ঢাকা ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

উনডেড চাইল্ড, নো সারভাইভিং ফ্যামিলি

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৫০৬ বার পড়া হয়েছে

বড় হয়ে ফুটবলার হতে চেয়েছিল তিন বছর বয়সী শাবাত। কিন্তু নির্মম বোমা তার দুটি পা কেড়ে নিয়েছে।

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধের প্রতিদিন বলি হচ্ছে অনেক সাধারণ মানুষ। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলায় বহু শিশু ইতিমধ্যে তাদের পরিবারে সবাইকে হারিয়ে একা একা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। সব হারানো এসব শিশুদের একটি নির্দিষ্ট শব্দে ডাকছেন গাজার চিকিৎসকেরা। শব্দটি হচ্ছে ডব্লিউসিএনএসএফ (WCNSF)।

বৈশ্বিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সঙ্গে কাজ করা গাজার চিকিৎসক ডা. তানিয়া হাজ–হাসান ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধে পরিবারের সবাই মারা গেছে, এমন শিশুদের আমরা ‘ডব্লিউসিএনএসএফ’ নামে ডাকছি। এর অর্থ হচ্ছে, আহত শিশু, যার পরিবারে কেউ বেঁচে নেই (উনডেড চাইল্ড, নো সারভাইভিং ফ্যামিলি)।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৬ হাজার। অন্যদিকে ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

উত্তর গাজার একটি হাসপাতালে কাঁদছিল আহমেদ শাবাত নামের তিন বছর বয়সী এক শিশু। তার বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে। সেই হামলায় নিহত হয়েছে তার মা, বাবা ও বড় ভাই। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে এক অপরিচিত ব্যক্তি নিয়ে এসেছে হাসপাতালে।

পরে শিশুটির চাচা ইব্রাহিম আবু আমশা হাসপাতালে এসে শাবাতকে খুঁজে পান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বাড়ির ওপরে বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে ২০ মিটার দূরে আহত অবস্থায় শাবাতকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক অপরিচিত ব্যক্তি। তিনিই শাবাতকে হাসপাতালে ভর্তি করান। শাবাত সম্ভবত বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের সঙ্গে উড়তে উড়তে ২০ মিটার দূরে গিয়ে পড়েছিল। তার পা দুটি বোমার আঘাতে উড়ে গেছে।’

শাবাতের মতোই ওমর নামের আরেক শিশুও রয়েছে এই হাসপাতালে। তারও পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। ইব্রাহিম আবু আমশা বলেন, আমি নিজেই উদ্বাস্তু। স্ত্রী, সন্তান ও বোনের সন্তানদের নিয়ে একটি শরণার্থী ক্যাম্পে থাকি। সেখানেই শিশু দুটিকে নিয়ে গিয়ে দেখাশোনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইব্রাহিম আবু আমশা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘প্রায়ই বিকেলে শাবাতের সঙ্গে ফুটবল খেলতে বের হতাম। সে বড় হয়ে একজন বিখ্যাত ফুটবলার হতে চেয়েছিল। অথচ নির্মম বোমা তার দুটি পা কেড়ে নিল!’

উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে মুনা আলওয়ান নামে দুই বছর বয়সী শিশুটি ‘মা কোথায়, মা কোথায়’ বলে অরিবাম কাঁদছিল। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটির মা, বাবা, ভাই, বোন কেউ বেঁচে নেই। উত্তর গাজার জাবাল আল-রাইস এলাকায় বিমান হামলার পর বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তুপের নিচে থেকে মুনা আলওয়ানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার এক দুঃসম্পর্কের খালা।

১১ বছর বয়সী মেহেসেন জানে না, কীভাবে সে হাসপাতালে এসেছে। তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১১ বছর বয়সী এক শিশু হাসপাতালের ধাতব বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। তার ডান পা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মেয়েটির নাম দুনিয়া আবু মেহেসেন। মেহেসেন জানায়, খান ইউনিসের আল-আমাল পাড়ায় তাদের নিজ বাড়িতে তারা ঘুমাচ্ছিল। তখন হঠাৎ বোমা হামলা শুরু হয়। সেই হামলায় তার মা, বাবা, ভাই, বোন সবাই মারা যায়। আর তার একটি পা উড়ে যায়। কিন্তু সে কীভাবে এই হাসপাতালে এসেছে, সে জানে না। কোনো উদ্ধারকর্মী হয়তো রেখে গেছে।

ইউনিসেফের যোগাযোগ ব্যবস্থাপক রিকার্ডো পিরেস বলেন, গাজায় মা–বাবাসহ পরিবারের সবাইকে হারানো এতিম শিশুর সংখ্যা এখন কত, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আমার গাজার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে থেকে শিশুদের নাম পরিচয় নিবন্ধিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কাজটি অত্যন্ত দুঃসাধ্য বলে ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

