ঢাকা ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ইনজেকশন দিয়ে স্বাবলম্বী দেড় শতাধিক নারী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৫৯ বার পড়া হয়েছে

ইনজেকশন দিয়ে স্বাবলম্বী দেড় শতাধিক নারী

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

‘হাঁস-মুরগি হলো গ্রামীণ নারীদের মানিব্যাগ।’ দেশের অনেক গ্রামাঞ্চলেই এ কথাটি বেশ প্রচলিত। এর পেছনে যুক্তিও আছে। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করেন নারীরা। এগুলো থেকে যে আয় হয় তা সাধারণত গ্রামীণ নারীদের নিজস্ব হিসেবের খাতাতেই থাকে। নারীদের যত্নে ও কষ্টে লালন-পালন করা এই হাঁস-মুরগি ভালো থাকলে নারীদের হিসাবের খাতা ভালো থাকে। আর এগুলোর অসুখ-বিসুখ হলে হিসেবের খাতা উল্টো পথে দৌঁড়ায়।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গ্রামীণ নারীদের এই ‘মানিব্যাগ’ সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন গ্রামেরই দেড় শতাধিক নারী। পুঁথিগত শিক্ষায় হয়তো তাঁরা তেমন বলিষ্ঠ নন। কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁস-মুরগিসহ গবাদিপশুকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুটি বড় ধরনের সফলতা দেখিয়েছেন তাঁরা। এর একটি হলো উপজেলার হাঁস-মুরগির অসুস্থতা একেবারেই কমিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কর্মকান্ডের ফলেই সাঁথিয়ায় দেশি হাঁস-মুরগির সংখ্যা দুই বছরে দেড় গুণেরও বেশি বেড়েছে। আর দ্বিতীয়টি হলো এই কাজ করে দেড় শতাধিক নারী অভাব জয় করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তাঁরা পরিবারের সবার মুখে যেমন হাসি ফুটিয়েছেন তেমনি এলাকার নারীদেরও অনুপ্রাণীত করতে পেরেছেন। তবে নারীদের এভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পেছনে মূল ভ‚মিকাটি পালন করছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি সাঁথিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ।

