ঢাকা ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শেখ রাসেলঃ একটি স্বপ্নের মৃত্যু

// মোঃ হায়দার আলী //
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৭:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৭০৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
মহান ও নিবেদিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। বেসরকারী শিক্ষক সমাজ বেতন বৈষম্যের স্বীকার, হয়রানীর স্বীকার, বাড়ী ভাড়া, ১০০/ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০/ টাকা, সিঁকি ইদ বোনাস, বেতন কম হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের গরম বাজারে তারা বেসামাল হয়ে পড়েন,  তাই এ বিষয়ে লেখা প্রয়োজন।
 শিক্ষকদের বিষয়ে লিখা শুরু করতে আমার একজন সফল  ছাত্র,  দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান,  বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক,  রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা,  মোঃ বেলাল উদ্দীন সোহেল  শেখ রাসেল এর সম্পর্কে লিখার জন্য অনুরোধ করেন তাই থিম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল এর তথ্য উপাত্ত নিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে এ সম্পর্কে লিখা শুরু করলেন। জানি না কতটা উপকারে আসবে।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল জন্ম গ্রহন করেন, শেখ রাসেলের মৃত্যু বরণ করেন ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট। এ সময় তার বয়স ছিল ১১ ছিল, তাকে স্মরণীয় করে রাখতে এ বছর তার জন্মদিনে সারদেশে ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৭ টি ল্যাপটপসহ অন্যান্য উপকরন নিয়ে, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধান শেখ হাসিনা। শেখ রাসেল ডিজিটাল পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, মাতার নাম বেগম ফজিলাতুন্নেসা ভাইদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল বোনদের নাম শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা। সময়টা ছিল লড়াই আর যুদ্ধের উত্তেজনায় মুখর। ১৯৬৪ সাল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে চলেছে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই সময় সমগ্র পাকিস্তানজুড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল। এক  দিকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, অন্যদিকে সম্মিলিত বিরোধীদলের প্রার্থী কায়দে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ। অনিশ্চয়তা আর অন্ধকারের মাঝেও এ অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে।
যিনি এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে এনে দেবেন মুক্তির স্বাদ, তার ঘর আলো করে জন্ম নিল এক ছোট্ট শিশু।  ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবরে ধানমন্ডির বিখ্যাত ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি আলোকিত করে এলো শেখ রাসেল। রাসেলের যেদিন জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু সেদিন ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন।
আর এই রাসেল নামটিও রাখেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় লেখক ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। পৃথিবী বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের নাম রাখলেন রাসেল।
শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটর। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যূষে একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডিস্থ ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবন ঘিরে ফেলে শেখ মুজিব, তাঁর পরিবার এবং তাঁর ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়।শেখ মুজিবের নির্দেশে রাসেলকে নিয়ে পালানোর সময় ব্যাক্তিগত কর্মচারীসহ রাসেলকে অভ্যুত্থানকারীরা তাদেরকে আটক করে। আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, “আমি মায়ের কাছে যাব”। পরবর্তীতে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন “আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন।” কিন্তু কোন কিছু যেন ঘাতকদের মন গলাতে পারেনি। তাকেও জীবন দিতে হয়েছিল।
শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগরূক রাখার জন্য শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বাংলাদেশের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ক্লাব। ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে খেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ক্লাবটি।
