ঢাকা ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মৃত্যুর জন্য হোটেলে ঘর ভাড়া করতে হয় যে দেশে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৩২:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩
  • / ৪৯২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অনলাইন ডেস্ক : একটি বদ্ধ ঘরের বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিল শুধু বৈদ্যুতিক পাখার শব্দ । এর মধ্যে ৯৫ বছর বয়সী মুমূর্ষু প্রেমাবতী গুপ্ত একটু নড়াচড়া করেন। এ দেখে তার সঙ্গে থাকা নাতি গঙ্গার ‘পবিত্র’ পানি তাকে খেতে দেন।

প্রেমাবতী যে ঘরটিতে অবস্থান করছেন সেটি একটি হোটেল, যা ভারতের ভারানসিতে অবস্থিত। কাশি লব মুক্তি ভবন নামের এ হোটেলটিতে প্রেমাবতীর মতো অনেক মানুষই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন।

এ হোটেলটিতে চিকিৎসার কোনো যন্ত্রপাতি নেই। গুপ্তর নাতি হাসিমুখ নিয়ে বলেন, আমরা প্রার্থনা করি যেন তিনি এখানে মারা যান।

মুক্তি ভবন হোটেলটি ভারানসির গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভারানসি একটি পবিত্র শহর যেখানে দেবতা শিব থাকতেন। এখানে মারা গেলে আর পুনর্জন্ম হয় না। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, মানুষের কর্ম ভালো হলে মানুষ হয়ে পুনর্জন্ম হয়। আর কর্ম খারাপ হলে মৃত্যুর পর প্রাণি হয়ে পৃথিবীতে আবার ফিরে আসেন।

গুপ্ত গত বছরের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রদেশ থেকে আসেন মুক্তি ভবনে। তার তিন ছেলে ও চার নাতি রয়েছে। চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় গুপ্তের স্বজনরা তাকে মুক্তি ভবনে নিয়ে আসেন।

বিহারের বাসিন্দা গোপাল চন্দ্র মিশ্র তার দাদিকে নিয়ে এসেছিলেন মুক্তি ভবনে। তারা সেখানে দেড় মাস থাকেন। তবে এই সময়ে দাদি না মারা যাওয়ায় তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ৬৩ বছর বয়সী মিশ্র। আর বাড়ি ফেরার তিন দিন পরই তার দাদির মৃত্যু হয়। এরপর মিশ্র তার ৮৩ বছর বয়সী বাবাকে নিয়ে আসেন।

মিশ্র জানান, তার বাবার অবস্থা দাদির মতো হলে তিনি তা মেনে নিতে পারবেন না। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা কাশি লব মুক্তি ভবনটি ১৯০৮ সালে নির্মিত হয়। শিল্পপতি জাইদ দয়াল ডালমিয়া এটিকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষারতদের জন্য অতিথিশালায় রূপান্তর করেন ১৯৫৮ সালে।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ হোটেলটিতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ উঠেছেন, যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মারা গেছেন। মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা মানুষজনকে হোটেলটিতে দুই সপ্তাহের জন্য থাকতে দেওয়া হয়। এরমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সময় আরও এক সপ্তাহ বেশি বাড়ানো হয়।
এ হোটেলে থাকা লোকজনকে প্রতিদিন ২০ রুপি করে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। আর বাকিটা ডালমিয়া ট্রাস্ট থেকে খরচ হয়। হোটেলটিতে সব ধর্মের লোকজনই থাকতে পারেন। এখানে অগ্রিম বুকিং নেওয়া হয় না। হোটেলটিতে কোনো অনুদান নেয়া হয় না। আর মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের খরচও হোটেলটি বহন করে।

হোটেলের ম্যানেজার অনুরাগ শুক্লা বলেন, এটি শুধু একটি হোটেল না। আমরা সারা দেশ থেকেই ফোন পাই। অনেক সময় বিদেশিরাও অগ্রিম টাকা দিয়ে এখানে আসতে চান, কিন্তু আমরা টাকার জন্য এটি খুলিনি। ঘর ফাঁকা থাকলে এখানে যে কেউ থাকতে পারবেন।

মুক্তি ভবনে প্রতিবছর ৩০০ মানুষ থাকে। এখানে চারজন পুরোহিত আছেন, যারা অতিথিদের আধ্যাত্মিক দেখভাল করেন। এখানে কারও মৃত্যু ঠেকানোর জন্যই কোনো চিকিৎসা করা হয় না। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ না মারা যান তাহলে তাদেরকে বিনয়ের সঙ্গে বের হয়ে যেতে বলা হয়।

এখানে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা একজন ব্যক্তির সঙ্গে পরিবারের দুজন সদস্য থাকতে পারেন। হোটেলটি একটি বিছানা, তৈজসপত্র, ফার্নিচার ও রান্নার জন্য চুলা দেওয়া হয়।

২০২২ সালের জুনে বিহার থেকে ৯৭ বছর বয়সী দাদা চতুর্ভুজকে নিয়ে মুক্তিভবনে এসেছিলেন আইনজীবী রোহিত কুমার ঝা। কয়েক মাস আগে বাবাকে হারানো ঝা তখন অপেক্ষা করছিলেন দাদার মৃত্যুর জন্য।

এ নিয়ে ২৯ বছর বয়সী এই আইনজীবী বলেন, আমার চোখের সামনে বাবা মারা গেছেন। এতে দাদা খুব কষ্ট পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেন। মুক্তি ভবনে আনার জন্য তিনি বার বার অনুরোধ করছিলেন।

মৃত্যু সবার কাছে দুঃখের বিষয় হলেও এটিকে উদযাপনের অংশ মনে করেন মুক্তি ভবনের ম্যানেজার অনুরাগ শুক্লা। তিনি বলেন, কেউ মারা গেলে আমাদের দুঃখ হয় না কারণ আমরা এটিকে মুক্তি হিসেবে দেখি। কিছু সময় এখানে অনেকের মৃত্যু সঙ্গীত দিয়েও উদযাপন করা হয়। সূত্র: সিএনএন, দ্য ন্যাশনাল

নিউজটি শেয়ার করুন

মৃত্যুর জন্য হোটেলে ঘর ভাড়া করতে হয় যে দেশে

আপডেট সময় : ০২:৩২:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : একটি বদ্ধ ঘরের বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিল শুধু বৈদ্যুতিক পাখার শব্দ । এর মধ্যে ৯৫ বছর বয়সী মুমূর্ষু প্রেমাবতী গুপ্ত একটু নড়াচড়া করেন। এ দেখে তার সঙ্গে থাকা নাতি গঙ্গার ‘পবিত্র’ পানি তাকে খেতে দেন।

প্রেমাবতী যে ঘরটিতে অবস্থান করছেন সেটি একটি হোটেল, যা ভারতের ভারানসিতে অবস্থিত। কাশি লব মুক্তি ভবন নামের এ হোটেলটিতে প্রেমাবতীর মতো অনেক মানুষই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন।

এ হোটেলটিতে চিকিৎসার কোনো যন্ত্রপাতি নেই। গুপ্তর নাতি হাসিমুখ নিয়ে বলেন, আমরা প্রার্থনা করি যেন তিনি এখানে মারা যান।

মুক্তি ভবন হোটেলটি ভারানসির গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভারানসি একটি পবিত্র শহর যেখানে দেবতা শিব থাকতেন। এখানে মারা গেলে আর পুনর্জন্ম হয় না। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, মানুষের কর্ম ভালো হলে মানুষ হয়ে পুনর্জন্ম হয়। আর কর্ম খারাপ হলে মৃত্যুর পর প্রাণি হয়ে পৃথিবীতে আবার ফিরে আসেন।

গুপ্ত গত বছরের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রদেশ থেকে আসেন মুক্তি ভবনে। তার তিন ছেলে ও চার নাতি রয়েছে। চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় গুপ্তের স্বজনরা তাকে মুক্তি ভবনে নিয়ে আসেন।

বিহারের বাসিন্দা গোপাল চন্দ্র মিশ্র তার দাদিকে নিয়ে এসেছিলেন মুক্তি ভবনে। তারা সেখানে দেড় মাস থাকেন। তবে এই সময়ে দাদি না মারা যাওয়ায় তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ৬৩ বছর বয়সী মিশ্র। আর বাড়ি ফেরার তিন দিন পরই তার দাদির মৃত্যু হয়। এরপর মিশ্র তার ৮৩ বছর বয়সী বাবাকে নিয়ে আসেন।

মিশ্র জানান, তার বাবার অবস্থা দাদির মতো হলে তিনি তা মেনে নিতে পারবেন না। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা কাশি লব মুক্তি ভবনটি ১৯০৮ সালে নির্মিত হয়। শিল্পপতি জাইদ দয়াল ডালমিয়া এটিকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষারতদের জন্য অতিথিশালায় রূপান্তর করেন ১৯৫৮ সালে।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ হোটেলটিতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ উঠেছেন, যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মারা গেছেন। মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা মানুষজনকে হোটেলটিতে দুই সপ্তাহের জন্য থাকতে দেওয়া হয়। এরমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সময় আরও এক সপ্তাহ বেশি বাড়ানো হয়।
এ হোটেলে থাকা লোকজনকে প্রতিদিন ২০ রুপি করে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। আর বাকিটা ডালমিয়া ট্রাস্ট থেকে খরচ হয়। হোটেলটিতে সব ধর্মের লোকজনই থাকতে পারেন। এখানে অগ্রিম বুকিং নেওয়া হয় না। হোটেলটিতে কোনো অনুদান নেয়া হয় না। আর মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের খরচও হোটেলটি বহন করে।

হোটেলের ম্যানেজার অনুরাগ শুক্লা বলেন, এটি শুধু একটি হোটেল না। আমরা সারা দেশ থেকেই ফোন পাই। অনেক সময় বিদেশিরাও অগ্রিম টাকা দিয়ে এখানে আসতে চান, কিন্তু আমরা টাকার জন্য এটি খুলিনি। ঘর ফাঁকা থাকলে এখানে যে কেউ থাকতে পারবেন।

মুক্তি ভবনে প্রতিবছর ৩০০ মানুষ থাকে। এখানে চারজন পুরোহিত আছেন, যারা অতিথিদের আধ্যাত্মিক দেখভাল করেন। এখানে কারও মৃত্যু ঠেকানোর জন্যই কোনো চিকিৎসা করা হয় না। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ না মারা যান তাহলে তাদেরকে বিনয়ের সঙ্গে বের হয়ে যেতে বলা হয়।

এখানে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা একজন ব্যক্তির সঙ্গে পরিবারের দুজন সদস্য থাকতে পারেন। হোটেলটি একটি বিছানা, তৈজসপত্র, ফার্নিচার ও রান্নার জন্য চুলা দেওয়া হয়।

২০২২ সালের জুনে বিহার থেকে ৯৭ বছর বয়সী দাদা চতুর্ভুজকে নিয়ে মুক্তিভবনে এসেছিলেন আইনজীবী রোহিত কুমার ঝা। কয়েক মাস আগে বাবাকে হারানো ঝা তখন অপেক্ষা করছিলেন দাদার মৃত্যুর জন্য।

এ নিয়ে ২৯ বছর বয়সী এই আইনজীবী বলেন, আমার চোখের সামনে বাবা মারা গেছেন। এতে দাদা খুব কষ্ট পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেন। মুক্তি ভবনে আনার জন্য তিনি বার বার অনুরোধ করছিলেন।

মৃত্যু সবার কাছে দুঃখের বিষয় হলেও এটিকে উদযাপনের অংশ মনে করেন মুক্তি ভবনের ম্যানেজার অনুরাগ শুক্লা। তিনি বলেন, কেউ মারা গেলে আমাদের দুঃখ হয় না কারণ আমরা এটিকে মুক্তি হিসেবে দেখি। কিছু সময় এখানে অনেকের মৃত্যু সঙ্গীত দিয়েও উদযাপন করা হয়। সূত্র: সিএনএন, দ্য ন্যাশনাল