ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঘুরে দাড়াচ্ছে তাঁতশিল্প : ভারতে প্রতিমাসে রফতানি ১২০ কোটি টাকার কাপড়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩
  • / ৪৭২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

ঘুরে দাড়াচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প। ৯০ এর দশকেও ভারতীয় সুতিপ্রিন্ট শাড়ির একচেটিয়া দাপট দেশের তাঁতশিল্পে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে এ সময় অসংখ্য তাঁতী এ পেশা থেকে ছিটকে পড়ে। এরপর করোনা আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রং সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁতিদের অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেললেও আস্তে আস্তে যেন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শাড়ি লুঙ্গি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ত্রিপুড়া, আসাম ও অন্ধপ্রদেশে ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এখন দিন দিন যেন তা বাড়ছে।
এবার কোরবানির ঈদ মার্কেটে বিপুল শাড়ি লুঙ্গি ও থ্রিপিস ভারতের বাজারে রপ্তানি হয়েছে। ভারতের ব্যবসায়িরা হাটে হাটে ঘুরে পছন্দের শাড়ি কিনে বৈধ পথে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। রমজানের ঈদের পর থেকেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাপড় আমদানি করছে। শুধু তাই নয়, ভারতের ব্যবসায়িরা বাংলদেশ থেকে লুঙ্গি আমদানি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের বাজারে রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের তাঁতের সিল্ক জামদানী, সুতি জামদানী, কাতান, সুতি কাতান, রাজশাহী সিল্ক, বেনারশী, চোষা, শেড, স্বর্ণলতা শাড়ীর বেশ কদর সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের কলকাতার কাপড় ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র সেন জানান, বাংলাদেশের কাপড় টেকশই ও উন্নত মানের। দাম ও তুলনামূলক কম হওয়ায় ভারতীয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মহিলাদের কাছে তাঁতের সুতি শাড়ীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, পশ্চিমবাংলার উচ্চবিত্ত পরিবারের মহিলাদের পছন্দের তালিকায় ডেমরার জামদানী, ঢাকার মিরপুরের কাতান, বেনারশী, রাজশাহীর সিল্ক ও গরদ শাড়ি। মধ্যবিত্ত পরিবারে পছন্দের তালিকায় রয়েছে ঈশ্বরদীর কাতান, বেনারশি টাংগাইলের হাফসিল্ক জামদানি, নকশি, শাহাজাদপুরের স্বর্ণলতা, নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের মাহিলাদের পছন্দ টাংগাইলের সুতি জামদানী, সুতি কাতান, চোষা ও শেড শাড়ী। উন্নতমান, টেকসই, রুচিশীল শাড়ী কম দামে পাওয়ায় মহিলারা বাংলাদেশি শাড়ী কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিন ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলী, বর্ধমান, নদীয়, মূর্শীদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমদিনাজপুর, উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিণদিনাজপুর, কুচবিহার, হাওড়া ও হুগলীসহ বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় নামিদামী শপিংমল ও বিপণী বিতানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ী শোভা পাচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন পুজা-পার্বণে বাংলাদেশি শাড়ীর বাজার জমে উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গের কাপড় ব্যবসায়ি বারাসাতের মোঃ রায়হান আলম, শ্রী অনিল সাহা জানান তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে আতাইকুলা, শাহজাদপুরহাট, এনায়েতপুরহাট, করোটিয়াহাট, বাবুরহাট ও ডেমরাহাট থেকে শাড়ী কিনছেন। এছাড়া রাজশাহীর সিল্ক, গরদ, পাবনার ঈশ্বরদীর বেনারশি কাতান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, বালসাবাড়ী, শাহাজাদপুরের দ্বারিয়াপুর, খঞ্জনদিয়ার, রামবাড়ি, পুকুরপাড়, মনিরামপুর, প্রাণনাথপুর, শক্তিপুর, ঘাটপাড়া, রূপপুর, উড়িয়ারচর, নগরডালা, ডায়া, হামলাকোলা, জুগ্নিদহ, এনায়েতপুর, বেতিল, বেলকুচি, খুকনী, উল্লাপাড়ার স্বর্ণলতা, চোষা ও শেড শাড়ী, টাংগাইলের সুতি জামদানি, সিল্ক জামদানি ঢাকার মিরপুরের বেনারশি কাতান ও ডেমরার জামদানি তাঁত কারখানাগুলোতে গিয়ে পছন্দমতো প্রতি পিস শাড়ী এক হাজার ৫০০ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা দামে কিনে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের তাঁতীদের জামদানী নকশা, সেড ও থান কাপড়ের পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ ভারতের তরুণ তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় ভারতীর ব্যবসায়ীরা জামদানী থ্রী-পিচ ২০০০-৩০০০ হাজার এবং চেক থ্রীপিচ ৭০০-৯০০ টাকা দামে কিনে সড়ক পথে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন শপিংমল, বিপণীবিতানে সরবরাহ করছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

