ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পটুয়াখালী শহরের মিঠা পুকুরে পানি না থাকায় রক্ষা করা গেল না প্রায় অর্ধশত ঘড়বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • / ৪৪০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// জাকির হোসেন, পটুয়াখালী //

১৯ শতকের দিকে পটুয়াখালী মিউনিসিপ্যালিটিতে বসবাসকারী জনসাধারানকে লবনাক্ত পানির হাত থেকে রক্ষা করে সুপেয় পানির জন্য শহরে দুটি পুকুর খনন করা হয়। যার একটি তৎকালীন মিউনিসিপ্যালিটির সীমিত সিমানার মধ্যে জনবসতী পূর্ন পুরাতন বাজার এলাকার নবাবপাড়া সংলগ্ন এলাকায় খনন করা হয়।
খননের পরে মিষ্টি পানি উঠায় পুকুরটির নাম করা হয় মিঠাপুকুর এবং সেই থেকেই ওই এলাকাটি মিঠাপুকুর পাড় নাম পরিচিত হয় সবার কাছে। পরবর্তীতে পটুয়াখালী মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ মিঠাপুকুর পাড়ে আফসার নামে একজন গার্ডকে নিয়োজিত করেন যাতে মানুষ এখানে গোছল করতে না পারে । আফসারের আরেকটি কাজ ছিল সেই সময় কলেরা সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ধরা পড়ায় ওই পুকুর পাড়ে থেকে কলসে করে যারা খাবার পানি নিয়ে যেত, সেই কলসে মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃক সরবরাহকৃত সামান্য পরিমান ব্লিচিং পাউডার কলসে দিয়ে দেয়া। কথা গুলি বলছিলেন ৭০ উর্ধ্ব এ এলাকার প্রবীন ব্যাক্তিক্ত পটুয়াখালী মিউনিসিপ্যালিটির ৬০ এর দশকের ভাইস চেয়ারম্যান এ,কে মুজিবুর রহমানের পুত্র সন্তান পটুয়াখালী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক গ্রন্থগারীক বিশিষ্ট ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ,কে এমডি আতিকুর রহমান ফিরোজ ।

৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটির দিকে পটুয়াখালী শহরের পুরানবাজার মিঠাপুকুর সংলগ্ন অগ্রণী ব্যাকেংর সামনে হারুন মুন্সীর দোকানের পিছন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় । হারুন মুন্সীর পাইকারী দোকানটি ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে জ্বালানী তেল কেরোসিন, বিক্রি মজুদ থাকায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে । খবর পেয়ে প্রায় আধা ঘন্টা পরে পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে কাজ শুরু করলেও মুহূর্তের মধ্যে তাদের পানির রিজার্ভ শেষ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে তার নিকটবর্তী মিঠাপুকুরে রিজার্ভ পানির উৎসে পাইপ লাগানোর উদ্যোগ নিলে দেখতে পান পুকুরের তলদেশে কিছু পানি রয়েছে। পানির অভাবে মহূর্তের মধে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকলে তারা দ্রুত পটুয়াখালী জেলার সবকয়টি উপজেলা ওপাশ্ববর্তী বরগুনা জেলা আমতলী, বেতাগী ও বরিশালের বাখেরগঞ্জ ফায়ার স্টেশনকে খবর দিলে তার চলে আসেন। স্থানীয় জনসাধারন ,পুলিশ, আনসার ব্যাটেলিয়নসহ সকলের প্রচেষ্টায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে আড়াইঘন্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়।

এদিকে পটুয়াখালীবাসীসহ অগ্নিনির্বাপন কাজে নিয়োজিত আইন শৃংঙ্খলাকারী বাহিনীর সকলের অভিমত সবসময় পানিতে ভরপুর থাকা মিঠাপুকুরের পানি গত কয়েকদিন পর্যন্ত উন্নয়নকাজের জন্য সেঁচ করে উঠিয়ে ফেলে পানির কিছুটা তলানী রাখা হয়, মিঠাপুকুরের পানি থাকলে আগুন আধাঘন্টার মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস এসে নিভিয়ে ফেলতে পারতো। যার ফলে ক্ষতিটা অনেক কম হতো, ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের রিজার্ভ পানি ট্যাকিং দিয়ে কাজ শুরু করলেও মুহূর্তের মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে তারা মিঠাপুকুরে পাইপ লাগায় কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই কাদা পানি চলে অসায় পরবর্তীতে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের লোহালিয়া নদী থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে বিলম্ব হয়।

এদিকে আজ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন এ অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্যঅতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যাদব সরকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আগামি ৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটি স্থানীয় টাউন উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরিসহ তাদের বক্তব্য শুনেন।

কমিটির সদস্য জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে ১৪ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ২৮ টি ঘর-বাড়ি সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মর্মে তালিকায় নাম পেয়েছি। তালিকায় ক্ষতিগ্রস্থদের সংখ্য আরও বাড়তে পারে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির ধারণা করছি। তবে অগ্নিকান্ডের কারন ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমান নিরুপনে আরও সময় লাগবে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ শরীফুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির পর তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

