ঢাকা ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নওগাঁয় তীব্র তাপপ্রবাহে ঝড়ে পড়ছে আমের গুটি : ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

নওগাঁ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১১:২৮:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০২৪
  • / ৪৩৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
উত্তরের শাস্য ভান্ডার ও খাদ্য উদ্বোত্ত জেলা নওগাঁ। এই জেলায় যে পরিমান ধান উৎপাদন হয়। সেই ধান দিয়ে এই জেলা চাহিদা মেটিয়ে আশেপাশের জেলায় বিক্রি করা হয়। ধানের পাশাপাশি আম উৎপাদনে পিছিয়ে নেই এই জেলার কৃষকরা। গত কয়েক দিনের তীব্র দাতপ্রবাহের কারনে আমের গুটি ঝড়ে পড়েছে। পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও মিলছেনা সুফল। নওগাঁর সব আম বাগান গুলোতে বর্তমানে একই অবস্থা। তাই আমের ফলন বিপর্যয়ের শস্কায় দিন কাটছে এখানকার আম বাগানী ও চাষিদের মাঝে।
টানা দুই সপ্তাহের টানা গরম ও তাপপ্রবাহে কারণে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানি সেচসহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও ঝরে পড়া থেকে ঠেকানো যাচ্ছে না আমের গুটি। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আম চাষিরা। এমন অবস্থায় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বাড়তি যত্ন নিলে গুটি পড়া রোধ অনেকটাই সম্বব।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রমতে, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৪ দশমিক ২৪ টন হিসেবে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, এবার আশানূরুপভাবে আমের দেখা নেই। আমের গুটি ঝরে পড়ে আছে রোদের তীব্রতায়। এমন পরিস্থিতি আমের নতুন রাজধানী খ্যাত নওগাঁর বেশিরভাগ আম বাগানেই ফলন বিপর্যয়ের আশংঙ্কা করছেন চাষিরা। খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাগানে সেচ দিচ্ছেন ঘনঘন। বৈশাখের শুরু থেকে তাপদাহে পুড়ছে নওগাঁ। তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। সোমবার বেলা ৩ টায় নওগাঁয় তাপমাত্রার পারদ উঠে ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এটিই জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানায় জেলার বদলগাছী স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
পত্নীতলা উপজেলার আম চাষি কাজী ফেরদৌস হোসেন বলেন, আমি০ ১০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছেন। গত কয়েক দিনের তীব্র দাতপ্রবাহের কারনে আমের গুটি ঝড়ে পড়েছে। পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও মিলছেনা সুফল। তিনি আরও বলেন, এবার সব গাছে মুকুল কম এসেছিল। যেটুকু ছিল, তা নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে তীব্র গরমে অধিকাংশ গাছের গুটি ঝরে গেছে। অনেক গাছ গুটিশূন্য হয়ে আছে। এতে উৎপাদন অনেক কম হবে বলে ধারনা করছি।
পোরশা উপজেলার আম চাষি হাজি মিজানুর রহমান বলেন, এবার ৩০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। গাছে গুটি কম থাকায় হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। গত বছর প্রচুর আম হয়েছিল। সে তুলনায় এবার অনেক কম পাবো। অধিকাংশ গুটি ঝরে গেছে। ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে বলে মনে করছি।
নিয়ামতপুর উপজেলার আম চাষি কাজল কুমার মহন্ত বলেন, এবার ১৫ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছি। গুটিপড়া রোধে পানি, ওষুধ দেওয়ার পরও প্রচন্ড গরম আর রোদের কারনে আমগুলো ঝরে পড়ছে। গাছে আম টেকানো যাচ্ছে না। আবার কালবৈশাখী ঝড় হলে আম নষ্ট হতে পারে মারাত্বকভাবে। কঠিণ পরিস্থিতে রয়েছি আমরা।
সাপাহার উপজেলার আম চাষি মেহেদী হাসান বলেন, এ এলাকা এমনিতেই পানি সংকটাপন্ন এলাকায়। এর মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। কোন বৃষ্টি নেই। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে যাবে। যেসব বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা আছে সেসব বাগানগুলোতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই সেসব বাগানগুলো থেকে আম ঝরে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তিনি সরকারের কাছে বাগানগুলোতে যেন সেচের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তার দাবি জানিয়েছেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মেহেদুল ইসলাম বলেন- প্রতিবছরই স্বাভাবিকভাবে এমন সময় গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ে। তবে এই সময়ে গাছে বাড়তি পরিচর্যা করলে অস্বাভাবিকভাবে গুটি ঝরে পড়া বন্ধ হবে। আম গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচের পাশাপাশি প্রয়োজনে গাছের পাতায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের আমের গুটি ঝরা রোধে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি ।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ে কোন আশঙ্কা নেই। কারন আমের গুটি ঝরে যাওয়র পরও যে পরিমান আম থাকবে তা দিয়েই আমাদের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। তবে এমন পরিস্থিতিতে আমরা আম চাষিদের মাঠ পর্যায়ে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নওগাঁয় তীব্র তাপপ্রবাহে ঝড়ে পড়ছে আমের গুটি : ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