কোরবানির ঈদের চাহিদা পাবনা অঞ্চলের তাঁত প্রধান পল্লীগুলো এখন দিনরাত কর্মচঞ্চল। তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। সদর উপজেলার দোগাছির তাঁত কারখানা মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক মানের সময় উপযোগী ডিজাইন নিয়ে আসায় দেশীয় তাঁত শিল্প প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মানন্ধাত্তার আমলের বুনোন শৈলী ও জ্যাকেট পাড়ের শাড়ি বাদ দিয়ে ডিজাইনারদের পরামর্শে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এ শিল্প সমৃদ্ধ হচ্ছে। তাই ঈদে এবার তাঁতের কাপড় বিক্রিতে তেজি ভাব দেখা গেছে। এ পেশার সাথে জড়িত সবাই এখন লাভের স্বপ্ন দেখছেন। সময় উপযোগী করে বুনোন শৈলী নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশা আর রঙের মাধুর্য দিয়ে তৈরি এ অঞ্চলের তাঁতের কাপড় ভারতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে বিবিআনা, রঙ, কে ক্রাফট ও নগরদোলা সহ দেশের শীর্ষ বুটিক হাউজের কাপড় ও এখন সিরাজগঞ্জ পাবনা অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে। বুটিক হাউজের নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল, ডুপিয়ান ও এন্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রত করে তৈরি করা হচ্ছে কাপড়। এখানকার তাঁতপল্লীতে বুটিক হাউজের ওড়না থান কাপড় ও এন্ডি থান কাপড়ের ফ্রেবিক্স তৈরি করা হচ্ছে। এ দিয়ে নানা পোশাক তৈরি করছে বুটিক হাউজগুলো।

তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে দীর্ঘদিন রং সুতার দাম চড়া থাকায় একের পর এক বন্ধ তাঁত বন্ধ করতে হয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন তাঁতিরা। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ায় এর চাহিদা ছিল কম। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কোরবানির ঈদে তাঁতপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে।

বেড়া পৌর এলাকার নতুনপাড়া গ্রামের তাঁতি মতিন মিয়া জানান, তাদের গ্রামে বছর দুই আগেও হাজার তিনেক তাঁত চালু ছিল। এখনও অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ। আমিও দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ রেখেছিলাম। ঈদ উপলক্ষে টাকা ঋণ নিয়ে দশটা তাঁত চালু করেছি। এখন যে লুঙ্গি তৈরি করছি তার চাহিদা থাকায় এখন বেশ ভাল লাগছে। তাঁতি আজিজুল হাকিম জানান তাঁর ২৪টি তাঁতের মধ্যে ১২টি তাঁত পুরোপুরি বন্ধ করে ছিল। ঈদে চাহিদা বাড়ায় আবার সেগুলো চালু করেছেন। তিনি জানান রং-সুতার দাম নিয়ন্ত্রণ করা হলে আবার ও তাঁতিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। এখানকার আরেক তাঁত কারখানার মালিক বুলবুল হোসেন জানান, তাঁর ৪০টি তাঁত ছিল। করোনার সময় সব কটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে সেগুলো আবার চালু করতে শুরু করেছেন।

ঈশ্বরদীর বেনারসি পল্লির তাঁতশ্রমিক আনোয়ার ও জাহিদ জানান, তাঁরা শুধু বেনারসি শাড়ির বুনন জানেন। তাই কষ্ট হলেও এই পেশাতেই থাকতে হচ্ছে। করোনাকালে কারখানা বন্ধ ছিল। পরে প্রতি চার-পাঁচ দিনে একটি করে শাড়ি তৈরি করে এক হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন। বর্তমানে শাড়ির চাহিদা বাড়ায় দিন রাত কাজ করছেন। সপ্তাতে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হচ্ছে। বেনারসি পল্লীর তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওকিল হোসেন জানান, রং সুতার দাম কমানো ও ভারতীয় শাড়ি আমদানি বন্ধ হলে দেশের তাঁতিরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড পাবনা বেসিক সেন্টারের দায়িত্বরত লিয়াজোঁ অফিসার খন্দকার ওবাইদুর রহমান জিলানী দাবি করেছেন করোনার ক্ষতি পোষাতে তাঁতিদের প্রণোদনা ও ঋণের ব্যবস্থা করায় সামনের কোরবানির ঈদ, দুর্গাপূজা উপলক্ষে তাঁতীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
পাবনা জেলা তাঁতি সমবায় সমিতির সভাপতি কামরুল আনান রিপন জানান, সরকার বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতিদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে বন্ধ হওয়া তাঁতগুলো আবার সচল হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঘুরে দাড়াচ্ছে তাঁতশিল্প : ভারতে প্রতিমাসে রফতানি ১২০ কোটি টাকার কাপড়

