ঢাকা ০২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নওগাঁয় বিআরটিএ’র অনলাইন সেবার মান বাড়লেও, দৌরাত্ব কমেনি দালালদের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩
  • / ৪৩৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নওগাঁ প্রতিনিধি :

নওগাঁয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চালু হয়েছে অনলাইন মাধ্যম। এতে কিছুটা সেবার মান বেড়েছে। তারপরও যেন ভোগান্তীর শেষ নেই। মানুষ ভোগান্তী থেকে রক্ষা পেতে এখনো মধ্যস্থতাকারী (দালাল) এর স্মরণাপন্ন হচ্ছে। দৌরাত্ব কিছুতেই কমছে না দালালদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালরাও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার একটি অংশ চলে যাচ্ছে অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেটে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ওয়েব পোর্টাল সূত্রে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত ফি প্রথম ক্যাটাগরিতে ৫১৮ টাকা ও দ্বিতীয় ক্যাটাগরির জন্য ৭৪৮ টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। অনলাইন সিস্টেম থেকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হবে এবং গ্রাহক সাথে সাথেই সিস্টেম থেকেই তার শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এরপর ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। নির্ধারিত ফি (পেশাদার- ২ হাজার ৭৭২ টাকা ও অপেশাদার- ৪ হাজার ৪৯৭ টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে রশিদ নিতে হবে।

হয়রানি বা ভোগান্তী পোহাতে না হয় জন্য সেবা প্রার্থীরা দালালের স্মরণাপন্ন হতে হয়। যারা দালাল ধরে কাজ করেছেন তারা এখনো জানেন না অনলাইনে ঘরে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করতে হয়। দালালের নির্ধারিত কোন চাহিদা নেই। তবে কোন গ্রাহক ভেদে যার কাছ থেকে যত নিতে পারে। কামরুল, মানিক ও আতিক সহ কয়েকজন বিআরটিএ অফিসের চিহ্নিত দালাল।

২৫-২৭ এপ্রিল নওগাঁ বিআরটিএ অফিস ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) তে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়। গত ২৬ এপ্রিল (বুধবার) কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ছিল ড্রাইভিং পরীক্ষা। সেবা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনলাইনে যদিও ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করা যায়। তবে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট এর ঝামেলা এড়াতে দালালের স্মরণাপর্ন হতে হয়। সেখানে ফেল (অকৃতকার্য) হলে আবারও অতিরিক্ত টাকা খরচ ও সময় লাগবে। মানুষ এখনো অনলাইন বুঝে উঠেনি। তারপরও সুবিধা পাচ্ছে। শুধু দালালমুক্ত না অফিস যেন স্বচ্ছতার সাথে সেবা দেয় সেই দাবীও তাদের।

নওগাঁ শহরের জগৎসিংহপুর মহল্লার শাহজান মন্ডল। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির পেশাদার ট্রাক চালক। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছিলেন। গত ২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) কাগজপত্র হাতে নিয়ে বিআরটিএ অফিসের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, হালকা এবং মিডিয়াম ধাপের লাইসেন্স দিয়ে এতোদিন গাড়ি চালিয়েছি। সে সময় লাইসেন্স পেতে নিজেই কাগজপত্র সম্পূর্ন করেছিলাম। কাগজপত্র ঠিক করতে অনেকবার ঘুরতে হয়েছে। কিছু টাকাও কম লেগেছিল। গত দুই বছর আগে কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে। রাস্তায় বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এখন ভারী যানের জন্য কাগজপত্র সম্পূর্ন করার কার্যক্রম করছি। এজন্য দ্রæত লাইসেন্স পেতে ১০ হাজার টাকায় দালাল ধরেছি। সবসময় বাড়ি আসতে পারিনা। টাকা একটু বেশি দিতে হচ্ছে কিন্তু ঘুরতে বা হয়রানি যেন না হতে হয়।

