ঢাকা ১১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চিলমারীতে গ্রাম পুলিশে যোগদানপত্র গ্রহণে চেয়ারম্যানের দাবী ৮ লাখ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • / ৪৬১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// ফয়সাল হক, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি //

যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ শেষ করেও ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করতে পারেননি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার এক নারী গ্রাম পুলিশ। চেয়ারম্যানের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় ৫ মাস ধরে তার যোগদান প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। উল্টো তার নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন বলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

ওই গ্রাম পুলিশের দাবি, উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম আশেক আকা যোগদানপত্র গ্রহণের জন্য ৮ লাখ টাকা দাবী করেছেন। বিষয়টি জানিয়ে তিনি স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু যোগদান প্রক্রিয়া অগ্রগামী না করে উল্টো নিয়োগ বাতিলের পাঁয়তারা হচ্ছে বলে অভিযোগ তার। ভুক্তভোগী ওই গ্রাম পুলিশের নাম ঐশি আক্তার। তিনি উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের ওবায়দুল ইসলামের মেয়ে। তার নানা গোলজার হোসেন ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি মারা গেলে পদটি শূন্য হয়।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ওই গ্রাম পুলিশ উল্লেখ করেন, উপজেলা প্রশাসনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি আবেদন করে যথাযথ নিয়ম প্রতিপালন করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরপর তিনি গত বছরের ২৫ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ে যোগদান করেন। কার্যালয়ের পত্র মোতাবেক তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার শেষে চিলমারী থানায় এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আবারও ইউএনও অফিসে যোগদান করলে তাকে রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে পদায়ন করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর তিনি যোগদানপত্র নিয়ে রমনা মডেল ইউপিতে গেলে চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা তার যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি। অভিভাবকসহ বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করে যোগদানপত্র গ্রহণের অনুরোধ করলে যোগদানের জন্য ৮ লাখ টাকা দাবী করেন চেয়ারম্যান। অন্যথায় তিনি যোগদানপত্র গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ পাওয়া ঐশি আক্তার বলেন, অতি দরিদ্র্য পরিবারের মেয়ে হওয়ায় এই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি ৮ লাখ টাকা কোথায় থেকে দেবো। টাকা না দেয়ায় চেয়ারম্যান এখনও আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি। উল্টো আমার নিয়োগ বাতিলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।

ঐশি বলেন, ৮ লাখ যোগাড় করার মতো সামর্থ আমাদের নেই। আমি নিয়োগের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে নিয়োগ পাই; কিন্তু এখন চেয়ারম্যান টাকা চাচ্ছেন, তাও আবার ৮ লাখ! বিষয়টি লিখিত আকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি তারা বিবেচনায় নিয়ে আমার প্রতি সুবিচার করবেন।

রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম আশেক আকা বলেন, আমি ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানিনা। নিয়ম অনুযায়ী এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যানের চাহিদাপত্র থাকতে হবে। এরপর নিয়োগ বোর্ডে চেয়ারম্যান সদস্য সচিব থাকবেন। কিন্তু আমি এসবের কিছুই জানি না। যে নিয়োগের আমি কিছুই জানি না, সেই নিয়োগে আমি কেন যোগদানপত্র গ্রহণ করবো? টাকা দাবির প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্নই আসে না। তারা উদোর পিন্ডি বুদুর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করতেই পারে। যে নিয়োগ সম্পর্কে আমি জানি না, সেই নিয়োগের টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন অভিযোগ দিয়ে থাকলে আমি ওই মেয়ের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করতে পারি।

জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইউএনওকে বলেছি। তবে যতদূর জানি ওই গ্রাম পুলিশের উচ্চতা কমতি সংক্রান্ত ঝামেলা কারণে তার নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন। বিষয়টি ইউএনও ভালো বলতে পারবেন।

চিলমারীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঐশির উচ্চতা কম হওয়ায় তদন্ত করে নিয়োগ বাতিল করা হবে। নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিজ্ঞমহলের মতে, ” যে কোন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সকল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা  ও যাচাই-বাছাই শেষ চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হলে তবেই সেই প্রার্থী নিয়োগ পান। এক্ষেত্রে ঐশির যে কোন বিষয়ে যোগ্যতার ঘাটতি থাকলে চুড়ান্তরূপে ইউএনও কার্যালয়ে যোগদান কোনভাবেই সম্ভব নয়! নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা আগে কেনো উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি তা বোধ্যগম্য নয়! তবে ভুত তাড়ানো তেলের মধ্যে ভুত ঢুকে পড়লে তা তাড়ানো সম্ভব নয়। বিষয়টি অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত যাতে একটা অসহায় নারীর প্রতি অবিচার না হয়ে যায়!”