আপডেট সময় : ০৮:১১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

ঘুরে দাড়াচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প। ৯০ এর দশকেও ভারতীয় সুতিপ্রিন্ট শাড়ির একচেটিয়া দাপট দেশের তাঁতশিল্পে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে এ সময় অসংখ্য তাঁতী এ পেশা থেকে ছিটকে পড়ে। এরপর করোনা আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রং সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁতিদের অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেললেও আস্তে আস্তে যেন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শাড়ি লুঙ্গি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ত্রিপুড়া, আসাম ও অন্ধপ্রদেশে ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এখন দিন দিন যেন তা বাড়ছে।
এবার কোরবানির ঈদ মার্কেটে বিপুল শাড়ি লুঙ্গি ও থ্রিপিস ভারতের বাজারে রপ্তানি হয়েছে। ভারতের ব্যবসায়িরা হাটে হাটে ঘুরে পছন্দের শাড়ি কিনে বৈধ পথে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। রমজানের ঈদের পর থেকেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাপড় আমদানি করছে। শুধু তাই নয়, ভারতের ব্যবসায়িরা বাংলদেশ থেকে লুঙ্গি আমদানি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের বাজারে রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের তাঁতের সিল্ক জামদানী, সুতি জামদানী, কাতান, সুতি কাতান, রাজশাহী সিল্ক, বেনারশী, চোষা, শেড, স্বর্ণলতা শাড়ীর বেশ কদর সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের কলকাতার কাপড় ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র সেন জানান, বাংলাদেশের কাপড় টেকশই ও উন্নত মানের। দাম ও তুলনামূলক কম হওয়ায় ভারতীয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মহিলাদের কাছে তাঁতের সুতি শাড়ীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, পশ্চিমবাংলার উচ্চবিত্ত পরিবারের মহিলাদের পছন্দের তালিকায় ডেমরার জামদানী, ঢাকার মিরপুরের কাতান, বেনারশী, রাজশাহীর সিল্ক ও গরদ শাড়ি। মধ্যবিত্ত পরিবারে পছন্দের তালিকায় রয়েছে ঈশ্বরদীর কাতান, বেনারশি টাংগাইলের হাফসিল্ক জামদানি, নকশি, শাহাজাদপুরের স্বর্ণলতা, নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের মাহিলাদের পছন্দ টাংগাইলের সুতি জামদানী, সুতি কাতান, চোষা ও শেড শাড়ী। উন্নতমান, টেকসই, রুচিশীল শাড়ী কম দামে পাওয়ায় মহিলারা বাংলাদেশি শাড়ী কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিন ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলী, বর্ধমান, নদীয়, মূর্শীদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমদিনাজপুর, উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিণদিনাজপুর, কুচবিহার, হাওড়া ও হুগলীসহ বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় নামিদামী শপিংমল ও বিপণী বিতানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ী শোভা পাচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন পুজা-পার্বণে বাংলাদেশি শাড়ীর বাজার জমে উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গের কাপড় ব্যবসায়ি বারাসাতের মোঃ রায়হান আলম, শ্রী অনিল সাহা জানান তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে আতাইকুলা, শাহজাদপুরহাট, এনায়েতপুরহাট, করোটিয়াহাট, বাবুরহাট ও ডেমরাহাট থেকে শাড়ী কিনছেন। এছাড়া রাজশাহীর সিল্ক, গরদ, পাবনার ঈশ্বরদীর বেনারশি কাতান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, বালসাবাড়ী, শাহাজাদপুরের দ্বারিয়াপুর, খঞ্জনদিয়ার, রামবাড়ি, পুকুরপাড়, মনিরামপুর, প্রাণনাথপুর, শক্তিপুর, ঘাটপাড়া, রূপপুর, উড়িয়ারচর, নগরডালা, ডায়া, হামলাকোলা, জুগ্নিদহ, এনায়েতপুর, বেতিল, বেলকুচি, খুকনী, উল্লাপাড়ার স্বর্ণলতা, চোষা ও শেড শাড়ী, টাংগাইলের সুতি জামদানি, সিল্ক জামদানি ঢাকার মিরপুরের বেনারশি কাতান ও ডেমরার জামদানি তাঁত কারখানাগুলোতে গিয়ে পছন্দমতো প্রতি পিস শাড়ী এক হাজার ৫০০ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা দামে কিনে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের তাঁতীদের জামদানী নকশা, সেড ও থান কাপড়ের পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ ভারতের তরুণ তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় ভারতীর ব্যবসায়ীরা জামদানী থ্রী-পিচ ২০০০-৩০০০ হাজার এবং চেক থ্রীপিচ ৭০০-৯০০ টাকা দামে কিনে সড়ক পথে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন শপিংমল, বিপণীবিতানে সরবরাহ করছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

