ঢাকা ১০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নানা দপ্তরে অভিযোগ

কয়রা ‘সাংবাদিক ফোরাম’ এর বিতর্কিত কর্মকান্ডে জনমনে ক্ষোভ

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
  • / ৪৬৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খুলনার কয়রায় ‘কয়রা সাংবাদিক ফোরাম’ নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের পাশাপাশি নানা হয়রাণি করে চলেছে। আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের নির্যাতন নীরবে সহ্য করছে, এমনকি ইচ্ছা না থাকা সত্বেও বিতর্কিত সম্মাননা নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডাকযোগে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেছেন কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাব, কয়রা প্রেস ক্লাব, কয়রা রিপোর্টার্স ইউনিট ও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রভাষক, আইনজীবী ও শিক্ষকবৃন্দ। মঙ্গলবার (৭ মে) সরাসরি কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদনের অনুলিপি জমা দেয়া হয়েছে।

আবেদন ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, কতিপয় ব্যক্তি সাংবাদিক সংগঠনের নামে ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপসসহ বিভিন্ন অনিবন্ধিত অনলাইনে স্থানীয় মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের নামে অপপ্রচার চালিয়ে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এছাড়া অনুমতি না নিয়ে যাকে-তাকে আইডল-আইকন উপাধি দিয়ে গুণীজন সম্মাননার নামে স্টিকার তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। কোন যাচাই ছাড়াই যাকে-তাকে নানা উপাধিতে ভূষিত করছেন। এই গুণিজন সংবর্ধনার নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রটি অ্যাওয়ার্ড-উপাধির মোড়কে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে আসছে। ইচ্ছা না থাকার পরেও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিংবা পেশাজীবী ব্যক্তি সম্মাননা নিতে বাধ্য হচ্ছে।

ওই চক্রের প্রধান উপজেলার গোবরা গ্রামের হাফিজুর রহমানের পুত্র তারিক লিটু। তিনি ছাত্রজীবনে ২০১৬ সালে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)তে জঙ্গিবাদের উস্কানি ও অপ-সাংবাদিকতার দায়ে প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার এবং একাডেমিক হতে সাময়িক বহিষ্কারের শাস্তি পান। তার বিরুদ্ধে গত ১৮ জানুয়ারি কয়রা থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেন বলে মিজানুর রহমানের অভিযোগ। ১৮ এপ্রিল সংগঠনটি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে বিশেষ অতিথি রেখে গুণিজন সংবর্ধনা-২০২৪ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু সংসদ সদস্য তাদের অপকর্মের তথ্য জানতে পেরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠায় ওই অনুষ্ঠানে অনেকেই সম্মাননা নিতে যাননি। তবে অনিচ্ছা থাকা সত্তে¡ও ভয়ে সম্মাননা নিয়েছেন বলে কয়েকজন জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ বছর সম্মাননা পাওয়া একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা বলেন, ফেসবুকে তাদের সম্পর্কে নেগেটিভ কমেন্ট দেখলে ঘৃণা লাগে। তাদের মতো ভুইফোঁড় সংগঠন থেকে সম্মাননা নেয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না। তবে তাদের কথা না শুনলে আমাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে টানা হেঁচড়া করবে। এজন্য অনিচ্ছা সত্বেও নিতে বাধ্য হয়েছি।

গত বছরও এমন বিতর্কিত একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেন ওই সংগঠনটি। ওই সময়ে সেরা শিক্ষক, সেরা পল্লী চিকিৎসক, সেরা স্বেচ্ছাসেবী, উপকূল বন্ধুসহ একাধিক পদক দেয়া হয়। সেরা নির্বাচনে অর্থ বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নানা সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। সেরা কবি সাহিত্যিক হিসেবে পদক দিতে চান বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা এক শিক্ষার্থীকে। তিনি একাধিক বইয়ের লেখক ও একজন স্বনামধন্য প্রচ্ছদশিল্পী। তিনি পদক নিতে অসম্মতি জানালে তাকে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে। এসব ছাড়াও তাদের ফেসবুক আইডিতে নানা বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে সমাজে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে সুযোগ বুঝে কয়েকজন মিলে তাকে লাঞ্চিত করে, ভয়ভীতি দেখায়। ওই সংগঠনের সদস্যদের হাতে অনেকেই লাঞ্চিত হলেও আত্মসম্মানের ভয়ে নিরবে সহ্য করছেন। এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডে প্রকৃত পেশাজীবী সংবাদকর্মীদের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি সাধারন মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছে। তাদের হয়রাণি থেকে প্রতিকার পেতে ৬ মে ডাকযোগে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেন সমাজের সচেতন মহল। এছাড়াও তথ্য ও সম্প্রসারণ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, খুলনা জেলা প্রশাসক, র‌্যাব-৬, খুলনা পুলিশ সুপারসহ কয়েকটি দপ্তরে আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নানা দপ্তরে অভিযোগ

