ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কুয়াকাটায় পর্যটকদের মন কেড়েছে বিষমুক্ত শুটকি: নেই স্থায়ী শুটকী পল্লী 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৫৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এ এম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :

কোন ধরনের ক্ষতিকারক মিশ্রন ছাড়াই শুধুমাত্র লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিষমুক্ত শুটকি। আর সমুদ্রপাড়ে খোলা আকাশের নিচে কেবল রোদের আলো এবং বাতাসের সাহায্যে কাঁচা মাছ শুকিয়ে বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। আর শুটকিপ্রেমীরাও উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুটকি কিনতে ছুটে আসছেন দুর-দুরান্ত থেকে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুটকি উৎপাদনে নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না দোকানিরা। তাই কুয়াকাটার শুটকি ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী শুটকি পল্লী নির্মানের দাবি উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিকভাবে দর্শনার্থীদের কাছে বিক্ষ্যাত হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে আগন্তুকদের কাছে সুনাম কুড়াচ্ছে এই পর্যটন নগরীর বিষমুক্ত শুটকি। যা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং অর্থনীতিতেও রাখছে ব্যাপক ভূমিকা। তাই ঘুরতে আসা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে কুয়াকাটার শুটকি এখন অন্যতম। তবে শুটকি উদপাদনে সরকারী কিংবা বে-সরকারীভাবে নির্দিষ্ট কোন পল্লী না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট অস্থায়ী ভাবে প্রক্রিয়াজাত করছেন উৎপাদনকারীরা। চলতি মৌসুমেও ভ্রাম্যমান অবস্থায় লেম্বুর বন, খাজুরা ও নিজামপুরসহ সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুকানো হচ্ছে শুটকি। তবে কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই শুধুমাত্র লবন মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরী করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের শুটকি মাছ। আর এ পল্লীতে দেখা মেলে পোয়া শুটকি, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্রা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির সুস্বাধু শুকানো মাছের । ফলে প্রতিনিয়ত শুটকি পল্লীতে পচন্দের শুটকি সংগ্রহে ভীড় জমান পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

 

রংপুর থেকে আসা পর্যটক জহির উদ্দিন জানান, আমরা শুটকি প্রেমী মানুষ, দেশের বিভিন্ন এলাকার শুটকি খেয়েছি। কিন্তু কুয়াকাটার শুটকির কথা শুনে এখানে এসছি। ভ্রমণ শেষে বেশকিছু শুটকি নিয়েছি। এক কথায় অসাধারণ শুটকি,কারণ মেডিসিন ছাড়াই রোদে শুকানো হয়। এমনকি কোন তেমন গন্ধও নেই। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জামাল-তহমিনা দম্পতি জানান, বহুদিন ধরে অফিস কলিগদের কাছে কুয়াকাটার শুটকির কথা শুনেছি। তাই কুয়াকাটায় এসেছি। এসে দেখলাম আসলেই প্রাকৃতিকভাবে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তাই লইট্রাসহ কয়েক ধরনের শুটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি স্বজনদের গিফট করবো।

এদিকে গঙ্গামতি এলাকার শুটকি উৎপাদনকারী হানিফ জানান, সৈকতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শুটকি মাছের ব্যবসা করছেন তিনি । প্রতিবছরই তাদের বিভিন্ন কারনে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়। এমনকি দোকানিদের চাহিদানুযায়ী মাছ শুকাতে পারিনা। আর দোকানিরাও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারেনা। একই কথা জানান, কুয়াকাটার একাধিক শুটকি দোকানিরা। তারা বলেন, যারা শুটকি তৈরি করে তাদের বার বার স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অনেক সময়ই পছন্দের শুটকির অভাবে ক্রেতাদের দেয়া যায় না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করনের লক্ষে একটি স্থায়ী পল্লী নির্ধারণের দাবী সংশ্লিষ্ট সকলের।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, স্থায়ী শুটকি পল্লী নির্মানের লক্ষ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শুটকি ব্যবসায়ীদে সমস্যা সমাধান হবে।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

