ঢাকা ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

৫২ বছরের মধ্যে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

মোঃ হায়দার আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৫:২১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গোদাগাড়ী উপজেলাসহ রাজশাহী সকল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা, অনেকেই যখন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, তখন পেটের দায়ে ঠিকই কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের।
৩০ এপ্রিল দুপুরে বাইপাস রেলগেট এলাকায় কথা হয় অটো চালক আতিকের সাথে বয়স তার ৩৭। পেটের দায়ে বের হয়েছেন কিন্তু তেমন যাত্রী পান নি। প্রচন্ড গরমে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করছেন তিনি। তাই তো যাত্রীগণকে অন্য অটোতে তুলে দিয়ে বাড়ী চলে যান আর বলেন আমার জীবনে এরকম গরম দেখি নি।

দেশে চলমান অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সোমবারই (২৯ এপ্রিল) তিনজন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এসব তথ্য জানায়।

বেশ কয়েক দিন ধরে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা গড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে বিরাজ করছে। এর মধ্যে সোমবার (২৯ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি হয়। ৩০ এপ্রিল রাজশাহীতে ৪৩ ডিগ্রি হয়েছে। এতে নাকাল রাজশাহীসহ সারা দেশের সব বয়সী মানুষ।

তীব্র তাপদাহে রাজশাহীসহ বিভিন্ন উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ছেন চরম বিপাকে। অসহ্য গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শপিং মল, মার্কেট কিংবা বাজারেও ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি কম। অনেকেই পূর্ণ সময়ের বদলে ঘণ্টা চুক্তিতে কাজ করছেন।টানা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি আর কষ্ট বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র রোদের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। এদিকে কাজ না করলে খাবার জুটবে না। তাই পেটের তাড়নায় প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন অনেকে। গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন। তীব্র গরমের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বেশীর ভাগ মানুষ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে তেমন কেউ বের হচ্ছে না। শিশু ও বৃদ্ধরা নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তীব্র গরমে নাজেহাল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেখা মিলেছে। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিকগণ সব চেয়ে প্রখর রোদে ঠিকভাবে ধান কাটাই মাড়াই করতে পারছেন না। ইনকাম কমে গেছে। পরিবারের সদস্যদের মুখে যেন খাবার তুলে দেয়া দায়। শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেউবা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন ছায়ার নিচে। গরমের কারণে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণও। গরমে কষ্ট কয়েকগুণ বাড়লেও আয় বাড়েনি।

গোদাগাড়ী পৌর এলাকার রিকসা চালক রুবেল  জানান, রোদের মধ্যে অন্য সবার মতো আমাদের ও কষ্ট হয়। কিন্তু পেটের দায়ে সংসার চালাতে ঘরে থাকার উপায় নেই। তাই বের হয়েছি কিন্তু যাত্রী না পাওয়ায় বিপদে আছি।

মহিশালবাড়ী এলাকায় ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন আব্দুল কুদ্দুস। তার সাথে এপ্রতিবেদকের কথা হয়, তিনি পরিবারের সদস্যদের শুখ শান্তির জন্য সাইপ্রাস গিয়েছিলাম ভিসা জটিলতার কারণে সেখানে প্রবেশ করতে পারিনি। ব্যর্থ হয়ে ১০ লাখ টাকা হারিয়ে কোনভাবে দেশে ফিরে এসে আবার সবজি ব্যবসা শুরু করেছি কিন্তু প্রচন্ড খরায়   কাঁচা মালামাল শুকিয়ে যাওয়ার কারনে প্রতি সপ্তাহে ৫/৬ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। উপায়হীনভাবে করতে হচ্ছে। একই এলাকার গরু ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, গরমে কোন শান্তি নেই। হাটে গরুর খুব আমদানী বিক্রি কম ৩ টি গরু বিক্রি কনে ২৫ হাজার টাকা লস হয়েছে। ক্ষতি পূরণের জন্য আবার গরু কিনছি হাটে যাব। সংসার তো চালাতে হবে।

এপ্রিলের শুরু থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে অব্যাহত আছে তীব্র তাপদাহ। এতে করে জনজীবনে নেমে এসেছে নাভিশ্বাস। প্রাণীকুলেও দেখা মিলেছে অস্বস্থি। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ৫২ বছরের মধ্যে রাজশাহীতে  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ৫২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হলো।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, এই মৌসুমে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াম। বাতাসের আদ্রতা ১৮ শতাংশ। এর আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৫ সালের ২ জুন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরপর ২০১৪ সালের ২১ মে এবং ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চা তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদীতে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী আরো কয়েকদিন একই রকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিস।
তীব্র দাপদাহের কারণে রাজশাহীসহ আরো ৫টি জেলার পাঠদান কার্যক্রমবন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে জেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কলেজ গুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী ২ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করায় অভিভাবকরা স্বস্থি প্রকাশ করেছেন।

