ঢাকা ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কর্মজীবন বৈচিত্র্যময় ঐকান্তিক সাধনায়

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার একনিষ্ঠ কর্মময় জীবন

মোঃ নাহিদ হোসেন
  • আপডেট সময় : ১১:৩৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৬৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

উন্নত সমাজ গঠনে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কোন বিকল্প নাই এটা আমাদের সবার জানা। যে সমাজে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা বিরাজ করে সেই সমাজ এবং জাতি অতি দ্রুত এগিয়ে যায়। মহামনীষীগণ সে কারণেই যুগে যুগে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে। এসব মনীষীর হৃদয়ে নিঃসৃত হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঐকান্তিক রস। ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের মত বৈচিত্রপূর্ণ পার্টিকেল বা কণা সে রসে মিশে থাকে। আর এসব কণাকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করার জন্য নিরলসভাবে তাঁরা সারা জীবন কাজ করে যান। যে কণার খেলায় তাঁরা মেতে ওঠেন সেখানেই জীবনের চূড়ান্ত প্রশান্তি খুঁজে পান তাঁরা। এমনই একজন নিবিষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানীর নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।

বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি গবেষণার পথিকৃৎ এ বিজ্ঞানি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান)পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। তিনি ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তারিখে তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন এবং সেখানে মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশন, লাহোর এ যোগদান করার একদিন পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন তিনি। সেখানে তাঁর চাকরি হওয়ার কথা জানালে শেখ মুজিব ভীষণ খুশি হন এবং তাঁকে মোবারকবাদ জানান।

১৯৬৩-‘৬৪ শিক্ষা বছরে ড. ওয়াজেদ লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পিএইচডি ডিগ্রীর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন এপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ই জে স্কয়ার্স। তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘নিউক্লিয়ার এন্ড হাই এনার্জি পার্টিক্যাল ফিজিকস’ ১৯৬৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তারিখে  যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তিনি করাচি পৌঁছান এবং করাচিতে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট করলে তাকে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা থেকে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দিয়ে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদস্থ করা হয়। এরপর একই বছরের ১৩ই সেপ্টেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে এসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। এই সুবাদে তিনি ১৯৬৯-‘৭৩ ও ১৯৮৩ সালে ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিবার ৬ মাস ধরে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ইটালির টিয়েস্ট্রে অবস্থিত আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক,ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে ‘International Centre for theoretical physics’ এর অধীন ৬ বছরের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রদান করেন। ওই এসোসিয়েটশিপের অধীন প্রতিবছর অন্তর ছয় বছরে তিন মাসের জন্য তিনবার ওই কেন্দ্রে কাজ করার সুযোগ ছিল। বিখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুস সালাম ওয়াজেদ মিয়াকে ওই বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে তিন মাসের জন্য ওই কেন্দ্রে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অধ্যাপক আব্দুস সালাম এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে খুবই স্নেহ করতেন, বিশেষ করে গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতার জন্য তিনি এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে উঁচু ধারণা পোষণ করতেন। ওয়াজেদ মিয়া একজন নিরলস বিজ্ঞান সাধক ও বিজ্ঞান সংগঠক ছিলেন। নিউক্লিয়ার গঠন ও নিউক্লীয় বর্ণালী তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে তিনি রি-অ্যাক্টর ফিজিক্স নিয়েও কাজ করেছেন।  মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারসহ ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ধানমন্ডির বর্তমান ৯/এ সড়কের ২৬ নং বাসায় অন্তরীণ হয়ে যাওয়ায় তার গবেষণা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হয়। দেশ স্বাধীন হলে আবারও তিনি গবেষণাকর্ম ও বিজ্ঞান সাধনায় নিয়োগ গভীরভাবে নিয়োগ না হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে তিনি পরপর দুবার বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।তাঁর পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) স্কলারশিপ প্রদান করেছিল।

আণবিক রিঅ্যাক্টর-পদার্থবিজ্ঞানের উপর ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরয় শহরের ‘আণবিক গবেষণা কেন্দ্র’ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জার্মানির কার্লসরুয়ের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রি-অ্যাক্টর পদার্থবিজ্ঞানের উপর Reactor materials, Reactor Theories, Reactor Engineering, Fuel Fabrication, Fuel Reprocessing, Waste Management, Reactor Types, Nuclear Power Economy, Reactor operation, Health physics, Relevant regulation,

