ঢাকা ০৮:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঝরা পাতা ঝড়কে ডাকে 

মোঃ খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫৮৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গীতিকার শ্যামল গুপ্তের লেখা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সুরে ও কন্ঠে গাওয়া”

ঝরা পাতা ঝড়কে ডাকে বলে তুমি নাও আমাকে

আমায় কেন একটি বারও ডাকলে না

লতা যেমন ফুল শাখাকে

ভালোবেসে জড়িয়ে থাকে

আমার হয়ে তেমনি কেন থাকলে না ?

শুধু পাতা নয় এভাবেই ঝরে পড়ে প্রতি মুহূর্তে করতে জড় ও সর।কিন্তু এর পেছনের ইতিহাসটা জানার আগ্রহ হয়তবা অনেকের নেই।কেউ বলবে এটি প্রকৃতির নিয়ম।কেউবা ব্যাখ্যা দিবে জীববিদ্যার আংগিকে।কিন্তু এটার শুধু ঝরা পাতার ঝড়ে পরার গল্প।নাকি পেছনের ইতিহাসটা আরও নির্জলা নির্মহ!

দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের সরকারি অধ্যাপক নাজমিন আক্তার বলেন,”শীতকালে পাতা ঝরার বড় কারণ হলো বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া । গাছ তার মূল দ্বারা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক পানি ভাস্কোলার বান্ডেলের( জাইলেম ,ফ্লোয়েম )মাধ্যমে মাটি থেকে পাম্প করে উপরে তুলে নিয়ে সর্বত্র পৌঁছায়। গাছ এই অতিরিক্ত পানি পাতার (ঘামের) বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় বাহির করে দেয়।শীতকালের শুষ্ক মৌসুমের কারণে গাছ প্রয়োজনীয় পানি তুলতে পারেনা অন্যদিকে পাতা বাষ্পমোচন অভ্যন্তরে পানির ঘাটতি হয়। তাই এই প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অক্সিন নামক হরমোনের মাধ্যমে ক্লোরোফল উৎপন্ন করা বন্ধ করে দেয়। পাতার কান্ডের মাঝখানে এক ধরনের কোষ তৈরি করে যা প্রাকৃতিক কাচির মেয়ে ন্যায় কাজ করে। ফলে পাতা ঝরে যায়। আর গাছ সঞ্চিত পুষ্টি দিয়ে বাকি দিনগুলো পার করে দেয়।

দিনাজপুর আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন  ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোছা: বেবী নাজনীন বলেন, শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পরা গিয়ে মৃত্যু পথযাত্রীর অবস্থা বলে অবহিত করেছেন। এই অবস্থাকে প্রাণীর শীত নিদ্রার সাথে তুলনা করা যায়। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এর নাম ডরমেন্সি যার অর্থ সহজ ভাষায় না খেয়ে থাকা । এর ফলে ঝরে পড়ে অনেক গাছের পাতা।

বিখ্যাত মনঃসমীক্ষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর ব্যাখ্যা এ বিষয়ে বেশ মুখরোচক।তিনি তার বিখ্যাত মনঃসমীক্ষণের বই “স্বপ্ন” নামক গ্রহ্নে বলেছেন,প্রকৃতি প্রতিনিয়ত প্রত্যয়ী।প্রত্যয়ী অবগাহনে প্রকৃতি অনেক সময় ঝরে ফেলে পুরোনোর প্রবৃত্তি।এই প্রবৃত্তি মানব মনপঠকে করে বৈভবী। এই বৈভবীয়তা জীবের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।নতুনদের আগমন প্রকৃতিতে নিয়ে আসে নিরাশা হারিনি অনুসঙ্গ।

এবার দেখা যাক কবিরা কি বলে এ বিষয়ে-

কবি জাবেদ এ ইমনের কবিতায়,

“ঝরা পাতা মাড়িয়ে অনেকেই সুখ পায়,

ঝরা পাতায় যে মর্মরের সংগীত ভেজে উঠে।

কিন্তু কেউ তো জানে না ওটা যে ঝরা পাতার কান্না।”