শুরুর প্রেক্ষাপট: বছর দুই আগের ঘটনা। সাঁথিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উদ্যোগে নন্দনপুর গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে একটি উঠোন বৈঠক। সেখানে গ্রামের প্রায় অর্ধশত নারীর উদ্দেশ্যে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর লালন-পালন নিয়ে কথা বলছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ। সরকারের উপজেলা টু কমিউনিটি (ইউ টু সি) প্রকল্পের আওতায় প্রাণিস্পদ কার্যালয় প্রায়ই এমন উঠোন বৈঠক করে থাকে।
সে যাই হোক। সেদিনের নন্দনপুর গ্রামের উঠোন বৈঠকে নারীরা একবাক্যে একটি সমস্যা নিয়ে কথা তুললেন। তা হলো বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে তাঁদের ‘মানিব্যাগ’ অর্থাৎ হাঁস-মুরগি মারা যাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ এর সমাধান দিলেন তাৎক্ষণিক। তিনি বললেন, ‘বেশির ভাগ মুরগি মারা যায় রাণিক্ষেত ও বসন্ত রোগে। আর বেশির ভাগ হাঁস মারা যায় ডাকপ্লেগে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে যে কেউ গিয়ে নামমাত্র খরচে এর প্রতিষেধক দিলেই মুক্তি মিলবে এসব রোগ থেকে।’
কিন্তু বাদ সাধলেন উঠোন বৈঠকের নারীরা। তাঁদের কথা, একে তো তাঁরা নারী। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে কীভাবে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে তাঁরা পৌঁছাবেন। যাতায়াত খরচের পাশাপাশি সময়ও লাগবে অনেক। এরও সমাধান দিলেন হারুনূর রশীদ। তিনি বললেন, ‘ইনজেকশনের মাধ্যমে হাঁস-মুরগির প্রতিষেধক পুশ করা বেশ সহজ। কোনো নারী যদি বিষয়টি শিখতে চান তবে সেক্ষেত্রে উপজেলা প্রাণিস্পদ কার্যালয় প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেবে।’
ওই উঠোন বৈঠক থেকেই প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেন ছয়জন নারী। হারুনূর রশীদ তাঁদের নাম লিখে নিলেন। এর পর তিনি একই রকম উঠোন বৈঠক করলেন পিয়েদহ, সোনাতলা, তলটসহ বেশ কিছু গ্রামে। এসব উঠোন বৈঠক থেকে একইভাবে তিনি প্রতিষেধক দিতে ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে আগ্রহী নারী পেলেন পাঁচ-ছয়জন করে। সব মিলিয়ে যখন ২৫ থেকে ৩০ জন হলো তখন তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আয়োজন করলেন তিনদিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। সেখানে হাঁস-মুরগিকে কিভাবে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রতিষেধক পুশ করতে হয় তা শেখানো হলো। শুধু হাঁস-মুরগিরই নয় গবাদিপশুরও বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, জৈব নিরাপত্তা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শেখানো হলো। কোন রোগের কোন প্রতিষেধক, প্রতিষেধকের পরিমাণই বা কি- সবই হাতে-কলমে শেখানো হলো। আর এ প্রশিক্ষণ বাবদ বেশির ভাগ ব্যয়ই নিজ পকেট থেকে বহন করলেন হারুনূর রশীদ। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীরা তাঁদের অর্থে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধকসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
আস্থা অর্জন যেভাবে: উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে প্রথম ব্যাচে যে কয়েকজন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নন্দনপুর গ্রামের সুলতানা খাতুন তাঁদেরই একজন। প্রশিক্ষণের শেষ দিনে তিনি প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রতিষেধক ও সিরিঞ্জ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। বাড়ি ফিরে প্রথমেই নিজের ১০টি মুরগি ও পাঁচটি হাঁসকে ইনজেকশনের মাধ্যেমে নিজ হাতে প্রতিষেধক দিলেন। এর পর প্রতিবেশীদের হাঁস-মুরগিগুলোকে প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কেউই তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। প্রথম দিকে বিনা পয়সায় অনেকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রতিষেধকের ইনজেকশন দিয়েছেন। এরই মধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য মাঠকর্মীরাও সুলতানার গ্রামে গিয়ে সুলতানার মাধ্যমে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে বুঝিয়েছেন। এক পর্যায়ে সবার মধ্যে আস্থা দেখা দিতে শুরু করল। গ্রামের লোকজন হাঁস-মুরগি নিয়ে সুলতানার কাছে আসতে শুরু করলেন। সবাই যখন দেখলেন প্রতিষেধকের কারণে হাঁস-মুরগিগুলো বেঁচে যাচ্ছে, তখন তাঁদের আগ্রহ বাড়তে লাগলো। সুলতানাও প্রতিটি হাঁস বা মুরগি থেকে প্রতিষেধক বাবদ দুই-তিন টাকা করে পেতে লাগলেন। এখন প্রতিদিন গড়ে তাঁর আয় হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

সুলতানার মতোই অন্যান্য প্রশিক্ষিত নারীরাও ঠিক একইভাবে নিজেদের গ্রামে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে আস্থা অর্জন করেছেন। প্রশিক্ষিত এসব নারী নিজ বাড়িতে বসে অথবা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০টি হাঁস অথবা মুরগিকে প্রতিষেধক দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় তাঁরা এর পাশাপাশি গরু-ছাগলকেও প্রতিষেধক দিচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারেও তাঁরা আলাদা করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

