ঢাকা ১২:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
রাজশাহী ব্যুরো :
আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ সমাবেশ ঘিরে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজশাহী অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। হঠাৎ করে বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণসহ সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে দায়ের হয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা।
বিএনপির সেতাকর্মীরা দাবি করছেন, গণসমাবেশকে টার্গেট করে প্রশাসন দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা সাজানো হচ্ছে। সেসব ঘটনায় মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ পণ্ড করা হচ্ছে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেছে, গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা আবার নানা অপতৎপরতায় মাঠে নেমেছে। তারা নানাভাবে নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে তাদের পাল্টা জবাব দিতে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন।
এক সমেয় বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল রাজশাহী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবখানেই বিএনপি সমর্থিত বা মনোনীত প্রার্থীদের ছিল দাপট। বিএনপির এই দূর্গ দখল করতে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল। সেই হিসেব পাল্টে গেছে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে। ওই নির্বাচনে রাজশাহীতে বড় ধাক্কা খায় দলটি। এর পর সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে একের পর এক মামলা, গ্রেপ্তার আর দলীয় কোন্দ্বলে এখন রাজশাহীতে অনেকটা কোণঠাসা বিএনপি। কর্মসূচিতে থাকে না আগের সেই জৌলুস। ফলে গত ১৪ বছরে স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন কোনোটিতেই আর তেমন সফলতার মুখ দেখেনি দলটি। ভঙ্গুর হয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের মনোবল। তার প্রভাব গিয়ে পড়ে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে। এতে আন্দোলন কর্মসূচি বা দলীয় সভা-সমাবেশেও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় মারপিট-হাতাহাতিতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে দুর্গাপুর বাজারে ৪টি অবিস্ফোরিত ককটেলসহ বাঁশের লাঠি-সোঠা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১৬ নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ বাদী হয়ে।
এদিকে জেলার পুঠিয়ার সৈয়দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার বিকেলে প্রস্তুতি সভা ডাকে উপজেলা বিএনপি। সেখানে পাল্টা সমাবেশ ডাকে উপজেলা যুবলীগ। এরপর ওই জায়গাটির দখল নেয় যুবলীগ। ফলে পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির সভা। এ ঘটনার আগে বিকেলে মোল্লাপাড়ায় বিএনপির প্রস্তুতি সভার মঞ্চ ভাঙচুর করে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। এ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন,‘ভোট ডাকাতির কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমরা তেমন কোনো সফলতা পাইনি। তাতে কিছুটা হতাশ ছিলেন নেতাকর্মীরা।দলের পদ নিয়েই মতবিরোধ তৈরী হয়েছে। এটি প্রতিটি দলেই হয়ে থাকে। বিএনপি একটি বড় দল, সেখানে আরও বেশি হওয়ার কথা।কিন্তু এখন সবাই বুঝে গেছেন। ৩ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে সফল করতে একসঙ্গে কাজ করছেন সবাই। আর এটি দেখে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে আমাদের সভা-সমাবেশ পণ্ড করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নিজেরা ককটেল রেখে আমাদের নামে মামলা দিচ্ছে। নেতার্কীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পুলিশ দিয়ে।’
এদিকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা ধরনের নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা রাজশাহীর রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্ত্প্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের সেই অপতৎপরতরা রুখে দিতে আমাদের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুত আছে।তারাও পাল্টা সমাবেশ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জবাব দিচ্ছে। ৩ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আমরা রাজশাহীতে বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় দিব না।’
অন্যদিকে নাটোরে গত সোমবার দিবাগত রাতে নাটোর সদরের দিঘাপাতিয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া বাজার এলাকায় পাঁচটি শক্তিশালী বোমা (ককটেল) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরও আটটি বোমা।সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।এ ঘটনা পরে পুলিশ স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল ওয়াহাব আলীকে নামে আটক করেছে।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন,‘আব্দুল ওয়াহাব আলীকে ককটেল বিস্ফোরণের সাজানো ঘটনায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।’
অপরদিকে বিএনপির চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাবেশ হবে এখানে। এর জন্য আমরা এরই মধ্যে যখন নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি,তখনই নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ।’
বা/খ:জই