Reactor Safety Legal Matter, System analysis, Reactor Material Management সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি তাঁর গবেষণা কার্য সম্পাদন করেন।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে জাতির পিতার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের পর ২৪ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সপরিবারে ভারত গমণ করেন। ভারতে ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। নির্বাসনকালীন এ সময়টুকুতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ তারিখে তিনি সপরিবারে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন করেন এবং পুনরায় ভৌত বিজ্ঞান শাখার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগদান করেন। অতঃপর ইতালিতে এক বছরের জন্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করতে যান তিনি। ৭ জুন ১৯৯৩ তারিখে অধিকতর দায়িত্ব হিসেবে তাকে কমিশনের ভৌত বিজ্ঞান শাখার মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে পরপর তিনবার ‘Bangladesh Atomic Energy Scientists Association (BAESA)’ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও পরপর দুবার মোট চার বছর ‘Bangladesh Physics Society’ (BPS) এর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালের জন্য তিনি BAESA এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আবার ১৯৯৭ সালে ২ বছর মেয়াদের জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান সমিতি’-এর সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। চেরোনোবিল দুর্ঘটনায় সারা বিশ্বে তেজস্ক্রিয় প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, বিশেষ করে শিশু খাদ্য দুধসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে এ বিষক্রিয়ার প্রভাব দেখা দিলে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে দায়িত্ব দেয় এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রদান করে একটি কমিটি গঠন করে। ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন Radiation Testing Laboratory (RTL) নামে চট্টগ্রামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং তাতে দুধসহ বাংলাদেশের যত প্রকার খাদ্যদ্রব্য আমদানি হতো সেসব দ্রব্যাদি ওই গবেষণাগারে রেডিয়েশন মুক্ত  ছাড়পত্র ছাড়া বাজারজাত করা নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান Radioactive Testing and Monitoring Laboratory নামে চট্টগ্রামে কার্যকর রয়েছে। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ডক্টর এ এফ এম মিজানুর রহমান ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন সম্পর্কে  জানান,”বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীদের চাকরি বিধানমালা-১৯৮৫ প্রণয়ন ও জুনিয়র বিজ্ঞানীদের জন্য বর্ধিত ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা করেন।”

উল্লেখ্য যে, উক্ত চাকরির বিধিমালার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কমিশনেরর চাকুরী বিধিমালা তৈরি ড. ওয়াজেদ মিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া ২৭ নভেম্বর ১৯৯৭ তারিখে বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, অতঃপর ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে উক্ত  কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ঢাকার অদূরে সাভারের গণকবাড়িতে  অবস্থিত পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান A Energy Research Establishment (AERE) সহ এমন অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উনার হাত ধরেই গড়ে ওঠে।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া অসংখ্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানবিষয়ক সম্মেলনে অংশ নেন। তাঁর অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্যার জগদীশচন্দ্র বসু সোসাইটি তাঁকে ১৯৯৪ সালে ‘স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক’ এবং ম্যাবস ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯৭ সালে ‘MABS (Manju Academy for Basic Studies)International Award’ প্রদান করে। পদার্থবিজ্ঞানের উপর তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলো Fundamental of Electromagnetics (Fundamentals of Electromagnatics গ্রন্থটি ভারতে পাঠ্য বই হিসাবে ছিল এবং ইংল্যান্ডেও বহুল পঠিত একটি বই), Fundamental of Thermodynamics, Elementary Nuclear and Reactor Physics, Some thoughts on Science and Technology, Basics of Superconductivity, Properties of Semi-conductors, Properties of Dielectric and Magnetic Materials. এছাড়াও তার লেখা ৪৬৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।

নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এই কর্মবীর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এগ্রিকালচার এডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের কৃষকদের উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটির নিবন্ধন,ট্রেড মার্ক ও কপিরাইটের ব্যবস্থাও তিনি করে গিয়েছিলেন। প্রকৃত অর্থে ড. ওয়াজেদ মিয়া সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, তিনি শুধুমাত্র ব্যক্তিই নন, তিনি একজন প্রতিষ্ঠান। রাজনীতির এত কাছে থেকেও নির্মোহভাবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক যে জীবন তিনি যাপন করেছেন , সেটি মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সেই সাথে আরও বলা যায়, ড. ওয়াজেদ মিয়া বিশেষ কোন দলের নন, উনি সকলের।

উনার সম্পর্কে বলা যায়-

“গবেষণায় নিবিষ্ট মহান মনীষী তিনি,

স্বমহিমায় উদ্ভাসিত খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী।“

 

[লেখক : সায়েন্টিফিক এ্যাসিস্ট্যান্ট-১, ইন্সটিটিউট অব কম্পিউটার সায়েন্স (আইসিএস), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। Mail: nahidpust@gmail.com]