বিভিন্ন সময়ে সেই দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিলো ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিলো রাসেল।
ছোট্ট মানবশিশু শেখ রাসেলের মানবতাবোধ, ছোট বয়সেই নেতৃত্বসুলভ আচরণ, পরোপকারী মনোভাবগুলো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এবার সেটা দল কিংবা সরকারের পক্ষ থেকেই হোক, পাঠ্যপুস্তক কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমেই হোক – এটি গবেষণা করেই তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছি। এ বিষয়ে কিছুটা স্টাডি করতে গিয়ে জেনেছি, সেই ছোট্ট বয়স থেকেই রাসেলের ছিল অসাধারণ নেতৃত্ব সুলভ আচরণ। ঢাকায় তার তেমন কোনো খেলার সাথী ছিল না কিন্তু যখন পরিবারের সাথে টুঙ্গিপাড়ায় বেড়াতে যেতেন, সেখানে তার খেলার সাথীর অভাব হতো না। রাসেল নিজেই বাচ্চাদের জড়ো করতেন, তাদের জন্য খেলনা বন্দুক বানাতেন আর সেই বন্দুক হাতেই তাদের প্যারেড করাতেন। আসলে রাসেলের পরিবেশটাই ছিল এমন। রাসেলের খুদে ওই বাহিনীর (বন্ধু) জন্য জামা-কাপড় ঢাকা সে থেকেই কিনে নিতেন। প্যারেড শেষে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করতেন। আর বড় হয়ে তুমি কি হবে, এমন প্রশ্ন কেউ করলে রাসেল বলত ‘আর্মি অফিসার হব’।
শিশু রাসেলের জন্মের পর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন সময়ে নানান কারণে জেলে যেতে হয়েছে। তাই ছোট্ট রাসেল তার বাবার সান্নিধ্য খুব কমই পেয়েছে। রাসেলের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ছিল তার হাসুপা (শেখ হাসিনা)। তার সমস্ত সময় জুড়েই ছিল হাসুপা। রাসেল হাসুপা’র চুলের বেনী ধরে খেলতে পছন্দ করত। সে চুল ধরে নাড়াত আর ফিক ফিক করে হাসত। রাসেলের হাঁটা শুরুও হয়েছে তার প্রিয় হাসুপা’র হাত ধরে তাও আবার একদিনেই। এটি একটি বিরল ঘটনা। আসলে রাসেলের সবকিছুই একটু ব্যতিক্রম ছিল, আর থাকবে নাই বা কেন? সে যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। তার মন-মগজ আর শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় বহমান ছিল ব্যক্তিত্ব, মানবতাবোধ আর ভিন্নতা যা অনায়াসেই রাসেলের ভক্ত হয়ে যেত যে কেউ।
 কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝেও শেখ রাসেলের ছোট বয়সের ব্যক্তিত্ব, মানবতাবোধ আর উপস্থিতবুদ্ধির বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরতে পারিনি। শেখ রাসেলের প্রিয় হাসু আপা অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণ বইটিও (আমাদের ছোট রাসেল সোনা) এখনো আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার গীতালি দাশগুপ্তার করা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত পড়াকালীন ছাত্র রাসেলের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন মজার কথাগুলোর সংকলন আমরা আজও ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার বা অ্যাপস আকারে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে-হাতে পৌঁছাতে পারিনি।
পৃথিবীতে যুগে যুগে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিন্তু এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড আর কোথাও ঘটেনি। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিতে-নিতে শিশু রাসেলকে প্রো নিয়ে গিয়ে শিশু রাসেলকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল, জঘন্য কর্মকাণ্ডের দৃশ্যগুলো দেখিয়ে তাকে ভেতর থেকেও হত্যা করে সর্বশেষে বুলেটের নির্মম আঘাতে রাসেলের দেহ থেকে অবশিষ্ট প্রাণ ভোমরাটিকেও চিরতরের জন্য নিরব-নিস্তব্ধ করে দিয়েছে বর্বর খুনিরা।
শিশু রাসেল  ১১ জীবদ্দশায় কেমন ছিল, কীভাবে পড়াশোনা করত, ভালো না লাগলে শিক্ষককে বারণ করা, প্রিয় শিক্ষককে ফোন করার বিষয়গুলো আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা কী জানে? শিশু রাসেলের জীবনের গল্প আমাদের শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে আমরা কীভাবে উপস্থাপন করেছি কিংবা আদৌ করা সম্ভব হয়েছে? পাঠ্যপুস্তকে শিশু রাসেলের জীবনগল্প নিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কী তুলে ধরেছি এগুলো আলোচনার বিষয়।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় বলে থাকেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মা’র সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আরড় রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আ
ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিল রাসেল।’