নিউজটি শেয়ার করুন

৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি

আপডেট সময় : ০৬:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২
রাজশাহী ব্যুরো :
আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ সমাবেশ ঘিরে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজশাহী অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। হঠাৎ করে বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণসহ সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে দায়ের হয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা।
বিএনপির সেতাকর্মীরা দাবি করছেন, গণসমাবেশকে টার্গেট করে প্রশাসন দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা সাজানো হচ্ছে। সেসব ঘটনায় মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ পণ্ড করা হচ্ছে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেছে, গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা আবার নানা অপতৎপরতায় মাঠে নেমেছে। তারা নানাভাবে নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে তাদের পাল্টা জবাব দিতে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন।
এক সমেয় বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল রাজশাহী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবখানেই বিএনপি সমর্থিত বা মনোনীত প্রার্থীদের ছিল দাপট। বিএনপির এই দূর্গ দখল করতে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল। সেই হিসেব পাল্টে গেছে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে। ওই নির্বাচনে রাজশাহীতে বড় ধাক্কা খায় দলটি। এর পর সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে একের পর এক মামলা, গ্রেপ্তার আর দলীয় কোন্দ্বলে এখন রাজশাহীতে অনেকটা কোণঠাসা বিএনপি। কর্মসূচিতে থাকে না আগের সেই জৌলুস। ফলে গত ১৪ বছরে স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন কোনোটিতেই আর তেমন সফলতার মুখ দেখেনি দলটি। ভঙ্গুর হয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের মনোবল। তার প্রভাব গিয়ে পড়ে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে। এতে আন্দোলন কর্মসূচি বা দলীয় সভা-সমাবেশেও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় মারপিট-হাতাহাতিতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে দুর্গাপুর বাজারে ৪টি অবিস্ফোরিত ককটেলসহ বাঁশের লাঠি-সোঠা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১৬ নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ বাদী হয়ে।
এদিকে জেলার পুঠিয়ার সৈয়দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার বিকেলে প্রস্তুতি সভা ডাকে উপজেলা বিএনপি। সেখানে পাল্টা সমাবেশ ডাকে উপজেলা যুবলীগ। এরপর ওই জায়গাটির দখল নেয় যুবলীগ। ফলে পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির সভা। এ ঘটনার আগে বিকেলে মোল্লাপাড়ায় বিএনপির প্রস্তুতি সভার মঞ্চ ভাঙচুর করে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। এ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন,‘ভোট ডাকাতির কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমরা তেমন কোনো সফলতা পাইনি। তাতে কিছুটা হতাশ ছিলেন নেতাকর্মীরা।দলের পদ নিয়েই মতবিরোধ তৈরী হয়েছে। এটি প্রতিটি দলেই হয়ে থাকে। বিএনপি একটি বড় দল, সেখানে আরও বেশি হওয়ার কথা।কিন্তু এখন সবাই বুঝে গেছেন। ৩ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে সফল করতে একসঙ্গে কাজ করছেন সবাই। আর এটি দেখে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে আমাদের সভা-সমাবেশ পণ্ড করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নিজেরা ককটেল রেখে আমাদের নামে মামলা দিচ্ছে। নেতার্কীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পুলিশ দিয়ে।’
এদিকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা ধরনের নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা রাজশাহীর রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্ত্প্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের সেই অপতৎপরতরা রুখে দিতে আমাদের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুত আছে।তারাও পাল্টা সমাবেশ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জবাব দিচ্ছে। ৩ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আমরা রাজশাহীতে বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় দিব না।’
অন্যদিকে নাটোরে গত সোমবার দিবাগত রাতে নাটোর সদরের দিঘাপাতিয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া বাজার এলাকায় পাঁচটি শক্তিশালী বোমা (ককটেল) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরও আটটি বোমা।সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।এ ঘটনা পরে পুলিশ স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল ওয়াহাব আলীকে নামে আটক করেছে।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন,‘আব্দুল ওয়াহাব আলীকে ককটেল বিস্ফোরণের সাজানো ঘটনায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।’
অপরদিকে বিএনপির চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাবেশ হবে এখানে। এর জন্য আমরা এরই মধ্যে যখন নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি,তখনই নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ।’
বা/খ:জই