নিউজটি শেয়ার করুন

চিলমারীতে গ্রাম পুলিশে যোগদানপত্র গ্রহণে চেয়ারম্যানের দাবী ৮ লাখ

আপডেট সময় : ০৫:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

// ফয়সাল হক, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি //

যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ শেষ করেও ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করতে পারেননি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার এক নারী গ্রাম পুলিশ। চেয়ারম্যানের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় ৫ মাস ধরে তার যোগদান প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। উল্টো তার নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন বলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

ওই গ্রাম পুলিশের দাবি, উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম আশেক আকা যোগদানপত্র গ্রহণের জন্য ৮ লাখ টাকা দাবী করেছেন। বিষয়টি জানিয়ে তিনি স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু যোগদান প্রক্রিয়া অগ্রগামী না করে উল্টো নিয়োগ বাতিলের পাঁয়তারা হচ্ছে বলে অভিযোগ তার। ভুক্তভোগী ওই গ্রাম পুলিশের নাম ঐশি আক্তার। তিনি উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের ওবায়দুল ইসলামের মেয়ে। তার নানা গোলজার হোসেন ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি মারা গেলে পদটি শূন্য হয়।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ওই গ্রাম পুলিশ উল্লেখ করেন, উপজেলা প্রশাসনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি আবেদন করে যথাযথ নিয়ম প্রতিপালন করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরপর তিনি গত বছরের ২৫ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ে যোগদান করেন। কার্যালয়ের পত্র মোতাবেক তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার শেষে চিলমারী থানায় এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আবারও ইউএনও অফিসে যোগদান করলে তাকে রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে পদায়ন করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর তিনি যোগদানপত্র নিয়ে রমনা মডেল ইউপিতে গেলে চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা তার যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি। অভিভাবকসহ বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করে যোগদানপত্র গ্রহণের অনুরোধ করলে যোগদানের জন্য ৮ লাখ টাকা দাবী করেন চেয়ারম্যান। অন্যথায় তিনি যোগদানপত্র গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ পাওয়া ঐশি আক্তার বলেন, অতি দরিদ্র্য পরিবারের মেয়ে হওয়ায় এই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি ৮ লাখ টাকা কোথায় থেকে দেবো। টাকা না দেয়ায় চেয়ারম্যান এখনও আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করেননি। উল্টো আমার নিয়োগ বাতিলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।

ঐশি বলেন, ৮ লাখ যোগাড় করার মতো সামর্থ আমাদের নেই। আমি নিয়োগের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে নিয়োগ পাই; কিন্তু এখন চেয়ারম্যান টাকা চাচ্ছেন, তাও আবার ৮ লাখ! বিষয়টি লিখিত আকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি তারা বিবেচনায় নিয়ে আমার প্রতি সুবিচার করবেন।

রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম আশেক আকা বলেন, আমি ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানিনা। নিয়ম অনুযায়ী এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যানের চাহিদাপত্র থাকতে হবে। এরপর নিয়োগ বোর্ডে চেয়ারম্যান সদস্য সচিব থাকবেন। কিন্তু আমি এসবের কিছুই জানি না। যে নিয়োগের আমি কিছুই জানি না, সেই নিয়োগে আমি কেন যোগদানপত্র গ্রহণ করবো? টাকা দাবির প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্নই আসে না। তারা উদোর পিন্ডি বুদুর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করতেই পারে। যে নিয়োগ সম্পর্কে আমি জানি না, সেই নিয়োগের টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন অভিযোগ দিয়ে থাকলে আমি ওই মেয়ের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করতে পারি।

জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইউএনওকে বলেছি। তবে যতদূর জানি ওই গ্রাম পুলিশের উচ্চতা কমতি সংক্রান্ত ঝামেলা কারণে তার নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন। বিষয়টি ইউএনও ভালো বলতে পারবেন।

চিলমারীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঐশির উচ্চতা কম হওয়ায় তদন্ত করে নিয়োগ বাতিল করা হবে। নিয়োগ বাতিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিজ্ঞমহলের মতে, ” যে কোন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সকল বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা  ও যাচাই-বাছাই শেষ চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হলে তবেই সেই প্রার্থী নিয়োগ পান। এক্ষেত্রে ঐশির যে কোন বিষয়ে যোগ্যতার ঘাটতি থাকলে চুড়ান্তরূপে ইউএনও কার্যালয়ে যোগদান কোনভাবেই সম্ভব নয়! নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা আগে কেনো উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি তা বোধ্যগম্য নয়! তবে ভুত তাড়ানো তেলের মধ্যে ভুত ঢুকে পড়লে তা তাড়ানো সম্ভব নয়। বিষয়টি অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত যাতে একটা অসহায় নারীর প্রতি অবিচার না হয়ে যায়!”