প্রতিষেধক থেকে আয়: হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর প্রতিষেধক পাওয়া যায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। সেখান থেকেই প্রশিক্ষিত নারীরা সরকার নির্ধারিত দামে প্রতিষেধকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করে থাকেন। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও প্রশিক্ষিত নারীরা জানান, সব মিলিয়ে প্রতিটি হাঁস বা মুরগির পেছনে প্রতিষেধক বাবদ ব্যয় হয় মাত্র ১৫ পয়সা। কিন্তু হাঁস-মুরগিকে প্রতিষেধক দেওয়ার পর এর মালিকেরা প্রতিটি বাবদ দুই থেকে তিন টাকা দিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ দিনেই ২০০ থেকে ৩০০ হাঁস-মুরগিকে প্রতিষেধক দিতে হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন গড়ে আয় হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।

দ্রুত বাড়ছে হাঁস-মুরগি: সাঁথিয়ায় নারীদের মাধ্যমে প্রতিষেধক দেয়ার কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দ্রুত এ উপজেলায় হাঁস-মুরগির সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলায় দেশি হাঁস-মুরগির সংখ্যা ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৪৮১টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২টিতে।
দেশি হাঁস-মুরগির সংখ্যা বাড়ার চমৎকার একটি চিত্র পাওয়া যায় তলট গ্রামে। এই গ্রামের মনিরা পারভীন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিষেধক দেওয়া শুরু করেন বছর দুই আগে। প্রতিষেধক দেওয়ার আগে তিনি পুরো গ্রাম ঘুরে হাঁস-মুরগির ওপর জরিপ করেছিলেন। সে সময় গ্রামের ২৮০টি বাড়ির মধ্যে হাঁস-মুরগি ছিল ৩০ থেকে ৩৫টি বাড়িতে। অথচ এখন গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই ১০ থেকে ১২টি করে হাঁস-মুরগি রয়েছে।
মনিরা বলেন, ‘আগে রাণিক্ষেত ও বসন্ত রোগে প্রচুর মুরগি মারা যেত। ফলে গ্রামের মেয়েরা বিরক্ত হয়ে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করত কম। অথচ এখন সামান্য খরচে বাড়ি বসেই প্রতিষেধক মেলায় তাঁদের হাঁস-মুরগি আর মরছে না। তাই হাঁস-মুরগি লালন-পালনে সবারই আগ্রহ বেড়েছে।’
সরেজমিনে মনিরা পারভীনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় গ্রামের ১০ থেকে ১২ জন নারী তাঁদের হাঁস-মুরগি প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছেন। মনিরা সেগুলোতে একের পর এক প্রতিষেধক পুশ করে চলেছেন।

প্রতিষেধক দিতে আসা তলট গ্রামের ইসমত আরা ও সাহেরা খাতুন জানান, হাঁস-মুরগি মারা যাওয়ার ভয়ে তাঁরা একসময় এগুলো লালন-পালন করতেন না। কিন্তু এখন তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িতে ১০ থেকে ১৫টি করে হাঁস ও মুরগি রয়েছে। প্রতিষেধক দিলে হাঁস-মুরগি মরবে না জেনে তাঁরা এগুলো লালন-পালন শুরু করেছেন।

স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প: উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার দেড় শতাধিক নারী। এসব নারীদের মধ্য থেকে কথা হয়েছে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা প্রত্যেকেই মাত্র দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে সংসারের অভাব দূর করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার অভ‚তপূর্ব গল্প শুনিয়েছেন।

হেলেনা খাতুনের বাড়ি পিয়েদহ গ্রামে। স্বামী অন্যের কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করে সামান্য আয় করে থাকেন। অথচ প্রায় দুই বছর ধরে হেলেনা খাতুন হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর প্রতিষেধক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করছেন। তাঁর আয়েই পড়াশোনা করছে তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সম্প্রতি তিনি তাঁর বড় ছেলেকে ভোলায় ডিপ্লোমা প্রকৌশল কোর্সে ভর্তি করিয়েছেন।

হেলেনা বলেন, ‘আগে আমাগরে দিন চলত না। অথচ আইজ আমি এক ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতেছি। হাঁস-মুরগির ইনজেকশনের টাকার থ্যা আইজ আমার ভাগ্যের এই পরিবর্তন হইছে।’