গত ২৮ এপ্রিল গরম থেকে বাঁচতে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে এককই স্কুলের ২ ছাত্র  মারা গেছে। গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার নমীর উদ্দীন জানান, রোববার দুপুরে গোদাগাড়ীর রেল বাজার ঘাটে পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল তারা। এরা হলেন, মহিশালবাড়ি গ্রামের সাগরপাড়ার ওমর আলীর ছেলে উসমান আলী (১৪) ও নাসির উদ্দিনের ছেলে সুলতান মুহাম্মদ সাইফ (১৫)। এদের মধ্যে ওসমান আলী লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি বিভাগের কর্মীরা।

মহিশালবাড়ি আল ইসলাহ্ ইসলামী একাডেমীর পাঁচজন ছাত্র পদ্মা নদীতে গোসল করতে যায়। তাদের মধ্য থেকে দুইজন ওসমান ও সাইফ পানিতে ডুবে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে একজনের লাশ উদ্ধার করে। আর সাইফের লাশ দিন সকালে ৫ কিলোমিটার দূরে থেকে উদ্ধার করা হয়।

মহিশালবাড়ি আল ইসলাহ্ ইসলামী একাডেমীর প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)  তারেক আহম্মেদ আনীক বলেন,  স্কুলের নাম করে বাড়ী থেকে বের হয় ৫ জন ছাত্র কিন্তু তারা স্কুলে না এসে বাইসাইকেল করে নদীতে যায় স্কুলের ব্যাগ, পোশাক খুলে একটি নৌকায় রাখে টিউব নিয়ে ৫ ছাত্র নদীতে নামে কিছুদূর যাওয়ার পর গরমে টিউব ফেঁটে যায়, ৩ জন তীরে আসলেও ২ জন ডুবে যায়। একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে পরদিন সকালে  অন্যজনের উদ্ধার করা হয়েছে এবং মহিশালবাড়ী গৌরস্থানে নামাজের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

৫২ বছরের মধ্যে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

আপডেট সময় : ০৫:২১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

গোদাগাড়ী উপজেলাসহ রাজশাহী সকল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা, অনেকেই যখন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, তখন পেটের দায়ে ঠিকই কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের।
৩০ এপ্রিল দুপুরে বাইপাস রেলগেট এলাকায় কথা হয় অটো চালক আতিকের সাথে বয়স তার ৩৭। পেটের দায়ে বের হয়েছেন কিন্তু তেমন যাত্রী পান নি। প্রচন্ড গরমে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করছেন তিনি। তাই তো যাত্রীগণকে অন্য অটোতে তুলে দিয়ে বাড়ী চলে যান আর বলেন আমার জীবনে এরকম গরম দেখি নি।

দেশে চলমান অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সোমবারই (২৯ এপ্রিল) তিনজন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এসব তথ্য জানায়।

বেশ কয়েক দিন ধরে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা গড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে বিরাজ করছে। এর মধ্যে সোমবার (২৯ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি হয়। ৩০ এপ্রিল রাজশাহীতে ৪৩ ডিগ্রি হয়েছে। এতে নাকাল রাজশাহীসহ সারা দেশের সব বয়সী মানুষ।

তীব্র তাপদাহে রাজশাহীসহ বিভিন্ন উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ছেন চরম বিপাকে। অসহ্য গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শপিং মল, মার্কেট কিংবা বাজারেও ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি কম। অনেকেই পূর্ণ সময়ের বদলে ঘণ্টা চুক্তিতে কাজ করছেন।টানা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি আর কষ্ট বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র রোদের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। এদিকে কাজ না করলে খাবার জুটবে না। তাই পেটের তাড়নায় প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন অনেকে। গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন। তীব্র গরমের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বেশীর ভাগ মানুষ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে তেমন কেউ বের হচ্ছে না। শিশু ও বৃদ্ধরা নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তীব্র গরমে নাজেহাল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেখা মিলেছে। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিকগণ সব চেয়ে প্রখর রোদে ঠিকভাবে ধান কাটাই মাড়াই করতে পারছেন না। ইনকাম কমে গেছে। পরিবারের সদস্যদের মুখে যেন খাবার তুলে দেয়া দায়। শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেউবা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন ছায়ার নিচে। গরমের কারণে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণও। গরমে কষ্ট কয়েকগুণ বাড়লেও আয় বাড়েনি।

