ঢাকা ০২:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শাহজাদপুরে সালিস বৈঠকে পিটিয়ে মারা হলো নানাকে : আহত ১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৭:৪১:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৯৮৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা অধ্যুষিত দুর্গম চরাঞ্চল সোনাতনী ইউনিয়নের বড় চানতারা গ্রামে সালিশ-বৈঠক চলাকালে দুপক্ষের কথাকাটাকাটির জের ধরে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকিরের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের লোকজন চান মোল্লা (৭৫) নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

হামলা ও মারপিটে চান মোল্লা গ্রুপের আরও ১৫ জন আহত হয়। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে সোনাতনী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জিন্নাহ ফকিরের বড় চানতারার বাড়িতে সালিশ-বৈঠক চলাকালে এঘটনা ঘটে।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০), মেয়ে সালমা খাতুন (৪৫), আয়শা খাতুন (২০), সুলতানা খাতুন (৩০) ও শ্যালক ইউসুফ মোল্লা অভিযোগে জানান, বড় চানতারা গ্রামের লিয়াকত ফকিরের ছেলে সোলায়মান ফকিরের (৩৫) সাথে ৯ বছর আগে সুলতানা খাতুনের বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ (০৬) ও আব্দুল কাদের (০৩) নামে দুটি ছেলে রেখে আরও দুটি বিয়ে করে ছোট বউকে নিয়ে ঢাকায় থাকে সোলায়মান ফকির। বড় বউ সুলতানাকে কোনো ভরনপোষণ দেয় না।

এ বিষয়ে কথা বললে সুলতানাকে মারধর ও নির্যাতন করে। এ ছাড়া বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে দিতে মারপিট করে। দিন দিন তার অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় সুলতানা ৭ মাস আগে বাবার বাড়ি এসে আশ্রয় নেয়। ঈদের ১০/১২ দিন আগে সোলায়মান শ্বশুরবাড়ি এসে স্ত্রী-সন্তানদের জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সুলতানা আপস-মীমাংসা ছাড়া এভাবে যেতে রাজি না হওয়ায় সোলায়মান তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। তারা আরও জানায়, এর মধ্যে সুলতানার ভাই সেনাবাহিনীর সৈনিক আব্দুল মজিদ, ভাতিজা সেনাবাহিনীর সৈনিক মিলন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসায় সন্তান ফেরত ও বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুপক্ষের সম্মতিতে সুলতানার স্বামী সোলায়মানের চাচা সোনাতনী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জিন্নাহ ফকিরের বাড়িতে ওই দিন সকাল ১০টার দিকে সালিশ-বৈঠক বসে।

সালিশের শেষের দিকে সুলতানার ভাতিজা সেনাবাহিনীর সৈনিক মিলন মোল্লা সালিশ- বৈঠকের সিদ্ধান্তের রায়ের লিখিত চাইলে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ক্ষুব্ধ হয়ে মিলনের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে জিন্নাহর ছেলে, ভাই, ভাতিজা ও লোকজন তাদের পক্ষের ১০/১৫ জনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এ সময় বৃদ্ধ চান মোল্লা হামলাকারীদের ঠেকাতে গেলে তারা তাকেও লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে বৃদ্ধ চান মোল্লা ঘটনাস্থল ইউপি সদস্য জিন্নাহর বাড়ির উঠনে ঢলে পড়ে মারা যান। জানা যায়, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ৫ লাখ টাকায় মীমাংসার চেষ্টা করে।

এতে নিহতের স্বজনেরা রাজি না হওয়ায় তারা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ রাত ১০টায় ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়। ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকির ফোনে জানান, শালিস-বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসিত হওয়ার পরেও সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানাব। ফোনে এত কথা বলা যাবে না। শাহজাদপুর থানার ওসি খায়রুল বাসার বলেন, এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে নিহতের বড় ছেলে লালন মোল্লা বাদী হয়ে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকিরকে প্রধান আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

এ ছাড়া নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আসামিরা সব বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক থাকায় এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আশা করি অচিরেই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

 