কোরবানির ঈদের চাহিদা পাবনা অঞ্চলের তাঁত প্রধান পল্লীগুলো এখন দিনরাত কর্মচঞ্চল। তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। সদর উপজেলার দোগাছির তাঁত কারখানা মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক মানের সময় উপযোগী ডিজাইন নিয়ে আসায় দেশীয় তাঁত শিল্প প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মানন্ধাত্তার আমলের বুনোন শৈলী ও জ্যাকেট পাড়ের শাড়ি বাদ দিয়ে ডিজাইনারদের পরামর্শে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এ শিল্প সমৃদ্ধ হচ্ছে। তাই ঈদে এবার তাঁতের কাপড় বিক্রিতে তেজি ভাব দেখা গেছে। এ পেশার সাথে জড়িত সবাই এখন লাভের স্বপ্ন দেখছেন। সময় উপযোগী করে বুনোন শৈলী নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশা আর রঙের মাধুর্য দিয়ে তৈরি এ অঞ্চলের তাঁতের কাপড় ভারতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে বিবিআনা, রঙ, কে ক্রাফট ও নগরদোলা সহ দেশের শীর্ষ বুটিক হাউজের কাপড় ও এখন সিরাজগঞ্জ পাবনা অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে। বুটিক হাউজের নিজস্ব ডিজাইনে রেশম সুতা, খাদি, নয়েল, ডুপিয়ান ও এন্ডি সুতা ব্যবহার করে তাতে প্যালেস ও জরি মিশ্রত করে তৈরি করা হচ্ছে কাপড়। এখানকার তাঁতপল্লীতে বুটিক হাউজের ওড়না থান কাপড় ও এন্ডি থান কাপড়ের ফ্রেবিক্স তৈরি করা হচ্ছে। এ দিয়ে নানা পোশাক তৈরি করছে বুটিক হাউজগুলো।

তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে দীর্ঘদিন রং সুতার দাম চড়া থাকায় একের পর এক বন্ধ তাঁত বন্ধ করতে হয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন তাঁতিরা। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ায় এর চাহিদা ছিল কম। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কোরবানির ঈদে তাঁতপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে।

বেড়া পৌর এলাকার নতুনপাড়া গ্রামের তাঁতি মতিন মিয়া জানান, তাদের গ্রামে বছর দুই আগেও হাজার তিনেক তাঁত চালু ছিল। এখনও অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ। আমিও দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ রেখেছিলাম। ঈদ উপলক্ষে টাকা ঋণ নিয়ে দশটা তাঁত চালু করেছি। এখন যে লুঙ্গি তৈরি করছি তার চাহিদা থাকায় এখন বেশ ভাল লাগছে। তাঁতি আজিজুল হাকিম জানান তাঁর ২৪টি তাঁতের মধ্যে ১২টি তাঁত পুরোপুরি বন্ধ করে ছিল। ঈদে চাহিদা বাড়ায় আবার সেগুলো চালু করেছেন। তিনি জানান রং-সুতার দাম নিয়ন্ত্রণ করা হলে আবার ও তাঁতিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। এখানকার আরেক তাঁত কারখানার মালিক বুলবুল হোসেন জানান, তাঁর ৪০টি তাঁত ছিল। করোনার সময় সব কটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে সেগুলো আবার চালু করতে শুরু করেছেন।

ঈশ্বরদীর বেনারসি পল্লির তাঁতশ্রমিক আনোয়ার ও জাহিদ জানান, তাঁরা শুধু বেনারসি শাড়ির বুনন জানেন। তাই কষ্ট হলেও এই পেশাতেই থাকতে হচ্ছে। করোনাকালে কারখানা বন্ধ ছিল। পরে প্রতি চার-পাঁচ দিনে একটি করে শাড়ি তৈরি করে এক হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন। বর্তমানে শাড়ির চাহিদা বাড়ায় দিন রাত কাজ করছেন। সপ্তাতে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হচ্ছে। বেনারসি পল্লীর তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওকিল হোসেন জানান, রং সুতার দাম কমানো ও ভারতীয় শাড়ি আমদানি বন্ধ হলে দেশের তাঁতিরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড পাবনা বেসিক সেন্টারের দায়িত্বরত লিয়াজোঁ অফিসার খন্দকার ওবাইদুর রহমান জিলানী দাবি করেছেন করোনার ক্ষতি পোষাতে তাঁতিদের প্রণোদনা ও ঋণের ব্যবস্থা করায় সামনের কোরবানির ঈদ, দুর্গাপূজা উপলক্ষে তাঁতীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
পাবনা জেলা তাঁতি সমবায় সমিতির সভাপতি কামরুল আনান রিপন জানান, সরকার বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতিদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে বন্ধ হওয়া তাঁতগুলো আবার সচল হবে।