ঢাকা ০৩:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পাঠ ক্ষেত : ভূট্টার দাম নিয়ে শঙ্কা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪৫১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// ফয়সাল হক, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে //

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। লোকসানের ধকল কাটতে না কাটতেই তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পাটের চারা। প্রায় মাস খানেক থেকে আশানুরুপ বৃষ্টি না হওয়ায় অতিরিক্ত গরমে পাটের চারা গাছ নুয়ে পড়ছে অধিকাংশ জমিতে। জমিতে পানি শূণ্যতার কারণে ফেটে চৌচির হতে দেখা গেছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ভুট্টার বাম্পার ফলন হলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা তাদের আশানুরুপ মূল্য পাচ্ছেন না । এদিকে পর্যাপ্ত পানি চারা গাছের গোড়ায় না থাকায় গাছের আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভুট্টার আবাদ ব্যাপক হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক বেশি অর্জিত হয়েছে বলে জানায় এ বিভাগ। ভুট্টার লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ১৪’শ ৫০ হেক্টর। এর থেকে অর্জিত হয়েছে ১৮’শ ২০ হেক্টর। এতে দেখা গেছে গড়ে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৩ টন ভুট্টা ফলন হয়েছে। অপরদিকে, পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮’শ ২০ হেক্টর। এর মধ্যে পাট চাষ হয়েছে ৩৮’শ ৫০ হেক্টর জমি। কৃষি বিভাগ বলছে, ভুট্টার কয়েকটি জাতের ফলন ভালো হয়েছে। এর মধ্যে ছিলো ত্বহা- ৭৮৬,বীর, বাহাদুর, সুপার সাইন। এই কয়েকটি জাতের ভুট্টার বীজ লাগিয়ে আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। অপরদিকে দেখা গেছে, পাটের বীজের চাহিদা ছিলো ও-৯৮৯৭, জেআরও-৫২৪, রবি-১। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অষ্টমীরচর, নয়ারহাট ও চিলমারী ইউনিয়নে ভুট্টার ব্যাপক ফলন হয়েছিলো। তবে বাজারে দাম না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তারা বলছেন ভুট্টার মণ প্রতি ১ থেকে ২’শ টাকা ঘাটতি হচ্ছে বিক্রিতে। ভুট্টায় দামের শঙ্কা কাটতে না কাটতে ভুট্টা চাষীদের তীব্র তাপদাহে কপাল পুড়লো পাটের আবাদেও। বৃষ্টি না হওয়ায় কয়েক বিঘা পাট ক্ষেতের চারা গাছ শুকিয়ে পড়েছে। তাপদাহে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে শেষ।

সরেজমিনে উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতা চরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক একর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। তবে কৃষকদের আহাজারি ছিলো বৃষ্টির। বিস্তৃর্ণ চরের জমি গুলো খরার কারণে মাটি ফেটে গেছে। আবাদ পুড়ে গেছে। গাছের চারার আগা মাটিতে মিশে গেছে। যেসময় পাটের চারা গাছ গুলো ৪ফিট লম্বা হওয়ার কথা সেসময় এক ফিটও লম্বা হয়নি কোনো কোনো ক্ষেতের আবাদ। এ নিয়ে চরম দুুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এই সংকট বা দুশ্চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় হচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টির দেখা মিললে সতেজ হয়ে উঠবে চারা গাছ গুলো।

নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতার কৃষক মাহফুজার রহমান বলেন, ৫বিঘা জমিতে ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছিলো। কিন্তু বাজার মূল্য না থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছে। চাষাবাদের খরচও ওঠে নাই ভুট্টা বিক্রি করে। ভুট্টায় লোকসান পুষিয়ে ওঠতে এবার ৩ একর জমিতে পাট লাগিয়েছি। এতেও লোকসান হবে। পর্যাপ্ত পানি দিতে না পারায় অতিরিক্ত গরমে গাছের গোড়া শুকিয়ে গিয়ে আগা নুইয়ে পড়েছে। এখন সেচ দিয়ে পানি দেয়ারও সুযোগ হচ্ছে না। অপেক্ষা এখন বৃষ্টির।

