স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট এয়ারলাইন হবে বিমান: এমডি
- আপডেট সময় : ০৮:১৬:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর স্মার্ট বাংলাদেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে স্মার্ট এয়ারলাইন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হ্যাঙ্গার পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সফিউল আজিম। বুধবার (৪ জানুয়ারি) বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫১ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের নিয়ে এই হ্যাঙ্গার পরিদর্শন করেন তিনি।
বর্তমানে বিমান ২০টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করছে জানিয়ে সফিউল আজিম বলেন, টরেন্টো-মধ্যপ্রাচ্যসহ যেখানে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ করেন, সেখানে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের সেবা দিতে সামনের দিনগুলোতে বিমান যাতে আরও কাজ করতে পারে এবং নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত করতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই আমরা কাজ করছি। এভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখে বিমান হবে স্মার্ট এয়ারলাইন্স। আমাদের স্লোগান হবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট এয়ারলাইন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আমরা অঙ্গীকার করছি, স্মার্ট বাংলাদেশে যেন বিমান স্মার্ট এয়ারলাইন হয়।
তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে কারও স্বার্থসিদ্ধির জায়গা হতে দেওয়া হবে না। আমাদের আরেকটি ভিশন হচ্ছে এশিয়ার টপ ১০ এয়ারলাইনের তালিকায় যাবো। পরবর্তীতে টপ ৩ এ যাবো। সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে আমরা দিকনির্দেশনা নিচ্ছি। কোনো কাজে যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, তা সংশোধন করছি।
বিমানের আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে শফিউল আজিম বলেন, আমরা পুরোপুরি ওয়েব পেজ টিকেটিং সিস্টেমে যাবো এবং মার্কেটিং আরও উন্নত করা হবে। জাতির পিতার হাত ধরে বিমানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিমানের ৫১ বছরপূর্তি হলো। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আমরা বিমানের নবযাত্রা শুরু করেছি। ১৮টি নিজস্ব নতুন উড়োজাহাজ দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমাদের ড্রিমলাইনার, ৭৭৭, ৭৩৭ উড়োজাহাজ আছে। উড়োজাহাজগুলার বয়সও কম। বাংলাদেশের পাইলটদের সুনাম সারা বিশ্বে। গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রীর নিজেই বিমানের সব বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার (প্রধানমন্ত্রীর) দিক নির্দেশনার প্রতিফলনের জন্য দরকার বিমানের আধুনিকায়ন। একইসঙ্গে বিমান যারা পরিচালনা করবেন, তাদের মধ্যে সুসাশন নিশ্চিত করা। বিমানে আমরা যারাই কাজ করি, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা, কোনও ধরনের ব্যত্যয় হলে বিচার করা।
সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানোর বিষয়ে বিমানের প্রধান নির্বাহী বলেন, এটা পারস্পরিক দায়িত্ববোধের বিষয়। বিমানের ক্ষতিকে নিজের ও রাষ্ট্রের ক্ষতি ভাবতে হবে। লাভ মানে আমার লাভ। এটাতে বিমান কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না। বিমান শতভাগ অঙ্গীকার পূরন করবে। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া হবে।
যাত্রীসেবা প্রসঙ্গে বিমানের এমডি বলেন, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে গাফিলতি করলে তা সংশোধনের চেষ্টা করছি। গত বছর আমাদের যাত্রী পরিবহনের টার্গেট ছিল ৭১ শতাংশ, সেখানে আমরা ৩ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ৭৪ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করেছি। চাইলেই ১০০ সিটে ১০০ জনকে নেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, কিছু সায়েন্টিফিক বিষয় রয়েছে।
পাইলট নিয়োগ প্রসঙ্গে শফিউল আজিম বলেন, গত সপ্তাহে পাইলট নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করেছি। কেউ অসুস্থ বা অন্য কারণে ফ্লাই করতে না পারলেও সমস্যা হবে না। আমাদের এখন পর্যাপ্ত পাইলট থাকবে। চলতি বছরে নতুনভাবে বিমানকে দেখা যাবে।
নতুন রুট চালুর বিষয়ে বিমানের এমডি বলেন, জাপানের নারিতায় ফ্লাইট শিগগিরই শুরু হবে। প্রায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জিএসও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, হজ মৌসুমের পরপরই নারিতায় ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। নিয়ইউয়র্ক ফ্লাইট চালানোর কাজ শুরু করেছি, টরেন্টোতে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর কাজ চলছে।
অভ্যন্তরীণ রুটে ডায়নামিক রিশিডিউল করা হচ্ছে বলে জানান বিমানের এমডি। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপাবিলিটি বাড়ানোর জন্য বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কেবিন ক্রু, পাইলট থেকে শুরু করে গ্রাউন্ড সার্ভিস আমরা বাড়াচ্ছি। উড়োজাহাজের আন্ডার ইউটিলাইজ থাকার সুযোগ নেই।
বিশ্বে বিমানের বৈমানিক, কেবিন ক্রু, প্রকৌশলী, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার সুনাম রয়েছে জানিয়ে সংস্থাটির সিইও বলেন, আমাদের দক্ষ বৈমানিক, ক্রেবিন ক্রু, প্রকৌশলীরা সারা বিশ্বে বিমানের সুনাম করছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা এবং চিন্তাভাবনার প্রতিফলন বিমানে ঘটছে। সেক্ষেত্রে আমাদের যেমন দরকার বিমানের আধুনিকায়ন, একই সঙ্গে বিমান পরিচালনার সঙ্গে যারা আছেন তাদের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। তার মানে আমরা যারাই বিমানে কাজ করি, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিমান খাতে সরকার এবং জনগণের বিপুল পরিমাণ টাকার প্রতি সবাইকে যত্নবান হতে হবে।
নতুন বছরে (২০২৩ সালে) বিমানের পরিকল্পনার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সফিউল আজিম বলেন, বিমানে যাতে টাইম শিডিউল ঠিক থাকে, সেজন্য সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নতুন নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করবো। আগামী হজের পর জাপানের নারিতায় ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। কানাডার টরেন্টোতে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। লন্ডনসহ সব রুটেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখানে আরও কিছু করার থাকলে সক্ষমতা অনুযায়ী করবো। পাশাপাশি কার্গো সার্ভিসের সেবা বাড়াতে পারবো। এ ছাড়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা আরও আধুনিক করবো। যেমনটা উন্নত দেশের বিমানবন্দরে দেওয়া হয়। এভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবো। পাইলট, ক্রেবিন ক্রু বাড়াবো। আশা করি চলতি বছরে বিমানকে সবাই নতুন করে দেখবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মো. ছিদ্দিকুর রহমান, চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাকশন) এ আর এম কায়সার জামান, মহাব্যবস্থাপক (পাবলিক রিলেশনস) তাহেরা খন্দকার প্রমুখ।