আর এই রাসেল নামটিও রাখেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় লেখক ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। পৃথিবী বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের নাম রাখলেন রাসেল, শেখ রাসেল। আর বার্ট্রান্ড রাসেল শুধু একজন দার্শনিকই ছিলেন না, বিজ্ঞানীও ছিলেন। পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের বিশ্বনেতাও। আর বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্যে বার্ট্রান্ড রাসেল গঠন করেছিলেন ‘কমিটি অব হানড্রেড’। মানুষের বসবাস যাতে সুন্দর ও শান্তিময় হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করেছেন বার্ট্রান্ড।
শিশু রাসেলের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে বাবা মুজিবকে ছাড়া। কারণ, বাবা মুজিব রাজনৈতিক বন্দী হয়ে কারাগারে ছিলেন দিনের পর দিন। আর চোখের সামনে বাবাকে দেখতে না পেয়ে মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে একপর্যায় ‘আব্বা’ বলেই সম্বোধন করতে লাগলেন। এই চাপা কষ্ট যেমন অনুভব করতেন শিশু রাসেল, ঠিক তেমনি বাবা মুজিবও। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘‘৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো।’ কী উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো।’ ও কি বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলে-মেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনো বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে’।
‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের একুশ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না। খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকত।’
ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবার একটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন একজন আদর্শ মাতা। তিনি তার সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় মানুষ করেছেন, দিয়েছেন মানবিক গুণাবলিও। ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনার মাঝে অনুরূপ গুণাবলি প্রতীয়মান। তিনি সেই নৈতিক শিক্ষা আর মানবিক গুণাবলি দিয়ে জয়-পুতুলকেও গড়ে তুলেছেন। শিশু রাসেল বেঁচে থাকলে আজকের ৫৬ বছরের মানুষটিও হতেন এক অন্যন্য গুণাবলির ব্যক্তিত্ব।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারের চিহ্নটুকুও নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। আর তাদের ওই ঘৃণ্য অপচেষ্টা যে শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এটি আজ প্রমাণিত। শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবোধসম্পন্ন মানুষের কাছে একটি আদর্শ ও ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকারবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম থেকে শহর তথা বাংলাদেশের প্রতিটি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ুক রাসেলের নাম। আর এখানেই গবেষণা করে মানবতার প্রতীকি শিশু শেখ রাসেলের জীবনীর প্রতিটি দিনক্ষণের গল্পগুলো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
[লেখক : মোঃ হায়দার আলী, প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গোদাগাড়ী, রাজশাহী। ও সহঃ সাধারন সম্পাদক, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী জেলা শাখা ]
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

নিউজটি শেয়ার করুন

শেখ রাসেলঃ একটি স্বপ্নের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৯:৫৭:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩
মহান ও নিবেদিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। বেসরকারী শিক্ষক সমাজ বেতন বৈষম্যের স্বীকার, হয়রানীর স্বীকার, বাড়ী ভাড়া, ১০০/ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০/ টাকা, সিঁকি ইদ বোনাস, বেতন কম হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের গরম বাজারে তারা বেসামাল হয়ে পড়েন,  তাই এ বিষয়ে লেখা প্রয়োজন।
 শিক্ষকদের বিষয়ে লিখা শুরু করতে আমার একজন সফল  ছাত্র,  দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান,  বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক,  রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা,  মোঃ বেলাল উদ্দীন সোহেল  শেখ রাসেল এর সম্পর্কে লিখার জন্য অনুরোধ করেন তাই থিম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল এর তথ্য উপাত্ত নিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে এ সম্পর্কে লিখা শুরু করলেন। জানি না কতটা উপকারে আসবে।