২০১৯ সালের মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রক্রিয়া শুরু করেন শহরের সুলতানপুর মহল্লার খোরশেদ। তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য দালাল ধরছিলাম। সে অনুযায়ি চুক্তি করে টাকাও দিয়েছিলাম। আজকাল হবে বলে কয়েক বছর পার হয়ে গেছে। অবশেষে তাকে চাপাচাপি শুরু করলে কাজটি করে দিতে বাধ্য হয়। এরমধ্যে লাইসেন্সের ফি বেড়ে গেছে। তারপরও ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

পত্নীতলা উপজেলার নয়ন ও আলমগীর নামে বলেন, কুদ্দুস নামে একজনের মাধ্যম দিয়ে হালকা যান (মোটরসাইকেল ও মাইক্রো) লাইসেন্স করা হচ্ছে। এজন্য ১২ হাজার টাকা করে চুক্তি করেছি। তবে সরকারি ভাবে কত টাকা লাগে জানিনা। কাজ যেন সহজ এবং দ্রুত হয়।

ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছেন। স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা (ম্যাসেজ) পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে বিআরটিএতে কার্ড নিতে আসছিলেন। তিনি বলেন, কার্ড নিতে এসে শুনলাম বিকেল ৩টা থেকে বিতরণ করা হবে। কিন্তু বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে। অফিসতো আমাকে দিবে না। পরে এক মাধ্যমে ২০০ টাকা দিয়ে কার্ডটি সংগ্রহ করেছি। টাকা যাক সময়টা মূল্যবান।

শহরের বাসিন্দা মধ্যস্থতাকারী মানিক বলেন, মোটরসাইকেল শো রুমে চাকরি করার সুবাদে বিআরটিএ অফিসে নিয়মিত আসা-যাওয়া। এসুযোগে কিছু লাইসেন্স এর কাজ করে দেওয়া হয়। যাদের কাজ করে দিই তারা খুশি হয়ে কিছু দেয়। তবে অফিসের কারা সম্পৃক্ত তাদের বিষয়ে কিছু বলতে চাননা তিনি।

মধ্যস্থতাকারী রেজাউল ইসলাম বলেন, অনলাইন মাধ্যম চালু হয়ে আমাদের কাছে লোকজন আসা কমে গেছে। এতে আয়ও কমে গেছে। ঈদের পর গত চারদিনে ১২০০ টাকা আয় হয়েছে। অথচ গত বছরই প্রতিদিন অন্তত হাজার টাকা পকেটে নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। আগামীতে হয়ত এসব কাজ আর হবে না। মানুষ নিজের কাজ নিজেই করতে পারবে। আমরাও তখন হয়ত অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠবো। বিশেষ করে যারা গ্রামের মানুষ অনলাইন সম্পর্কে বুঝে না তারা আমাদের স্মরনাপর্ণ হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিতে পারলে সবাইকে দিয়ে রেখে কিছু টাকা হাতে থাকে।

নওগাঁ সার্কেল বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ বলেন, এখন মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ছে। বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য সব অনলাইনে হওয়ায় আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। অফিসে চাপও কমেছে। একই দিনে ফিঙ্গার এবং পরীক্ষা হচ্ছে। আবেদনের দুই মাসের মধ্যে ড্রাইভিং প্রক্রিয়া শেষ হয়ে প্রার্থী তার স্মার্ট কার্ড ডাক যোগে হাতে পেয়ে যাচ্ছে। সবাই এখনো অনলাইন বুঝে ওঠেনি। আগামী দুই বছরে ভোগান্তি আরো কমে যাবে।

মধ্যস্থতাকারী (দালাল) বিষয়ে তিনি বলেন, তবে তৃতীয়পক্ষের সহযোগিতা নিতে গিয়ে অনেককেই বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। অফিস দালাল মুক্ত এবং কারো কোন সম্পৃক্ততা নাই বলে দাবী করেন তিনি। তবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করতে হলে দালাল না ধরলে কোন কাজ হয়না সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননা তিনি।

 

বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

নওগাঁয় বিআরটিএ’র অনলাইন সেবার মান বাড়লেও, দৌরাত্ব কমেনি দালালদের

আপডেট সময় : ০৬:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩

নওগাঁ প্রতিনিধি :

নওগাঁয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চালু হয়েছে অনলাইন মাধ্যম। এতে কিছুটা সেবার মান বেড়েছে। তারপরও যেন ভোগান্তীর শেষ নেই। মানুষ ভোগান্তী থেকে রক্ষা পেতে এখনো মধ্যস্থতাকারী (দালাল) এর স্মরণাপন্ন হচ্ছে। দৌরাত্ব কিছুতেই কমছে না দালালদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালরাও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার একটি অংশ চলে যাচ্ছে অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেটে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ওয়েব পোর্টাল সূত্রে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত ফি প্রথম ক্যাটাগরিতে ৫১৮ টাকা ও দ্বিতীয় ক্যাটাগরির জন্য ৭৪৮ টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। অনলাইন সিস্টেম থেকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হবে এবং গ্রাহক সাথে সাথেই সিস্টেম থেকেই তার শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এরপর ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। নির্ধারিত ফি (পেশাদার- ২ হাজার ৭৭২ টাকা ও অপেশাদার- ৪ হাজার ৪৯৭ টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে রশিদ নিতে হবে।

হয়রানি বা ভোগান্তী পোহাতে না হয় জন্য সেবা প্রার্থীরা দালালের স্মরণাপন্ন হতে হয়। যারা দালাল ধরে কাজ করেছেন তারা এখনো জানেন না অনলাইনে ঘরে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করতে হয়। দালালের নির্ধারিত কোন চাহিদা নেই। তবে কোন গ্রাহক ভেদে যার কাছ থেকে যত নিতে পারে। কামরুল, মানিক ও আতিক সহ কয়েকজন বিআরটিএ অফিসের চিহ্নিত দালাল।

২৫-২৭ এপ্রিল নওগাঁ বিআরটিএ অফিস ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) তে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়। গত ২৬ এপ্রিল (বুধবার) কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ছিল ড্রাইভিং পরীক্ষা। সেবা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনলাইনে যদিও ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করা যায়। তবে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট এর ঝামেলা এড়াতে দালালের স্মরণাপর্ন হতে হয়। সেখানে ফেল (অকৃতকার্য) হলে আবারও অতিরিক্ত টাকা খরচ ও সময় লাগবে। মানুষ এখনো অনলাইন বুঝে উঠেনি। তারপরও সুবিধা পাচ্ছে। শুধু দালালমুক্ত না অফিস যেন স্বচ্ছতার সাথে সেবা দেয় সেই দাবীও তাদের।

নওগাঁ শহরের জগৎসিংহপুর মহল্লার শাহজান মন্ডল। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির পেশাদার ট্রাক চালক। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছিলেন। গত ২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) কাগজপত্র হাতে নিয়ে বিআরটিএ অফিসের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, হালকা এবং মিডিয়াম ধাপের লাইসেন্স দিয়ে এতোদিন গাড়ি চালিয়েছি। সে সময় লাইসেন্স পেতে নিজেই কাগজপত্র সম্পূর্ন করেছিলাম। কাগজপত্র ঠিক করতে অনেকবার ঘুরতে হয়েছে। কিছু টাকাও কম লেগেছিল। গত দুই বছর আগে কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে। রাস্তায় বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এখন ভারী যানের জন্য কাগজপত্র সম্পূর্ন করার কার্যক্রম করছি। এজন্য দ্রæত লাইসেন্স পেতে ১০ হাজার টাকায় দালাল ধরেছি। সবসময় বাড়ি আসতে পারিনা। টাকা একটু বেশি দিতে হচ্ছে কিন্তু ঘুরতে বা হয়রানি যেন না হতে হয়।