বান্ডালের চর এলাকার কৃষক হান্নান মিয়া ৩ বিঘা জমিতে লাগিছেন পাট। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন এই কৃষক। তিনি জানান, গরম আর রোদের কারণে পাটের চারা বাড়তে পারে নাই। বর্তমানে যে চারা গাছের যে বয়স তাতে ৪ফিট লম্ব হত গাছ। কিন্তু দেখেন পানির অভাবে এখনো গাছ মাটির সাথেই মিশে আছে। এসব আবাদ আর হবে না। ভুট্টা চাষের কথা জিজ্ঞেসা করতে না করতেই তিনি বলেন, এ বছর পুরো লোকসান হয়েছে। গত মৌসুমে যে ভুট্টা জমি থেকে তুলেই বিক্রি করেছি ১হাজার টাকা মণ। অথচ এখন ভুট্টা তুলে শুকিয়ে বিক্রি করলেও ৮৮০টাকার ওপরে মণ নিচ্ছে না কেউ। এতে দেখা গেছে চাষ করতে যে খরচ হয়েছে সেটিই ওঠবে না।

ওই এলাকার সাবেক মেম্বার আলম মিয়া বলেন, আমার কয়েক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কিন্তু চরের জমি হওয়াতে সেচ দিয়ে পানি দেয়ার সুযোগ নাই। এর কারণ চরের সব জমি বালু মাটি সেচের পানি দিয়ে কুলানো যাবে না। এখন বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, কৃষকরা এ বছর ভুট্টা চাষের প্রতি বেশি ঝুকে ছিলেন। অন্যান্য আবাদের থেকে খরচ কম হওয়ায় লাভের আশায় ভুট্টা চাষ করে বর্তমানে বাজার মুল্য কম থাকায় তারা আয় ব্যয়ের হিসেব মেলাতে পারছেন না। তিনি আর বলেন, টানা তাপদাহের কারণে পাটের চারা গাছের আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। যদিও অনেকেই সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিচ্ছেন। এরপরেও চরাঞ্চলের অনেক জমিতে সেচ দিয়ে পানি দেয়ার সুযোগ হয় না। সেক্ষেত্রে পাটের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দিক থেকে যেসব সাপোর্ট বা সহযোগিতা করা দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি কৃষকদের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পাঠ ক্ষেত : ভূট্টার দাম নিয়ে শঙ্কা

আপডেট সময় : ০২:৩৮:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৩

// ফয়সাল হক, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে //

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভুট্টার বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। লোকসানের ধকল কাটতে না কাটতেই তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পাটের চারা। প্রায় মাস খানেক থেকে আশানুরুপ বৃষ্টি না হওয়ায় অতিরিক্ত গরমে পাটের চারা গাছ নুয়ে পড়ছে অধিকাংশ জমিতে। জমিতে পানি শূণ্যতার কারণে ফেটে চৌচির হতে দেখা গেছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ভুট্টার বাম্পার ফলন হলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা তাদের আশানুরুপ মূল্য পাচ্ছেন না । এদিকে পর্যাপ্ত পানি চারা গাছের গোড়ায় না থাকায় গাছের আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভুট্টার আবাদ ব্যাপক হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক বেশি অর্জিত হয়েছে বলে জানায় এ বিভাগ। ভুট্টার লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ১৪’শ ৫০ হেক্টর। এর থেকে অর্জিত হয়েছে ১৮’শ ২০ হেক্টর। এতে দেখা গেছে গড়ে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৩ টন ভুট্টা ফলন হয়েছে। অপরদিকে, পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮’শ ২০ হেক্টর। এর মধ্যে পাট চাষ হয়েছে ৩৮’শ ৫০ হেক্টর জমি। কৃষি বিভাগ বলছে, ভুট্টার কয়েকটি জাতের ফলন ভালো হয়েছে। এর মধ্যে ছিলো ত্বহা- ৭৮৬,বীর, বাহাদুর, সুপার সাইন। এই কয়েকটি জাতের ভুট্টার বীজ লাগিয়ে আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। অপরদিকে দেখা গেছে, পাটের বীজের চাহিদা ছিলো ও-৯৮৯৭, জেআরও-৫২৪, রবি-১। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অষ্টমীরচর, নয়ারহাট ও চিলমারী ইউনিয়নে ভুট্টার ব্যাপক ফলন হয়েছিলো। তবে বাজারে দাম না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তারা বলছেন ভুট্টার মণ প্রতি ১ থেকে ২’শ টাকা ঘাটতি হচ্ছে বিক্রিতে। ভুট্টায় দামের শঙ্কা কাটতে না কাটতে ভুট্টা চাষীদের তীব্র তাপদাহে কপাল পুড়লো পাটের আবাদেও। বৃষ্টি না হওয়ায় কয়েক বিঘা পাট ক্ষেতের চারা গাছ শুকিয়ে পড়েছে। তাপদাহে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে শেষ।