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

নিউজটি শেয়ার করুন

কর্মজীবন বৈচিত্র্যময় ঐকান্তিক সাধনায়

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার একনিষ্ঠ কর্মময় জীবন

আপডেট সময় : ১১:৩৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

উন্নত সমাজ গঠনে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কোন বিকল্প নাই এটা আমাদের সবার জানা। যে সমাজে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা বিরাজ করে সেই সমাজ এবং জাতি অতি দ্রুত এগিয়ে যায়। মহামনীষীগণ সে কারণেই যুগে যুগে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে। এসব মনীষীর হৃদয়ে নিঃসৃত হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঐকান্তিক রস। ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের মত বৈচিত্রপূর্ণ পার্টিকেল বা কণা সে রসে মিশে থাকে। আর এসব কণাকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করার জন্য নিরলসভাবে তাঁরা সারা জীবন কাজ করে যান। যে কণার খেলায় তাঁরা মেতে ওঠেন সেখানেই জীবনের চূড়ান্ত প্রশান্তি খুঁজে পান তাঁরা। এমনই একজন নিবিষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানীর নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।

বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি গবেষণার পথিকৃৎ এ বিজ্ঞানি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান)পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। তিনি ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তারিখে তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন এবং সেখানে মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশন, লাহোর এ যোগদান করার একদিন পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন তিনি। সেখানে তাঁর চাকরি হওয়ার কথা জানালে শেখ মুজিব ভীষণ খুশি হন এবং তাঁকে মোবারকবাদ জানান।

১৯৬৩-‘৬৪ শিক্ষা বছরে ড. ওয়াজেদ লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পিএইচডি ডিগ্রীর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন এপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ই জে স্কয়ার্স। তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘নিউক্লিয়ার এন্ড হাই এনার্জি পার্টিক্যাল ফিজিকস’ ১৯৬৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তারিখে  যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তিনি করাচি পৌঁছান এবং করাচিতে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট করলে তাকে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা থেকে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দিয়ে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদস্থ করা হয়। এরপর একই বছরের ১৩ই সেপ্টেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে এসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। এই সুবাদে তিনি ১৯৬৯-‘৭৩ ও ১৯৮৩ সালে ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিবার ৬ মাস ধরে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ইটালির টিয়েস্ট্রে অবস্থিত আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক,ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে ‘International Centre for theoretical physics’ এর অধীন ৬ বছরের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রদান করেন। ওই এসোসিয়েটশিপের অধীন প্রতিবছর অন্তর ছয় বছরে তিন মাসের জন্য তিনবার ওই কেন্দ্রে কাজ করার সুযোগ ছিল। বিখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুস সালাম ওয়াজেদ মিয়াকে ওই বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে তিন মাসের জন্য ওই কেন্দ্রে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অধ্যাপক আব্দুস সালাম এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে খুবই স্নেহ করতেন, বিশেষ করে গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতার জন্য তিনি এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে উঁচু ধারণা পোষণ করতেন। ওয়াজেদ মিয়া একজন নিরলস বিজ্ঞান সাধক ও বিজ্ঞান সংগঠক ছিলেন। নিউক্লিয়ার গঠন ও নিউক্লীয় বর্ণালী তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে তিনি রি-অ্যাক্টর ফিজিক্স নিয়েও কাজ করেছেন।  মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারসহ ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ধানমন্ডির বর্তমান ৯/এ সড়কের ২৬ নং বাসায় অন্তরীণ হয়ে যাওয়ায় তার গবেষণা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হয়। দেশ স্বাধীন হলে আবারও তিনি গবেষণাকর্ম ও বিজ্ঞান সাধনায় নিয়োগ গভীরভাবে নিয়োগ না হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে তিনি পরপর দুবার বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।তাঁর পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) স্কলারশিপ প্রদান করেছিল।

আণবিক রিঅ্যাক্টর-পদার্থবিজ্ঞানের উপর ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরয় শহরের ‘আণবিক গবেষণা কেন্দ্র’ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জার্মানির কার্লসরুয়ের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রি-অ্যাক্টর পদার্থবিজ্ঞানের উপর Reactor materials, Reactor Theories, Reactor Engineering, Fuel Fabrication, Fuel Reprocessing, Waste Management, Reactor Types, Nuclear Power Economy, Reactor operation, Health physics, Relevant regulation,

