ঢাকা ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কালের বিবর্তনে বিলীন রজনীকান্ত সেনের পৈতৃক ভিটা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩২:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৬৮ বার পড়া হয়েছে

রজনীকান্ত সেনের পৈতৃক ভিটা

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
বিশেষ প্রতিনিধি:
“মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই; দীন দুখিনি মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই”৷ বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গানের কথাগুলো শুনতেই যার নামটি স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে তিনি উপমহাদেশের বরেণ্য কবি এবং কান্ত কবি রজনী কান্ত সেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কালের বিবর্তনে বিলীন হতে যাচ্ছে কান্ত কবি রজনী কান্ত সেনের পৈতিক ভিটা। ভুলতে বসেছে সিরাজগঞ্জ বেলকুচি উপজেলার গর্বের কবি রজনীকান্ত সেনকে। বেলকুচি উপজেলার সেন-ভাংঙ্গাবাড়ী তার পৈতৃক ভিটা এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। গুপ্তধন লুকায়িত আছে এমন গুজবে বাড়িটি ভেঙে ফেলেছেন স্বার্থান্বেষী মহল। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মোয়াজ্জেম হোসেন নামক জৈনক ব্যক্তি কবির বাড়ির সন্মুখে বিরাট পুকুরটি জাল দলিলের মাধ্যমে ভোগ দখল করছেন বলে এমন অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে প্রতিকার চাইলেও কোন সুফল পায়নি। বর্তমানে সেখানে ছোট ছোট কয়েকটি ঘর ছাড়া তেমন কিছুই নেই। কবির বাড়ির পুরনো দালানের ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি মোটা দেয়ালের অংশ ছাড়া কিছুই নেই। দেশে প্রখ্যাত কবি ও মনীষিদের বাংলাদেশের মানুষ তাদের শ্রদ্ধার ভরে তাদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্মরণ করেন এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেনিত করে থাকেন। কান্ত কবি ও মনিষীদের কাতারে দাঁড়িয়ে আছে বেলকুচি উপজেলার কৃতি সন্তান কান্ত কবি রজনী কান্ত সেন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে বেলকুচির সেন ভাংঙ্গাবাড়ী রজনী সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার নামক একটি ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক বছর স্বল্প পরিসরে ক্লাবকে কেন্দ্র করে কবির স্মরণে বিভিন্ন খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ না থাকায় দেশের অন্য কোথাও কবি রজনী কান্ত সেনকে তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে স্মরণ করা হয় না। রজনিকান্ত সেন ২৬ জুলাই, ১৮৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন । প্রখ্যাত কবি, গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে বাঙালি শিক্ষা সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ‘কান্তকবি’ নামেও পরিচিত। ভক্তিমূলক ও দেশের প্রতি গভির স্বদেশ প্রেমই তার গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয় ছিল। রজনীকান্তের শেষ জীবনে ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সাল (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র) মঙ্গলবার রাত সাড়ে আট টায় লোকান্তরিত হন। স্বদেশি আন্দোলনে তাঁর গান অসীম প্রেরণার উৎস স্বরুপ। ৭ আগস্ট, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কলকাতা টাউন হলে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন বিলাতি পণ্য বর্জন এবং স্বদেশি পণ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বাংলার প্রখ্যাত নেতৃবৃন্দ। ভারতের সাধারন জনগণ ভারতে তৈরি বস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু এ কাপড় গুণগতমান বিলাতে তৈরি কাপড়ের তুলনায় তেমন ভাল ছিল না, ফলে কিছুসংখ্যক ভারতবাসি তেমন খুশি হতে পারেননি। তাই কিছুসংখ্যক ভারতীয়দের নিয়ে রজনিকান্ত রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত দেশাত্মবোধক ও অবিস্মরণীয় উপরে উল্লেখিত গানের কথাগুলো।
