমূর্ত শব্দের উপরে এ আগ্রাসন কাকতালীয় ঘটনা নয়, গভীর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার।

২০ বছর ধরে গবেষণা করে নিউটন আলোক বিষয়ে বিশাল একটি পান্ডুলিপি রচনা করেন। একদিন সন্ধ্যায় তার পোষা কুকুরটিকে ঘরে রেখে বাইরে হাঁটতে বের হন নিউটন। সুযোগে তার কুকুরটি জ্বলন্ত মোমবাতি ফেলে দিয়ে পান্ডুলিপিটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিউটন এসে দেখেন তার পান্ডুলিপি দাউ দাউ করে জ্বলছে। কুকুরটি আনন্দে নাচছে, সেই জ্বলন্ত শিখার চার পাশে। নিউটন মর্মান্তিক এ দৃশ্য দেখে বলেন, এত কষ্টের, দীর্ঘ সাধনার ফসল যে পুড়ে যাচ্ছে সেটাই আমার সবচেয়ে বড় দুঃখের নয়, এর চেয়েও বড় বেদনার হলো- কুকুর আনন্দে নাচছে অথচ বুঝতে পারছে না ও কী করেছে?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মানবরূপী নরপশুরাও কি বুঝতে পেরেছিল, কী করেছে ওরা?

[ লেখক : সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। ]

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

নিউজটি শেয়ার করুন

‘প্রকৃতির নিয়ম রেখেছিল ঢেকে রাতের কালো, বিধাতার ডাকে বঙ্গবন্ধু এলো’

আপডেট সময় : ০৫:৩৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

‘প্রকৃতির নিয়মগুলো রেখেছিল ঢেকে রাতের কালো, বিধাতার ডাকে নিউটন এলো, সেই সাথে হয়ে গেল আলো।’ উক্তিটি আলেকজান্ডার পোপের। নিউটন সেই বিস্ময়কর প্রতিভাবান, যিনি বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম আবিষ্কার করেন। অনবধানতার অন্ধকার তাড়িয়ে মানুষের উপলব্ধির জগৎকে আলোকিত করে। 

নিউটনতত্ত্ব আবিষ্কৃত হওয়ার আগে একাধিক বিজ্ঞানী প্রকৃতির নিয়ম সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা দিতেন। কিন্তু নিউটন তত্ত্ব রূপবদ্ধ গাণিতিক সূত্র রূপে বিচ্ছিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যাকে একীভূত করে এক সাধারণীকৃত সার্বিক উপলব্ধিতে নিয়ে যায় বিশ্বজগৎকে। যেখানে পৃথিবীর যে কোন ধূলিকণা বা বস্তুখণ্ডের চলাচল আর আকাশের গ্রহদের গতি এক অভিন্ন নিয়মে অন্তর্ভুক্ত।

সব সৃজনশীল কর্মের মধ্যেই অন্তর্নিহিত যে সাদৃশ্য, তার মূলে আছে প্রতিভাবানদের দূরদৃষ্টি, মননশীলতা, স্বজ্ঞা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা। যা আপাতবিচ্ছিন্ন ঘটনামালার মধ্যে সাযুজ্য আবিষ্কার করে, উদ্ভাবন করে কার্যকরণের নিয়ম এবং তার বিশুদ্ধ প্রয়োগে উপনীত হয় দূরলক্ষ্যে।

অনেক স্তর অতিক্রম করতে হয় অসাধারণ বৈশিষ্ট্যে। সৃষ্টিশীলতার পক্ষে প্রথম প্রয়োজন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং দৃষ্টির স্বচ্ছতা ও সততা। অনুভবের মূল্যায়ন এবং কল্পনাশক্তি যা দিয়ে সৃষ্টি করা যায়, রূপান্তর ঘটানো যায় সর্বোপরি উদ্ঘাটন করা যায় ঘটনামালার মধ্যে নতুন সম্পর্ক।

উদ্ভাবন শক্তি, যা উদ্ভাবককে দেয় সম্পূর্ণ অভিনব ও ভিন্ন উপলব্ধি, বিশ্লেষণ শক্তি ও সংকট সমাধানের নতুন দৃষ্টি। সবশেষে প্রয়োজন বিচার ক্ষমতা। কখন কীভাবে, কী পরিমাণে তার যোগ্যতা, দক্ষতা ও শক্তি প্রয়োগ করতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সমন্বিতভাবে। এ গুণগুলো যখন দক্ষতমভাবে সমন্বিত হয় তখনই সৃষ্টি হয় প্রতিভা। প্রথিতযশা দার্শনিকের ভাষায় বলব, সৃজনশীল কাজের প্রতিটি ধাপ যেহেতু অভিনব ও সম্ভাবনার অনিশ্চিত পথ ধরে অগ্রসর হয়, একমাত্র সাফল্যই সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাপকাঠি।

অভিব্যক্তি প্রবহমান কালের মধ্যে, যা উন্মুক্ত, অপ্রত্যয়বর্তী ও সজীব। সৃজনশীলতাকে ধারণ করা যায় না একটি বদ্ধ ও পরিচিত সীমানার মধ্যে। সময়ের তীর সম্মুখদিকে ধাবমান। ঐতিহাসিক ঘটনাকে প্রত্যক্ষ ও বিশ্লেষণ করে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। কিন্তু যিনি ইতিহাসের নায়ক, ঘটনায় রূপকার, তাকে ঘটনার সম্ভাবনাকে উপলব্ধি ও অনুভব করতে হয় ঘটনা ঘটার আগে, অনিশ্চিত পথে।

