ঢাকা ০১:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

স্বামীকে জিম্মি করে স্ত্রীকে গণধর্ষণ : গর্ভের সন্তানের মৃত্যু

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৭:৫০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৬৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাবনার বেড়া উপজেলার চরকেষ্টপুরে স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গর্ভবতী স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গর্ভে মারা গেছে ধর্ষিতার গর্ভের সন্তান। ছয়দিন আগে মামলা হলেও  পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেতে পারেনি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ বলছে তারা পলাতক রয়েছে। এদিকে নানা চাপে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন ভূক্তভোগীরা। আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চরকেষ্টপুরে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন- চরকেষ্টপুরের মাজেদ প্রামানিকের ছেলে সেলিম প্রামানিক (২৩), একই এলাকার মোঃ শরীফ (২৪), আনিছ সরদারের ছেলে রাজীব সরদার (২১), তালেব মন্ডলের ছেলে রুহুল মন্ডল (২৬), শফিক সরদারের ছেলে লালন সরদার (২০) ও মোঃ শামসুলের ছেলে সিরাজুল (২৩)।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই রাতে চর কেষ্টপুরের কাদেরিয়া তরিকাপন্থিদের একটি ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন ভূক্তভোগী নারীর স্বামী। ওয়াজ শুনতে এবং টাকার প্রয়োজনে রাতে তার স্বামীর কাছে যান তিনি। ওয়াজ শুনে স্বামীসহ রাত ১২ টার দিকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে পথরোধ করে অভিযুক্ত ৬ যুবক।

একপর্যায়ে স্বামীকে জিম্মি করে আটকে রাখে। পরে ওই নারীকে ভূট্রাক্ষেতে নিয়ে অভিযুক্তদের দুইজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে ওই নারীর তাদেও কাছ থেকে ছুটে স্থানীয় লোকজনকে বললে তারা দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তদের একজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। বাকিরা পলিয়ে যায়। এ সময় ধর্ষিত নারীকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় লিটন মন্ডল, রাজ্জাক মন্ডল, নিফাস মন্ডল ও শহিদ মন্ডল বলেন, আমাদের ওয়াজ মাহফিল চলা অবস্থায় রাত এক টার দিকে ওই ছেলে ছুটে এসে বললো- কিছু ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দেয়। আর মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরীর কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভূক্তভোগী ওই নারী বলেন, আমরা আমাদের আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে তারা মাঠের মধ্যে পথ আটকায়। আমাদের বলে তোরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। আমরা নিজেদের স্বামী-স্তী দাবি করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। ফোনে আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেও ওরা শোনেনি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে এবং অস্ত্র আর ব্লেডের মুখে জিম্মি করে আমাকে মাঠের মধ্যে ভূট্রাক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় আমার স্বামী ছুটে গিয়ে পাশের লোকজন ডেকে আনলে একজনকে আটক করা হয়।

ভূক্তভোগী নারীর স্বামী মামলার বাদী বলেন, আমার স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। গর্ভের সন্তান মারা গেছে। মামলা হলেও আমাদের এখনো কোনো কাগজপত্র দেয়া হয়নি। থানায় গেলে কিছু পুলিশ সদস্য নানান কথা বলেন। আর যারা ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ থেকেও নানা হুমকী ও চাপ আসছে। বলছে এ ঘটনায় কিছুই হবে না, তোমাদেরই বিপদ হবে তাই মিমাংসা করো। আমরা ধর্ষণ এবং আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল কাদেরী বলেন, স্থানীযরা ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। পরে তাকে (স্বামী) মেয়েটাকে পাবনা জেলারেল হাসপাতালে বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।

অভিযুক্তরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরৗ। তিনি বলেন অভিযুক্তরা দিবালোকে প্রকাশ্যে ঘুরছে কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেতার করতে পারছে না। এ ঘটনা নিয়ে প্রশাসনে তেমন তোড়জোড় আছে বলে তেমনটা মনে হচ্ছে না। আমরা এরকম একটা ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।

তবে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) হারুনুর রশিদ। তার দাবি অভিযুক্তরা সবাই পলাতক আছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারের বিষয়ৈ পুলিশি গাফিলতার বিষয়টি মিথ্যা। আমরা চেষ্টা করছি গ্রেফতারের। ধর্ষণের ঘটনা মিমাংসা হয় না, বাদীকে হুমকী-ধমকীর বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বামীকে জিম্মি করে স্ত্রীকে গণধর্ষণ : গর্ভের সন্তানের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৭:৫০:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পাবনার বেড়া উপজেলার চরকেষ্টপুরে স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গর্ভবতী স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গর্ভে মারা গেছে ধর্ষিতার গর্ভের সন্তান। ছয়দিন আগে মামলা হলেও  পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেতে পারেনি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ বলছে তারা পলাতক রয়েছে। এদিকে নানা চাপে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন ভূক্তভোগীরা। আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার সাগরকান্দি ইউনিয়নের চরকেষ্টপুরে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন- চরকেষ্টপুরের মাজেদ প্রামানিকের ছেলে সেলিম প্রামানিক (২৩), একই এলাকার মোঃ শরীফ (২৪), আনিছ সরদারের ছেলে রাজীব সরদার (২১), তালেব মন্ডলের ছেলে রুহুল মন্ডল (২৬), শফিক সরদারের ছেলে লালন সরদার (২০) ও মোঃ শামসুলের ছেলে সিরাজুল (২৩)।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই রাতে চর কেষ্টপুরের কাদেরিয়া তরিকাপন্থিদের একটি ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন ভূক্তভোগী নারীর স্বামী। ওয়াজ শুনতে এবং টাকার প্রয়োজনে রাতে তার স্বামীর কাছে যান তিনি। ওয়াজ শুনে স্বামীসহ রাত ১২ টার দিকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে পথরোধ করে অভিযুক্ত ৬ যুবক।

একপর্যায়ে স্বামীকে জিম্মি করে আটকে রাখে। পরে ওই নারীকে ভূট্রাক্ষেতে নিয়ে অভিযুক্তদের দুইজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে ওই নারীর তাদেও কাছ থেকে ছুটে স্থানীয় লোকজনকে বললে তারা দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তদের একজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। বাকিরা পলিয়ে যায়। এ সময় ধর্ষিত নারীকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় লিটন মন্ডল, রাজ্জাক মন্ডল, নিফাস মন্ডল ও শহিদ মন্ডল বলেন, আমাদের ওয়াজ মাহফিল চলা অবস্থায় রাত এক টার দিকে ওই ছেলে ছুটে এসে বললো- কিছু ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দেয়। আর মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরীর কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভূক্তভোগী ওই নারী বলেন, আমরা আমাদের আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে তারা মাঠের মধ্যে পথ আটকায়। আমাদের বলে তোরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। আমরা নিজেদের স্বামী-স্তী দাবি করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। ফোনে আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললেও ওরা শোনেনি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে এবং অস্ত্র আর ব্লেডের মুখে জিম্মি করে আমাকে মাঠের মধ্যে ভূট্রাক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় আমার স্বামী ছুটে গিয়ে পাশের লোকজন ডেকে আনলে একজনকে আটক করা হয়।

ভূক্তভোগী নারীর স্বামী মামলার বাদী বলেন, আমার স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। গর্ভের সন্তান মারা গেছে। মামলা হলেও আমাদের এখনো কোনো কাগজপত্র দেয়া হয়নি। থানায় গেলে কিছু পুলিশ সদস্য নানান কথা বলেন। আর যারা ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ থেকেও নানা হুমকী ও চাপ আসছে। বলছে এ ঘটনায় কিছুই হবে না, তোমাদেরই বিপদ হবে তাই মিমাংসা করো। আমরা ধর্ষণ এবং আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল কাদেরী বলেন, স্থানীযরা ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। পরে তাকে (স্বামী) মেয়েটাকে পাবনা জেলারেল হাসপাতালে বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।

অভিযুক্তরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরৗ। তিনি বলেন অভিযুক্তরা দিবালোকে প্রকাশ্যে ঘুরছে কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেতার করতে পারছে না। এ ঘটনা নিয়ে প্রশাসনে তেমন তোড়জোড় আছে বলে তেমনটা মনে হচ্ছে না। আমরা এরকম একটা ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।

তবে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) হারুনুর রশিদ। তার দাবি অভিযুক্তরা সবাই পলাতক আছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারের বিষয়ৈ পুলিশি গাফিলতার বিষয়টি মিথ্যা। আমরা চেষ্টা করছি গ্রেফতারের। ধর্ষণের ঘটনা মিমাংসা হয় না, বাদীকে হুমকী-ধমকীর বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।