ঢাকা ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পদ্মা সেতুতে চলল ‘পদ্মা ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেন’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:০২:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪৬৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মাসেতু হয়ে ভাঙ্গা-মাওয়া এলাকায় পরীক্ষামূলক রেল চলাচল শুরু হলো। আর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সরাসরি যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে সেপ্টেম্বরে। তবে আগামী বছর ট্রেন চলবে ঢাকা-যশোর রেলপথে।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক এ ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

পদ্মাসেতুর সড়কপথ চালুর ১০ মাসের মাথায় এবার প্রস্তুত হলো রেলপথ। ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের পদ্মাসেতুর রেলপথের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন প্রকৌশলীরা। আজ ৪১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে ট্রেনটি।

প্রকৌশলীরা জানান, বুধবার (২৯ মার্চ) রেলপথের সর্বশেষ ৭ মিটার অংশের ঢালাই দেওয়ার মাধ্যমে কাজ সমাপ্ত হয়। শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে প্রকৌশলীদের পরীক্ষায় পুরো সেতুতে ট্রেন চলার জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

প্রকৌশলীরা বলছেন, বিশ্বমানের করে প্রস্তুত করা হয়েছে পদ্মাসেতুর রেলপথ। শত বছরেরও বেশি সময় টেকসই থাকবে রেলপথটি।

এর আগে পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহম্মেদ বলেছিলেন, গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সাড়ে ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখা হবে। এ পথে ডিজাইন স্পিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে টেস্ট-রান চালানো হবে।

তিনি জানান, পদ্মাসেতুর রেলপথ চালু আরও এক শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি করবে। ট্রান্স এশিয়া রেলপথের সঙ্গে এ লাইনটি যুক্ত হবে।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। আর পুরো প্রকল্প তদারকি করছে সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাংকার ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে রওনা হয়ে পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া পৌঁছবে। ট্রেনটি মূলত নির্মিত রেলপথ ইন্সপেকশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই ট্রেনে ভ্রমণ করছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করেন। পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে এ রেলপথ দিয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি।

প্রকল্প কর্মকর্তারা আরও জানান, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ লেভেল ক্রসিংবিহীন রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মাসেতুতে পাথরবিহীন নির্মাণ। আর সেই রেলপথ সুচারুরূপে সম্পন্ন হওয়ায় দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় যশোরের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে। চীন সরকার মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড চায়না জিটুজি সিস্টেমের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং পদ্মাসেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার নতুন এলাকাজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা-যশোর-খুলনার মধ্যে ২১২ দশমিক ০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট এবং উন্নত পরিচালন সুবিধার বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপিত হবে।

এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি সাব-রুট স্থাপন এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কনটেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে গতি ও লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। সরকার ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের অনুমোদন দেয়। পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে নয় মাস আগে। এবার ট্রেন চলাচলের জন্যও প্রস্তুত দেশের দীর্ঘতম এ সেতু।

নিউজটি শেয়ার করুন

পদ্মা সেতুতে চলল ‘পদ্মা ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেন’

আপডেট সময় : ০৩:০২:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মাসেতু হয়ে ভাঙ্গা-মাওয়া এলাকায় পরীক্ষামূলক রেল চলাচল শুরু হলো। আর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সরাসরি যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলবে সেপ্টেম্বরে। তবে আগামী বছর ট্রেন চলবে ঢাকা-যশোর রেলপথে।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক এ ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

পদ্মাসেতুর সড়কপথ চালুর ১০ মাসের মাথায় এবার প্রস্তুত হলো রেলপথ। ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের পদ্মাসেতুর রেলপথের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন প্রকৌশলীরা। আজ ৪১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে ট্রেনটি।

প্রকৌশলীরা জানান, বুধবার (২৯ মার্চ) রেলপথের সর্বশেষ ৭ মিটার অংশের ঢালাই দেওয়ার মাধ্যমে কাজ সমাপ্ত হয়। শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে প্রকৌশলীদের পরীক্ষায় পুরো সেতুতে ট্রেন চলার জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

প্রকৌশলীরা বলছেন, বিশ্বমানের করে প্রস্তুত করা হয়েছে পদ্মাসেতুর রেলপথ। শত বছরেরও বেশি সময় টেকসই থাকবে রেলপথটি।

এর আগে পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহম্মেদ বলেছিলেন, গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সাড়ে ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখা হবে। এ পথে ডিজাইন স্পিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে টেস্ট-রান চালানো হবে।

তিনি জানান, পদ্মাসেতুর রেলপথ চালু আরও এক শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি করবে। ট্রান্স এশিয়া রেলপথের সঙ্গে এ লাইনটি যুক্ত হবে।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। আর পুরো প্রকল্প তদারকি করছে সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাংকার ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে রওনা হয়ে পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া পৌঁছবে। ট্রেনটি মূলত নির্মিত রেলপথ ইন্সপেকশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই ট্রেনে ভ্রমণ করছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করেন। পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে এ রেলপথ দিয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি।

প্রকল্প কর্মকর্তারা আরও জানান, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ লেভেল ক্রসিংবিহীন রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মাসেতুতে পাথরবিহীন নির্মাণ। আর সেই রেলপথ সুচারুরূপে সম্পন্ন হওয়ায় দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় যশোরের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে। চীন সরকার মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড চায়না জিটুজি সিস্টেমের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং পদ্মাসেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার নতুন এলাকাজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা-যশোর-খুলনার মধ্যে ২১২ দশমিক ০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট এবং উন্নত পরিচালন সুবিধার বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপিত হবে।

এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি সাব-রুট স্থাপন এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কনটেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে গতি ও লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। সরকার ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের অনুমোদন দেয়। পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে নয় মাস আগে। এবার ট্রেন চলাচলের জন্যও প্রস্তুত দেশের দীর্ঘতম এ সেতু।