কুয়াকাটায় পর্যটকদের মন কেড়েছে বিষমুক্ত শুটকি: নেই স্থায়ী শুটকী পল্লী 

আপডেট সময় : ১২:০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩

এ এম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :

কোন ধরনের ক্ষতিকারক মিশ্রন ছাড়াই শুধুমাত্র লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিষমুক্ত শুটকি। আর সমুদ্রপাড়ে খোলা আকাশের নিচে কেবল রোদের আলো এবং বাতাসের সাহায্যে কাঁচা মাছ শুকিয়ে বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। আর শুটকিপ্রেমীরাও উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুটকি কিনতে ছুটে আসছেন দুর-দুরান্ত থেকে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুটকি উৎপাদনে নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না দোকানিরা। তাই কুয়াকাটার শুটকি ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী শুটকি পল্লী নির্মানের দাবি উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিকভাবে দর্শনার্থীদের কাছে বিক্ষ্যাত হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে আগন্তুকদের কাছে সুনাম কুড়াচ্ছে এই পর্যটন নগরীর বিষমুক্ত শুটকি। যা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং অর্থনীতিতেও রাখছে ব্যাপক ভূমিকা। তাই ঘুরতে আসা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে কুয়াকাটার শুটকি এখন অন্যতম। তবে শুটকি উদপাদনে সরকারী কিংবা বে-সরকারীভাবে নির্দিষ্ট কোন পল্লী না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট অস্থায়ী ভাবে প্রক্রিয়াজাত করছেন উৎপাদনকারীরা। চলতি মৌসুমেও ভ্রাম্যমান অবস্থায় লেম্বুর বন, খাজুরা ও নিজামপুরসহ সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুকানো হচ্ছে শুটকি। তবে কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই শুধুমাত্র লবন মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরী করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের শুটকি মাছ। আর এ পল্লীতে দেখা মেলে পোয়া শুটকি, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্রা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির সুস্বাধু শুকানো মাছের । ফলে প্রতিনিয়ত শুটকি পল্লীতে পচন্দের শুটকি সংগ্রহে ভীড় জমান পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

 

রংপুর থেকে আসা পর্যটক জহির উদ্দিন জানান, আমরা শুটকি প্রেমী মানুষ, দেশের বিভিন্ন এলাকার শুটকি খেয়েছি। কিন্তু কুয়াকাটার শুটকির কথা শুনে এখানে এসছি। ভ্রমণ শেষে বেশকিছু শুটকি নিয়েছি। এক কথায় অসাধারণ শুটকি,কারণ মেডিসিন ছাড়াই রোদে শুকানো হয়। এমনকি কোন তেমন গন্ধও নেই। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জামাল-তহমিনা দম্পতি জানান, বহুদিন ধরে অফিস কলিগদের কাছে কুয়াকাটার শুটকির কথা শুনেছি। তাই কুয়াকাটায় এসেছি। এসে দেখলাম আসলেই প্রাকৃতিকভাবে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তাই লইট্রাসহ কয়েক ধরনের শুটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি স্বজনদের গিফট করবো।

এদিকে গঙ্গামতি এলাকার শুটকি উৎপাদনকারী হানিফ জানান, সৈকতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শুটকি মাছের ব্যবসা করছেন তিনি । প্রতিবছরই তাদের বিভিন্ন কারনে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়। এমনকি দোকানিদের চাহিদানুযায়ী মাছ শুকাতে পারিনা। আর দোকানিরাও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারেনা। একই কথা জানান, কুয়াকাটার একাধিক শুটকি দোকানিরা। তারা বলেন, যারা শুটকি তৈরি করে তাদের বার বার স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অনেক সময়ই পছন্দের শুটকির অভাবে ক্রেতাদের দেয়া যায় না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করনের লক্ষে একটি স্থায়ী পল্লী নির্ধারণের দাবী সংশ্লিষ্ট সকলের।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, স্থায়ী শুটকি পল্লী নির্মানের লক্ষ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শুটকি ব্যবসায়ীদে সমস্যা সমাধান হবে।

বা/খ: এসআর।