উনডেড চাইল্ড, নো সারভাইভিং ফ্যামিলি

আপডেট সময় : ১২:৩৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধের প্রতিদিন বলি হচ্ছে অনেক সাধারণ মানুষ। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলায় বহু শিশু ইতিমধ্যে তাদের পরিবারে সবাইকে হারিয়ে একা একা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। সব হারানো এসব শিশুদের একটি নির্দিষ্ট শব্দে ডাকছেন গাজার চিকিৎসকেরা। শব্দটি হচ্ছে ডব্লিউসিএনএসএফ (WCNSF)।

বৈশ্বিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সঙ্গে কাজ করা গাজার চিকিৎসক ডা. তানিয়া হাজ–হাসান ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধে পরিবারের সবাই মারা গেছে, এমন শিশুদের আমরা ‘ডব্লিউসিএনএসএফ’ নামে ডাকছি। এর অর্থ হচ্ছে, আহত শিশু, যার পরিবারে কেউ বেঁচে নেই (উনডেড চাইল্ড, নো সারভাইভিং ফ্যামিলি)।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৬ হাজার। অন্যদিকে ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

উত্তর গাজার একটি হাসপাতালে কাঁদছিল আহমেদ শাবাত নামের তিন বছর বয়সী এক শিশু। তার বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে। সেই হামলায় নিহত হয়েছে তার মা, বাবা ও বড় ভাই। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে এক অপরিচিত ব্যক্তি নিয়ে এসেছে হাসপাতালে।

পরে শিশুটির চাচা ইব্রাহিম আবু আমশা হাসপাতালে এসে শাবাতকে খুঁজে পান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বাড়ির ওপরে বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে ২০ মিটার দূরে আহত অবস্থায় শাবাতকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক অপরিচিত ব্যক্তি। তিনিই শাবাতকে হাসপাতালে ভর্তি করান। শাবাত সম্ভবত বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের সঙ্গে উড়তে উড়তে ২০ মিটার দূরে গিয়ে পড়েছিল। তার পা দুটি বোমার আঘাতে উড়ে গেছে।’

শাবাতের মতোই ওমর নামের আরেক শিশুও রয়েছে এই হাসপাতালে। তারও পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। ইব্রাহিম আবু আমশা বলেন, আমি নিজেই উদ্বাস্তু। স্ত্রী, সন্তান ও বোনের সন্তানদের নিয়ে একটি শরণার্থী ক্যাম্পে থাকি। সেখানেই শিশু দুটিকে নিয়ে গিয়ে দেখাশোনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইব্রাহিম আবু আমশা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘প্রায়ই বিকেলে শাবাতের সঙ্গে ফুটবল খেলতে বের হতাম। সে বড় হয়ে একজন বিখ্যাত ফুটবলার হতে চেয়েছিল। অথচ নির্মম বোমা তার দুটি পা কেড়ে নিল!’

উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে মুনা আলওয়ান নামে দুই বছর বয়সী শিশুটি ‘মা কোথায়, মা কোথায়’ বলে অরিবাম কাঁদছিল। চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটির মা, বাবা, ভাই, বোন কেউ বেঁচে নেই। উত্তর গাজার জাবাল আল-রাইস এলাকায় বিমান হামলার পর বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তুপের নিচে থেকে মুনা আলওয়ানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার এক দুঃসম্পর্কের খালা।

১১ বছর বয়সী মেহেসেন জানে না, কীভাবে সে হাসপাতালে এসেছে। তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১১ বছর বয়সী এক শিশু হাসপাতালের ধাতব বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। তার ডান পা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মেয়েটির নাম দুনিয়া আবু মেহেসেন। মেহেসেন জানায়, খান ইউনিসের আল-আমাল পাড়ায় তাদের নিজ বাড়িতে তারা ঘুমাচ্ছিল। তখন হঠাৎ বোমা হামলা শুরু হয়। সেই হামলায় তার মা, বাবা, ভাই, বোন সবাই মারা যায়। আর তার একটি পা উড়ে যায়। কিন্তু সে কীভাবে এই হাসপাতালে এসেছে, সে জানে না। কোনো উদ্ধারকর্মী হয়তো রেখে গেছে।

ইউনিসেফের যোগাযোগ ব্যবস্থাপক রিকার্ডো পিরেস বলেন, গাজায় মা–বাবাসহ পরিবারের সবাইকে হারানো এতিম শিশুর সংখ্যা এখন কত, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আমার গাজার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে থেকে শিশুদের নাম পরিচয় নিবন্ধিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কাজটি অত্যন্ত দুঃসাধ্য বলে ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে।