ঢাকা ০৮:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ি ঘুরে আসুন 

// মোঃ শামছুর রহমান শিশির //
  • আপডেট সময় : ০৭:০৫:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৭৬৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার সাহিত্য গগনে ও বিশ্বের জ্ঞান পরিমন্ডলে উজ্জ্বল তারকারুপে চির দেদিপ্যমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত করতোয়া নদী, কবির সেই ছোট নদীর উত্তর পশ্চিম তীরে সিরাজগঞ্জ জেলার মফস্বল শহর শাহজাদপুরে কবির স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়ি অবস্থিত। ছোট নদীর পূর্বের নাম ছিল খোনকারের জোলা। করতোয় নদী বিধৌত বোনাজন আর উর্বর মাটির মফস্বল শহর শাহজাদপুর। যেখানে সোঁদা মাটির ঘাঁন কবির সৃজনের প্রেরণা জুগিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের , রবীন্দ্রনাথ সমগ্র বিশ্বের। আমাদের অনেক দৈনতা আছে, আছে অভাব। তবুও আমরা বলতে পারি আমাদের রবীন্দ্রনাথ আছেন। বাঙ্গালীর সৃষ্টিশীলতা আর মননশীলতার অসামান্য রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি শাহজাদপুরে এসেছিলেন জমিদারী দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে। এখানরকার নদী-নালা, খাল-বীল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এখানে তিনি সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহে। এখানকার করতোয় ও শাখানদী খোনকারের জোলা (কবির ছোটনদী)র প্রতি কবির ছিল গভীর টান। করতোয়া বিধৌত শাহজাদপুরের প্রকৃতিকে ভালবেসে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে হৃদয় উজাড় করে দিয়ে সৃষ্টি করেছেন দুর্লভ সাহিত্য।

শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারী একদা নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারী নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তের টাকা দশ আনায় এই জমিদারী কিনে নেন। জমিদারীর সাথে সাথে ওই কাছারিবাড়িও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। আগে এই কাছারিবাড়ির মালিক ছিল নীলকর সাহেবরা। ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবি রবীন্দ্রনাঠ ঠাকুর জমিদারী দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সম্ভবতঃ এই কারণেই শিলাইদহে তাঁর বাসগৃহ কুঠিবাড়ী নামে এবং শাহজাদপুরের বাড়িটি কাছারিবাড়ি নামে পরিচিত। শাহজাদপুরে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পালকিতে, নৌকায় ও পায়ে হেটে।

শাহজাদপুর শহরের প্রানকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত দেশের খ্যাতনামা শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের দক্ষিণ পাশে এক সবুজ শ্যমল পরিবেশে কাছারিবাড়ির অবস্থান । শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন। ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার, প্রস্থ ১০.২০ মিটার এবং উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার। ভবনটির দ্বোতলার সিড়ি ব্যতিত মোট সাতটি কক্ষ রয়েছে। ভবনটির উত্তর দক্ষিনে একই মাপের প্রশস্ত বাড়ান্দা, বাড়ান্দার গোলাকৃতির জোরামাপের খাম, উপরাংশে আছে অলংকরণ করা বড় মাপের দরজা, জানালা ও ছাদের ওপরে প্যারাপেট দেয়ালে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম দর্শনাথীদের বিশেষভাবে দৃষ্টি কাড়ে। ভবনটির জানালা দিয়ে চারপাশের মনোরম, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কবি উপলব্ধি করতেন। কাছারিবাড়ীতে বসেই কবি প্রাণভরে ছোট নদী দেখতেন ও শুনতেন ছোটনদীর স্রোতধারার মিশ্রিত সুর।

শাহজাদপুরে এসে মানুষ ও প্রকৃতিকে কবি গভীরভাবে ভালবেসেছিলেন । এখানে তিনি খুজে পান সাহিত্য সৃষ্টির নানা উপাদান। এখানে অবস্থানকালে তিনি রচনা করেন:- কাব্য: সোনারতরী , বৈষ্ণব কবিতা, দুটি পাখি , আকাশের চাঁদ, পুরস্কার  ,যমুনা, হৃদয়, ভরা ভাদরে, প্রত্যাক্ষান ও লজ্জা। চিত্রা: চিত্রা, শীত ও বসন্তে, নগর সংগীত। চৈতালী: নদীযাত্রা, মৃত্যুমাধুরী, স্মৃতি বিলয় , প্রথম চুম্বন, শেষ চুম্বন, যাত্রী, তৃণ,। ঐশ্বর্য, স্বার্থ, প্রেয়সী , শান্তিময়, কালিদাসের প্রতি ,কুমার, মানষলোক, কাব্যপ্রার্থনা, ইছামতী নদী, সুশ্রুসা, অশিক্ষাগ্রহন, বিদায়। করুনা: নববিবাহ, রজ্জিতা, বিদায়, হত্যভাগ্যের গান, গতোনিক, বঞ্চনা, সংকোচ, মানষপ্রতিভা, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ব্যবধান, তারাপ্রসন্নের কীর্তি, ছুটি, সম্পত্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি, ইত্যাদি।

ছিন্ন পত্রাবলী: ৩৮ টি বিভিন্ন ছিন্ন পত্রাবলী। প্রবন্ধ: পঞ্চভূতের অংশবিশেষ। নাটক: বিসর্জন।

শাহজাদপুর কাছারিবাড়ীর দ্বোতলার উত্তর পাশে লিচুগাছ ও শোভা বর্ধনের জন্য নানা ফুলের গাছে ঘেরা কবিগুরুর অপরুপ কাছারিবাড়িটি বহুদুরের পথিকেরও দৃষ্টি আকর্ষন করে। কাছারিবাড়ির চারদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের আশেপাশে রয়েছে নানা দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষের বাগান। কাছারিবাড়ির ভিতরে একটি বকুলগাছ ছিল। কবি ওই গাছের নীচে বসে কবিতা লিখতেন। ওই বকুলগাছটি মারা গেলে সেখানে আরও একটি বকুলের চারা রোপন করা হয়েছে। সেই চারাটিও দিনদিন বড় হচ্ছে।

১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ওই ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ওই ভবনটির বিভিন্ন সংস্কার করে ভবনটিতে রবীন্দ্রভিত্তিক আলোকচিত্র ও এ বাড়িতে কবির ব্যবহৃত প্রাপ্ত আসবাপত্র নিয়ে একটি স্মৃতি যাদুঘরের রুপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দক্ষিণ দিকের দরজা দিয়ে ওই যাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়। নিচতলা ও দ্বোতলার বিশাল হলরুমসহ যাদুঘরের সকল কক্ষ সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত । চারদিকে পাঁকা দেয়ালে বেষ্ঠিত কাছারিবাড়ির আঙ্গিনাটিও বেশ বড়।

কাছারিবাড়ীতে যাকিছু আছে দেখার: রবীন্দ্র মিলনায়তন, কবির ব্যবহৃত সামগ্রীর মধে চৌকি, লেখার জন্য ডেস্ক, সোফাসেট, আরাম কেদারা, আলনা, আলমারী, সিন্দুক, ঘাস কাটার যন্ত্র, ওয়াটার ফিল্টার, ল্যাম্প, কবির স্বহস্তে আঁকা ছবি, দেশী বিদেশী রাষ্ট্রনায়ক, বিজ্ঞানীসহ গুণীজনদের সাথে কবির অগনিত ছবি।

কিভাবে আসবেন: ঢাকার গাবতলী বা টেকনিক্যাল বাসষ্ট্যান্ড থেকে এসি, ননএসি শাহজাদপুর ট্রাভেলস্, পাবনা এক্সপ্রেস, শ্যামলী পরিবহন, আলহামরা পরিবহনে টিকেট কিনে উঠে পড়ুন গাড়ীতে। শাহজাদপুর পৌঁছে বিসিক অথবা দিলরুবা বাসষ্ট্যান্ডে নেমে পড়ুন। নেমে রিক্সা চালককে বললেই আপনাকে কাছারিবাড়ী খুব সহজেই পৌঁছে দেবে। রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে পিপিডি রেষ্ট হাউজ, সীমান্ত পার্টি  সেন্টার, সিরাজ প্লাজা, আল নূর রেষ্ট হাউজ, চৌধুরী রেসিডেন্স, শাহজাদপুর আবাসিক হোটেল, হোটেল মোহনাসহ বেশকিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল। খাওয়ার জন্য নেই কোন ভাবনা। উপজেলার মনিরামপুর বাজারে রয়েছে আপ্যায়ন ও ঘরোয়া নামের অভিজাত হোটেল।