স্বজ্ঞা ও কল্পনাশক্তি তাই প্রতিভাবান নেতৃত্বকে স্বপ্নদ্রষ্টা করে, সাধারণ্যে যা দুর্লভ। স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বের প্রতিভা উপলব্ধি করতে হলে সহজ পথ হলো, স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিযাত্রায় নেতার সামগ্রিক আয়োজন ও পরিচালনার সাফল্যের দিকে চোখ রাখা। বঙ্গবন্ধু তার দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রপঞ্চ ঘটনাকে যারা বিকৃতভাষ্যে উপস্থাপনের প্রয়াসী তারা অনর্থক নিজেদের বঞ্চিত করে। অথচ এদের জন্য মঙ্গল হতে পারে, যদি সহজ দৃষ্টিতে স্বাধীনতার উজ্জ্বল প্রতিভাসকে শুধু অবলোকন বা উপভোগ করে স্বাধীনতার সুফলগুলো-যেমনটি স্বদেশের বৃক্ষ ও প্রাণীরাও উপভোগ করে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে বিচ্ছিন্নভাবে বহু আন্দোলন হয়েছে। বিদ্রোহ হয়েছে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু বাঙালি জাতির শোষণ বঞ্চনা পশ্চাদপদতা ও পরাভব থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ যে স্বাধীনতা অর্জন এই উপলব্ধি ও তা অর্জনের জন্য জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করা এ মহৎ কর্মটি বঙ্গবন্ধু সম্পাদন করেন। এর শৈল্পিক ও সৃজনশীল, যার অপার মূল্য ও গুরুত্ব পরিমাপ্য শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের সাফল্যে। সৃজনশীল মনই বিচিত্র সব রঙের বিন্দু ও রেখাকে সমন্বিত করে অর্থপূর্ণ দৃশ্যে। লাখো প্রাণের মূল্যে, নিযুত মুক্তিযোদ্ধার আত্মোৎসর্গে, স্বাধীনতাকামী মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বহুমাত্রিক এক প্রতিভাস। দেশপ্রেমের আলোকিত আভা ও আত্মপ্রত্যয়ের উজ্জ্বল শিখা ও প্রতিরোধ- বিজয় অর্জনের উত্তপ্ত মশাল যিনি বাঙালি জাতির মনে প্রজ্বলিত করেন, তিনি শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির মনে যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আছে তাদের উদ্দীপিত ও উদ্ভাসিক করা যে সম্ভব এ সত্য তিনি উদ্ঘাটন করেন। স্বপ্ন দেখেও যা পারেননি শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী। বাঙালির আত্মমর্যাদাবোধের আগুন প্রজ্বলিত করে মনের উত্তাপ ও উজ্জ্বলতায় শেখ মুজিব তা আবিষ্কার করেন। তিনি কতটা অপরিহার্য ছিলেন তার প্রমাণ-যখন দেখি, কত স্তিমিত ও অনুজ্জ্বল বাঙালি চেতনা সহস্র বছর ধরে। কী আশ্চর্য অন্ধকারে অসাধারণ উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপী মূলনীতিগুলো হারিয়ে যায় একটি মানুষের হত্যায়। আকাশের কোনো নক্ষত্রই কি এত উজ্জ্বল, যা নিভে গেলে আকাশসুদ্ধ অন্ধকার হয়ে যায়? বাঙালি তার ভাষা, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে অর্জিত জাতীয় চেতনায়, সেই মানুষগুলো তার প্রকৃত পরিচয় হারিয়ে রাতারাতি বাংলাদেশি হয়ে যায়, যেমনটি ঘটে ব্যবহৃত সামগ্রী যেমন আসবাবপত্র, কাপড়চোপড়, জুতার বেলায়। শব্দ পরিবর্তন কোনো নিরীহ ব্যাকরণের ব্যাপার নয়। প্রতিটি শব্দের অর্থ অর্জন করে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে, এক সজীব মিথস্ক্রিয়ায়। ভারী পরমাণুগুলো যেমন সৃষ্টি হয় অতিকায় নক্ষত্রের প্রচণ্ড উত্তপ্ত গহ্বরে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও তীব্র সব উপলব্ধি আবহে তেমনি সৃষ্টি হয়েছে নতুন কিছু শব্দ। বিমূর্ত শব্দের উপরে এ আগ্রাসন কাকতালীয় ঘটনা নয়, গভীর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার।

২০ বছর ধরে গবেষণা করে নিউটন আলোক বিষয়ে বিশাল একটি পান্ডুলিপি রচনা করেন। একদিন সন্ধ্যায় তার পোষা কুকুরটিকে ঘরে রেখে বাইরে হাঁটতে বের হন নিউটন। সুযোগে তার কুকুরটি জ্বলন্ত মোমবাতি ফেলে দিয়ে পান্ডুলিপিটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিউটন এসে দেখেন তার পান্ডুলিপি দাউ দাউ করে জ্বলছে। কুকুরটি আনন্দে নাচছে, সেই জ্বলন্ত শিখার চার পাশে। নিউটন মর্মান্তিক এ দৃশ্য দেখে বলেন, এত কষ্টের, দীর্ঘ সাধনার ফসল যে পুড়ে যাচ্ছে সেটাই আমার সবচেয়ে বড় দুঃখের নয়, এর চেয়েও বড় বেদনার হলো- কুকুর আনন্দে নাচছে অথচ বুঝতে পারছে না ও কী করেছে?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মানবরূপী নরপশুরাও কি বুঝতে পেরেছিল, কী করেছে ওরা?

[ লেখক : সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। ]

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)