ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তাহিরপুরের কলাগাঁও সীমান্তে চোরাচালানকারী কে সেই ব্যক্তি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:২৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৫০৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

কখনো যুবলীগ নেতা, কখনো জেলার প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার আশির্বাদপুষ্ট কর্মী দাবিদার, কখনো শিক্ষাবিদ আবার কখনো ব্যবসায়ী। এমন বহুরুপি পরিচয়ধারী কলাগাঁও গ্রামের জনৈক ব্যক্তির মদদে নির্বিঘ্নে চোরাচালান হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও সীমান্ত দিয়ে। ওই পাতি নেতার লালিত সহযোগি কয়লা পাচারে ঝামেলা না হওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিরাতে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যেন দেখার কেউ নেই!

অভিযোগ উঠেছে, সরকারের রাজস্ব ফাকিঁ দিয়ে কলাগাঁও-জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে প্রতিদিন রাতের আধাঁরে পাচার হওয়া শত শত মেট্রিকটন কয়লা থেকে চারাগাঁও বিওপি ক্যাম্প, তাহিরপুর থানা পুলিশ, সাংবাদিক ও উপর মহলের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে নৌকা প্রতি ৩৭ হাজার টাকা আদায় করে আসছে ওই চক্র। উল্লেখ্য, রাতের প্রথম প্রহরে ঘাপটি মেরে থাকা ওই ব্যক্তি সরব হন রাত ১২টার পর। তখনি মোঠোফোনের মাধ্যমে চোরাই ব্যবসায়ীদের অভয় দেখিয়ে উড়াধুড়া কয়লা পাচারের মহোৎসব সেরে নেন। গভীর রাতে কর্তাব্যক্তিদের বিরক্তবোধের বিষয়টি ভেবে যেন সচেতন মহল কিংবা কারো মোঠোফোন উপর মহলে না পৌছেঁ এ কুটচালে চলছে এই বহুরুপির অবৈধ রাজত্ব।

প্রসঙ্গত, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বহুরুপি পরিচয়ধারী এসব টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরেও থেমে নেই। প্রতিরাতে আবার ব্যবসায়ী বনে কমপক্ষে দুইটি নৌকায় অর্ধশতাধিক মেট্রিকটন কয়লা পাচার করেন তিনি। ফলে নামে-বেনামে বাড়তি বখরা গুনতে হয় না তার। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শনিবার রাতে (৭ ডিসেম্বর) ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে পাটলাই নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা বাজারে ১০টি কয়লা বোঝাই নৌকায় অন্তত ৫শ মেট্রিকটন কয়লা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তথ্যমতে, ১০টি নৌকা থেকে গত শনিবার রাতে আদায় হয়েছে প্রায় পৌনে চার লাখ টাকা। তার লালিত “লাইনম্যান” এর উত্তোলিত টাকা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিয়ে হজমের পথে পা বাড়ায় এই বহুরুপি।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব ফাকিঁ দিয়ে গভীর রাতে ভারত থেকে নিয়ে আসা এসব কয়লা মজুদ করে রাখা হয় সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে। পরে সুযোগ বুঝে পাচারকৃত কয়লা ঠেলাগাড়ি-ট্রলিযোগে কলাগাঁও বাজারের রাস্তা দিয়ে পাথরঘাটা নামক এলাকায় নিয়ে আসে। এখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে পাটলাই নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। এভাবে প্রতিরাতে চোরাচালান বাণিজ্য হচ্ছে উল্লেখিত সীমান্ত দিয়ে।

এ প্রসঙ্গে কলাগাঁও বাজার বনিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, গভীর রাতে যেদিন কয়লা পাচার হয় সেদিন বাজারে চুরি বেড়ে যায়। গত কয়দিনে ৫টি চুরি সংঘঠিত হলে কমিটির পক্ষ থেকে বাজারের সড়ক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। চারদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার রাতে (৭ জানুয়ারি) আবার কয়লা পাচার শুরু হয়। খবর পেয়ে রাতেই নিষেধ দিলে বিশেষ এক ব্যক্তির অনুরোধে বাজারের সড়ক ব্যবহার করতে দেয়া হলেও আজ থেকে আমাদের পক্ষ থেকে পূণরায় নিধেধ করা হয়েছে।
কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা তাহিরপুর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মুর্শেদ আলম সাদ্দাম বলেন, বহুরুপি পরিচয়ধারী ব্যক্তির ইশারায় জনৈক “লাইনম্যান” প্রতি নৌকা থেকে ৩৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আসছে এটা সবাই জানে। এসব টাকা বাটোয়ারাও হয় বহৃরুপি পরিচয়ধারী ব্যক্তির মাধ্যমে। চোরাচালান বন্ধে গত সপ্তাহে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বরত ক্যাম্প কমান্ডারকে জানানোর পর কার্যত ব্যবস্থা না নেওয়ার পর থেকে চুপ করে আছি।
চারাগাঁও বিওপি ক্যাম্পে দায়িত্বরত নায়েব সুবেদার আব্দুল হান্নান বলেন, গভীর রাতে কয়লা পাচারের ঘটনা আমার জানা নেই। নাম ভাঙিয়ে চাদাঁ উত্তোলনকারী ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাহিরপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, কলাগাঁও সীমান্তে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা হাসিল করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। দ্রুত আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২৮ এর উপ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নাজমুল হাসান বলেন, চোরাচালানের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বা/খ: এস আর।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

তাহিরপুরের কলাগাঁও সীমান্তে চোরাচালানকারী কে সেই ব্যক্তি

আপডেট সময় : ১১:২৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৩

রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

কখনো যুবলীগ নেতা, কখনো জেলার প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার আশির্বাদপুষ্ট কর্মী দাবিদার, কখনো শিক্ষাবিদ আবার কখনো ব্যবসায়ী। এমন বহুরুপি পরিচয়ধারী কলাগাঁও গ্রামের জনৈক ব্যক্তির মদদে নির্বিঘ্নে চোরাচালান হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও সীমান্ত দিয়ে। ওই পাতি নেতার লালিত সহযোগি কয়লা পাচারে ঝামেলা না হওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিরাতে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যেন দেখার কেউ নেই!

