ঢাকা ০৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কালীগঞ্জে মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩
  • / ৪৪১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// মোঃ রেজাউল করিম, লালমনিরহাট //

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ, চাপারহাটে গতকাল ২২ মে বিকালে স্থানীয়দের সাথে মাদক, চোরাচালান প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সভায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম, কালীগঞ্জ থানা পুলিশ পরিদর্শক (নিরঃ) চার্জ অফিসার হাবিবুর রহমান, বিজিবি জাওরানী বিওপি’র নায়েব সুবেদার জাহিদুর রহমান, বুড়িরহাট বিওপি কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। চন্দ্রপুর ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সভাপতিত্ব করেন।

সভায় কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও চন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ আবদুল আলিম, চাপারহাট এসকে কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক, সহঃ অধ্যাপক মিজানুর রহমান মিলন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ, মসজিদের খতিব, ইমাম ,শিক্ষক, পুরোহিত, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সুশিল সমাজ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তাগণ ভারত থেকে যে ভাবে মাদক আসছে এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে , তাতে তরুণ প্রজন্ম তথা যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। উদ্বেগের সাথে বক্তারা বলেন, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে অবাধে কেনা-বেচা হচ্ছে মাদক-ইয়াবা -ফেনসিডিল। প্রকাশ্যে আসছে ভারত থেকে শত শত গরু। যেন দেখার কেউ নেই। এমন অবাদ সুযোগে রংপুর সহ দেশের দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত তরুন যুবকরা মোটর বাইকে সীমান্তে এসে মাদক-ফেনসিডিল সেবন করে চলে যাচ্ছে।

বিশেষ করে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জাওরানী খামারভাতি, চন্দ্রপুর, নওদাবাস, ঘোংগাগাছ, সেবকদাস, বলাইরহাট, লোহাকুচি এলাকা দিয়ে রাতের বেলায় পিকাপ, ভ্যান ট্রলি, প্রাইভেট কার দিয়ে অত্যন্ত কৌশলে হাজার হাজার ফেনসিডিল দেশের অভ্যন্তরে চলে যাচ্ছে। আর দিনের বেলায় মাদক সেবনের জন্য মোটর সাইকেল যোগে ৩ জন করে আসে সীমান্তে। নির্ভীগ্নে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় সাধারণ এলাকাবাসী দেখেও না দেখার ভান করেছেন। কারণটা ভয়াবহ ! প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদেরকে হেনস্তা হতে হয়। রাতের বেলা যারা হাজার হাজার ফেনিসিডিল, ইয়াবা পাচার করে, এমন অভিযোগ নতুন নয়।

সাংবাদিক শেখ আবদুল আলিম তার বক্তব্যে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শি আর বিচক্ষণতায় দেশ যখন একের পর এক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় কিছু অপশক্তি ষড়যন্ত্র করে উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্থ করার পায়তারা করছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে হলে মাদকমুক্ত শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। মাদক হচ্ছে মেধা নষ্ট করে ফেলার হাতিয়ার! কারা মাদক চোরাকারবারী তাদের তালিকা বিজিবি, পুলিশ প্রশাসনের কাছে আছে। তারা আন্তরিক হলে, মাদক আসা দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করা সম্ভব । কিছু সাংবাদিক নামধারী প্রায়ই সীমান্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এরা মাদক সেবীদের সাথেও আসে। চোরাকারবারীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে যায় । এদের অপতৎপরতা কঠোর ভাবে বন্ধ করার আহবান জানান তিনি।

বিজিবি ও পুলিশের বক্তব্য প্রায় একই। তাদের দাবী, যারা মাদক চোরা কারবারের সাথে জড়িত, তাদের খুঁটির জোর নাকি অনেক শক্ত । মাঝে মধ্যে দু’একটা আটকের ঘটনায় দেখা যায়,অনেক বড় জায়গা থেকে সুপারিশ বা হুমকি চলে আসে। তখন করার কিছই থাকে না । এমন বক্তব্য সাধারণ জনগণ উড়িয়ে দেন।

প্রকৃতপক্ষে সুপারিশকারীরা আদৌ মন্ত্রী এমপির লোক নয় ! সাহস করে আটকিয়ে ব্যবস্থা নিলে সুপারিশকারীদের মুখোশ খুলে যাবে বলে দাবী অনেকের।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম বলেন, মাদকসেবীরা সরকারী চাকুরী পাবে না। সরকার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, ‘ডোপটেষ্ট’র মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। এই মেসেজটি শুধু অভিভাবকদেরকে নয় তরুণ শিক্ষর্থীদের মাঝে পৌছে দিতে হবে।

প্রধান অতিথির ভাষণে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, অভিভাবকরা যদি সর্তক হন, তাদের ছেলে মেয়ের নিয়মিত খোঁজ খবর নেন, তাদের ছেলে মেয়ে কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে , স্কুল কলেজে যাচ্ছে না ফাঁকি দিচ্ছে – এসব খোঁজ নিতে হবে । ছেলে মেয়েদের শিক্ষায় সুশিক্ষিত করতে হবে । এলাকায় কারা মাদক ব্যবসায় জড়িত, তাদের তালিকা করে জমা দেওয়ার আহবান জানান জেলা প্রশাসক। মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।

