ঢাকা ০৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২১:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৩৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আমাদেরই স্বজন। তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে জন্মগ্রহণ করাতে তাদের নিজেদের কোনো দোষ নেই। প্রকৃতির কারণেই তাদের এ কষ্ট। তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্র সবাই তাদের (হিজড়া জনগোষ্ঠীর) প্রতি অবিচার করে। তারা যাবে কোথায়, তাদের আশ্রয়স্থলটা কোথায়?

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক আর্ট ও চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এর আয়োজন করে ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা পরিবার ও সমাজের নিকট থেকে বঞ্চনার শিকার। তাদের ক্রন্দন ও ভালোবাসা আমাদের সেভাবে স্পর্শ করে না। বন্ধু’র মতো সংগঠনগুলো দের আশ্রয়স্থল, সুখে-দুঃখে তাদের আশা-ভরসার জায়গা। এসব মানবিক সংগঠনগুলো তাদের মাতৃস্নেহে, ভাইয়ের আদরে ও বোনের ভালোবাসা দিয়ে কাছে রাখছে। এর মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে তারা কাজ করে যাচ্ছে।

কে এম খালিদ বলেন, সৃষ্টির অপার সৌন্দর্যের মাঝে এক বেদনাঝরা জীবন হিজড়া জনগোষ্ঠীদের। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় তারা এখনো অনেক পিছিয়ে। পেশা হিসেবে বাজারে, বাসে, রাস্তায়, দোকানে টাকা তুলে জীবন নির্বাহ করছেন। রাস্তাঘাটে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছেন। আমাদের উচিত সমাজে এদের জায়গা করে দেওয়া। পরিবার যখন অবজ্ঞা-অস্বীকার করে তাদের তাড়িয়ে দেয়, তখন আমাদেরই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। এখন সময় এসেছে তাদের সবকিছুতে অধিকার দেওয়ার।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বের সব থেকে বড় ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় দেখেছি সেটির আয়োজক হিসেবে প্রথমে ছিলেন ইউনেস্কোর ডিজি এবং দ্বিতীয় হিসেবে ছিলেন এই হিজড়া সম্প্রদায়ের একজন। সেখানে কী বিশাল সম্মান তার! উন্নত বিশ্বেও তাদের নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। আমাদের দেশে আমরা যারা বিত্তশালী আছি, আমরা তাদের নিয়ে ভাবতে পারি। আমরা যদি তাদের গ্রহণ না করি, তাহলে তারা যাবে কোথায়? আমাদের দৃষ্টি বদলাতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে প্রত্যেকটি হিজড়া আমাদের পরিবারের সদস্য।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ আলোচনা অনুষ্ঠানে আমি এদের জন্য একটি চেয়ার রাখার ব্যবস্থা করব, যেন তারা সেসব আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। এছাড়া আমাদের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে ৫ থেকে ১০ মিনিট এই হিজড়াদের পারফরমেন্সের জন্য বরাদ্দ রাখারও চেষ্টা করব। যেন তারা মাথা উঁচু করে, সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন। আর তাদের নিয়ে এমন আর্ট ও চলচ্চিত্র উৎসব সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।

তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কে এম খালিদ বলেন, তাদের নিয়ে প্রতি মাসে অনুষ্ঠান আয়োজন করুন। এতে আমি উপস্থিত থাকব। প্রতিমন্ত্রী এসময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটিকে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার আশ্বাস প্রদান করেন।

এবারের উৎসবে দক্ষিণ-এশিয় অঞ্চলের ৬টি দেশের ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে নির্মিত ২৫টি চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। পাশাপাশি ২৫টি শিল্পকর্মের একটি প্রদর্শনী মিলনায়তনের গ্যালারিতে তিন দিন চলবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন ট্রাসজেন্ডার ও হিজড়া নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে গঠিত বন্ধু’র সাংস্কৃতিক দল ‘সত্তা’। নৃত্যনাট্যটি কোরিওগ্রাফি করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম হিরো। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান হাবিবুর রহমান, মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন ল্যাফাভ ও ইউএনএইডসের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সায়মা খান।

নিউজটি শেয়ার করুন

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৯:২১:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আমাদেরই স্বজন। তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে জন্মগ্রহণ করাতে তাদের নিজেদের কোনো দোষ নেই। প্রকৃতির কারণেই তাদের এ কষ্ট। তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্র সবাই তাদের (হিজড়া জনগোষ্ঠীর) প্রতি অবিচার করে। তারা যাবে কোথায়, তাদের আশ্রয়স্থলটা কোথায়?

