ঢাকা ১১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চরের বুকে ফসল ফলিয়ে স্বাবলম্বী নদীভাঙা লক্ষাধিক পরিবার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৫১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

পাবনা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহি পদ্মা ও যমুনা মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা অসংখ্য চর সবুজ আর হলুদে ভরে গেছে। নদীভাঙা মানুষ চরে জমিতে ২৫ প্রকার ফসল আবাদ করছেন। এক সময় যমুনা ও পদ্মা নদী ছিল তাদের দুঃখের কারণ। এখন সেই নদীর চরে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে অভাব দুর করছেন নদীভাঙা মানুষ। অক্লান্ত পরিশ্রমে অসম্ভাবকে সম্ভব করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন লক্ষাধিক পরিবার।

যমুনা ও পদ্মার ভাঙনে ঘর-বাড়ী, ফসলী জমি হরিয়ে ভূমিহীন নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। এমন কী অভাব-অনটন ছিল তাদের নিত্যদিনের সাথী। এখন সে চিত্র বদলে গেছে। এইতো কয়েক বছর আগে যেখানে ছিল বালুচর, সেই চরে বন্যায় পলিমাটি জমে এসব চর এখন উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। দীগন্ত বিস্তীর্ণ বালুচরে এখন আবাদ হয়েছে সরিষাসহ ২৫ প্রকারের ফসল। যে দিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর সবুজের সমারোহ। নদীর তলদেশ শুকিয়ে জেগে ওঠে বালুচর। এই বালুচরে ফসল ফলানো তো দুরের কথা, ঘাসও জন্মাাতো না। অথচ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেই নদীর ছোট-বড় অসংখ্য চরে ফলাচ্ছে গম, কাাউন, ভূট্রা, বাদাম, মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, গাজর, মরিচ, হলুদ, শসা, সিম, কুমড়া, ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাকসহ ২৫ প্রকারের ফসল চাষ করেছে কৃষকরা। চরের বেলে দো-আঁশ মাটিতে ডাল জাতীয় ফসল মাসকালাই, খেসারী, ছোলা প্রচুর পরিমানে আবাদ হচ্ছে। এছাড়া চরে গড়ে উঠছে জনবসতি ও গবাদিপশুর ছোট ছোট খামার।

যমুনা ও পদ্মার নদীর ছোট-বড় অসংখ্য চরে গম, কাাউন, ভূট্রা, বাদাম, হলুদ মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, গাজর, মরিচ, হলুদ, শসা, সিম, কুমড়াসহ নানা প্রকারের শাক-সবজি। চরের আকার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তা স্থায়ী চরে পরিণত হচ্ছে। জনবসতিহীন দুর্গম চরে এখন বসেছে প্রাণের মেলা। চরে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেরই রয়েছে গরু-মহিষ-ছাগলের ছোট ছোট খামার। গবাদি পশুর খামার করে পাল্টে যাচ্ছে চরাঞ্চলের অর্থনীতি। গবাদি পশু লালন পালনে বিপুল সম্ভাবনাময় চর অঞ্চলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করলে সম্ভাবনাটি বাস্তবে রুপ নেবে। অভাব ঘুচবে অভাবী চরবাসীর। উৎপাদন বাড়বে দুধ কিংবা দুগ্ধজাত সামগ্রীর। এতে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটতে পারে চরাঞ্চলে।

বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাগদা গ্রামের শুকুর ব্যাপারী বলেন, তিন বছর আগে সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। কর্মসংস্থান ছিল না। বাধ্য হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে যমুনা চরে এসে নতুন বসতি গড়ি। গরু পালন করে এখন সাবলম্বী। আল্লাহর রহমতে সংসারে কোন অভাব-অনটন নেই। বর্তমানে চারটি গরু নিয়ে একটি ছোট খামার গড়ে তুলেছি। পুরানভারেঙ্গা ইউনিয়নের কল্যানপুরের ময়নাল সিকদার, রজব আলী, আবু ছাইদ ও কোরবান আলী জানান, চর এলাকায় খোলমেলা পরিবেশে গবাদিপশু পালন করায় রোগ বালাই কম হয়। পলি মাটির আস্তরনে জেগে ওঠা ঘাস, বিচালি খাইয়ে তারা গবাদিপশু লালন পালন করছে। এজন্য চরে অনেকেই গরু-মহিষ-ছাগলের ছোট ছোট খামার গড়ে তুলছে।