সোনাতলা গ্রামের আয়শা আক্তারের সঙ্গে স্বামীর বিচ্ছেদ হয়ে গেলে এক সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন তিনি। অথচ এখন হাঁস-মুরগির প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ করে তিনি স্বাবলম্বী। এখন তিনি স্বপ্ন দেখছেন তাঁর সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার।
আয়শা বলেন, ‘আমার নিজের ২৫টির বেশি মুরগি আছে। সেগুলোর আয়ের পাশাপাশি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির হাঁস-মুরগিতে ইনজেকশন দিয়্যা আমি খুব ভালো আছি। আমার ঘরে কুনু অভাব নাই।’

প্রশিক্ষণ চলছেই: সাঁথিয়া প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে প্রায় ৩০ জন নারীকে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ। সেখানে উপস্থিত হয়ে জানা যায়, প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীরা এর আগেও একাধিকবার প্রতিষেধকের বিষয়সহ হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর নানা রোগ নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। মূলত তাঁদেরকে দক্ষ করে তোলার জন্যই এভাবে বার বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় দেড় শ নারীকে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কথা: উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ বলেন, ‘সাঁথিয়ায় ২৬৫টি গ্রাম। এসব গ্রামে এখন দেড় শতাধিক প্রশিক্ষিত নারী হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুকে প্রতিষেধক দিচ্ছেন। যদি প্রতি গ্রামেই দুই-তিনজন করে প্রশিক্ষিত নারী দিয়ে প্রতিষেধক দেওয়ার ববস্থা করা যেত তবে গোটা উপজেলাটি হাঁস-মুরগিতে ভরে উঠত। আমি সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। তবে আমার মতে শুধু সাঁথিয়া নয়। গোটা বাংলাদেশেই এমন ব্যবস্থা চালু করা গেলে দেশে আমিষের ঘাটতি যেমন থাকবে না তেমনি নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইনজেকশন দিয়ে স্বাবলম্বী দেড় শতাধিক নারী

আপডেট সময় : ০৩:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

‘হাঁস-মুরগি হলো গ্রামীণ নারীদের মানিব্যাগ।’ দেশের অনেক গ্রামাঞ্চলেই এ কথাটি বেশ প্রচলিত। এর পেছনে যুক্তিও আছে। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করেন নারীরা। এগুলো থেকে যে আয় হয় তা সাধারণত গ্রামীণ নারীদের নিজস্ব হিসেবের খাতাতেই থাকে। নারীদের যত্নে ও কষ্টে লালন-পালন করা এই হাঁস-মুরগি ভালো থাকলে নারীদের হিসাবের খাতা ভালো থাকে। আর এগুলোর অসুখ-বিসুখ হলে হিসেবের খাতা উল্টো পথে দৌঁড়ায়।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গ্রামীণ নারীদের এই ‘মানিব্যাগ’ সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন গ্রামেরই দেড় শতাধিক নারী। পুঁথিগত শিক্ষায় হয়তো তাঁরা তেমন বলিষ্ঠ নন। কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁস-মুরগিসহ গবাদিপশুকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুটি বড় ধরনের সফলতা দেখিয়েছেন তাঁরা। এর একটি হলো উপজেলার হাঁস-মুরগির অসুস্থতা একেবারেই কমিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কর্মকান্ডের ফলেই সাঁথিয়ায় দেশি হাঁস-মুরগির সংখ্যা দুই বছরে দেড় গুণেরও বেশি বেড়েছে। আর দ্বিতীয়টি হলো এই কাজ করে দেড় শতাধিক নারী অভাব জয় করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তাঁরা পরিবারের সবার মুখে যেমন হাসি ফুটিয়েছেন তেমনি এলাকার নারীদেরও অনুপ্রাণীত করতে পেরেছেন। তবে নারীদের এভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পেছনে মূল ভ‚মিকাটি পালন করছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি সাঁথিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ।

