ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যুক্ত হয়েছিলেন শামীমা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

স্কুলশিক্ষার্থী থাকাকালে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার পর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন শামীমা বেগম; তার প্রতি জনসাধারণের ক্ষোভের বিষয়টিও বুঝতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নিরাপত্তা ঝুঁকিজনিত কারণে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

বছরখানেকেরও বেশি সময় ধরে দেওয়া সাক্ষাৎকারগুলোতে এই নারী বলেন, আইএস সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাপক নির্দেশনা পাওয়ার পাশাপাশি সিরিয়া যাত্রা বিষয়ে তার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনাও ছিল।

ওই যাত্রা নিয়ে বিবিসি পডকাস্ট ‘দ্য শামীমা বেগম স্টোরি’তে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ায় তিনি ‘স্বস্তি’ পেয়েছিলেন, আর কখনো দেশটিতে ফিরে আসার প্রত্যাশাও ছিল না তার। যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা যে এখন তাকে ‘তাদের যাপিত জীবনে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিপজ্জনক, ঝুঁকির্প্ণূ বা সম্ভাব্য বিপদ হিসেবে দেখে, তাও জানেন বলে জানান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ নারী। তারা যেমনটা ভাবে, আমি তেমন মানুষ নই, বলেন তিনি।

২০১৯ সালে আইএস তাদের তথাকথিত ‘খেলাফত’ হারানোর পর সিরিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালা ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা হাজারও নর-নারী, শিশুর মধ্যে বিশ্বজুড়ে শামীমার মতো পরিচিতি আর কেউ পাননি। বন্দিশালা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকা ওই হাজার হাজার মানুষ এমন সব দেশ থেকে সিরিয়া গিয়েছিলেন, যারা আর তাদের ফেরত নিতে চায় না। বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী শামীমা সিরিয়া থাকাকালে তিন সন্তানের মা হয়েছিলেন, তিনটি শিশুই মারা গেছে। এই নারী এখন ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে ও লন্ডনে ফিরতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।

শামীমা কি যৌন নির্যাতনের লক্ষ্যে পাচারের শিকার হওয়া নারী ছিলেন নাকি আইএসের স্বেচ্ছাসেবক হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েই দেশ ছেড়েছিলেন, শুনানির কেন্দ্রবিন্দুতে বারবার এই প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে। গণহারে হত্যা, গুম, শিরশ্ছেদের মতো নির্মম বর্বরতার জন্য কুখ্যাতি আছে আইএসের। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়িত্বে থাকা এর কয়েকটি ইউনিট ২০১৫ সালে প্যারিসে ও ২০১৬ সালে ব্রাসেলসে সুনির্দিষ্ট হামলার জন্য দায়ী। গোষ্ঠীটি ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় বোমাবাজি ও ২০১৭ সালে লন্ডন ব্রিজে হামলার দায়ও স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।

শামীমা জানান, ব্রিটিশরা যে তাকে ‘সম্ভাব্য বিপজ্জনক’ হিসেবে দেখছে তা তিনি জানেন, তবে তিনি ‘মোটেও খারাপ মানুষ নন’। জনসাধারণ যে তাকে বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করছে, তার জন্য গণমাধ্যমকেও দোষারোপ করেছেন তিনি। বলেছেন, গণমাধ্যমই বারবার ঘুরেফিরে তাকে এমনভাবে হাজির করেছে, যে মানুষ তাকে ‘বিপজ্জনক’ বলেই ধরে নিয়েছে। ব্রিটিশ সমাজের লোকজন যে তার উপর ক্ষুব্ধ, বিষয়টি বুঝতে পারছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এ তরুণী বলেন, “হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি।

শামীমা বলেন, বেথনেল গ্রিন থেকে আইএস অধ্যুষিত রাক্কায় যাওয়ার জন্য তিনি এবং আরও দুই কিশোরী নিজেরাই নানান বিষয়ে ব্যাপক খোঁজখবর নিয়েছিলেন, এর পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির সদস্যরাও তাদেরকে বিস্তৃত নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করেছিল। “অনলাইনে থাকা লোকজন আমাদের অনেক কিছু বলেছিল। কী করতে হবে, কী করা যাবে না সে সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েছিল, বিস্তৃত নির্দেশনার দীর্ঘ তালিকা ছিল, যার মধ্যে ছিল ধরা পড়লে কী গল্প ফাঁদতে হবে তাও,” বলেছেন আইএসে ক্যাম্পে ও বন্দিশিবিরে কিশোরী থেকে নারী হয় ওঠা শামীমা।

নিজেরা যেসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল ভ্রমণ খরচ আর আইএস অধ্যুষিত সিরিয়ায় প্রবেশের আগে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময়ের জন্য টুকটাক তুর্কি ভাষা জানা। সূত্র : বিবিসি।