নিউজটি শেয়ার করুন

শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ি ঘুরে আসুন 

আপডেট সময় : ০৭:০৫:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার সাহিত্য গগনে ও বিশ্বের জ্ঞান পরিমন্ডলে উজ্জ্বল তারকারুপে চির দেদিপ্যমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত করতোয়া নদী, কবির সেই ছোট নদীর উত্তর পশ্চিম তীরে সিরাজগঞ্জ জেলার মফস্বল শহর শাহজাদপুরে কবির স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়ি অবস্থিত। ছোট নদীর পূর্বের নাম ছিল খোনকারের জোলা। করতোয় নদী বিধৌত বোনাজন আর উর্বর মাটির মফস্বল শহর শাহজাদপুর। যেখানে সোঁদা মাটির ঘাঁন কবির সৃজনের প্রেরণা জুগিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের , রবীন্দ্রনাথ সমগ্র বিশ্বের। আমাদের অনেক দৈনতা আছে, আছে অভাব। তবুও আমরা বলতে পারি আমাদের রবীন্দ্রনাথ আছেন। বাঙ্গালীর সৃষ্টিশীলতা আর মননশীলতার অসামান্য রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি শাহজাদপুরে এসেছিলেন জমিদারী দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে। এখানরকার নদী-নালা, খাল-বীল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এখানে তিনি সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহে। এখানকার করতোয় ও শাখানদী খোনকারের জোলা (কবির ছোটনদী)র প্রতি কবির ছিল গভীর টান। করতোয়া বিধৌত শাহজাদপুরের প্রকৃতিকে ভালবেসে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে হৃদয় উজাড় করে দিয়ে সৃষ্টি করেছেন দুর্লভ সাহিত্য।

শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারী একদা নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারী নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তের টাকা দশ আনায় এই জমিদারী কিনে নেন। জমিদারীর সাথে সাথে ওই কাছারিবাড়িও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। আগে এই কাছারিবাড়ির মালিক ছিল নীলকর সাহেবরা। ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবি রবীন্দ্রনাঠ ঠাকুর জমিদারী দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সম্ভবতঃ এই কারণেই শিলাইদহে তাঁর বাসগৃহ কুঠিবাড়ী নামে এবং শাহজাদপুরের বাড়িটি কাছারিবাড়ি নামে পরিচিত। শাহজাদপুরে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পালকিতে, নৌকায় ও পায়ে হেটে।

শাহজাদপুর শহরের প্রানকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত দেশের খ্যাতনামা শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের দক্ষিণ পাশে এক সবুজ শ্যমল পরিবেশে কাছারিবাড়ির অবস্থান । শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন। ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার, প্রস্থ ১০.২০ মিটার এবং উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার। ভবনটির দ্বোতলার সিড়ি ব্যতিত মোট সাতটি কক্ষ রয়েছে। ভবনটির উত্তর দক্ষিনে একই মাপের প্রশস্ত বাড়ান্দা, বাড়ান্দার গোলাকৃতির জোরামাপের খাম, উপরাংশে আছে অলংকরণ করা বড় মাপের দরজা, জানালা ও ছাদের ওপরে প্যারাপেট দেয়ালে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম দর্শনাথীদের বিশেষভাবে দৃষ্টি কাড়ে। ভবনটির জানালা দিয়ে চারপাশের মনোরম, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কবি উপলব্ধি করতেন। কাছারিবাড়ীতে বসেই কবি প্রাণভরে ছোট নদী দেখতেন ও শুনতেন ছোটনদীর স্রোতধারার মিশ্রিত সুর।