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক আর্ট ও চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এর আয়োজন করে ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা পরিবার ও সমাজের নিকট থেকে বঞ্চনার শিকার। তাদের ক্রন্দন ও ভালোবাসা আমাদের সেভাবে স্পর্শ করে না। বন্ধু’র মতো সংগঠনগুলো দের আশ্রয়স্থল, সুখে-দুঃখে তাদের আশা-ভরসার জায়গা। এসব মানবিক সংগঠনগুলো তাদের মাতৃস্নেহে, ভাইয়ের আদরে ও বোনের ভালোবাসা দিয়ে কাছে রাখছে। এর মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে তারা কাজ করে যাচ্ছে।

কে এম খালিদ বলেন, সৃষ্টির অপার সৌন্দর্যের মাঝে এক বেদনাঝরা জীবন হিজড়া জনগোষ্ঠীদের। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় তারা এখনো অনেক পিছিয়ে। পেশা হিসেবে বাজারে, বাসে, রাস্তায়, দোকানে টাকা তুলে জীবন নির্বাহ করছেন। রাস্তাঘাটে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছেন। আমাদের উচিত সমাজে এদের জায়গা করে দেওয়া। পরিবার যখন অবজ্ঞা-অস্বীকার করে তাদের তাড়িয়ে দেয়, তখন আমাদেরই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। এখন সময় এসেছে তাদের সবকিছুতে অধিকার দেওয়ার।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বের সব থেকে বড় ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় দেখেছি সেটির আয়োজক হিসেবে প্রথমে ছিলেন ইউনেস্কোর ডিজি এবং দ্বিতীয় হিসেবে ছিলেন এই হিজড়া সম্প্রদায়ের একজন। সেখানে কী বিশাল সম্মান তার! উন্নত বিশ্বেও তাদের নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। আমাদের দেশে আমরা যারা বিত্তশালী আছি, আমরা তাদের নিয়ে ভাবতে পারি। আমরা যদি তাদের গ্রহণ না করি, তাহলে তারা যাবে কোথায়? আমাদের দৃষ্টি বদলাতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে প্রত্যেকটি হিজড়া আমাদের পরিবারের সদস্য।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ আলোচনা অনুষ্ঠানে আমি এদের জন্য একটি চেয়ার রাখার ব্যবস্থা করব, যেন তারা সেসব আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। এছাড়া আমাদের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে ৫ থেকে ১০ মিনিট এই হিজড়াদের পারফরমেন্সের জন্য বরাদ্দ রাখারও চেষ্টা করব। যেন তারা মাথা উঁচু করে, সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন। আর তাদের নিয়ে এমন আর্ট ও চলচ্চিত্র উৎসব সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।

তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কে এম খালিদ বলেন, তাদের নিয়ে প্রতি মাসে অনুষ্ঠান আয়োজন করুন। এতে আমি উপস্থিত থাকব। প্রতিমন্ত্রী এসময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটিকে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার আশ্বাস প্রদান করেন।

এবারের উৎসবে দক্ষিণ-এশিয় অঞ্চলের ৬টি দেশের ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে নির্মিত ২৫টি চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। পাশাপাশি ২৫টি শিল্পকর্মের একটি প্রদর্শনী মিলনায়তনের গ্যালারিতে তিন দিন চলবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন ট্রাসজেন্ডার ও হিজড়া নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে গঠিত বন্ধু’র সাংস্কৃতিক দল ‘সত্তা’। নৃত্যনাট্যটি কোরিওগ্রাফি করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম হিরো। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান হাবিবুর রহমান, মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন ল্যাফাভ ও ইউএনএইডসের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সায়মা খান।