এদিকে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটি গ্রামের পূর্বসাহাপার গ্রামের মিনতি রায়ের কাছে পাতা ঝরার ঝরে পড়ার অর্থটা অনেকটা আর্থিক।

নিখাদ গ্রাম্য ভাষায় বললেন,”যখন পাতাগুলা ঝড়ি পড়ে তখন হামরা পাতারা জড়ো করি রাখি। পরে তখন এই পাতাগুলো দিই রান্নাবান্না করি করি খাই। হামারতো আর খড়ি কিনার টাকা নাই!”

ওদিকে ঢাকায় লব্ধ প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ইংলিশ মিডিয়ামে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে তানিয়া (৮) এসেছে দাদুর বাসায় জেলার বিরল উপজেলার তুলাই নদীর তীরে লিচুগ্রাম নামে পরিচিত ছিমছাম একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা গ্রাম মাধববাটি। দাদু বাসায় আঙ্গিনায় হালকা বাতাসেই ঝরে পড়ছে মেহগনি গাছের পাতা ।একটি কুড়িয়ে নিয়ে আবার আরেকটি কুড়োতে যায় তানিয়া। পাতার রাজ্যে সে যেন পদ্যময়। দূর থেকে দাদা আর দাদু দেখে আর হাসে। এ যেন সুখশ্রীতির টুকরো টুকরো সবুজ কোনা।

সবিশেষে বলা যায় অনেক লেখা হয়েছে কবিতা, কাব্য, উপন্যাস ঝরা পাতার ঝরে পড়ার অলিখিত অনুভূতি নিয়ে

কবির ভাষায়,

”ঝরে পড়া পাতারা মিশে যায়

ধুলোদের সাথে

কেউ লেখেনা তাদের নিঃশব্দ পতনের কাব্য

অলিখিত কাব্যরা হারিয়ে যায়

কালের অতলে “

নিউজটি শেয়ার করুন

ঝরা পাতা ঝড়কে ডাকে 

আপডেট সময় : ০৮:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গীতিকার শ্যামল গুপ্তের লেখা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সুরে ও কন্ঠে গাওয়া”

ঝরা পাতা ঝড়কে ডাকে বলে তুমি নাও আমাকে

আমায় কেন একটি বারও ডাকলে না

লতা যেমন ফুল শাখাকে

ভালোবেসে জড়িয়ে থাকে

আমার হয়ে তেমনি কেন থাকলে না ?

শুধু পাতা নয় এভাবেই ঝরে পড়ে প্রতি মুহূর্তে করতে জড় ও সর।কিন্তু এর পেছনের ইতিহাসটা জানার আগ্রহ হয়তবা অনেকের নেই।কেউ বলবে এটি প্রকৃতির নিয়ম।কেউবা ব্যাখ্যা দিবে জীববিদ্যার আংগিকে।কিন্তু এটার শুধু ঝরা পাতার ঝড়ে পরার গল্প।নাকি পেছনের ইতিহাসটা আরও নির্জলা নির্মহ!

দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের সরকারি অধ্যাপক নাজমিন আক্তার বলেন,”শীতকালে পাতা ঝরার বড় কারণ হলো বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া । গাছ তার মূল দ্বারা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক পানি ভাস্কোলার বান্ডেলের( জাইলেম ,ফ্লোয়েম )মাধ্যমে মাটি থেকে পাম্প করে উপরে তুলে নিয়ে সর্বত্র পৌঁছায়। গাছ এই অতিরিক্ত পানি পাতার (ঘামের) বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় বাহির করে দেয়।শীতকালের শুষ্ক মৌসুমের কারণে গাছ প্রয়োজনীয় পানি তুলতে পারেনা অন্যদিকে পাতা বাষ্পমোচন অভ্যন্তরে পানির ঘাটতি হয়। তাই এই প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অক্সিন নামক হরমোনের মাধ্যমে ক্লোরোফল উৎপন্ন করা বন্ধ করে দেয়। পাতার কান্ডের মাঝখানে এক ধরনের কোষ তৈরি করে যা প্রাকৃতিক কাচির মেয়ে ন্যায় কাজ করে। ফলে পাতা ঝরে যায়। আর গাছ সঞ্চিত পুষ্টি দিয়ে বাকি দিনগুলো পার করে দেয়।

