ঢাকা ০১:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেশে প্রথমবারের মতো টেকসই সড়ক নির্মাণে প্লাস্টিক ও টাইলসের ব্যবহার শুরু

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৫৪:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৯৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশে প্রথমবারের মত টেকসই সড়ক নির্মাণে প্লাস্টিক ও টাইলসের গুড়া ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। প্লাস্টিক ও টাইলসের গুঁড়া ব্যবহারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ করলে যেমনি সড়ক টেকসই হবে তেমনি সড়ক নির্মাণে খরচও কমবে বলে মনে করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন , পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে গাজীপুরের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর। ইটের খোয়ার পরিবর্তে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও টাইলসের গুঁড়া ব্যবহারের ফলে নির্মিত রাস্তার ভার বহন ক্ষমতা বাড়াবে অনেক বেশি। এটি আমাদের দেশের রাস্তাগুলোর স্থায়ীত্ব অন্তত ৫০ বছর বাড়িয়ে দেবে এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসবে।

প্রতিষ্ঠানটির একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, গাজীপুরের একটি সড়কে প্লাস্টিক ও টাইলসের গুড়া ব্যবহার পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি ল্যাবরেটরিতে অধিকতর পরীক্ষা করে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্লাস্টিক ও বিটুমিন উভয়ই পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য। গলিত পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক যোগ করলে মিশ্রণটি দারুণ মজবুত হয়। এতে সড়ক হয় দীর্ঘস্থায়ী ও অধিক ভারবহনে সক্ষম। অন্যদিকে, বর্জ্যমিশ্রিত পিচ পানি শুষে নিতে পারে না, ফলে পানির চুইয়ে পড়াও রোধ হয়। এতে সড়ক হয় আরো বেশি টেকসই।

জানা যায়, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার সড়কঘাটা এলাকায় ১০০ মিটার গ্রামীণ সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে বিটুমিন ও ইটের খোয়া বাঁচিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে টাইলস ও প্লাস্টিক। এর আগে দেশে কোথাও সড়ক নির্মাণে এসব উপাদান ব্যবহারের কথা শোনা যায়নি। এসব জিনিস ব্যবহারে ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছেন বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের একাধিক প্রকৌশলী বলেন, আমাদের দেশের সড়কগুলো বর্ষাকালে দ্রæত নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময়ে বেহাল সড়ক নিয়ে পরিবহণ মালিক ও সড়ক প্রকৌশলীরা একে অন্যকে দোষারোপ করেন। পরিবহণ মালিকরা বলেন, সড়ক নির্মাণে নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার করা হয় এবং সড়ক ডিজাইনে ক্রটি থাকায় সড়কের এই হাল। অন্যদিকে সড়ক প্রকৌশলীরা ওভারলোডকে দায়ী করেন। তবে এই প্রযুক্তি দেশের সড়কে ব্যবহার করলে তখন আর বর্ষাকালেও সড়কের বেহাল দশা হবে না। এমনকি ওভারলোডেও সড়ককে তেমন ক্ষয়ক্ষতি থেকে বিরত রাখবে। গরম বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিকের গুঁড়া ঢেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটি আঠালো মিশ্রণ তৈরি হয়। এটি সড়কের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রেও কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য প্লাস্টিক-টাইলসের ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়াও এই পদ্ধতিটি ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি সড়কের উন্নত মানের নিশ্চয়তা দেয়। এর মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে ভালোভাবে পুণরায় ব্যবহারও করা যায়।

প্রকৌশলীরা বলছেন, প্লাস্টিক সড়ক নিয়ে পাশ^বর্তী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড সিপিসিবির গবেষণায় দেখা গিয়েছিলো, চার বছর ভারী যান ব্যবহারের পরও এ ধরনের সড়কে ভাঙনের সমস্যা দেখা যায় না। বর্তমানে ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, পুনের মতো বড় শহরগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যরে সড়ক রয়েছে। এছাড়াও এই প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারের পর মানুষ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দিচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরীক্ষামূলকভাবে গাজীপুর সদর উপজেলার সড়কঘাটা এলাকায় ১০০ মিটার গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্লাস্টিকের আঠালো বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইটের খোয়ার পরিমাণ কমিয়ে ফেলে দেওয়া টাইলসের গুঁড়া মেশানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এ প্রক্রিয়ার জন্য ১০০ মিটার অংশ পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি ল্যাবরেটরিতে অধিকতর পরীক্ষা করে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক বছর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক সড়কটি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

তিনি বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে ভারতে হাজার হাজার কিলোমিটার হাইওয়ে রাস্তা করা হয়েছে। আমরাও বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় এসব জিনিস অধিকতর ব্যবহার করা যায় কিনা তা দেখবো। প্রাথমিকভাবে ৯১ শতাংশ বিটুমিনের সঙ্গে ৯ শতাংশ প্লাস্টিক মেশানো হয়েছে। রাস্তাটির কিছু অংশে ইটের খোয়ার পরিবর্তে ফেলে দেওয়া টাইলসের গুঁড়া মিশিয়ে ঢালাই করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে যেখানে ১০০ কেজি বিটুমিন লাগতো সেখানে ৯১ কেজি বিটুমিন এবং ৯ কেজি প্লাস্টিকের মিশ্রণ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করা হয়েছে। যে আদলে কার্পেটিং করা হতো সেই আদলেই মিশ্রণটি সড়কের ঢালাইয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়াটি দেশে প্রথম গাজীপুরের সড়কেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর এতে সাফল্য পেলে তা সারা দেশের সড়কে প্রয়োগ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দেশে প্রথমবারের মতো টেকসই সড়ক নির্মাণে প্লাস্টিক ও টাইলসের ব্যবহার শুরু