বর্তমানে চরে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে ভূমিহীন মানুষরা। বাড়ির আঙিনায় মাথা উঁচু করলেই দেখা যায় ফসলের ক্ষেত। চোখ ধাঁধাঁনো বর্ণিল সবুজ ফসলের সরব উপস্থিতির কারণে অনেক কৃষক তাদের গবাদিপশু নিয়ে চরে উপস্থিত হয়েছে। চরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে একটি করে গো-খামার গড়ে উঠছে। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এই সমস্ত কৃষকরা তাদের গবাদিপশু নিয়ে এসেছে চরে। পলি মাটির আস্তরনে জেগে ওঠা ঘাস, বিচালি খাইয়ে তারা গবাদিপশু লালন পালন করছে। এক সময় পদ্মা-যমুনা নদীতে পানি ও মাছের প্রাচুর্যতা থাকলেও এখন ক্রমশ তাতে ভাটা পড়েছে।

যমুনা ও পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। চরের বালিয়ারীগুলো ক্রমশ আবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। আর এসব জমিতে এখন আবাদ হচ্ছে সরিষা, গম, কাাউন, ভূট্রা, বাদাম, মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, লাউ, কুমড়া, গাজর, শাক-সবজিসহ নানা অর্থকরী ফসল। একদিন পদ্মা-যমুনার তাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছিল। নদীর বুকে চর জেগে উঠায় তারা একে একে আবার জড়ো হয়েছে এসব চরে। যেসব গ্রাম একদিন বিলীন হয়ে গিয়েছিল সেগুলো পুনরায় সেই নামেই নতুন করে গড়ে তুলছে বসতি। তবে চরে বসবাসরত ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাদের লেখাপড়ার জন্য নেই কোন স্কুল-মাদ্রাসা।
নদীভাঙা অভাবী শত শত পরিবার নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরকে কাজে লাগিয়ে অভাব দুর করছেন। এই সকল পরিবারের নারীরা তাদের স্বামী-সন্তান নিয়ে শারীরীক পরিশ্রম করে বিভিন্ন ফসল ফলাচ্ছেন। সেই ফসল বিক্রি করে সফলতা পাচ্ছেন। চলতি মওসুমের শুরুতে ফসল চাষ করে চাষিদের মুখে এখন সাফল্যের হাসির ঝলক।

ঢালারচরের কৃষক আতাউল জানান, বালুচরে কোন ফসল ফলানো যাবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন বালুচরে ফসল আবাদ করে অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। প্রতি বছরই বাড়ছে চরের পরিধি। সেই সাথে বাড়ছে ফসলের ফলন। লাভের টাকা হাতে পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

চরের বুকে ফসল ফলিয়ে স্বাবলম্বী নদীভাঙা লক্ষাধিক পরিবার

আপডেট সময় : ০৮:৩০:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

পাবনা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহি পদ্মা ও যমুনা মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা অসংখ্য চর সবুজ আর হলুদে ভরে গেছে। নদীভাঙা মানুষ চরে জমিতে ২৫ প্রকার ফসল আবাদ করছেন। এক সময় যমুনা ও পদ্মা নদী ছিল তাদের দুঃখের কারণ। এখন সেই নদীর চরে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে অভাব দুর করছেন নদীভাঙা মানুষ। অক্লান্ত পরিশ্রমে অসম্ভাবকে সম্ভব করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন লক্ষাধিক পরিবার।

যমুনা ও পদ্মার ভাঙনে ঘর-বাড়ী, ফসলী জমি হরিয়ে ভূমিহীন নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। এমন কী অভাব-অনটন ছিল তাদের নিত্যদিনের সাথী। এখন সে চিত্র বদলে গেছে। এইতো কয়েক বছর আগে যেখানে ছিল বালুচর, সেই চরে বন্যায় পলিমাটি জমে এসব চর এখন উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। দীগন্ত বিস্তীর্ণ বালুচরে এখন আবাদ হয়েছে সরিষাসহ ২৫ প্রকারের ফসল। যে দিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর সবুজের সমারোহ। নদীর তলদেশ শুকিয়ে জেগে ওঠে বালুচর। এই বালুচরে ফসল ফলানো তো দুরের কথা, ঘাসও জন্মাাতো না। অথচ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেই নদীর ছোট-বড় অসংখ্য চরে ফলাচ্ছে গম, কাাউন, ভূট্রা, বাদাম, মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, গাজর, মরিচ, হলুদ, শসা, সিম, কুমড়া, ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাকসহ ২৫ প্রকারের ফসল চাষ করেছে কৃষকরা। চরের বেলে দো-আঁশ মাটিতে ডাল জাতীয় ফসল মাসকালাই, খেসারী, ছোলা প্রচুর পরিমানে আবাদ হচ্ছে। এছাড়া চরে গড়ে উঠছে জনবসতি ও গবাদিপশুর ছোট ছোট খামার।