আপডেট সময় : ১১:২৮:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০২৪
উত্তরের শাস্য ভান্ডার ও খাদ্য উদ্বোত্ত জেলা নওগাঁ। এই জেলায় যে পরিমান ধান উৎপাদন হয়। সেই ধান দিয়ে এই জেলা চাহিদা মেটিয়ে আশেপাশের জেলায় বিক্রি করা হয়। ধানের পাশাপাশি আম উৎপাদনে পিছিয়ে নেই এই জেলার কৃষকরা। গত কয়েক দিনের তীব্র দাতপ্রবাহের কারনে আমের গুটি ঝড়ে পড়েছে। পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও মিলছেনা সুফল। নওগাঁর সব আম বাগান গুলোতে বর্তমানে একই অবস্থা। তাই আমের ফলন বিপর্যয়ের শস্কায় দিন কাটছে এখানকার আম বাগানী ও চাষিদের মাঝে।
টানা দুই সপ্তাহের টানা গরম ও তাপপ্রবাহে কারণে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানি সেচসহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও ঝরে পড়া থেকে ঠেকানো যাচ্ছে না আমের গুটি। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আম চাষিরা। এমন অবস্থায় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বাড়তি যত্ন নিলে গুটি পড়া রোধ অনেকটাই সম্বব।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রমতে, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৪ দশমিক ২৪ টন হিসেবে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, এবার আশানূরুপভাবে আমের দেখা নেই। আমের গুটি ঝরে পড়ে আছে রোদের তীব্রতায়। এমন পরিস্থিতি আমের নতুন রাজধানী খ্যাত নওগাঁর বেশিরভাগ আম বাগানেই ফলন বিপর্যয়ের আশংঙ্কা করছেন চাষিরা। খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাগানে সেচ দিচ্ছেন ঘনঘন। বৈশাখের শুরু থেকে তাপদাহে পুড়ছে নওগাঁ। তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। সোমবার বেলা ৩ টায় নওগাঁয় তাপমাত্রার পারদ উঠে ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এটিই জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানায় জেলার বদলগাছী স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
পত্নীতলা উপজেলার আম চাষি কাজী ফেরদৌস হোসেন বলেন, আমি০ ১০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছেন। গত কয়েক দিনের তীব্র দাতপ্রবাহের কারনে আমের গুটি ঝড়ে পড়েছে। পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও মিলছেনা সুফল। তিনি আরও বলেন, এবার সব গাছে মুকুল কম এসেছিল। যেটুকু ছিল, তা নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে তীব্র গরমে অধিকাংশ গাছের গুটি ঝরে গেছে। অনেক গাছ গুটিশূন্য হয়ে আছে। এতে উৎপাদন অনেক কম হবে বলে ধারনা করছি।
পোরশা উপজেলার আম চাষি হাজি মিজানুর রহমান বলেন, এবার ৩০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। গাছে গুটি কম থাকায় হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। গত বছর প্রচুর আম হয়েছিল। সে তুলনায় এবার অনেক কম পাবো। অধিকাংশ গুটি ঝরে গেছে। ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে বলে মনে করছি।
নিয়ামতপুর উপজেলার আম চাষি কাজল কুমার মহন্ত বলেন, এবার ১৫ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছি। গুটিপড়া রোধে পানি, ওষুধ দেওয়ার পরও প্রচন্ড গরম আর রোদের কারনে আমগুলো ঝরে পড়ছে। গাছে আম টেকানো যাচ্ছে না। আবার কালবৈশাখী ঝড় হলে আম নষ্ট হতে পারে মারাত্বকভাবে। কঠিণ পরিস্থিতে রয়েছি আমরা।
সাপাহার উপজেলার আম চাষি মেহেদী হাসান বলেন, এ এলাকা এমনিতেই পানি সংকটাপন্ন এলাকায়। এর মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। কোন বৃষ্টি নেই। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে যাবে। যেসব বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা আছে সেসব বাগানগুলোতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই সেসব বাগানগুলো থেকে আম ঝরে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তিনি সরকারের কাছে বাগানগুলোতে যেন সেচের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তার দাবি জানিয়েছেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মেহেদুল ইসলাম বলেন- প্রতিবছরই স্বাভাবিকভাবে এমন সময় গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ে। তবে এই সময়ে গাছে বাড়তি পরিচর্যা করলে অস্বাভাবিকভাবে গুটি ঝরে পড়া বন্ধ হবে। আম গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচের পাশাপাশি প্রয়োজনে গাছের পাতায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের আমের গুটি ঝরা রোধে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি ।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ে কোন আশঙ্কা নেই। কারন আমের গুটি ঝরে যাওয়র পরও যে পরিমান আম থাকবে তা দিয়েই আমাদের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। তবে এমন পরিস্থিতিতে আমরা আম চাষিদের মাঠ পর্যায়ে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
বাখ//আর