নিউজটি শেয়ার করুন

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যুক্ত হয়েছিলেন শামীমা

আপডেট সময় : ০৬:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

স্কুলশিক্ষার্থী থাকাকালে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার পর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন শামীমা বেগম; তার প্রতি জনসাধারণের ক্ষোভের বিষয়টিও বুঝতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নিরাপত্তা ঝুঁকিজনিত কারণে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

বছরখানেকেরও বেশি সময় ধরে দেওয়া সাক্ষাৎকারগুলোতে এই নারী বলেন, আইএস সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাপক নির্দেশনা পাওয়ার পাশাপাশি সিরিয়া যাত্রা বিষয়ে তার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনাও ছিল।

ওই যাত্রা নিয়ে বিবিসি পডকাস্ট ‘দ্য শামীমা বেগম স্টোরি’তে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ায় তিনি ‘স্বস্তি’ পেয়েছিলেন, আর কখনো দেশটিতে ফিরে আসার প্রত্যাশাও ছিল না তার। যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা যে এখন তাকে ‘তাদের যাপিত জীবনে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিপজ্জনক, ঝুঁকির্প্ণূ বা সম্ভাব্য বিপদ হিসেবে দেখে, তাও জানেন বলে জানান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ নারী। তারা যেমনটা ভাবে, আমি তেমন মানুষ নই, বলেন তিনি।

২০১৯ সালে আইএস তাদের তথাকথিত ‘খেলাফত’ হারানোর পর সিরিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালা ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা হাজারও নর-নারী, শিশুর মধ্যে বিশ্বজুড়ে শামীমার মতো পরিচিতি আর কেউ পাননি। বন্দিশালা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকা ওই হাজার হাজার মানুষ এমন সব দেশ থেকে সিরিয়া গিয়েছিলেন, যারা আর তাদের ফেরত নিতে চায় না। বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী শামীমা সিরিয়া থাকাকালে তিন সন্তানের মা হয়েছিলেন, তিনটি শিশুই মারা গেছে। এই নারী এখন ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে ও লন্ডনে ফিরতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।

শামীমা কি যৌন নির্যাতনের লক্ষ্যে পাচারের শিকার হওয়া নারী ছিলেন নাকি আইএসের স্বেচ্ছাসেবক হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েই দেশ ছেড়েছিলেন, শুনানির কেন্দ্রবিন্দুতে বারবার এই প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে। গণহারে হত্যা, গুম, শিরশ্ছেদের মতো নির্মম বর্বরতার জন্য কুখ্যাতি আছে আইএসের। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়িত্বে থাকা এর কয়েকটি ইউনিট ২০১৫ সালে প্যারিসে ও ২০১৬ সালে ব্রাসেলসে সুনির্দিষ্ট হামলার জন্য দায়ী। গোষ্ঠীটি ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় বোমাবাজি ও ২০১৭ সালে লন্ডন ব্রিজে হামলার দায়ও স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।

শামীমা জানান, ব্রিটিশরা যে তাকে ‘সম্ভাব্য বিপজ্জনক’ হিসেবে দেখছে তা তিনি জানেন, তবে তিনি ‘মোটেও খারাপ মানুষ নন’। জনসাধারণ যে তাকে বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করছে, তার জন্য গণমাধ্যমকেও দোষারোপ করেছেন তিনি। বলেছেন, গণমাধ্যমই বারবার ঘুরেফিরে তাকে এমনভাবে হাজির করেছে, যে মানুষ তাকে ‘বিপজ্জনক’ বলেই ধরে নিয়েছে। ব্রিটিশ সমাজের লোকজন যে তার উপর ক্ষুব্ধ, বিষয়টি বুঝতে পারছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এ তরুণী বলেন, “হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি।

শামীমা বলেন, বেথনেল গ্রিন থেকে আইএস অধ্যুষিত রাক্কায় যাওয়ার জন্য তিনি এবং আরও দুই কিশোরী নিজেরাই নানান বিষয়ে ব্যাপক খোঁজখবর নিয়েছিলেন, এর পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির সদস্যরাও তাদেরকে বিস্তৃত নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করেছিল। “অনলাইনে থাকা লোকজন আমাদের অনেক কিছু বলেছিল। কী করতে হবে, কী করা যাবে না সে সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েছিল, বিস্তৃত নির্দেশনার দীর্ঘ তালিকা ছিল, যার মধ্যে ছিল ধরা পড়লে কী গল্প ফাঁদতে হবে তাও,” বলেছেন আইএসে ক্যাম্পে ও বন্দিশিবিরে কিশোরী থেকে নারী হয় ওঠা শামীমা।

নিজেরা যেসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল ভ্রমণ খরচ আর আইএস অধ্যুষিত সিরিয়ায় প্রবেশের আগে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময়ের জন্য টুকটাক তুর্কি ভাষা জানা। সূত্র : বিবিসি।