যমুনা ও পদ্মার নদীর ছোট-বড় অসংখ্য চরে গম, কাাউন, ভূট্রা, বাদাম, হলুদ মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, গাজর, মরিচ, হলুদ, শসা, সিম, কুমড়াসহ নানা প্রকারের শাক-সবজি। চরের আকার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তা স্থায়ী চরে পরিণত হচ্ছে। জনবসতিহীন দুর্গম চরে এখন বসেছে প্রাণের মেলা। চরে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেরই রয়েছে গরু-মহিষ-ছাগলের ছোট ছোট খামার। গবাদি পশুর খামার করে পাল্টে যাচ্ছে চরাঞ্চলের অর্থনীতি। গবাদি পশু লালন পালনে বিপুল সম্ভাবনাময় চর অঞ্চলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করলে সম্ভাবনাটি বাস্তবে রুপ নেবে। অভাব ঘুচবে অভাবী চরবাসীর। উৎপাদন বাড়বে দুধ কিংবা দুগ্ধজাত সামগ্রীর। এতে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটতে পারে চরাঞ্চলে।

বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাগদা গ্রামের শুকুর ব্যাপারী বলেন, তিন বছর আগে সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। কর্মসংস্থান ছিল না। বাধ্য হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে যমুনা চরে এসে নতুন বসতি গড়ি। গরু পালন করে এখন সাবলম্বী। আল্লাহর রহমতে সংসারে কোন অভাব-অনটন নেই। বর্তমানে চারটি গরু নিয়ে একটি ছোট খামার গড়ে তুলেছি। পুরানভারেঙ্গা ইউনিয়নের কল্যানপুরের ময়নাল সিকদার, রজব আলী, আবু ছাইদ ও কোরবান আলী জানান, চর এলাকায় খোলমেলা পরিবেশে গবাদিপশু পালন করায় রোগ বালাই কম হয়। পলি মাটির আস্তরনে জেগে ওঠা ঘাস, বিচালি খাইয়ে তারা গবাদিপশু লালন পালন করছে। এজন্য চরে অনেকেই গরু-মহিষ-ছাগলের ছোট ছোট খামার গড়ে তুলছে।

বর্তমানে চরে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে ভূমিহীন মানুষরা। বাড়ির আঙিনায় মাথা উঁচু করলেই দেখা যায় ফসলের ক্ষেত। চোখ ধাঁধাঁনো বর্ণিল সবুজ ফসলের সরব উপস্থিতির কারণে অনেক কৃষক তাদের গবাদিপশু নিয়ে চরে উপস্থিত হয়েছে। চরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে একটি করে গো-খামার গড়ে উঠছে। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এই সমস্ত কৃষকরা তাদের গবাদিপশু নিয়ে এসেছে চরে। পলি মাটির আস্তরনে জেগে ওঠা ঘাস, বিচালি খাইয়ে তারা গবাদিপশু লালন পালন করছে। এক সময় পদ্মা-যমুনা নদীতে পানি ও মাছের প্রাচুর্যতা থাকলেও এখন ক্রমশ তাতে ভাটা পড়েছে।

যমুনা ও পদ্মার বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। চরের বালিয়ারীগুলো ক্রমশ আবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। আর এসব জমিতে এখন আবাদ হচ্ছে সরিষা, গম, কাাউন, ভূট্রা, বাদাম, মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, লাউ, কুমড়া, গাজর, শাক-সবজিসহ নানা অর্থকরী ফসল। একদিন পদ্মা-যমুনার তাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছিল। নদীর বুকে চর জেগে উঠায় তারা একে একে আবার জড়ো হয়েছে এসব চরে। যেসব গ্রাম একদিন বিলীন হয়ে গিয়েছিল সেগুলো পুনরায় সেই নামেই নতুন করে গড়ে তুলছে বসতি। তবে চরে বসবাসরত ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাদের লেখাপড়ার জন্য নেই কোন স্কুল-মাদ্রাসা।
নদীভাঙা অভাবী শত শত পরিবার নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরকে কাজে লাগিয়ে অভাব দুর করছেন। এই সকল পরিবারের নারীরা তাদের স্বামী-সন্তান নিয়ে শারীরীক পরিশ্রম করে বিভিন্ন ফসল ফলাচ্ছেন। সেই ফসল বিক্রি করে সফলতা পাচ্ছেন। চলতি মওসুমের শুরুতে ফসল চাষ করে চাষিদের মুখে এখন সাফল্যের হাসির ঝলক।

ঢালারচরের কৃষক আতাউল জানান, বালুচরে কোন ফসল ফলানো যাবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন বালুচরে ফসল আবাদ করে অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। প্রতি বছরই বাড়ছে চরের পরিধি। সেই সাথে বাড়ছে ফসলের ফলন। লাভের টাকা হাতে পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা।

বা/খ: এসআর।