শুরুর প্রেক্ষাপট: বছর দুই আগের ঘটনা। সাঁথিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উদ্যোগে নন্দনপুর গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে একটি উঠোন বৈঠক। সেখানে গ্রামের প্রায় অর্ধশত নারীর উদ্দেশ্যে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর লালন-পালন নিয়ে কথা বলছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ। সরকারের উপজেলা টু কমিউনিটি (ইউ টু সি) প্রকল্পের আওতায় প্রাণিস্পদ কার্যালয় প্রায়ই এমন উঠোন বৈঠক করে থাকে।
সে যাই হোক। সেদিনের নন্দনপুর গ্রামের উঠোন বৈঠকে নারীরা একবাক্যে একটি সমস্যা নিয়ে কথা তুললেন। তা হলো বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে তাঁদের ‘মানিব্যাগ’ অর্থাৎ হাঁস-মুরগি মারা যাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ এর সমাধান দিলেন তাৎক্ষণিক। তিনি বললেন, ‘বেশির ভাগ মুরগি মারা যায় রাণিক্ষেত ও বসন্ত রোগে। আর বেশির ভাগ হাঁস মারা যায় ডাকপ্লেগে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে যে কেউ গিয়ে নামমাত্র খরচে এর প্রতিষেধক দিলেই মুক্তি মিলবে এসব রোগ থেকে।’
কিন্তু বাদ সাধলেন উঠোন বৈঠকের নারীরা। তাঁদের কথা, একে তো তাঁরা নারী। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে কীভাবে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে তাঁরা পৌঁছাবেন। যাতায়াত খরচের পাশাপাশি সময়ও লাগবে অনেক। এরও সমাধান দিলেন হারুনূর রশীদ। তিনি বললেন, ‘ইনজেকশনের মাধ্যমে হাঁস-মুরগির প্রতিষেধক পুশ করা বেশ সহজ। কোনো নারী যদি বিষয়টি শিখতে চান তবে সেক্ষেত্রে উপজেলা প্রাণিস্পদ কার্যালয় প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেবে।’
ওই উঠোন বৈঠক থেকেই প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেন ছয়জন নারী। হারুনূর রশীদ তাঁদের নাম লিখে নিলেন। এর পর তিনি একই রকম উঠোন বৈঠক করলেন পিয়েদহ, সোনাতলা, তলটসহ বেশ কিছু গ্রামে। এসব উঠোন বৈঠক থেকে একইভাবে তিনি প্রতিষেধক দিতে ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে আগ্রহী নারী পেলেন পাঁচ-ছয়জন করে। সব মিলিয়ে যখন ২৫ থেকে ৩০ জন হলো তখন তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আয়োজন করলেন তিনদিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। সেখানে হাঁস-মুরগিকে কিভাবে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রতিষেধক পুশ করতে হয় তা শেখানো হলো। শুধু হাঁস-মুরগিরই নয় গবাদিপশুরও বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, জৈব নিরাপত্তা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শেখানো হলো। কোন রোগের কোন প্রতিষেধক, প্রতিষেধকের পরিমাণই বা কি- সবই হাতে-কলমে শেখানো হলো। আর এ প্রশিক্ষণ বাবদ বেশির ভাগ ব্যয়ই নিজ পকেট থেকে বহন করলেন হারুনূর রশীদ। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীরা তাঁদের অর্থে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধকসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
আস্থা অর্জন যেভাবে: উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে প্রথম ব্যাচে যে কয়েকজন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নন্দনপুর গ্রামের সুলতানা খাতুন তাঁদেরই একজন। প্রশিক্ষণের শেষ দিনে তিনি প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রতিষেধক ও সিরিঞ্জ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। বাড়ি ফিরে প্রথমেই নিজের ১০টি মুরগি ও পাঁচটি হাঁসকে ইনজেকশনের মাধ্যেমে নিজ হাতে প্রতিষেধক দিলেন। এর পর প্রতিবেশীদের হাঁস-মুরগিগুলোকে প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কেউই তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। প্রথম দিকে বিনা পয়সায় অনেকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রতিষেধকের ইনজেকশন দিয়েছেন। এরই মধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য মাঠকর্মীরাও সুলতানার গ্রামে গিয়ে সুলতানার মাধ্যমে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে বুঝিয়েছেন। এক পর্যায়ে সবার মধ্যে আস্থা দেখা দিতে শুরু করল। গ্রামের লোকজন হাঁস-মুরগি নিয়ে সুলতানার কাছে আসতে শুরু করলেন। সবাই যখন দেখলেন প্রতিষেধকের কারণে হাঁস-মুরগিগুলো বেঁচে যাচ্ছে, তখন তাঁদের আগ্রহ বাড়তে লাগলো। সুলতানাও প্রতিটি হাঁস বা মুরগি থেকে প্রতিষেধক বাবদ দুই-তিন টাকা করে পেতে লাগলেন। এখন প্রতিদিন গড়ে তাঁর আয় হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