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল জন্ম গ্রহন করেন, শেখ রাসেলের মৃত্যু বরণ করেন ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট। এ সময় তার বয়স ছিল ১১ ছিল, তাকে স্মরণীয় করে রাখতে এ বছর তার জন্মদিনে সারদেশে ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৭ টি ল্যাপটপসহ অন্যান্য উপকরন নিয়ে, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধান শেখ হাসিনা। শেখ রাসেল ডিজিটাল পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, মাতার নাম বেগম ফজিলাতুন্নেসা ভাইদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল বোনদের নাম শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা। সময়টা ছিল লড়াই আর যুদ্ধের উত্তেজনায় মুখর। ১৯৬৪ সাল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে চলেছে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই সময় সমগ্র পাকিস্তানজুড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল। এক  দিকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, অন্যদিকে সম্মিলিত বিরোধীদলের প্রার্থী কায়দে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ। অনিশ্চয়তা আর অন্ধকারের মাঝেও এ অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে।
যিনি এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে এনে দেবেন মুক্তির স্বাদ, তার ঘর আলো করে জন্ম নিল এক ছোট্ট শিশু।  ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবরে ধানমন্ডির বিখ্যাত ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি আলোকিত করে এলো শেখ রাসেল। রাসেলের যেদিন জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু সেদিন ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন।
আর এই রাসেল নামটিও রাখেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় লেখক ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। পৃথিবী বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের নাম রাখলেন রাসেল।
শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটর। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যূষে একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডিস্থ ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবন ঘিরে ফেলে শেখ মুজিব, তাঁর পরিবার এবং তাঁর ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়।শেখ মুজিবের নির্দেশে রাসেলকে নিয়ে পালানোর সময় ব্যাক্তিগত কর্মচারীসহ রাসেলকে অভ্যুত্থানকারীরা তাদেরকে আটক করে। আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, “আমি মায়ের কাছে যাব”। পরবর্তীতে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন “আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন।” কিন্তু কোন কিছু যেন ঘাতকদের মন গলাতে পারেনি। তাকেও জীবন দিতে হয়েছিল।
শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগরূক রাখার জন্য শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বাংলাদেশের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ক্লাব। ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে খেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ক্লাবটি।
বিভিন্ন সময়ে সেই দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিলো ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিলো রাসেল।
ছোট্ট মানবশিশু শেখ রাসেলের মানবতাবোধ, ছোট বয়সেই নেতৃত্বসুলভ আচরণ, পরোপকারী মনোভাবগুলো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এবার সেটা দল কিংবা সরকারের পক্ষ থেকেই হোক, পাঠ্যপুস্তক কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমেই হোক – এটি গবেষণা করেই তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছি। এ বিষয়ে কিছুটা স্টাডি করতে গিয়ে জেনেছি, সেই ছোট্ট বয়স থেকেই রাসেলের ছিল অসাধারণ নেতৃত্ব সুলভ আচরণ। ঢাকায় তার তেমন কোনো খেলার সাথী ছিল না কিন্তু যখন পরিবারের সাথে টুঙ্গিপাড়ায় বেড়াতে যেতেন, সেখানে তার খেলার সাথীর অভাব হতো না। রাসেল নিজেই বাচ্চাদের জড়ো করতেন, তাদের জন্য খেলনা বন্দুক বানাতেন আর সেই বন্দুক হাতেই তাদের প্যারেড করাতেন। আসলে রাসেলের পরিবেশটাই ছিল এমন। রাসেলের খুদে ওই বাহিনীর (বন্ধু) জন্য জামা-কাপড় ঢাকা সে থেকেই কিনে নিতেন। প্যারেড শেষে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করতেন। আর বড় হয়ে তুমি কি হবে, এমন প্রশ্ন কেউ করলে রাসেল বলত ‘আর্মি অফিসার হব’।
