ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তিন বারের ইউপি সদস্য পেলেন এসএসসিতে জিপিএ- ৫, নারী সদস্য পেলেন ৪.৯৬

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
টানা তিন বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ৪৫ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ওই ইউপি সদস্যের নাম আব্দুল মোমিন। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঝুনকাইল গ্রামের শামসুল হকের বড় ছেলে। তিনি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। শুধ তিনি নন, এমন সাফল্য পেয়েছেন সোনামুখী ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য (১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড) মলি খাতুনও। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৯৬ পেয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুরে প্রকাশিত হয় তাঁদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল। আব্দুল মোমিন জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার দেউলমুরা এন.আর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আর কাজিপুরের হাজরাহিটি আনোয়ারা আজাদ টেকনিক্যাল স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মলি খাতুন।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক অনটনের কারণে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে এক বাড়িতে জাগির থাকতেন আব্দুল মোমিন। সেখানকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর রাজধানীতে পাড়ি জমান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। পরে গ্রামে ফিরে এলাকার জনগণের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। ইউপি সদস্যের নির্বাচন করেন। সে থেকে এখন পর্যন্ত টানা তিনবার ইউপি সদস্যের দায়িত্বে আছেন তিনি।
ইউপি সদস্য আব্দুল মোমিন বলেন, আগে থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অর্থাভাবে পেরে উঠতে পারিনি। ইউপি সদস্য হয়ে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয়তা আরও অনুভব করেছি। সে জন্যই একটি কারিগরি স্কুলে ভর্তি হই। কাজের ফাঁকে পড়াশোনা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, আজকে আমি সফল। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছি। আমার এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজমান।
তিনি বলেন, আমার এ লেখা পড়া চালিয়ে যাবো। ভবিষ্যতে স্নাতক সম্পন্ন করতে চাই আমি। আমি চাই যাতে ছাত্ররা আমাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে পড়াশোনায় মনযোগ দেয়।
সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মলি খাতুন বলেন, আমার বিয়ে হয় ১৮ বছর আগে। তখন আমি ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। তারপর আর পড়া হয়নি। খুব ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার। তাই ১৮ বছর পর আবার নতুন উদ্যোমে পড়াশোনা শুরু করে এসএসসি পাশ করলাম। বাজারে এসেছি মিষ্টি কিনতে। সবার মাঝে বিলিয়ে দেব। পড়াশোনা চালিয়ে যাবো। আমি ডিগ্রি পাশ করবো ইনশাআল্লাহ।
আব্দুল মোমিনের এমন সাফল্যে শুভগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, আব্দুল মোমিন এসএসসি পাশ করেছেন এতে আমরা খুব আনন্দিত। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া যায় কিনা বিষয়টি দেখবো।
মলি খাতুনের সাফল্যে সোনামুখী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী খাঁন বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি পরিষদের পক্ষ থেকে। মলিকে সংবর্ধনার দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, আমার উপজেলার দুজন ইউপি সদস্য এসএসসি পাশ করেছেন। তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন। লেখাপড়ার যে বয়স নেই তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন। আমরা তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

তিন বারের ইউপি সদস্য পেলেন এসএসসিতে জিপিএ- ৫, নারী সদস্য পেলেন ৪.৯৬

আপডেট সময় : ১০:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
টানা তিন বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ৪৫ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ওই ইউপি সদস্যের নাম আব্দুল মোমিন। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঝুনকাইল গ্রামের শামসুল হকের বড় ছেলে। তিনি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। শুধ তিনি নন, এমন সাফল্য পেয়েছেন সোনামুখী ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য (১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড) মলি খাতুনও। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৯৬ পেয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুরে প্রকাশিত হয় তাঁদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল। আব্দুল মোমিন জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার দেউলমুরা এন.আর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আর কাজিপুরের হাজরাহিটি আনোয়ারা আজাদ টেকনিক্যাল স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মলি খাতুন।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক অনটনের কারণে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে এক বাড়িতে জাগির থাকতেন আব্দুল মোমিন। সেখানকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর রাজধানীতে পাড়ি জমান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। পরে গ্রামে ফিরে এলাকার জনগণের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। ইউপি সদস্যের নির্বাচন করেন। সে থেকে এখন পর্যন্ত টানা তিনবার ইউপি সদস্যের দায়িত্বে আছেন তিনি।
ইউপি সদস্য আব্দুল মোমিন বলেন, আগে থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অর্থাভাবে পেরে উঠতে পারিনি। ইউপি সদস্য হয়ে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয়তা আরও অনুভব করেছি। সে জন্যই একটি কারিগরি স্কুলে ভর্তি হই। কাজের ফাঁকে পড়াশোনা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, আজকে আমি সফল। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছি। আমার এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজমান।
তিনি বলেন, আমার এ লেখা পড়া চালিয়ে যাবো। ভবিষ্যতে স্নাতক সম্পন্ন করতে চাই আমি। আমি চাই যাতে ছাত্ররা আমাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে পড়াশোনায় মনযোগ দেয়।
সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মলি খাতুন বলেন, আমার বিয়ে হয় ১৮ বছর আগে। তখন আমি ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। তারপর আর পড়া হয়নি। খুব ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার। তাই ১৮ বছর পর আবার নতুন উদ্যোমে পড়াশোনা শুরু করে এসএসসি পাশ করলাম। বাজারে এসেছি মিষ্টি কিনতে। সবার মাঝে বিলিয়ে দেব। পড়াশোনা চালিয়ে যাবো। আমি ডিগ্রি পাশ করবো ইনশাআল্লাহ।
আব্দুল মোমিনের এমন সাফল্যে শুভগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, আব্দুল মোমিন এসএসসি পাশ করেছেন এতে আমরা খুব আনন্দিত। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া যায় কিনা বিষয়টি দেখবো।
মলি খাতুনের সাফল্যে সোনামুখী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী খাঁন বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি পরিষদের পক্ষ থেকে। মলিকে সংবর্ধনার দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, আমার উপজেলার দুজন ইউপি সদস্য এসএসসি পাশ করেছেন। তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন। লেখাপড়ার যে বয়স নেই তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন। আমরা তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করবো।