২০১৯ সালের মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রক্রিয়া শুরু করেন শহরের সুলতানপুর মহল্লার খোরশেদ। তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য দালাল ধরছিলাম। সে অনুযায়ি চুক্তি করে টাকাও দিয়েছিলাম। আজকাল হবে বলে কয়েক বছর পার হয়ে গেছে। অবশেষে তাকে চাপাচাপি শুরু করলে কাজটি করে দিতে বাধ্য হয়। এরমধ্যে লাইসেন্সের ফি বেড়ে গেছে। তারপরও ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

পত্নীতলা উপজেলার নয়ন ও আলমগীর নামে বলেন, কুদ্দুস নামে একজনের মাধ্যম দিয়ে হালকা যান (মোটরসাইকেল ও মাইক্রো) লাইসেন্স করা হচ্ছে। এজন্য ১২ হাজার টাকা করে চুক্তি করেছি। তবে সরকারি ভাবে কত টাকা লাগে জানিনা। কাজ যেন সহজ এবং দ্রুত হয়।

ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছেন। স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা (ম্যাসেজ) পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে বিআরটিএতে কার্ড নিতে আসছিলেন। তিনি বলেন, কার্ড নিতে এসে শুনলাম বিকেল ৩টা থেকে বিতরণ করা হবে। কিন্তু বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে। অফিসতো আমাকে দিবে না। পরে এক মাধ্যমে ২০০ টাকা দিয়ে কার্ডটি সংগ্রহ করেছি। টাকা যাক সময়টা মূল্যবান।

শহরের বাসিন্দা মধ্যস্থতাকারী মানিক বলেন, মোটরসাইকেল শো রুমে চাকরি করার সুবাদে বিআরটিএ অফিসে নিয়মিত আসা-যাওয়া। এসুযোগে কিছু লাইসেন্স এর কাজ করে দেওয়া হয়। যাদের কাজ করে দিই তারা খুশি হয়ে কিছু দেয়। তবে অফিসের কারা সম্পৃক্ত তাদের বিষয়ে কিছু বলতে চাননা তিনি।

মধ্যস্থতাকারী রেজাউল ইসলাম বলেন, অনলাইন মাধ্যম চালু হয়ে আমাদের কাছে লোকজন আসা কমে গেছে। এতে আয়ও কমে গেছে। ঈদের পর গত চারদিনে ১২০০ টাকা আয় হয়েছে। অথচ গত বছরই প্রতিদিন অন্তত হাজার টাকা পকেটে নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। আগামীতে হয়ত এসব কাজ আর হবে না। মানুষ নিজের কাজ নিজেই করতে পারবে। আমরাও তখন হয়ত অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠবো। বিশেষ করে যারা গ্রামের মানুষ অনলাইন সম্পর্কে বুঝে না তারা আমাদের স্মরনাপর্ণ হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিতে পারলে সবাইকে দিয়ে রেখে কিছু টাকা হাতে থাকে।

নওগাঁ সার্কেল বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ বলেন, এখন মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ছে। বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য সব অনলাইনে হওয়ায় আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। অফিসে চাপও কমেছে। একই দিনে ফিঙ্গার এবং পরীক্ষা হচ্ছে। আবেদনের দুই মাসের মধ্যে ড্রাইভিং প্রক্রিয়া শেষ হয়ে প্রার্থী তার স্মার্ট কার্ড ডাক যোগে হাতে পেয়ে যাচ্ছে। সবাই এখনো অনলাইন বুঝে ওঠেনি। আগামী দুই বছরে ভোগান্তি আরো কমে যাবে।

মধ্যস্থতাকারী (দালাল) বিষয়ে তিনি বলেন, তবে তৃতীয়পক্ষের সহযোগিতা নিতে গিয়ে অনেককেই বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। অফিস দালাল মুক্ত এবং কারো কোন সম্পৃক্ততা নাই বলে দাবী করেন তিনি। তবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করতে হলে দালাল না ধরলে কোন কাজ হয়না সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননা তিনি।

 

বা/খ: জই