ঢাকা ১২:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

খুলনার উপকূলে বিটি বেগুনে আশার আলো

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৭:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
  • / ৪৬৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
// আবু হেনা মুক্তি, খুলনা ব্যুরো // 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভা‌বিত বিটি বেগুন নিয়ে নতুন করে আশার আলো দেখছেন খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার কৃষক। লবণাক্ত মাটি, পানি ও আবহাওয়ায় এ জাতের বেগুনের ভাল ফলন ও লাভ হওয়ার দেখছেন বাঁচার স্বপ্ন। সেখানে সারা বছরই এ বেগুনের চাষ, বাম্পার ফলন, পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি তারা।
কৃষকরা বলেছেন, নিত্য দুর্যোগের লড়াই করতে করতে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত ফসল না হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি পরিবারের খাদ্য যোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। নতুন জাতের এ বেগুন চাষে চাষীরা লাভের মুখ দেখছেন।
কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে, চলতি বছর ৭২ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বারি বিটি বেগুন-৪ চাষ হয়েছে। ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের মতো বেগুন উৎপাদিত হবে । গত বছর এই উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। বেগুন উৎপাদন হয়েছিল ২ হাজার ১০০ মেট্রিক টন।
এদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউটের সহায়তায় সেখানে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত বিটি বেগুন। গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা না থাকায় এই জাতের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। বিষমুক্ত বিটি বেগুন চাষ সম্প্রসারণ করতে পারলে উপকূলের কৃষি অর্থনীতি আরও বেগবান হবে বলে জানান কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
কয়রা উপজেলার ৩ নং কয়রা গ্রামের মাঠ জুড়ে চাষ করা হয়েছে নতুন জাতের বিটি বেগুন। এছাড়া  উপজেলার উত্তর বেদকাশী, বতুলবাজার, ৪ নম্বর কয়রা, মহারাজপুর, শ্রীরামপুর গ্রামেও বিটি বেগুন চাষ হয়েছে।  আমাদী, মসজিদকুঁড়, দেয়াড়া, কালনা, বামিয়া, জয়পুর, খেওনা, পাটনিখালী, হাতিয়ারডাংগাসহ বিভিন্ন গ্রামে হাইব্রিডসহ অন্যান্য জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। লবনাক্ত আবহাওয়ায় সাধারণত অন্য সবজি ভালো না হলেও বেগুনের বাম্পার ফলন হচ্ছে। অন্যান্য জাতের বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণে প্রায় প্রত্যেকদিন ক্ষেতে বিষ দিতে হয়। তারপরেও পোকার আক্রমণে মাঠেই নষ্ট হয় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেগুন। এতে একদিকে উৎপাদন খরচ বাড়ে, অন্যদিকে বিষ প্রয়োগের পর নির্দিষ্ট সময়পার হওয়ার আগেই বেগুন উত্তোলন করতে হয়। যা মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আর বিটি বেগুনে নিয়মিত বিষ প্রয়োগ করা লাগে না। বেগুনও অনেক সুন্দর ও মসৃণ হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিটি বেগুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্য জাতের বেগুনের চেয়ে দামও বেশি পাওয়া যায়। এসব কারণে বিটি বেগুনের দিকে ঝুঁকছে উপকূলের কৃষকরা। এই বেগুন চাষ কয়রার কৃষকদের জীবন-জীবিকায় এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
কয়রা উপজেলার ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক হাসান বলেন, তিন বিঘা জমিতে বারি বিটি বেগুন চাষ করেছেন। এতে তার মোট খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। শীতকাল থেকে বেগুন বিক্রি শুরু করেন। এ পর্যন্ত  সাড়ে তিন লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। এখনও গাছে প্রচুর ফল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কয়রা আড়তে বেগুন পাইকারী বিক্রি করেন। বিভিন্ন জেলার পাইকারী ক্রেতারা সেখান থেকে বেগুন কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বেগুন পাইকারিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
হাতিয়ারডাংগা গ্রামের চাষি সুভাষ বলেন, আমরা দুই ভাই ২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। দামও পাচ্ছি ভালো। তবে পোকা নিয়ন্ত্রণে প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন বার বিষ প্রয়োগ করা লাগে। বিটি বেগুনের কথা শুনেছি, বীজ পেলে আগামীবার ওই বেগুন লাগাবো।
পাটনিখালী গ্রামের চাষি তপন সানা বলেন, এক বিঘা জমিতে বেগুন লাগিয়েছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রায় বিষ প্রয়োগ করা লাগে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। বিটি বেগুনের বীজ না পেয়ে অন্য জাত চাষ করেছি।
বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

