ঢাকা ১২:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চোখের সেবার পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সুনাম সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলে

মো: জাকির হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৪:৩২:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৭৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
শুরুর গল্পটা ১৯৭৩ সালে,৫০ বছর আগে পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারীতে জাতীয় অন্ধ কল্যান সমিতি পটুয়াখালী জেলা শাখার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল চক্ষু চিকিৎসা সেবা ক্যাম্পের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তৎকালীন পটুয়াখালী জেলার সামাজিক রাজনৈতিক সহ সর্বক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় শুরু হয়েছিল জাতীয় অন্ধ কল্যান সমিতির পটুয়াখালীর কার্যক্রম।
স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জম হোসেন সুলতান মিয়ার নেতৃত্বে স্কুল কমিটির সভাপতি কাজী আবুল কাসেমের সার্বিক নির্দেশনায় এ্যাডভোকেট আবুল কাসেম ও এমএ গফুর মিয়া, সহ স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগীতা, শ্রম ও চেষ্টায় জাতীয় অন্ধ কল্যান সমিতি পটুয়াখালী শাখা যে লক্ষ নিয়ে চক্ষু চিকিৎসা সেবা ক্যাম্পের মাধ্যমে শুরুটা করেছিলেন আজ তারই সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালেরপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
৫০ বছর পাড় করে দেয়া পটুয়াখালীর সবচেয়ে পুরানো এ সংগঠনটির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে নির্মীত বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালটি  ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ইতোমধ্যে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষেকে চক্ষু সেবা প্রদান করেছে।পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতালে  শুধূমাত্র পটুয়াখালী জেলারই নয় ,পাশ্ববর্তী বরগুনা জেলা সহ পাশ্ববর্তী জেলা গুলি থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ চক্ষু সেবা নিচ্ছেন।
১৯৭৩ সাল থেকে পটুয়াখালী অন্ধকল্যান সমিতির সেবা মূলক কার্যক্রমের সুনাম সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে যারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে অন্ধকল্যান সমিতির জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং সাধারন সম্পাদক আইভি রহমান পটুয়াখালী জেলা শহরে একটি আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষনা করেন। জার্মানীর সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান “আন্ধেরী হিলফের প্রেসিডেন্ট মিস রোজী গোলম্যান এগিয়ে আসেন এ কাজে ,শর্ত দেন ২০ ভাগ স্থানীয় অনুদান দিলে ৮০ ভাগ অর্থ তারা দিবেন এবং হাসপাতালের জমি দিতে হবে বিনামূল্যে।
মহামান্য রাষ্ঠ্রপতির অনুমোদন ক্রমে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান আ: হক স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একহাজার এক টাকায় ৬৬ শতাংশ জমি পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন।  পরবর্তীতে ১০জন দানশীল সম্মানিত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বেড ডোনেশনের ২০ ভাগ অর্থ নিয়ে আন্ধেরী হিলফের ৮০ ভাগ অর্থ দিয়ে ১৯৯১ সালের ৬ মার্চ ২৫ শয্যা বিশিষ্ঠ পটুয়াখালী চক্ষু হাসপাতাল ভবনের ভিক্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী এম কেরামত আলী ২৫ শয্যা বিশিষ্ট পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আউটডোর সেবার মাধ্যমে।। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে ইনডোর সেবা চালু হয় হাসপাতালটির।
১৯৯৯ সাল থেকে চোখের ছানি অপারেশন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আধুনিক অপারেশন আই,ও,এল অপারেশন কার্যক্রম শুরু করে পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালটি,যারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সাল থেকে চোখের ছানি অপারেশনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ফ্যাকো অপারেশন চলছে নিয়মিত।
বিএনএসবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরিশাল বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইওএল অপারেশন সম্পূর্ন বিনামূল্যে করে থাকেন প্রতিবছর। এ ছাড়াও চারশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ওবিনামূল্যে চশমা বিতরন করার পাশাপাশি ১০০ শিক্ষকের চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা ,দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ওসচেতনতার জন্য প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩ শ রুগীর সেবার জন্য সকাল ৮-৩০ থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকে এ হাসপাতালটি। নদী মাতৃক এ জেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য ১০ টি ক্যাম্প করা হয় প্রতিবছর।ঐ সকল মানুষকে সচেতন করার পাশাপশি  চোখের চিকিৎসা সম্পূর্ন ফ্রি করা হয় ওষুধ দেয়া হয় বিনামূল্যে এবং যাদের অপারেশন প্রয়োজন হয় তারা  হাসপাতালে  আসলে অর্ধেক খরচে অপারেশন করা হয়।
১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতালটি ১৩ লাখ ৬১ হাজার ২৫৭ জনকে চোখের সেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৬০২ জনকে, চোখের ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ২২০ জনকে এবং স্কুল সাইটটেস্টিং প্রোগ্রামের মাধমে ৯৩ হাজার ৪৪৫ জন কে চোখের বিভিন্ন ধরনের সেবা সহ অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারী  মাস পর্যন্ত ২১ হাজার ২৩৫ জনের চোখের ছানি পরা রুগীদের আইএলও সহ ফ্যাকোর মাধ্যমে অপারেশন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নেত্রনালী, টেরিজিয়ামসহ চোখের অন্যান্য অপারেশন করেছেন ৩৩ হাজার ২৩৯ রুগীর।
হাসপাতালটি শুরুতে যেভাবে তার কার্যক্রম শুরু করেছিল মাঝখানে দাতা সংস্থার সাথে চুক্তির শর্ত ভংগ করায় দাতা সংস্থা সকল অনুদান সহ ওসহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করে দিরে হাসপাতালটি অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পরে ২০০৫সালে। বিষয়টি গড়ায় উচ্চ আদালতে পরবর্তীতে এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে তৎকালীন কমিটির দায়েরকৃত রীট প্রত্যাহারেরসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সকলের পদত্যাগের  মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ২০০৭ সালে কমিটির দায়িত্ব গ্রহন করেন। ২০০৮ পরবর্তীতে একটি নির্বাচন হলেও বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক হস্ত:ক্ষেপের কারনে কমিটির দ্বন্দে হাসপাতালের অর্থনেতিক অবস্থা কিছুটা পিছিয়ে পরে ।
বর্তমানে বিএনএসবি হাসপাতালের একটি সময় ছিল যখন দাতা সংস্থার সাথে শর্ত ভংগের কারনে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্ঠির পরবর্তীতে প্রশাসনের সহায়তায় পনুরায় দাতাসংস্থার আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সাল থেকে নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু করে বিএনএসবি হাসপাতাল ৭০ লাথ টাকা পুজির সময় দাতা সংস্থার তাদের নিয়মঅনুযায়ী ১৫ বছর পরে তাদের অনুদানের পর্ব চুকিয়ে নেন।
অন্ধ কল্যাণ সমিতি পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির কোষাধাক্ষ গাজী হাফিজুর রহমান শবীর জানান, ২০১০ সাল থেকে শুরু হয় বিএনএসবি হাসপাতালের ঘুরে দাড়ানোর গল্পটা শুরু করেন জনবল বাড়িয়ে সেবার মাধ্যমে আয়ের বিভিন্ন পথ যেমন নিজস্ব ল্যাব,ফার্মেসী ,চশমার দোকান চালু করেন।বর্তমানে  বিএনএসবি হাসপাতালের ৮ কোটি টাকা এফডিআর রয়েছে,এর মধ্যে হাসপাতালের ফার্মেসীর লাভ থেকে তিনকোটি টাকা,প্যাথোলজির লাভ থেকে এক কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে।বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সার্জন ২ জন সহ ৬ জন ডাক্তারসহ ৬৩ জন স্টাফ রয়েছে, যাদের ২২ লাখ টাকা বেতন দিতে হয়, এছাড়াও আনুষাঙ্গিক খরচ হয় আরো ৮ লাখ টাকা,যা নিয়ে মোট খরচ হয় ৩০ লাখ। বর্তমানে মাসে গড়ে হাসপাতালটি সব খরচ বাদ দিয়ে ৫ লাখ টাকা আয় করে থাকে,যা দিয়ে হাসপাতালটি বর্তমানে সাবলম্বি অবস্থানে রয়েছে। সেবার মন মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠা পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতালটি মুক্তিযোদ্ধাদের হাফ, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল, ভিক্ষুক, দিনমজুর, গরীব, অসহায় মানুষদের জন্য ফ্রি, এ ছাড়াও সমিতির সহস্রাধিক আজীবন সদস্যদের জন্য অপারেশনের জন্য ২৫ ভাগ ছাড় দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরোও জানান, বর্তমান কমিটির সভাপতি কাজী আলমগীর ও সাধারন সম্পাদক ডা: মো: শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি ভবিষেৎ আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত ৫০ বেডের হাসপাতালের মাধ্যমে চোখের সেবার পাশাপাশি অন্যান্য সেবার পরিকল্পনা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