সুলতানার মতোই অন্যান্য প্রশিক্ষিত নারীরাও ঠিক একইভাবে নিজেদের গ্রামে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে আস্থা অর্জন করেছেন। প্রশিক্ষিত এসব নারী নিজ বাড়িতে বসে অথবা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০টি হাঁস অথবা মুরগিকে প্রতিষেধক দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় তাঁরা এর পাশাপাশি গরু-ছাগলকেও প্রতিষেধক দিচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারেও তাঁরা আলাদা করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

প্রতিষেধক থেকে আয়: হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর প্রতিষেধক পাওয়া যায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। সেখান থেকেই প্রশিক্ষিত নারীরা সরকার নির্ধারিত দামে প্রতিষেধকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করে থাকেন। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও প্রশিক্ষিত নারীরা জানান, সব মিলিয়ে প্রতিটি হাঁস বা মুরগির পেছনে প্রতিষেধক বাবদ ব্যয় হয় মাত্র ১৫ পয়সা। কিন্তু হাঁস-মুরগিকে প্রতিষেধক দেওয়ার পর এর মালিকেরা প্রতিটি বাবদ দুই থেকে তিন টাকা দিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ দিনেই ২০০ থেকে ৩০০ হাঁস-মুরগিকে প্রতিষেধক দিতে হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন গড়ে আয় হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।

দ্রুত বাড়ছে হাঁস-মুরগি: সাঁথিয়ায় নারীদের মাধ্যমে প্রতিষেধক দেয়ার কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দ্রুত এ উপজেলায় হাঁস-মুরগির সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলায় দেশি হাঁস-মুরগির সংখ্যা ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৪৮১টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭২টিতে।
দেশি হাঁস-মুরগির সংখ্যা বাড়ার চমৎকার একটি চিত্র পাওয়া যায় তলট গ্রামে। এই গ্রামের মনিরা পারভীন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিষেধক দেওয়া শুরু করেন বছর দুই আগে। প্রতিষেধক দেওয়ার আগে তিনি পুরো গ্রাম ঘুরে হাঁস-মুরগির ওপর জরিপ করেছিলেন। সে সময় গ্রামের ২৮০টি বাড়ির মধ্যে হাঁস-মুরগি ছিল ৩০ থেকে ৩৫টি বাড়িতে। অথচ এখন গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই ১০ থেকে ১২টি করে হাঁস-মুরগি রয়েছে।
মনিরা বলেন, ‘আগে রাণিক্ষেত ও বসন্ত রোগে প্রচুর মুরগি মারা যেত। ফলে গ্রামের মেয়েরা বিরক্ত হয়ে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করত কম। অথচ এখন সামান্য খরচে বাড়ি বসেই প্রতিষেধক মেলায় তাঁদের হাঁস-মুরগি আর মরছে না। তাই হাঁস-মুরগি লালন-পালনে সবারই আগ্রহ বেড়েছে।’
সরেজমিনে মনিরা পারভীনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় গ্রামের ১০ থেকে ১২ জন নারী তাঁদের হাঁস-মুরগি প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছেন। মনিরা সেগুলোতে একের পর এক প্রতিষেধক পুশ করে চলেছেন।

