ঢাকা ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বলৎকারের ঘটনা প্রকাশ করায় মাদ্রাসার ছাত্রকে হত্যা

বাউফল (পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৫৮৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বলৎকার ঘটনা প্রকাশের জেরে পটুয়াখালীর বাউফলে হাফিজি মাদরাসার এক শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যা করে লুকিয়ে রেখেছে একই মাদরাসার সহপাঠী এক শিক্ষার্থী। শনিবার রাতে হত্যাকারী নিজেই নিহতের লাশ সনাক্ত করে। রবিবার সকালে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের মা মোসা. হামিদা বেগম বাদী হয়ে হত্যাকারী ইসমাইলকে প্রধান আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম মো. আতিকুর রহমান (১১)। সে পাকডাল গ্রামের ফজলুর রহমান রাহিমীয়া দারুল উলুম নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল। কোরআনের ১১ পাড়া মুখস্ত করার কাজ সম্পন্ন করেছিলো।
আতিক বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের মধ্য জিরাইল গ্রামের বাসিন্দা মো. সরোয়ার সরদারের ছেলে। বাবা পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রি। দুই ভাইবোনের মধ্যে আতিক বাবা-মায়ের বড় সন্তান ছিল।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকারী মো. ইসমাইল (১৮) ও নিহত আতিক উভয়ই কাছিপাড়া ইউনিয়নের পাকডাল গ্রামের ফজলুর রহমান রাহিমীয়া দারুল উরুম নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র। এ সুযোগে প্রায়ই আতিককে বলৎকার করত ইসমাইল। এই কুকর্ম সহ্য করতে না পেরে ঘটনাটি আতিক তার মা মোসা. হামিদা বেগমকে জানায়। মা হামিদা বেগম বিষয়টি মাদ্রাসার হুজুরকে জানিয়ে বিচার দাবি করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আতিককে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে ইসমাইল। এক পর্যায়ে শুক্রবার রাতে আতিকের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাশ্ববর্তী মসজিদের শৌচাগারের ময়লার ট্যাংকির ভিতর লুকিয়ে রাখে ইসমাইল। নিহত আতিকের মামা হাসান মাহমুদ বলেন, তিন বছর আগে আমার ভাগ্নে মো. আতিকুর রহমান স্থানীয় ফজলুর রহমান রাহিমীয়া দারুল উলুম নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। গত শনিবার সকাল থেকে আতিককে পাওয়া যায় না বলে মাদরাসার কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়। খবর পেয়ে মাদরাসায় গিয়ে ছাত্রদের কাছে জানতে পারি শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসমাইলের সঙ্গে আতিকের মারামারি ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে ইসমাইলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এলোমেলো কথা বলে সে। এতে আমার সন্দেহ হয়। পরে চাপ প্রয়োগ করার এক পর্যাযে আতিককে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তি দেয় ইসমাইল। লাশ কোথায় রেখেছ জানতে চাইলে ইসমাইল পাশ্ববর্তী মসজিদের ময়লার ট্যাংকির কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আতিকের লাশ দেখে আমি পুলিশকে খবর দেই।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা ইসমাইলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ইসমাইল পাশ্ববর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলার মজিবর রহমান হাওলাদারের ছেলে।

শনিবার রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদরাসার প্রাঙ্গণে স্থানীয় জনতার ভীড়। সন্তান হারানোর শোকে অচেতন হয়ে পড়েছেন বাবা। তাকে সুস্থ্য করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাদরাসার দোতলায় পুলিশ আটককৃত ইসমাইল ও মাদরাসার শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ সময় স্থানীয়রা লাশের পরিবর্তে লাশ চাই শ্লোগান তুলে প্রশাসনের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং মাদরাসায় ভাংচুর চালায়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার হবে বলে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।

বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল নিয়ে আমি ঘটনাস্থালে গিয়েছি। আতিকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে পটুয়াখালী আদালতে পাঠানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বলৎকারের ঘটনা প্রকাশ করায় মাদ্রাসার ছাত্রকে হত্যা