পটুয়াখালী শহরের মিঠা পুকুরে পানি না থাকায় রক্ষা করা গেল না প্রায় অর্ধশত ঘড়বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

আপডেট সময় : ০৮:১৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

// জাকির হোসেন, পটুয়াখালী //

১৯ শতকের দিকে পটুয়াখালী মিউনিসিপ্যালিটিতে বসবাসকারী জনসাধারানকে লবনাক্ত পানির হাত থেকে রক্ষা করে সুপেয় পানির জন্য শহরে দুটি পুকুর খনন করা হয়। যার একটি তৎকালীন মিউনিসিপ্যালিটির সীমিত সিমানার মধ্যে জনবসতী পূর্ন পুরাতন বাজার এলাকার নবাবপাড়া সংলগ্ন এলাকায় খনন করা হয়।
খননের পরে মিষ্টি পানি উঠায় পুকুরটির নাম করা হয় মিঠাপুকুর এবং সেই থেকেই ওই এলাকাটি মিঠাপুকুর পাড় নাম পরিচিত হয় সবার কাছে। পরবর্তীতে পটুয়াখালী মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ মিঠাপুকুর পাড়ে আফসার নামে একজন গার্ডকে নিয়োজিত করেন যাতে মানুষ এখানে গোছল করতে না পারে । আফসারের আরেকটি কাজ ছিল সেই সময় কলেরা সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ধরা পড়ায় ওই পুকুর পাড়ে থেকে কলসে করে যারা খাবার পানি নিয়ে যেত, সেই কলসে মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃক সরবরাহকৃত সামান্য পরিমান ব্লিচিং পাউডার কলসে দিয়ে দেয়া। কথা গুলি বলছিলেন ৭০ উর্ধ্ব এ এলাকার প্রবীন ব্যাক্তিক্ত পটুয়াখালী মিউনিসিপ্যালিটির ৬০ এর দশকের ভাইস চেয়ারম্যান এ,কে মুজিবুর রহমানের পুত্র সন্তান পটুয়াখালী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক গ্রন্থগারীক বিশিষ্ট ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ,কে এমডি আতিকুর রহমান ফিরোজ ।

৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটির দিকে পটুয়াখালী শহরের পুরানবাজার মিঠাপুকুর সংলগ্ন অগ্রণী ব্যাকেংর সামনে হারুন মুন্সীর দোকানের পিছন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় । হারুন মুন্সীর পাইকারী দোকানটি ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে জ্বালানী তেল কেরোসিন, বিক্রি মজুদ থাকায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে । খবর পেয়ে প্রায় আধা ঘন্টা পরে পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে কাজ শুরু করলেও মুহূর্তের মধ্যে তাদের পানির রিজার্ভ শেষ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে তার নিকটবর্তী মিঠাপুকুরে রিজার্ভ পানির উৎসে পাইপ লাগানোর উদ্যোগ নিলে দেখতে পান পুকুরের তলদেশে কিছু পানি রয়েছে। পানির অভাবে মহূর্তের মধে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকলে তারা দ্রুত পটুয়াখালী জেলার সবকয়টি উপজেলা ওপাশ্ববর্তী বরগুনা জেলা আমতলী, বেতাগী ও বরিশালের বাখেরগঞ্জ ফায়ার স্টেশনকে খবর দিলে তার চলে আসেন। স্থানীয় জনসাধারন ,পুলিশ, আনসার ব্যাটেলিয়নসহ সকলের প্রচেষ্টায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে আড়াইঘন্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়।

এদিকে পটুয়াখালীবাসীসহ অগ্নিনির্বাপন কাজে নিয়োজিত আইন শৃংঙ্খলাকারী বাহিনীর সকলের অভিমত সবসময় পানিতে ভরপুর থাকা মিঠাপুকুরের পানি গত কয়েকদিন পর্যন্ত উন্নয়নকাজের জন্য সেঁচ করে উঠিয়ে ফেলে পানির কিছুটা তলানী রাখা হয়, মিঠাপুকুরের পানি থাকলে আগুন আধাঘন্টার মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস এসে নিভিয়ে ফেলতে পারতো। যার ফলে ক্ষতিটা অনেক কম হতো, ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের রিজার্ভ পানি ট্যাকিং দিয়ে কাজ শুরু করলেও মুহূর্তের মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে তারা মিঠাপুকুরে পাইপ লাগায় কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই কাদা পানি চলে অসায় পরবর্তীতে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের লোহালিয়া নদী থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে বিলম্ব হয়।

এদিকে আজ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন এ অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্যঅতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যাদব সরকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আগামি ৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটি স্থানীয় টাউন উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরিসহ তাদের বক্তব্য শুনেন।

কমিটির সদস্য জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে ১৪ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ২৮ টি ঘর-বাড়ি সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মর্মে তালিকায় নাম পেয়েছি। তালিকায় ক্ষতিগ্রস্থদের সংখ্য আরও বাড়তে পারে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির ধারণা করছি। তবে অগ্নিকান্ডের কারন ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমান নিরুপনে আরও সময় লাগবে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ শরীফুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির পর তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।

বা/খ: এসআর।