প্রতিষেধক দিতে আসা তলট গ্রামের ইসমত আরা ও সাহেরা খাতুন জানান, হাঁস-মুরগি মারা যাওয়ার ভয়ে তাঁরা একসময় এগুলো লালন-পালন করতেন না। কিন্তু এখন তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িতে ১০ থেকে ১৫টি করে হাঁস ও মুরগি রয়েছে। প্রতিষেধক দিলে হাঁস-মুরগি মরবে না জেনে তাঁরা এগুলো লালন-পালন শুরু করেছেন।

স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প: উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার দেড় শতাধিক নারী। এসব নারীদের মধ্য থেকে কথা হয়েছে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা প্রত্যেকেই মাত্র দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে সংসারের অভাব দূর করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার অভ‚তপূর্ব গল্প শুনিয়েছেন।

হেলেনা খাতুনের বাড়ি পিয়েদহ গ্রামে। স্বামী অন্যের কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করে সামান্য আয় করে থাকেন। অথচ প্রায় দুই বছর ধরে হেলেনা খাতুন হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর প্রতিষেধক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করছেন। তাঁর আয়েই পড়াশোনা করছে তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সম্প্রতি তিনি তাঁর বড় ছেলেকে ভোলায় ডিপ্লোমা প্রকৌশল কোর্সে ভর্তি করিয়েছেন।

হেলেনা বলেন, ‘আগে আমাগরে দিন চলত না। অথচ আইজ আমি এক ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতেছি। হাঁস-মুরগির ইনজেকশনের টাকার থ্যা আইজ আমার ভাগ্যের এই পরিবর্তন হইছে।’

সোনাতলা গ্রামের আয়শা আক্তারের সঙ্গে স্বামীর বিচ্ছেদ হয়ে গেলে এক সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন তিনি। অথচ এখন হাঁস-মুরগির প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ করে তিনি স্বাবলম্বী। এখন তিনি স্বপ্ন দেখছেন তাঁর সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার।
আয়শা বলেন, ‘আমার নিজের ২৫টির বেশি মুরগি আছে। সেগুলোর আয়ের পাশাপাশি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির হাঁস-মুরগিতে ইনজেকশন দিয়্যা আমি খুব ভালো আছি। আমার ঘরে কুনু অভাব নাই।’

প্রশিক্ষণ চলছেই: সাঁথিয়া প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে প্রায় ৩০ জন নারীকে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ। সেখানে উপস্থিত হয়ে জানা যায়, প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীরা এর আগেও একাধিকবার প্রতিষেধকের বিষয়সহ হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর নানা রোগ নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। মূলত তাঁদেরকে দক্ষ করে তোলার জন্যই এভাবে বার বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় দেড় শ নারীকে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কথা: উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ বলেন, ‘সাঁথিয়ায় ২৬৫টি গ্রাম। এসব গ্রামে এখন দেড় শতাধিক প্রশিক্ষিত নারী হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুকে প্রতিষেধক দিচ্ছেন। যদি প্রতি গ্রামেই দুই-তিনজন করে প্রশিক্ষিত নারী দিয়ে প্রতিষেধক দেওয়ার ববস্থা করা যেত তবে গোটা উপজেলাটি হাঁস-মুরগিতে ভরে উঠত। আমি সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। তবে আমার মতে শুধু সাঁথিয়া নয়। গোটা বাংলাদেশেই এমন ব্যবস্থা চালু করা গেলে দেশে আমিষের ঘাটতি যেমন থাকবে না তেমনি নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।