কয়রা ‘সাংবাদিক ফোরাম’ এর বিতর্কিত কর্মকান্ডে জনমনে ক্ষোভ

আপডেট সময় : ০৯:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

খুলনার কয়রায় ‘কয়রা সাংবাদিক ফোরাম’ নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের পাশাপাশি নানা হয়রাণি করে চলেছে। আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের নির্যাতন নীরবে সহ্য করছে, এমনকি ইচ্ছা না থাকা সত্বেও বিতর্কিত সম্মাননা নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডাকযোগে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেছেন কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাব, কয়রা প্রেস ক্লাব, কয়রা রিপোর্টার্স ইউনিট ও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রভাষক, আইনজীবী ও শিক্ষকবৃন্দ। মঙ্গলবার (৭ মে) সরাসরি কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদনের অনুলিপি জমা দেয়া হয়েছে।

আবেদন ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, কতিপয় ব্যক্তি সাংবাদিক সংগঠনের নামে ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপসসহ বিভিন্ন অনিবন্ধিত অনলাইনে স্থানীয় মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের নামে অপপ্রচার চালিয়ে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। এছাড়া অনুমতি না নিয়ে যাকে-তাকে আইডল-আইকন উপাধি দিয়ে গুণীজন সম্মাননার নামে স্টিকার তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। কোন যাচাই ছাড়াই যাকে-তাকে নানা উপাধিতে ভূষিত করছেন। এই গুণিজন সংবর্ধনার নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রটি অ্যাওয়ার্ড-উপাধির মোড়কে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে আসছে। ইচ্ছা না থাকার পরেও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিংবা পেশাজীবী ব্যক্তি সম্মাননা নিতে বাধ্য হচ্ছে।

ওই চক্রের প্রধান উপজেলার গোবরা গ্রামের হাফিজুর রহমানের পুত্র তারিক লিটু। তিনি ছাত্রজীবনে ২০১৬ সালে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)তে জঙ্গিবাদের উস্কানি ও অপ-সাংবাদিকতার দায়ে প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার এবং একাডেমিক হতে সাময়িক বহিষ্কারের শাস্তি পান। তার বিরুদ্ধে গত ১৮ জানুয়ারি কয়রা থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেন বলে মিজানুর রহমানের অভিযোগ। ১৮ এপ্রিল সংগঠনটি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান অতিথি ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে বিশেষ অতিথি রেখে গুণিজন সংবর্ধনা-২০২৪ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু সংসদ সদস্য তাদের অপকর্মের তথ্য জানতে পেরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠায় ওই অনুষ্ঠানে অনেকেই সম্মাননা নিতে যাননি। তবে অনিচ্ছা থাকা সত্তে¡ও ভয়ে সম্মাননা নিয়েছেন বলে কয়েকজন জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ বছর সম্মাননা পাওয়া একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা বলেন, ফেসবুকে তাদের সম্পর্কে নেগেটিভ কমেন্ট দেখলে ঘৃণা লাগে। তাদের মতো ভুইফোঁড় সংগঠন থেকে সম্মাননা নেয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না। তবে তাদের কথা না শুনলে আমাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে টানা হেঁচড়া করবে। এজন্য অনিচ্ছা সত্বেও নিতে বাধ্য হয়েছি।

গত বছরও এমন বিতর্কিত একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেন ওই সংগঠনটি। ওই সময়ে সেরা শিক্ষক, সেরা পল্লী চিকিৎসক, সেরা স্বেচ্ছাসেবী, উপকূল বন্ধুসহ একাধিক পদক দেয়া হয়। সেরা নির্বাচনে অর্থ বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নানা সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। সেরা কবি সাহিত্যিক হিসেবে পদক দিতে চান বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা এক শিক্ষার্থীকে। তিনি একাধিক বইয়ের লেখক ও একজন স্বনামধন্য প্রচ্ছদশিল্পী। তিনি পদক নিতে অসম্মতি জানালে তাকে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে। এসব ছাড়াও তাদের ফেসবুক আইডিতে নানা বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে সমাজে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে সুযোগ বুঝে কয়েকজন মিলে তাকে লাঞ্চিত করে, ভয়ভীতি দেখায়। ওই সংগঠনের সদস্যদের হাতে অনেকেই লাঞ্চিত হলেও আত্মসম্মানের ভয়ে নিরবে সহ্য করছেন। এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডে প্রকৃত পেশাজীবী সংবাদকর্মীদের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি সাধারন মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছে। তাদের হয়রাণি থেকে প্রতিকার পেতে ৬ মে ডাকযোগে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেন সমাজের সচেতন মহল। এছাড়াও তথ্য ও সম্প্রসারণ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, খুলনা জেলা প্রশাসক, র‌্যাব-৬, খুলনা পুলিশ সুপারসহ কয়েকটি দপ্তরে আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।