Reactor Safety Legal Matter, System analysis, Reactor Material Management সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি তাঁর গবেষণা কার্য সম্পাদন করেন।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে জাতির পিতার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের পর ২৪ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সপরিবারে ভারত গমণ করেন। ভারতে ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। নির্বাসনকালীন এ সময়টুকুতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ তারিখে তিনি সপরিবারে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন করেন এবং পুনরায় ভৌত বিজ্ঞান শাখার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগদান করেন। অতঃপর ইতালিতে এক বছরের জন্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করতে যান তিনি। ৭ জুন ১৯৯৩ তারিখে অধিকতর দায়িত্ব হিসেবে তাকে কমিশনের ভৌত বিজ্ঞান শাখার মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে পরপর তিনবার ‘Bangladesh Atomic Energy Scientists Association (BAESA)’ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও পরপর দুবার মোট চার বছর ‘Bangladesh Physics Society’ (BPS) এর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালের জন্য তিনি BAESA এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আবার ১৯৯৭ সালে ২ বছর মেয়াদের জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান সমিতি’-এর সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। চেরোনোবিল দুর্ঘটনায় সারা বিশ্বে তেজস্ক্রিয় প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, বিশেষ করে শিশু খাদ্য দুধসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে এ বিষক্রিয়ার প্রভাব দেখা দিলে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে দায়িত্ব দেয় এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রদান করে একটি কমিটি গঠন করে। ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন Radiation Testing Laboratory (RTL) নামে চট্টগ্রামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং তাতে দুধসহ বাংলাদেশের যত প্রকার খাদ্যদ্রব্য আমদানি হতো সেসব দ্রব্যাদি ওই গবেষণাগারে রেডিয়েশন মুক্ত  ছাড়পত্র ছাড়া বাজারজাত করা নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান Radioactive Testing and Monitoring Laboratory নামে চট্টগ্রামে কার্যকর রয়েছে। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ডক্টর এ এফ এম মিজানুর রহমান ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন সম্পর্কে  জানান,”বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীদের চাকরি বিধানমালা-১৯৮৫ প্রণয়ন ও জুনিয়র বিজ্ঞানীদের জন্য বর্ধিত ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা করেন।”

উল্লেখ্য যে, উক্ত চাকরির বিধিমালার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কমিশনেরর চাকুরী বিধিমালা তৈরি ড. ওয়াজেদ মিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া ২৭ নভেম্বর ১৯৯৭ তারিখে বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, অতঃপর ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে উক্ত  কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ঢাকার অদূরে সাভারের গণকবাড়িতে  অবস্থিত পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান A Energy Research Establishment (AERE) সহ এমন অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উনার হাত ধরেই গড়ে ওঠে।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া অসংখ্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানবিষয়ক সম্মেলনে অংশ নেন। তাঁর অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্যার জগদীশচন্দ্র বসু সোসাইটি তাঁকে ১৯৯৪ সালে ‘স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক’ এবং ম্যাবস ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯৭ সালে ‘MABS (Manju Academy for Basic Studies)International Award’ প্রদান করে। পদার্থবিজ্ঞানের উপর তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলো Fundamental of Electromagnetics (Fundamentals of Electromagnatics গ্রন্থটি ভারতে পাঠ্য বই হিসাবে ছিল এবং ইংল্যান্ডেও বহুল পঠিত একটি বই), Fundamental of Thermodynamics, Elementary Nuclear and Reactor Physics, Some thoughts on Science and Technology, Basics of Superconductivity, Properties of Semi-conductors, Properties of Dielectric and Magnetic Materials. এছাড়াও তার লেখা ৪৬৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।

নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এই কর্মবীর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এগ্রিকালচার এডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের কৃষকদের উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটির নিবন্ধন,ট্রেড মার্ক ও কপিরাইটের ব্যবস্থাও তিনি করে গিয়েছিলেন। প্রকৃত অর্থে ড. ওয়াজেদ মিয়া সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, তিনি শুধুমাত্র ব্যক্তিই নন, তিনি একজন প্রতিষ্ঠান। রাজনীতির এত কাছে থেকেও নির্মোহভাবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক যে জীবন তিনি যাপন করেছেন , সেটি মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সেই সাথে আরও বলা যায়, ড. ওয়াজেদ মিয়া বিশেষ কোন দলের নন, উনি সকলের।

উনার সম্পর্কে বলা যায়-

“গবেষণায় নিবিষ্ট মহান মনীষী তিনি,

স্বমহিমায় উদ্ভাসিত খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী।“

 

[লেখক : সায়েন্টিফিক এ্যাসিস্ট্যান্ট-১, ইন্সটিটিউট অব কম্পিউটার সায়েন্স (আইসিএস), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। Mail: nahidpust@gmail.com]

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)