শাহজাদপুরে এসে মানুষ ও প্রকৃতিকে কবি গভীরভাবে ভালবেসেছিলেন । এখানে তিনি খুজে পান সাহিত্য সৃষ্টির নানা উপাদান। এখানে অবস্থানকালে তিনি রচনা করেন:- কাব্য: সোনারতরী , বৈষ্ণব কবিতা, দুটি পাখি , আকাশের চাঁদ, পুরস্কার  ,যমুনা, হৃদয়, ভরা ভাদরে, প্রত্যাক্ষান ও লজ্জা। চিত্রা: চিত্রা, শীত ও বসন্তে, নগর সংগীত। চৈতালী: নদীযাত্রা, মৃত্যুমাধুরী, স্মৃতি বিলয় , প্রথম চুম্বন, শেষ চুম্বন, যাত্রী, তৃণ,। ঐশ্বর্য, স্বার্থ, প্রেয়সী , শান্তিময়, কালিদাসের প্রতি ,কুমার, মানষলোক, কাব্যপ্রার্থনা, ইছামতী নদী, সুশ্রুসা, অশিক্ষাগ্রহন, বিদায়। করুনা: নববিবাহ, রজ্জিতা, বিদায়, হত্যভাগ্যের গান, গতোনিক, বঞ্চনা, সংকোচ, মানষপ্রতিভা, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ব্যবধান, তারাপ্রসন্নের কীর্তি, ছুটি, সম্পত্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি, ইত্যাদি।

ছিন্ন পত্রাবলী: ৩৮ টি বিভিন্ন ছিন্ন পত্রাবলী। প্রবন্ধ: পঞ্চভূতের অংশবিশেষ। নাটক: বিসর্জন।

শাহজাদপুর কাছারিবাড়ীর দ্বোতলার উত্তর পাশে লিচুগাছ ও শোভা বর্ধনের জন্য নানা ফুলের গাছে ঘেরা কবিগুরুর অপরুপ কাছারিবাড়িটি বহুদুরের পথিকেরও দৃষ্টি আকর্ষন করে। কাছারিবাড়ির চারদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের আশেপাশে রয়েছে নানা দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষের বাগান। কাছারিবাড়ির ভিতরে একটি বকুলগাছ ছিল। কবি ওই গাছের নীচে বসে কবিতা লিখতেন। ওই বকুলগাছটি মারা গেলে সেখানে আরও একটি বকুলের চারা রোপন করা হয়েছে। সেই চারাটিও দিনদিন বড় হচ্ছে।

১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ওই ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষনা করা হয়। ওই ভবনটির বিভিন্ন সংস্কার করে ভবনটিতে রবীন্দ্রভিত্তিক আলোকচিত্র ও এ বাড়িতে কবির ব্যবহৃত প্রাপ্ত আসবাপত্র নিয়ে একটি স্মৃতি যাদুঘরের রুপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দক্ষিণ দিকের দরজা দিয়ে ওই যাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়। নিচতলা ও দ্বোতলার বিশাল হলরুমসহ যাদুঘরের সকল কক্ষ সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত । চারদিকে পাঁকা দেয়ালে বেষ্ঠিত কাছারিবাড়ির আঙ্গিনাটিও বেশ বড়।

কাছারিবাড়ীতে যাকিছু আছে দেখার: রবীন্দ্র মিলনায়তন, কবির ব্যবহৃত সামগ্রীর মধে চৌকি, লেখার জন্য ডেস্ক, সোফাসেট, আরাম কেদারা, আলনা, আলমারী, সিন্দুক, ঘাস কাটার যন্ত্র, ওয়াটার ফিল্টার, ল্যাম্প, কবির স্বহস্তে আঁকা ছবি, দেশী বিদেশী রাষ্ট্রনায়ক, বিজ্ঞানীসহ গুণীজনদের সাথে কবির অগনিত ছবি।

কিভাবে আসবেন: ঢাকার গাবতলী বা টেকনিক্যাল বাসষ্ট্যান্ড থেকে এসি, ননএসি শাহজাদপুর ট্রাভেলস্, পাবনা এক্সপ্রেস, শ্যামলী পরিবহন, আলহামরা পরিবহনে টিকেট কিনে উঠে পড়ুন গাড়ীতে। শাহজাদপুর পৌঁছে বিসিক অথবা দিলরুবা বাসষ্ট্যান্ডে নেমে পড়ুন। নেমে রিক্সা চালককে বললেই আপনাকে কাছারিবাড়ী খুব সহজেই পৌঁছে দেবে। রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে পিপিডি রেষ্ট হাউজ, সীমান্ত পার্টি  সেন্টার, সিরাজ প্লাজা, আল নূর রেষ্ট হাউজ, চৌধুরী রেসিডেন্স, শাহজাদপুর আবাসিক হোটেল, হোটেল মোহনাসহ বেশকিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল। খাওয়ার জন্য নেই কোন ভাবনা। উপজেলার মনিরামপুর বাজারে রয়েছে আপ্যায়ন ও ঘরোয়া নামের অভিজাত হোটেল।