খুলনার উপকূলে বিটি বেগুনে আশার আলো

আপডেট সময় : ০৩:৪৭:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
// আবু হেনা মুক্তি, খুলনা ব্যুরো // 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভা‌বিত বিটি বেগুন নিয়ে নতুন করে আশার আলো দেখছেন খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার কৃষক। লবণাক্ত মাটি, পানি ও আবহাওয়ায় এ জাতের বেগুনের ভাল ফলন ও লাভ হওয়ার দেখছেন বাঁচার স্বপ্ন। সেখানে সারা বছরই এ বেগুনের চাষ, বাম্পার ফলন, পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি তারা।
কৃষকরা বলেছেন, নিত্য দুর্যোগের লড়াই করতে করতে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত ফসল না হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি পরিবারের খাদ্য যোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। নতুন জাতের এ বেগুন চাষে চাষীরা লাভের মুখ দেখছেন।
কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে, চলতি বছর ৭২ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বারি বিটি বেগুন-৪ চাষ হয়েছে। ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের মতো বেগুন উৎপাদিত হবে । গত বছর এই উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। বেগুন উৎপাদন হয়েছিল ২ হাজার ১০০ মেট্রিক টন।
এদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউটের সহায়তায় সেখানে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত বিটি বেগুন। গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা না থাকায় এই জাতের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। বিষমুক্ত বিটি বেগুন চাষ সম্প্রসারণ করতে পারলে উপকূলের কৃষি অর্থনীতি আরও বেগবান হবে বলে জানান কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
কয়রা উপজেলার ৩ নং কয়রা গ্রামের মাঠ জুড়ে চাষ করা হয়েছে নতুন জাতের বিটি বেগুন। এছাড়া  উপজেলার উত্তর বেদকাশী, বতুলবাজার, ৪ নম্বর কয়রা, মহারাজপুর, শ্রীরামপুর গ্রামেও বিটি বেগুন চাষ হয়েছে।  আমাদী, মসজিদকুঁড়, দেয়াড়া, কালনা, বামিয়া, জয়পুর, খেওনা, পাটনিখালী, হাতিয়ারডাংগাসহ বিভিন্ন গ্রামে হাইব্রিডসহ অন্যান্য জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। লবনাক্ত আবহাওয়ায় সাধারণত অন্য সবজি ভালো না হলেও বেগুনের বাম্পার ফলন হচ্ছে। অন্যান্য জাতের বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণে প্রায় প্রত্যেকদিন ক্ষেতে বিষ দিতে হয়। তারপরেও পোকার আক্রমণে মাঠেই নষ্ট হয় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেগুন। এতে একদিকে উৎপাদন খরচ বাড়ে, অন্যদিকে বিষ প্রয়োগের পর নির্দিষ্ট সময়পার হওয়ার আগেই বেগুন উত্তোলন করতে হয়। যা মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আর বিটি বেগুনে নিয়মিত বিষ প্রয়োগ করা লাগে না। বেগুনও অনেক সুন্দর ও মসৃণ হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিটি বেগুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্য জাতের বেগুনের চেয়ে দামও বেশি পাওয়া যায়। এসব কারণে বিটি বেগুনের দিকে ঝুঁকছে উপকূলের কৃষকরা। এই বেগুন চাষ কয়রার কৃষকদের জীবন-জীবিকায় এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
কয়রা উপজেলার ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক হাসান বলেন, তিন বিঘা জমিতে বারি বিটি বেগুন চাষ করেছেন। এতে তার মোট খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। শীতকাল থেকে বেগুন বিক্রি শুরু করেন। এ পর্যন্ত  সাড়ে তিন লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। এখনও গাছে প্রচুর ফল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কয়রা আড়তে বেগুন পাইকারী বিক্রি করেন। বিভিন্ন জেলার পাইকারী ক্রেতারা সেখান থেকে বেগুন কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বেগুন পাইকারিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
হাতিয়ারডাংগা গ্রামের চাষি সুভাষ বলেন, আমরা দুই ভাই ২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। দামও পাচ্ছি ভালো। তবে পোকা নিয়ন্ত্রণে প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন বার বিষ প্রয়োগ করা লাগে। বিটি বেগুনের কথা শুনেছি, বীজ পেলে আগামীবার ওই বেগুন লাগাবো।
পাটনিখালী গ্রামের চাষি তপন সানা বলেন, এক বিঘা জমিতে বেগুন লাগিয়েছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রায় বিষ প্রয়োগ করা লাগে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। বিটি বেগুনের বীজ না পেয়ে অন্য জাত চাষ করেছি।
বা/খ: এসআর।