অভিযোগ উঠেছে, সরকারের রাজস্ব ফাকিঁ দিয়ে কলাগাঁও-জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে প্রতিদিন রাতের আধাঁরে পাচার হওয়া শত শত মেট্রিকটন কয়লা থেকে চারাগাঁও বিওপি ক্যাম্প, তাহিরপুর থানা পুলিশ, সাংবাদিক ও উপর মহলের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে নৌকা প্রতি ৩৭ হাজার টাকা আদায় করে আসছে ওই চক্র। উল্লেখ্য, রাতের প্রথম প্রহরে ঘাপটি মেরে থাকা ওই ব্যক্তি সরব হন রাত ১২টার পর। তখনি মোঠোফোনের মাধ্যমে চোরাই ব্যবসায়ীদের অভয় দেখিয়ে উড়াধুড়া কয়লা পাচারের মহোৎসব সেরে নেন। গভীর রাতে কর্তাব্যক্তিদের বিরক্তবোধের বিষয়টি ভেবে যেন সচেতন মহল কিংবা কারো মোঠোফোন উপর মহলে না পৌছেঁ এ কুটচালে চলছে এই বহুরুপির অবৈধ রাজত্ব।

প্রসঙ্গত, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বহুরুপি পরিচয়ধারী এসব টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরেও থেমে নেই। প্রতিরাতে আবার ব্যবসায়ী বনে কমপক্ষে দুইটি নৌকায় অর্ধশতাধিক মেট্রিকটন কয়লা পাচার করেন তিনি। ফলে নামে-বেনামে বাড়তি বখরা গুনতে হয় না তার। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শনিবার রাতে (৭ ডিসেম্বর) ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে পাটলাই নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা বাজারে ১০টি কয়লা বোঝাই নৌকায় অন্তত ৫শ মেট্রিকটন কয়লা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তথ্যমতে, ১০টি নৌকা থেকে গত শনিবার রাতে আদায় হয়েছে প্রায় পৌনে চার লাখ টাকা। তার লালিত “লাইনম্যান” এর উত্তোলিত টাকা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিয়ে হজমের পথে পা বাড়ায় এই বহুরুপি।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব ফাকিঁ দিয়ে গভীর রাতে ভারত থেকে নিয়ে আসা এসব কয়লা মজুদ করে রাখা হয় সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে। পরে সুযোগ বুঝে পাচারকৃত কয়লা ঠেলাগাড়ি-ট্রলিযোগে কলাগাঁও বাজারের রাস্তা দিয়ে পাথরঘাটা নামক এলাকায় নিয়ে আসে। এখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে পাটলাই নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। এভাবে প্রতিরাতে চোরাচালান বাণিজ্য হচ্ছে উল্লেখিত সীমান্ত দিয়ে।

এ প্রসঙ্গে কলাগাঁও বাজার বনিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, গভীর রাতে যেদিন কয়লা পাচার হয় সেদিন বাজারে চুরি বেড়ে যায়। গত কয়দিনে ৫টি চুরি সংঘঠিত হলে কমিটির পক্ষ থেকে বাজারের সড়ক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। চারদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার রাতে (৭ জানুয়ারি) আবার কয়লা পাচার শুরু হয়। খবর পেয়ে রাতেই নিষেধ দিলে বিশেষ এক ব্যক্তির অনুরোধে বাজারের সড়ক ব্যবহার করতে দেয়া হলেও আজ থেকে আমাদের পক্ষ থেকে পূণরায় নিধেধ করা হয়েছে।
কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা তাহিরপুর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মুর্শেদ আলম সাদ্দাম বলেন, বহুরুপি পরিচয়ধারী ব্যক্তির ইশারায় জনৈক “লাইনম্যান” প্রতি নৌকা থেকে ৩৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আসছে এটা সবাই জানে। এসব টাকা বাটোয়ারাও হয় বহৃরুপি পরিচয়ধারী ব্যক্তির মাধ্যমে। চোরাচালান বন্ধে গত সপ্তাহে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বরত ক্যাম্প কমান্ডারকে জানানোর পর কার্যত ব্যবস্থা না নেওয়ার পর থেকে চুপ করে আছি।
চারাগাঁও বিওপি ক্যাম্পে দায়িত্বরত নায়েব সুবেদার আব্দুল হান্নান বলেন, গভীর রাতে কয়লা পাচারের ঘটনা আমার জানা নেই। নাম ভাঙিয়ে চাদাঁ উত্তোলনকারী ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাহিরপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, কলাগাঁও সীমান্তে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা হাসিল করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। দ্রুত আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২৮ এর উপ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নাজমুল হাসান বলেন, চোরাচালানের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বা/খ: এস আর।