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

বলৎকার ঘটনা প্রকাশের জেরে পটুয়াখালীর বাউফলে হাফিজি মাদরাসার এক শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যা করে লুকিয়ে রেখেছে একই মাদরাসার সহপাঠী এক শিক্ষার্থী। শনিবার রাতে হত্যাকারী নিজেই নিহতের লাশ সনাক্ত করে। রবিবার সকালে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের মা মোসা. হামিদা বেগম বাদী হয়ে হত্যাকারী ইসমাইলকে প্রধান আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম মো. আতিকুর রহমান (১১)। সে পাকডাল গ্রামের ফজলুর রহমান রাহিমীয়া দারুল উলুম নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল। কোরআনের ১১ পাড়া মুখস্ত করার কাজ সম্পন্ন করেছিলো।
আতিক বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের মধ্য জিরাইল গ্রামের বাসিন্দা মো. সরোয়ার সরদারের ছেলে। বাবা পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রি। দুই ভাইবোনের মধ্যে আতিক বাবা-মায়ের বড় সন্তান ছিল।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকারী মো. ইসমাইল (১৮) ও নিহত আতিক উভয়ই কাছিপাড়া ইউনিয়নের পাকডাল গ্রামের ফজলুর রহমান রাহিমীয়া দারুল উরুম নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র। এ সুযোগে প্রায়ই আতিককে বলৎকার করত ইসমাইল। এই কুকর্ম সহ্য করতে না পেরে ঘটনাটি আতিক তার মা মোসা. হামিদা বেগমকে জানায়। মা হামিদা বেগম বিষয়টি মাদ্রাসার হুজুরকে জানিয়ে বিচার দাবি করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আতিককে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে ইসমাইল। এক পর্যায়ে শুক্রবার রাতে আতিকের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাশ্ববর্তী মসজিদের শৌচাগারের ময়লার ট্যাংকির ভিতর লুকিয়ে রাখে ইসমাইল। নিহত আতিকের মামা হাসান মাহমুদ বলেন, তিন বছর আগে আমার ভাগ্নে মো. আতিকুর রহমান স্থানীয় ফজলুর রহমান রাহিমীয়া দারুল উলুম নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। গত শনিবার সকাল থেকে আতিককে পাওয়া যায় না বলে মাদরাসার কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়। খবর পেয়ে মাদরাসায় গিয়ে ছাত্রদের কাছে জানতে পারি শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসমাইলের সঙ্গে আতিকের মারামারি ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে ইসমাইলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এলোমেলো কথা বলে সে। এতে আমার সন্দেহ হয়। পরে চাপ প্রয়োগ করার এক পর্যাযে আতিককে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তি দেয় ইসমাইল। লাশ কোথায় রেখেছ জানতে চাইলে ইসমাইল পাশ্ববর্তী মসজিদের ময়লার ট্যাংকির কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আতিকের লাশ দেখে আমি পুলিশকে খবর দেই।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা ইসমাইলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ইসমাইল পাশ্ববর্তী বাকেরগঞ্জ উপজেলার মজিবর রহমান হাওলাদারের ছেলে।

শনিবার রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদরাসার প্রাঙ্গণে স্থানীয় জনতার ভীড়। সন্তান হারানোর শোকে অচেতন হয়ে পড়েছেন বাবা। তাকে সুস্থ্য করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাদরাসার দোতলায় পুলিশ আটককৃত ইসমাইল ও মাদরাসার শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ সময় স্থানীয়রা লাশের পরিবর্তে লাশ চাই শ্লোগান তুলে প্রশাসনের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং মাদরাসায় ভাংচুর চালায়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার হবে বলে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।

বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল নিয়ে আমি ঘটনাস্থালে গিয়েছি। আতিকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে পটুয়াখালী আদালতে পাঠানো হয়েছে।