কর্মজীবনে রজনীকান্ত বোয়ালিয়া জিলা স্কুলে (বর্তমান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) ভর্তি হন। ১৮৮৩ সালে কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে ২য় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। ফলে তিনি প্রতিমাসে দশ রূপি বৃত্তি পেতেন। পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ২য় বিভাগে এফ.এ পাশ করে সিটি কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি বি.এল ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৮৯১ সালে তিনি রাজশাহীতে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর জ্যেঠা বা বড় চাচা তখন রাজশাহীতে উকিল পেশায় কর্মরত ছিলেন। ফলে আইন পেশায় রজনিকান্তের দ্রুত উত্তরণ ঘটে। কিন্তু আইন পেশার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশি বিচরণ রাখতেন নিজেকে। ফলে তিনি সুনাম হারাতে থাকেন। মক্কেলদের নিকট চাহিদা মতো সময় দিতে পারতেন না। পরবর্তীতে নাটোর এবং নওগাঁ জেলায়ও অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্ম করেছেন রজনিকান্ত সেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি হিরন্ময়ী দেবী নাম্নি এক বিদূষী নারীকে ১৮৮৩ সালে বিয়ে করেন। হিরন্ময়ি দেবী রজনিকান্তের লেখা কবিতাগুলো আলোচনা করতেন। কখনো কখনো তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতেন। স্বীকৃতি স্বরুপ অমর সঙ্গীতজ্ঞ ও লেখক ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানিয়ে প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরি ১৯৮৯ সালে রজনিকান্ত সেন শিরোনামে একটি জিবনীগ্রন্থ রচনা করেন। রাজশাহী থেকে প্রচারিত উৎসাহ মাসিক পত্রিকায় রজনিকান্তের রচনা প্রকাশিত হতো। তাঁর কবিতা ও গানের বিষয়বস্তু মূলতঃ দেশপ্রেম ও ভক্তিমূলক। হাস্যরস-প্রধান গানের সংখ্যাও কম নয়। তিনি বেঁচে  থাকতে তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলো হলো -বাণি (১৯০২) কল্যাণি (১৯০৫) অমৃত (১৯১০)।  এছাড়াও আরও পাঁচটি বই পরবর্তীতে রচনা করেন। গান, কবিতা, সাহিত্য-কর্ম এবং আধ্যাত্মিক গানগুলো রচনার মাধ্যমে রজনিকান্ত সেন অমরত্ব লাভ করে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। তাঁর গানগুলো হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ঘরাণার। এতে তিনি কীর্তন, বাউল এবং টপ্পার যথাযথ সংমিশ্রণ ঘটাতে সক্ষমতা দেখিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে অগণিত শ্রোতা ও লেখকের মন জয় করেন। বেলকুচি উপজেলার সেন-ভাঙ্গাবাড়িতে ১৯৩৮ সালে রজনী সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার নামে একটি ক্লাব স্থাপন করা হয়। ক্লাবকে কেন্দ্র করে রজনীকান্ত স্মরণে বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বরেণ্য কবির স্মৃতি ধরে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন না করায় কোন কিছুর প্রতিফলন ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানায়, ইতিপূর্বে একজন সচিবের পদার্পণে এখানে একটি অডিটোরিয়াম ও শিল্পকলা ভবন নির্মাণ করার কথা বললেও কর্তৃপক্ষ স্থান পরিদর্শন করে যান, কিন্তু পরবর্তীতে আর আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে বেলকুচিসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। অন্যান্য কবি মনিষীদের মতো কান্ত কবির স্মৃতি ধরে রাখতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