সরেজমিনে উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতা চরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক একর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। তবে কৃষকদের আহাজারি ছিলো বৃষ্টির। বিস্তৃর্ণ চরের জমি গুলো খরার কারণে মাটি ফেটে গেছে। আবাদ পুড়ে গেছে। গাছের চারার আগা মাটিতে মিশে গেছে। যেসময় পাটের চারা গাছ গুলো ৪ফিট লম্বা হওয়ার কথা সেসময় এক ফিটও লম্বা হয়নি কোনো কোনো ক্ষেতের আবাদ। এ নিয়ে চরম দুুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এই সংকট বা দুশ্চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় হচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টির দেখা মিললে সতেজ হয়ে উঠবে চারা গাছ গুলো।

নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতার কৃষক মাহফুজার রহমান বলেন, ৫বিঘা জমিতে ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছিলো। কিন্তু বাজার মূল্য না থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছে। চাষাবাদের খরচও ওঠে নাই ভুট্টা বিক্রি করে। ভুট্টায় লোকসান পুষিয়ে ওঠতে এবার ৩ একর জমিতে পাট লাগিয়েছি। এতেও লোকসান হবে। পর্যাপ্ত পানি দিতে না পারায় অতিরিক্ত গরমে গাছের গোড়া শুকিয়ে গিয়ে আগা নুইয়ে পড়েছে। এখন সেচ দিয়ে পানি দেয়ারও সুযোগ হচ্ছে না। অপেক্ষা এখন বৃষ্টির।

বান্ডালের চর এলাকার কৃষক হান্নান মিয়া ৩ বিঘা জমিতে লাগিছেন পাট। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন এই কৃষক। তিনি জানান, গরম আর রোদের কারণে পাটের চারা বাড়তে পারে নাই। বর্তমানে যে চারা গাছের যে বয়স তাতে ৪ফিট লম্ব হত গাছ। কিন্তু দেখেন পানির অভাবে এখনো গাছ মাটির সাথেই মিশে আছে। এসব আবাদ আর হবে না। ভুট্টা চাষের কথা জিজ্ঞেসা করতে না করতেই তিনি বলেন, এ বছর পুরো লোকসান হয়েছে। গত মৌসুমে যে ভুট্টা জমি থেকে তুলেই বিক্রি করেছি ১হাজার টাকা মণ। অথচ এখন ভুট্টা তুলে শুকিয়ে বিক্রি করলেও ৮৮০টাকার ওপরে মণ নিচ্ছে না কেউ। এতে দেখা গেছে চাষ করতে যে খরচ হয়েছে সেটিই ওঠবে না।

ওই এলাকার সাবেক মেম্বার আলম মিয়া বলেন, আমার কয়েক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কিন্তু চরের জমি হওয়াতে সেচ দিয়ে পানি দেয়ার সুযোগ নাই। এর কারণ চরের সব জমি বালু মাটি সেচের পানি দিয়ে কুলানো যাবে না। এখন বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, কৃষকরা এ বছর ভুট্টা চাষের প্রতি বেশি ঝুকে ছিলেন। অন্যান্য আবাদের থেকে খরচ কম হওয়ায় লাভের আশায় ভুট্টা চাষ করে বর্তমানে বাজার মুল্য কম থাকায় তারা আয় ব্যয়ের হিসেব মেলাতে পারছেন না। তিনি আর বলেন, টানা তাপদাহের কারণে পাটের চারা গাছের আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। যদিও অনেকেই সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিচ্ছেন। এরপরেও চরাঞ্চলের অনেক জমিতে সেচ দিয়ে পানি দেয়ার সুযোগ হয় না। সেক্ষেত্রে পাটের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দিক থেকে যেসব সাপোর্ট বা সহযোগিতা করা দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি কৃষকদের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।

বা/খ: এসআর।