সভায় অপরাধ, মাদক, অস্ত্র ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

কালীগঞ্জে মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

আপডেট সময় : ০৬:৩৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩

// মোঃ রেজাউল করিম, লালমনিরহাট //

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ, চাপারহাটে গতকাল ২২ মে বিকালে স্থানীয়দের সাথে মাদক, চোরাচালান প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সভায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম, কালীগঞ্জ থানা পুলিশ পরিদর্শক (নিরঃ) চার্জ অফিসার হাবিবুর রহমান, বিজিবি জাওরানী বিওপি’র নায়েব সুবেদার জাহিদুর রহমান, বুড়িরহাট বিওপি কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। চন্দ্রপুর ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সভাপতিত্ব করেন।

সভায় কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও চন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ আবদুল আলিম, চাপারহাট এসকে কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক, সহঃ অধ্যাপক মিজানুর রহমান মিলন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ, মসজিদের খতিব, ইমাম ,শিক্ষক, পুরোহিত, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সুশিল সমাজ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তাগণ ভারত থেকে যে ভাবে মাদক আসছে এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে , তাতে তরুণ প্রজন্ম তথা যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। উদ্বেগের সাথে বক্তারা বলেন, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে অবাধে কেনা-বেচা হচ্ছে মাদক-ইয়াবা -ফেনসিডিল। প্রকাশ্যে আসছে ভারত থেকে শত শত গরু। যেন দেখার কেউ নেই। এমন অবাদ সুযোগে রংপুর সহ দেশের দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত তরুন যুবকরা মোটর বাইকে সীমান্তে এসে মাদক-ফেনসিডিল সেবন করে চলে যাচ্ছে।

বিশেষ করে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জাওরানী খামারভাতি, চন্দ্রপুর, নওদাবাস, ঘোংগাগাছ, সেবকদাস, বলাইরহাট, লোহাকুচি এলাকা দিয়ে রাতের বেলায় পিকাপ, ভ্যান ট্রলি, প্রাইভেট কার দিয়ে অত্যন্ত কৌশলে হাজার হাজার ফেনসিডিল দেশের অভ্যন্তরে চলে যাচ্ছে। আর দিনের বেলায় মাদক সেবনের জন্য মোটর সাইকেল যোগে ৩ জন করে আসে সীমান্তে। নির্ভীগ্নে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় সাধারণ এলাকাবাসী দেখেও না দেখার ভান করেছেন। কারণটা ভয়াবহ ! প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদেরকে হেনস্তা হতে হয়। রাতের বেলা যারা হাজার হাজার ফেনিসিডিল, ইয়াবা পাচার করে, এমন অভিযোগ নতুন নয়।

সাংবাদিক শেখ আবদুল আলিম তার বক্তব্যে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শি আর বিচক্ষণতায় দেশ যখন একের পর এক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় কিছু অপশক্তি ষড়যন্ত্র করে উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্থ করার পায়তারা করছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে হলে মাদকমুক্ত শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। মাদক হচ্ছে মেধা নষ্ট করে ফেলার হাতিয়ার! কারা মাদক চোরাকারবারী তাদের তালিকা বিজিবি, পুলিশ প্রশাসনের কাছে আছে। তারা আন্তরিক হলে, মাদক আসা দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করা সম্ভব । কিছু সাংবাদিক নামধারী প্রায়ই সীমান্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এরা মাদক সেবীদের সাথেও আসে। চোরাকারবারীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে যায় । এদের অপতৎপরতা কঠোর ভাবে বন্ধ করার আহবান জানান তিনি।

বিজিবি ও পুলিশের বক্তব্য প্রায় একই। তাদের দাবী, যারা মাদক চোরা কারবারের সাথে জড়িত, তাদের খুঁটির জোর নাকি অনেক শক্ত । মাঝে মধ্যে দু’একটা আটকের ঘটনায় দেখা যায়,অনেক বড় জায়গা থেকে সুপারিশ বা হুমকি চলে আসে। তখন করার কিছই থাকে না । এমন বক্তব্য সাধারণ জনগণ উড়িয়ে দেন।

প্রকৃতপক্ষে সুপারিশকারীরা আদৌ মন্ত্রী এমপির লোক নয় ! সাহস করে আটকিয়ে ব্যবস্থা নিলে সুপারিশকারীদের মুখোশ খুলে যাবে বলে দাবী অনেকের।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহির ইমাম বলেন, মাদকসেবীরা সরকারী চাকুরী পাবে না। সরকার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, ‘ডোপটেষ্ট’র মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। এই মেসেজটি শুধু অভিভাবকদেরকে নয় তরুণ শিক্ষর্থীদের মাঝে পৌছে দিতে হবে।

প্রধান অতিথির ভাষণে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, অভিভাবকরা যদি সর্তক হন, তাদের ছেলে মেয়ের নিয়মিত খোঁজ খবর নেন, তাদের ছেলে মেয়ে কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে , স্কুল কলেজে যাচ্ছে না ফাঁকি দিচ্ছে – এসব খোঁজ নিতে হবে । ছেলে মেয়েদের শিক্ষায় সুশিক্ষিত করতে হবে । এলাকায় কারা মাদক ব্যবসায় জড়িত, তাদের তালিকা করে জমা দেওয়ার আহবান জানান জেলা প্রশাসক। মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।

সভায় অপরাধ, মাদক, অস্ত্র ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।