চোখের সেবার পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সুনাম সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলে

আপডেট সময় : ০৪:৩২:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪
শুরুর গল্পটা ১৯৭৩ সালে,৫০ বছর আগে পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারীতে জাতীয় অন্ধ কল্যান সমিতি পটুয়াখালী জেলা শাখার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল চক্ষু চিকিৎসা সেবা ক্যাম্পের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তৎকালীন পটুয়াখালী জেলার সামাজিক রাজনৈতিক সহ সর্বক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় শুরু হয়েছিল জাতীয় অন্ধ কল্যান সমিতির পটুয়াখালীর কার্যক্রম।
স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জম হোসেন সুলতান মিয়ার নেতৃত্বে স্কুল কমিটির সভাপতি কাজী আবুল কাসেমের সার্বিক নির্দেশনায় এ্যাডভোকেট আবুল কাসেম ও এমএ গফুর মিয়া, সহ স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগীতা, শ্রম ও চেষ্টায় জাতীয় অন্ধ কল্যান সমিতি পটুয়াখালী শাখা যে লক্ষ নিয়ে চক্ষু চিকিৎসা সেবা ক্যাম্পের মাধ্যমে শুরুটা করেছিলেন আজ তারই সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালেরপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
৫০ বছর পাড় করে দেয়া পটুয়াখালীর সবচেয়ে পুরানো এ সংগঠনটির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে নির্মীত বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালটি  ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ইতোমধ্যে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষেকে চক্ষু সেবা প্রদান করেছে।পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতালে  শুধূমাত্র পটুয়াখালী জেলারই নয় ,পাশ্ববর্তী বরগুনা জেলা সহ পাশ্ববর্তী জেলা গুলি থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ চক্ষু সেবা নিচ্ছেন।
১৯৭৩ সাল থেকে পটুয়াখালী অন্ধকল্যান সমিতির সেবা মূলক কার্যক্রমের সুনাম সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে যারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে অন্ধকল্যান সমিতির জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং সাধারন সম্পাদক আইভি রহমান পটুয়াখালী জেলা শহরে একটি আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষনা করেন। জার্মানীর সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান “আন্ধেরী হিলফের প্রেসিডেন্ট মিস রোজী গোলম্যান এগিয়ে আসেন এ কাজে ,শর্ত দেন ২০ ভাগ স্থানীয় অনুদান দিলে ৮০ ভাগ অর্থ তারা দিবেন এবং হাসপাতালের জমি দিতে হবে বিনামূল্যে।
মহামান্য রাষ্ঠ্রপতির অনুমোদন ক্রমে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান আ: হক স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একহাজার এক টাকায় ৬৬ শতাংশ জমি পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন।  পরবর্তীতে ১০জন দানশীল সম্মানিত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বেড ডোনেশনের ২০ ভাগ অর্থ নিয়ে আন্ধেরী হিলফের ৮০ ভাগ অর্থ দিয়ে ১৯৯১ সালের ৬ মার্চ ২৫ শয্যা বিশিষ্ঠ পটুয়াখালী চক্ষু হাসপাতাল ভবনের ভিক্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী এম কেরামত আলী ২৫ শয্যা বিশিষ্ট পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আউটডোর সেবার মাধ্যমে।। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে ইনডোর সেবা চালু হয় হাসপাতালটির।
১৯৯৯ সাল থেকে চোখের ছানি অপারেশন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আধুনিক অপারেশন আই,ও,এল অপারেশন কার্যক্রম শুরু করে পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালটি,যারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সাল থেকে চোখের ছানি অপারেশনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ফ্যাকো অপারেশন চলছে নিয়মিত।
বিএনএসবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরিশাল বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইওএল অপারেশন সম্পূর্ন বিনামূল্যে করে থাকেন প্রতিবছর। এ ছাড়াও চারশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ওবিনামূল্যে চশমা বিতরন করার পাশাপাশি ১০০ শিক্ষকের চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা ,দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ওসচেতনতার জন্য প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩ শ রুগীর সেবার জন্য সকাল ৮-৩০ থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকে এ হাসপাতালটি। নদী মাতৃক এ জেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য ১০ টি ক্যাম্প করা হয় প্রতিবছর।ঐ সকল মানুষকে সচেতন করার পাশাপশি  চোখের চিকিৎসা সম্পূর্ন ফ্রি করা হয় ওষুধ দেয়া হয় বিনামূল্যে এবং যাদের অপারেশন প্রয়োজন হয় তারা  হাসপাতালে  আসলে অর্ধেক খরচে অপারেশন করা হয়।
১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতালটি ১৩ লাখ ৬১ হাজার ২৫৭ জনকে চোখের সেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৬০২ জনকে, চোখের ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ২২০ জনকে এবং স্কুল সাইটটেস্টিং প্রোগ্রামের মাধমে ৯৩ হাজার ৪৪৫ জন কে চোখের বিভিন্ন ধরনের সেবা সহ অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারী  মাস পর্যন্ত ২১ হাজার ২৩৫ জনের চোখের ছানি পরা রুগীদের আইএলও সহ ফ্যাকোর মাধ্যমে অপারেশন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নেত্রনালী, টেরিজিয়ামসহ চোখের অন্যান্য অপারেশন করেছেন ৩৩ হাজার ২৩৯ রুগীর।
হাসপাতালটি শুরুতে যেভাবে তার কার্যক্রম শুরু করেছিল মাঝখানে দাতা সংস্থার সাথে চুক্তির শর্ত ভংগ করায় দাতা সংস্থা সকল অনুদান সহ ওসহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করে দিরে হাসপাতালটি অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পরে ২০০৫সালে। বিষয়টি গড়ায় উচ্চ আদালতে পরবর্তীতে এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে তৎকালীন কমিটির দায়েরকৃত রীট প্রত্যাহারেরসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সকলের পদত্যাগের  মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ২০০৭ সালে কমিটির দায়িত্ব গ্রহন করেন। ২০০৮ পরবর্তীতে একটি নির্বাচন হলেও বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক হস্ত:ক্ষেপের কারনে কমিটির দ্বন্দে হাসপাতালের অর্থনেতিক অবস্থা কিছুটা পিছিয়ে পরে ।
বর্তমানে বিএনএসবি হাসপাতালের একটি সময় ছিল যখন দাতা সংস্থার সাথে শর্ত ভংগের কারনে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্ঠির পরবর্তীতে প্রশাসনের সহায়তায় পনুরায় দাতাসংস্থার আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সাল থেকে নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু করে বিএনএসবি হাসপাতাল ৭০ লাথ টাকা পুজির সময় দাতা সংস্থার তাদের নিয়মঅনুযায়ী ১৫ বছর পরে তাদের অনুদানের পর্ব চুকিয়ে নেন।
অন্ধ কল্যাণ সমিতি পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির কোষাধাক্ষ গাজী হাফিজুর রহমান শবীর জানান, ২০১০ সাল থেকে শুরু হয় বিএনএসবি হাসপাতালের ঘুরে দাড়ানোর গল্পটা শুরু করেন জনবল বাড়িয়ে সেবার মাধ্যমে আয়ের বিভিন্ন পথ যেমন নিজস্ব ল্যাব,ফার্মেসী ,চশমার দোকান চালু করেন।বর্তমানে  বিএনএসবি হাসপাতালের ৮ কোটি টাকা এফডিআর রয়েছে,এর মধ্যে হাসপাতালের ফার্মেসীর লাভ থেকে তিনকোটি টাকা,প্যাথোলজির লাভ থেকে এক কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে।বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সার্জন ২ জন সহ ৬ জন ডাক্তারসহ ৬৩ জন স্টাফ রয়েছে, যাদের ২২ লাখ টাকা বেতন দিতে হয়, এছাড়াও আনুষাঙ্গিক খরচ হয় আরো ৮ লাখ টাকা,যা নিয়ে মোট খরচ হয় ৩০ লাখ। বর্তমানে মাসে গড়ে হাসপাতালটি সব খরচ বাদ দিয়ে ৫ লাখ টাকা আয় করে থাকে,যা দিয়ে হাসপাতালটি বর্তমানে সাবলম্বি অবস্থানে রয়েছে। সেবার মন মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠা পটুয়াখালী বিএনএসবি হাসপাতালটি মুক্তিযোদ্ধাদের হাফ, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল, ভিক্ষুক, দিনমজুর, গরীব, অসহায় মানুষদের জন্য ফ্রি, এ ছাড়াও সমিতির সহস্রাধিক আজীবন সদস্যদের জন্য অপারেশনের জন্য ২৫ ভাগ ছাড় দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরোও জানান, বর্তমান কমিটির সভাপতি কাজী আলমগীর ও সাধারন সম্পাদক ডা: মো: শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি ভবিষেৎ আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত ৫০ বেডের হাসপাতালের মাধ্যমে চোখের সেবার পাশাপাশি অন্যান্য সেবার পরিকল্পনা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাখ//আর