আপডেট সময় : ০১:৫৪:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশে প্রথমবারের মত টেকসই সড়ক নির্মাণে প্লাস্টিক ও টাইলসের গুড়া ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। প্লাস্টিক ও টাইলসের গুঁড়া ব্যবহারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ করলে যেমনি সড়ক টেকসই হবে তেমনি সড়ক নির্মাণে খরচও কমবে বলে মনে করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন , পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে গাজীপুরের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর। ইটের খোয়ার পরিবর্তে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও টাইলসের গুঁড়া ব্যবহারের ফলে নির্মিত রাস্তার ভার বহন ক্ষমতা বাড়াবে অনেক বেশি। এটি আমাদের দেশের রাস্তাগুলোর স্থায়ীত্ব অন্তত ৫০ বছর বাড়িয়ে দেবে এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসবে।

প্রতিষ্ঠানটির একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, গাজীপুরের একটি সড়কে প্লাস্টিক ও টাইলসের গুড়া ব্যবহার পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি ল্যাবরেটরিতে অধিকতর পরীক্ষা করে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্লাস্টিক ও বিটুমিন উভয়ই পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য। গলিত পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক যোগ করলে মিশ্রণটি দারুণ মজবুত হয়। এতে সড়ক হয় দীর্ঘস্থায়ী ও অধিক ভারবহনে সক্ষম। অন্যদিকে, বর্জ্যমিশ্রিত পিচ পানি শুষে নিতে পারে না, ফলে পানির চুইয়ে পড়াও রোধ হয়। এতে সড়ক হয় আরো বেশি টেকসই।

জানা যায়, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার সড়কঘাটা এলাকায় ১০০ মিটার গ্রামীণ সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে বিটুমিন ও ইটের খোয়া বাঁচিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে টাইলস ও প্লাস্টিক। এর আগে দেশে কোথাও সড়ক নির্মাণে এসব উপাদান ব্যবহারের কথা শোনা যায়নি। এসব জিনিস ব্যবহারে ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছেন বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের একাধিক প্রকৌশলী বলেন, আমাদের দেশের সড়কগুলো বর্ষাকালে দ্রæত নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময়ে বেহাল সড়ক নিয়ে পরিবহণ মালিক ও সড়ক প্রকৌশলীরা একে অন্যকে দোষারোপ করেন। পরিবহণ মালিকরা বলেন, সড়ক নির্মাণে নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার করা হয় এবং সড়ক ডিজাইনে ক্রটি থাকায় সড়কের এই হাল। অন্যদিকে সড়ক প্রকৌশলীরা ওভারলোডকে দায়ী করেন। তবে এই প্রযুক্তি দেশের সড়কে ব্যবহার করলে তখন আর বর্ষাকালেও সড়কের বেহাল দশা হবে না। এমনকি ওভারলোডেও সড়ককে তেমন ক্ষয়ক্ষতি থেকে বিরত রাখবে। গরম বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিকের গুঁড়া ঢেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটি আঠালো মিশ্রণ তৈরি হয়। এটি সড়কের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রেও কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য প্লাস্টিক-টাইলসের ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়াও এই পদ্ধতিটি ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি সড়কের উন্নত মানের নিশ্চয়তা দেয়। এর মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে ভালোভাবে পুণরায় ব্যবহারও করা যায়।

প্রকৌশলীরা বলছেন, প্লাস্টিক সড়ক নিয়ে পাশ^বর্তী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড সিপিসিবির গবেষণায় দেখা গিয়েছিলো, চার বছর ভারী যান ব্যবহারের পরও এ ধরনের সড়কে ভাঙনের সমস্যা দেখা যায় না। বর্তমানে ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, পুনের মতো বড় শহরগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যরে সড়ক রয়েছে। এছাড়াও এই প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারের পর মানুষ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দিচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরীক্ষামূলকভাবে গাজীপুর সদর উপজেলার সড়কঘাটা এলাকায় ১০০ মিটার গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্লাস্টিকের আঠালো বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইটের খোয়ার পরিমাণ কমিয়ে ফেলে দেওয়া টাইলসের গুঁড়া মেশানো হয়েছে। পরীক্ষামূলক এ প্রক্রিয়ার জন্য ১০০ মিটার অংশ পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি ল্যাবরেটরিতে অধিকতর পরীক্ষা করে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক বছর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক সড়কটি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

তিনি বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে ভারতে হাজার হাজার কিলোমিটার হাইওয়ে রাস্তা করা হয়েছে। আমরাও বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় এসব জিনিস অধিকতর ব্যবহার করা যায় কিনা তা দেখবো। প্রাথমিকভাবে ৯১ শতাংশ বিটুমিনের সঙ্গে ৯ শতাংশ প্লাস্টিক মেশানো হয়েছে। রাস্তাটির কিছু অংশে ইটের খোয়ার পরিবর্তে ফেলে দেওয়া টাইলসের গুঁড়া মিশিয়ে ঢালাই করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে যেখানে ১০০ কেজি বিটুমিন লাগতো সেখানে ৯১ কেজি বিটুমিন এবং ৯ কেজি প্লাস্টিকের মিশ্রণ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করা হয়েছে। যে আদলে কার্পেটিং করা হতো সেই আদলেই মিশ্রণটি সড়কের ঢালাইয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়াটি দেশে প্রথম গাজীপুরের সড়কেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর এতে সাফল্য পেলে তা সারা দেশের সড়কে প্রয়োগ করা হবে।