গোদাগাড়ী পৌর এলাকার রিকসা চালক রুবেল  জানান, রোদের মধ্যে অন্য সবার মতো আমাদের ও কষ্ট হয়। কিন্তু পেটের দায়ে সংসার চালাতে ঘরে থাকার উপায় নেই। তাই বের হয়েছি কিন্তু যাত্রী না পাওয়ায় বিপদে আছি।

মহিশালবাড়ী এলাকায় ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন আব্দুল কুদ্দুস। তার সাথে এপ্রতিবেদকের কথা হয়, তিনি পরিবারের সদস্যদের শুখ শান্তির জন্য সাইপ্রাস গিয়েছিলাম ভিসা জটিলতার কারণে সেখানে প্রবেশ করতে পারিনি। ব্যর্থ হয়ে ১০ লাখ টাকা হারিয়ে কোনভাবে দেশে ফিরে এসে আবার সবজি ব্যবসা শুরু করেছি কিন্তু প্রচন্ড খরায়   কাঁচা মালামাল শুকিয়ে যাওয়ার কারনে প্রতি সপ্তাহে ৫/৬ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। উপায়হীনভাবে করতে হচ্ছে। একই এলাকার গরু ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, গরমে কোন শান্তি নেই। হাটে গরুর খুব আমদানী বিক্রি কম ৩ টি গরু বিক্রি কনে ২৫ হাজার টাকা লস হয়েছে। ক্ষতি পূরণের জন্য আবার গরু কিনছি হাটে যাব। সংসার তো চালাতে হবে।

এপ্রিলের শুরু থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে অব্যাহত আছে তীব্র তাপদাহ। এতে করে জনজীবনে নেমে এসেছে নাভিশ্বাস। প্রাণীকুলেও দেখা মিলেছে অস্বস্থি। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ৫২ বছরের মধ্যে রাজশাহীতে  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ৫২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হলো।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, এই মৌসুমে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াম। বাতাসের আদ্রতা ১৮ শতাংশ। এর আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৫ সালের ২ জুন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরপর ২০১৪ সালের ২১ মে এবং ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চা তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদীতে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী আরো কয়েকদিন একই রকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিস।
তীব্র দাপদাহের কারণে রাজশাহীসহ আরো ৫টি জেলার পাঠদান কার্যক্রমবন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে জেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কলেজ গুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী ২ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করায় অভিভাবকরা স্বস্থি প্রকাশ করেছেন।

গত ২৮ এপ্রিল গরম থেকে বাঁচতে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে এককই স্কুলের ২ ছাত্র  মারা গেছে। গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার নমীর উদ্দীন জানান, রোববার দুপুরে গোদাগাড়ীর রেল বাজার ঘাটে পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল তারা। এরা হলেন, মহিশালবাড়ি গ্রামের সাগরপাড়ার ওমর আলীর ছেলে উসমান আলী (১৪) ও নাসির উদ্দিনের ছেলে সুলতান মুহাম্মদ সাইফ (১৫)। এদের মধ্যে ওসমান আলী লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি বিভাগের কর্মীরা।

মহিশালবাড়ি আল ইসলাহ্ ইসলামী একাডেমীর পাঁচজন ছাত্র পদ্মা নদীতে গোসল করতে যায়। তাদের মধ্য থেকে দুইজন ওসমান ও সাইফ পানিতে ডুবে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে একজনের লাশ উদ্ধার করে। আর সাইফের লাশ দিন সকালে ৫ কিলোমিটার দূরে থেকে উদ্ধার করা হয়।

মহিশালবাড়ি আল ইসলাহ্ ইসলামী একাডেমীর প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)  তারেক আহম্মেদ আনীক বলেন,  স্কুলের নাম করে বাড়ী থেকে বের হয় ৫ জন ছাত্র কিন্তু তারা স্কুলে না এসে বাইসাইকেল করে নদীতে যায় স্কুলের ব্যাগ, পোশাক খুলে একটি নৌকায় রাখে টিউব নিয়ে ৫ ছাত্র নদীতে নামে কিছুদূর যাওয়ার পর গরমে টিউব ফেঁটে যায়, ৩ জন তীরে আসলেও ২ জন ডুবে যায়। একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে পরদিন সকালে  অন্যজনের উদ্ধার করা হয়েছে এবং মহিশালবাড়ী গৌরস্থানে নামাজের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।

বাখ//আর