দিনাজপুর আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন  ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোছা: বেবী নাজনীন বলেন, শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পরা গিয়ে মৃত্যু পথযাত্রীর অবস্থা বলে অবহিত করেছেন। এই অবস্থাকে প্রাণীর শীত নিদ্রার সাথে তুলনা করা যায়। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এর নাম ডরমেন্সি যার অর্থ সহজ ভাষায় না খেয়ে থাকা । এর ফলে ঝরে পড়ে অনেক গাছের পাতা।

বিখ্যাত মনঃসমীক্ষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর ব্যাখ্যা এ বিষয়ে বেশ মুখরোচক।তিনি তার বিখ্যাত মনঃসমীক্ষণের বই “স্বপ্ন” নামক গ্রহ্নে বলেছেন,প্রকৃতি প্রতিনিয়ত প্রত্যয়ী।প্রত্যয়ী অবগাহনে প্রকৃতি অনেক সময় ঝরে ফেলে পুরোনোর প্রবৃত্তি।এই প্রবৃত্তি মানব মনপঠকে করে বৈভবী। এই বৈভবীয়তা জীবের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।নতুনদের আগমন প্রকৃতিতে নিয়ে আসে নিরাশা হারিনি অনুসঙ্গ।

এবার দেখা যাক কবিরা কি বলে এ বিষয়ে-

কবি জাবেদ এ ইমনের কবিতায়,

“ঝরা পাতা মাড়িয়ে অনেকেই সুখ পায়,

ঝরা পাতায় যে মর্মরের সংগীত ভেজে উঠে।

কিন্তু কেউ তো জানে না ওটা যে ঝরা পাতার কান্না।”

এদিকে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটি গ্রামের পূর্বসাহাপার গ্রামের মিনতি রায়ের কাছে পাতা ঝরার ঝরে পড়ার অর্থটা অনেকটা আর্থিক।

নিখাদ গ্রাম্য ভাষায় বললেন,”যখন পাতাগুলা ঝড়ি পড়ে তখন হামরা পাতারা জড়ো করি রাখি। পরে তখন এই পাতাগুলো দিই রান্নাবান্না করি করি খাই। হামারতো আর খড়ি কিনার টাকা নাই!”

ওদিকে ঢাকায় লব্ধ প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ইংলিশ মিডিয়ামে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে তানিয়া (৮) এসেছে দাদুর বাসায় জেলার বিরল উপজেলার তুলাই নদীর তীরে লিচুগ্রাম নামে পরিচিত ছিমছাম একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা গ্রাম মাধববাটি। দাদু বাসায় আঙ্গিনায় হালকা বাতাসেই ঝরে পড়ছে মেহগনি গাছের পাতা ।একটি কুড়িয়ে নিয়ে আবার আরেকটি কুড়োতে যায় তানিয়া। পাতার রাজ্যে সে যেন পদ্যময়। দূর থেকে দাদা আর দাদু দেখে আর হাসে। এ যেন সুখশ্রীতির টুকরো টুকরো সবুজ কোনা।

সবিশেষে বলা যায় অনেক লেখা হয়েছে কবিতা, কাব্য, উপন্যাস ঝরা পাতার ঝরে পড়ার অলিখিত অনুভূতি নিয়ে

কবির ভাষায়,

”ঝরে পড়া পাতারা মিশে যায়

ধুলোদের সাথে

কেউ লেখেনা তাদের নিঃশব্দ পতনের কাব্য

অলিখিত কাব্যরা হারিয়ে যায়

কালের অতলে “