বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে : কৃষিমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৫:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
- / ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নেদারল্যান্ডসের পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (ভিভিডি) এমপি ফিম ভ্যান স্ট্রিয়েনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই। ফসলে পানি দিতে না পারলে উৎপাদন কম হবে। হয়ত চাষিদের কষ্ট হবে, তার আয় কমে যাবে। তার যে লাভ হওয়ার কথা, সেটা হবে না।
মন্ত্রী বলেন, এদেশের চাষিরা নিজের বউয়ের গহনা কিংবা গরু বিক্রি করেও সার কিনবেন। জমিতে সার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই তারা ঝুঁকি নিতে চায় না। হয়ত উৎপাদন ওই রকম কমবে না। কিন্তু চাষিরা ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে সরকারের হাতে এর (বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি) কোনো বিকল্পও নেই।
বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সেচের ওপর প্রভাব পড়তে পারে কিনা এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জ্বালানির প্রয়োজন আছে। কৃষি যেহেতু আমাদের একটি মৌলিক বিষয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ-খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই হিসেবে বিভিন্ন উপকরণ সার, রাসায়নিক,পানি, সেচ—এগুলোর ওপর আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিয়েছি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম এতই বেড়েছে, টনপ্রতি আড়াইশ ডলারের সার এক হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দাম বাড়াননি। যখন অর্থ মন্ত্রণালয় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছিল যে এ দামে আমরা সার দিতে পারবো না, আপনারা সারের দাম বাড়ান, তখন আমি নিজেও কনভিনসড (রাজি) ছিলাম। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথাও বলেছি। তিনি বলেছেন, না, সারের দাম বাড়াবো না। সব উন্নয়ন বন্ধ থাকলেও আমরা সারের দাম বাড়াব না। সেই নীতিতে তিনি এখনো অটল আছেন।
এদেশের চাষিরা নিজের বউয়ের গয়না কিংবা গরু বিক্রি করেও সার কিনবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জমিতে সার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই তারা ঝুঁকি নিতে চায় না। হয়ত উৎপাদন ওই রকম কমবে না। কিন্তু চাষিরা ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু সরকারের হাতে এর (বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি) কোনো বিকল্পও নেই।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তো চাই কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হোক। আমাদের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন। তাদের জীবিকার জন্য কোনো না-কোনোভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুতের দাম বাড়লে তাদের আয় কমে যাবে, সন্তানদের লেখাপড়াসহ তাদের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যেভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পড়েছে, তাতে সরকারেরও কোনো উপায় নেই।
বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার ঝুঁকি নিচ্ছে, প্রশ্নে হেসে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটি তো ঠিকই। চাষির উৎপাদন কিছুটা কমে যাবে। তাদের আয় কিছুটা কমবে।
খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা না পারার বিষয়ে মন্ত্রীদের দ্বিমতের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির বিষয়টি বুঝতে হবে। আইনে যাই থাক। ইরানের খোমেনির রাজনীতি কী বন্ধ ছিল? বঙ্গবন্ধু জেলে থেকে রাজনীতি করেছেন না। কনভিকশন (দণ্ডিত) হয়নি, কনভিকশন হলেই কী বঙ্গবন্ধু রাজনীতি বন্ধ করে দিতেন? আমি সেই জায়গা থেকে বলেছি। জেলে বসেও তো রাজনীতি করা যায়। আমি তো সেই কথাটিই আপনাদের বলেছিলাম। আবারও বলছি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের এই সদস্য বলেন, সারা পৃথিবীতে তো বিদ্রোহী ও বিপ্লবীরা এভাবেই রাজনীতি করেছেন। খালেদা জিয়া ইলেকশনে যেতে পারবেন না, আইনের কারণে। কিন্তু তার রাজনীতির চিন্তা-চেতনা এগুলো কী তারা বন্ধ করে দেবে নাকি- যে আমি রাজনীতি করব না।
কিন্তু মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা একমত হতে পারছেন না কেন- প্রশ্ন করলে খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন আব্দুর রাজ্জাক। এরপর তিনি বলেন, ক্যাবিনেট কলিগরা বলছেন কীভাবে? আমি ওনাদের সাথে কথা বলিনি, কী বলেছেন। আমাকে যদি কোনো কারণে জেল দেয়। লালু প্রসাদ কী রাজনীতি বন্ধ করেছেন?
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ না করলে এভাবে মাসে মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ত কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএমএফ তো সারের দামও বাড়াতে বলে। সারে যে ভর্তুকি দিই, সেটিই তো আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মানে না। তারা সারাজীবন বাধা দিয়ে আসছে। বিএনপির সময় ৯০ টাকা যে সার ছিল, আমরা ১৬ টাকায় দিয়েছি। আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কথা শুনতে গিয়ে অনেককেই বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। তখন তো প্রধানমন্ত্রীর ওপর অনেক চাপ ছিল। তারা বলতো, সারে ভর্তুকি দিলে তোমরা উন্নয়ন করবে কীভাবে? তাহলে স্কুল-কলেজ ও রাস্তাঘাটের কী হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি না, বিনিয়োগ করছি। আমরা সেই বিনিয়োগের ফল পাচ্ছি।
তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিরা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ২০০৮ সালে আমাদের তিন মিলিয়ন টন সবজি হতো, বর্তমানে তা ২২ মিলিয়ন টন। পৃথিবীর কোনো দেশে ১৩ বছরে সবজির উৎপাদন এত বেড়েছে।