নিউজটি শেয়ার করুন

কালের বিবর্তনে বিলীন রজনীকান্ত সেনের পৈতৃক ভিটা

আপডেট সময় : ০৭:৩২:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২
বিশেষ প্রতিনিধি:
“মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই; দীন দুখিনি মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই”৷ বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গানের কথাগুলো শুনতেই যার নামটি স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে তিনি উপমহাদেশের বরেণ্য কবি এবং কান্ত কবি রজনী কান্ত সেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কালের বিবর্তনে বিলীন হতে যাচ্ছে কান্ত কবি রজনী কান্ত সেনের পৈতিক ভিটা। ভুলতে বসেছে সিরাজগঞ্জ বেলকুচি উপজেলার গর্বের কবি রজনীকান্ত সেনকে। বেলকুচি উপজেলার সেন-ভাংঙ্গাবাড়ী তার পৈতৃক ভিটা এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। গুপ্তধন লুকায়িত আছে এমন গুজবে বাড়িটি ভেঙে ফেলেছেন স্বার্থান্বেষী মহল। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মোয়াজ্জেম হোসেন নামক জৈনক ব্যক্তি কবির বাড়ির সন্মুখে বিরাট পুকুরটি জাল দলিলের মাধ্যমে ভোগ দখল করছেন বলে এমন অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে প্রতিকার চাইলেও কোন সুফল পায়নি। বর্তমানে সেখানে ছোট ছোট কয়েকটি ঘর ছাড়া তেমন কিছুই নেই। কবির বাড়ির পুরনো দালানের ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি মোটা দেয়ালের অংশ ছাড়া কিছুই নেই। দেশে প্রখ্যাত কবি ও মনীষিদের বাংলাদেশের মানুষ তাদের শ্রদ্ধার ভরে তাদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্মরণ করেন এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেনিত করে থাকেন। কান্ত কবি ও মনিষীদের কাতারে দাঁড়িয়ে আছে বেলকুচি উপজেলার কৃতি সন্তান কান্ত কবি রজনী কান্ত সেন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে বেলকুচির সেন ভাংঙ্গাবাড়ী রজনী সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার নামক একটি ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক বছর স্বল্প পরিসরে ক্লাবকে কেন্দ্র করে কবির স্মরণে বিভিন্ন খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ না থাকায় দেশের অন্য কোথাও কবি রজনী কান্ত সেনকে তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে স্মরণ করা হয় না। রজনিকান্ত সেন ২৬ জুলাই, ১৮৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন । প্রখ্যাত কবি, গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে বাঙালি শিক্ষা সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ‘কান্তকবি’ নামেও পরিচিত। ভক্তিমূলক ও দেশের প্রতি গভির স্বদেশ প্রেমই তার গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয় ছিল। রজনীকান্তের শেষ জীবনে ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সাল (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র) মঙ্গলবার রাত সাড়ে আট টায় লোকান্তরিত হন। স্বদেশি আন্দোলনে তাঁর গান অসীম প্রেরণার উৎস স্বরুপ। ৭ আগস্ট, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কলকাতা টাউন হলে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন বিলাতি পণ্য বর্জন এবং স্বদেশি পণ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বাংলার প্রখ্যাত নেতৃবৃন্দ। ভারতের সাধারন জনগণ ভারতে তৈরি বস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু এ কাপড় গুণগতমান বিলাতে তৈরি কাপড়ের তুলনায় তেমন ভাল ছিল না, ফলে কিছুসংখ্যক ভারতবাসি তেমন খুশি হতে পারেননি। তাই কিছুসংখ্যক ভারতীয়দের নিয়ে রজনিকান্ত রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত দেশাত্মবোধক ও অবিস্মরণীয় উপরে উল্লেখিত গানের কথাগুলো।
কর্মজীবনে রজনীকান্ত বোয়ালিয়া জিলা স্কুলে (বর্তমান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) ভর্তি হন। ১৮৮৩ সালে কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে ২য় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। ফলে তিনি প্রতিমাসে দশ রূপি বৃত্তি পেতেন। পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ২য় বিভাগে এফ.এ পাশ করে সিটি কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি বি.এল ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৮৯১ সালে তিনি রাজশাহীতে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর জ্যেঠা বা বড় চাচা তখন রাজশাহীতে উকিল পেশায় কর্মরত ছিলেন। ফলে আইন পেশায় রজনিকান্তের দ্রুত উত্তরণ ঘটে। কিন্তু আইন পেশার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশি বিচরণ রাখতেন নিজেকে। ফলে তিনি সুনাম হারাতে থাকেন। মক্কেলদের নিকট চাহিদা মতো সময় দিতে পারতেন না। পরবর্তীতে নাটোর এবং নওগাঁ জেলায়ও অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্ম করেছেন রজনিকান্ত সেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি হিরন্ময়ী দেবী নাম্নি এক বিদূষী নারীকে ১৮৮৩ সালে বিয়ে করেন। হিরন্ময়ি দেবী রজনিকান্তের লেখা কবিতাগুলো আলোচনা করতেন। কখনো কখনো তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতেন। স্বীকৃতি স্বরুপ অমর সঙ্গীতজ্ঞ ও লেখক ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানিয়ে প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরি ১৯৮৯ সালে রজনিকান্ত সেন শিরোনামে একটি জিবনীগ্রন্থ রচনা করেন। রাজশাহী থেকে প্রচারিত উৎসাহ মাসিক পত্রিকায় রজনিকান্তের রচনা প্রকাশিত হতো। তাঁর কবিতা ও গানের বিষয়বস্তু মূলতঃ দেশপ্রেম ও ভক্তিমূলক। হাস্যরস-প্রধান গানের সংখ্যাও কম নয়। তিনি বেঁচে  থাকতে তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলো হলো -বাণি (১৯০২) কল্যাণি (১৯০৫) অমৃত (১৯১০)।  এছাড়াও আরও পাঁচটি বই পরবর্তীতে রচনা করেন। গান, কবিতা, সাহিত্য-কর্ম এবং আধ্যাত্মিক গানগুলো রচনার মাধ্যমে রজনিকান্ত সেন অমরত্ব লাভ করে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। তাঁর গানগুলো হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ঘরাণার। এতে তিনি কীর্তন, বাউল এবং টপ্পার যথাযথ সংমিশ্রণ ঘটাতে সক্ষমতা দেখিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে অগণিত শ্রোতা ও লেখকের মন জয় করেন। বেলকুচি উপজেলার সেন-ভাঙ্গাবাড়িতে ১৯৩৮ সালে রজনী সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার নামে একটি ক্লাব স্থাপন করা হয়। ক্লাবকে কেন্দ্র করে রজনীকান্ত স্মরণে বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বরেণ্য কবির স্মৃতি ধরে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন না করায় কোন কিছুর প্রতিফলন ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানায়, ইতিপূর্বে একজন সচিবের পদার্পণে এখানে একটি অডিটোরিয়াম ও শিল্পকলা ভবন নির্মাণ করার কথা বললেও কর্তৃপক্ষ স্থান পরিদর্শন করে যান, কিন্তু পরবর্তীতে আর আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে বেলকুচিসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। অন্যান্য কবি মনিষীদের মতো কান্ত কবির স্মৃতি ধরে রাখতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।