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

শাহজাদপুরে সালিস বৈঠকে পিটিয়ে মারা হলো নানাকে : আহত ১৫

আপডেট সময় : ০৭:৪১:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা অধ্যুষিত দুর্গম চরাঞ্চল সোনাতনী ইউনিয়নের বড় চানতারা গ্রামে সালিশ-বৈঠক চলাকালে দুপক্ষের কথাকাটাকাটির জের ধরে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকিরের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের লোকজন চান মোল্লা (৭৫) নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

হামলা ও মারপিটে চান মোল্লা গ্রুপের আরও ১৫ জন আহত হয়। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে সোনাতনী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জিন্নাহ ফকিরের বড় চানতারার বাড়িতে সালিশ-বৈঠক চলাকালে এঘটনা ঘটে।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০), মেয়ে সালমা খাতুন (৪৫), আয়শা খাতুন (২০), সুলতানা খাতুন (৩০) ও শ্যালক ইউসুফ মোল্লা অভিযোগে জানান, বড় চানতারা গ্রামের লিয়াকত ফকিরের ছেলে সোলায়মান ফকিরের (৩৫) সাথে ৯ বছর আগে সুলতানা খাতুনের বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ (০৬) ও আব্দুল কাদের (০৩) নামে দুটি ছেলে রেখে আরও দুটি বিয়ে করে ছোট বউকে নিয়ে ঢাকায় থাকে সোলায়মান ফকির। বড় বউ সুলতানাকে কোনো ভরনপোষণ দেয় না।

এ বিষয়ে কথা বললে সুলতানাকে মারধর ও নির্যাতন করে। এ ছাড়া বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে দিতে মারপিট করে। দিন দিন তার অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় সুলতানা ৭ মাস আগে বাবার বাড়ি এসে আশ্রয় নেয়। ঈদের ১০/১২ দিন আগে সোলায়মান শ্বশুরবাড়ি এসে স্ত্রী-সন্তানদের জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সুলতানা আপস-মীমাংসা ছাড়া এভাবে যেতে রাজি না হওয়ায় সোলায়মান তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। তারা আরও জানায়, এর মধ্যে সুলতানার ভাই সেনাবাহিনীর সৈনিক আব্দুল মজিদ, ভাতিজা সেনাবাহিনীর সৈনিক মিলন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসায় সন্তান ফেরত ও বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুপক্ষের সম্মতিতে সুলতানার স্বামী সোলায়মানের চাচা সোনাতনী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জিন্নাহ ফকিরের বাড়িতে ওই দিন সকাল ১০টার দিকে সালিশ-বৈঠক বসে।

সালিশের শেষের দিকে সুলতানার ভাতিজা সেনাবাহিনীর সৈনিক মিলন মোল্লা সালিশ- বৈঠকের সিদ্ধান্তের রায়ের লিখিত চাইলে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ক্ষুব্ধ হয়ে মিলনের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে জিন্নাহর ছেলে, ভাই, ভাতিজা ও লোকজন তাদের পক্ষের ১০/১৫ জনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এ সময় বৃদ্ধ চান মোল্লা হামলাকারীদের ঠেকাতে গেলে তারা তাকেও লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে বৃদ্ধ চান মোল্লা ঘটনাস্থল ইউপি সদস্য জিন্নাহর বাড়ির উঠনে ঢলে পড়ে মারা যান। জানা যায়, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ৫ লাখ টাকায় মীমাংসার চেষ্টা করে।

এতে নিহতের স্বজনেরা রাজি না হওয়ায় তারা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ রাত ১০টায় ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়। ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকির ফোনে জানান, শালিস-বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসিত হওয়ার পরেও সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানাব। ফোনে এত কথা বলা যাবে না। শাহজাদপুর থানার ওসি খায়রুল বাসার বলেন, এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে নিহতের বড় ছেলে লালন মোল্লা বাদী হয়ে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকিরকে প্রধান আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

এ ছাড়া নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আসামিরা সব বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক থাকায় এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আশা করি অচিরেই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

 

বাখ//আর