শিশু রাসেলের জন্মের পর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন সময়ে নানান কারণে জেলে যেতে হয়েছে। তাই ছোট্ট রাসেল তার বাবার সান্নিধ্য খুব কমই পেয়েছে। রাসেলের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ছিল তার হাসুপা (শেখ হাসিনা)। তার সমস্ত সময় জুড়েই ছিল হাসুপা। রাসেল হাসুপা’র চুলের বেনী ধরে খেলতে পছন্দ করত। সে চুল ধরে নাড়াত আর ফিক ফিক করে হাসত। রাসেলের হাঁটা শুরুও হয়েছে তার প্রিয় হাসুপা’র হাত ধরে তাও আবার একদিনেই। এটি একটি বিরল ঘটনা। আসলে রাসেলের সবকিছুই একটু ব্যতিক্রম ছিল, আর থাকবে নাই বা কেন? সে যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। তার মন-মগজ আর শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় বহমান ছিল ব্যক্তিত্ব, মানবতাবোধ আর ভিন্নতা যা অনায়াসেই রাসেলের ভক্ত হয়ে যেত যে কেউ।
 কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝেও শেখ রাসেলের ছোট বয়সের ব্যক্তিত্ব, মানবতাবোধ আর উপস্থিতবুদ্ধির বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরতে পারিনি। শেখ রাসেলের প্রিয় হাসু আপা অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণ বইটিও (আমাদের ছোট রাসেল সোনা) এখনো আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার গীতালি দাশগুপ্তার করা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত পড়াকালীন ছাত্র রাসেলের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন মজার কথাগুলোর সংকলন আমরা আজও ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার বা অ্যাপস আকারে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে-হাতে পৌঁছাতে পারিনি।
পৃথিবীতে যুগে যুগে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিন্তু এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড আর কোথাও ঘটেনি। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিতে-নিতে শিশু রাসেলকে প্রো নিয়ে গিয়ে শিশু রাসেলকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল, জঘন্য কর্মকাণ্ডের দৃশ্যগুলো দেখিয়ে তাকে ভেতর থেকেও হত্যা করে সর্বশেষে বুলেটের নির্মম আঘাতে রাসেলের দেহ থেকে অবশিষ্ট প্রাণ ভোমরাটিকেও চিরতরের জন্য নিরব-নিস্তব্ধ করে দিয়েছে বর্বর খুনিরা।
শিশু রাসেল  ১১ জীবদ্দশায় কেমন ছিল, কীভাবে পড়াশোনা করত, ভালো না লাগলে শিক্ষককে বারণ করা, প্রিয় শিক্ষককে ফোন করার বিষয়গুলো আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা কী জানে? শিশু রাসেলের জীবনের গল্প আমাদের শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে আমরা কীভাবে উপস্থাপন করেছি কিংবা আদৌ করা সম্ভব হয়েছে? পাঠ্যপুস্তকে শিশু রাসেলের জীবনগল্প নিয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কী তুলে ধরেছি এগুলো আলোচনার বিষয়।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় বলে থাকেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মা’র সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আরড় রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আ
ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিল রাসেল।’
আর এই রাসেল নামটিও রাখেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় লেখক ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। পৃথিবী বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের নাম রাখলেন রাসেল, শেখ রাসেল। আর বার্ট্রান্ড রাসেল শুধু একজন দার্শনিকই ছিলেন না, বিজ্ঞানীও ছিলেন। পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের বিশ্বনেতাও। আর বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্যে বার্ট্রান্ড রাসেল গঠন করেছিলেন ‘কমিটি অব হানড্রেড’। মানুষের বসবাস যাতে সুন্দর ও শান্তিময় হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করেছেন বার্ট্রান্ড।
শিশু রাসেলের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে বাবা মুজিবকে ছাড়া। কারণ, বাবা মুজিব রাজনৈতিক বন্দী হয়ে কারাগারে ছিলেন দিনের পর দিন। আর চোখের সামনে বাবাকে দেখতে না পেয়ে মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে একপর্যায় ‘আব্বা’ বলেই সম্বোধন করতে লাগলেন। এই চাপা কষ্ট যেমন অনুভব করতেন শিশু রাসেল, ঠিক তেমনি বাবা মুজিবও। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘‘৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো।’ কী উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো।’ ও কি বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলে-মেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনো বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে’।
‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের একুশ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না। খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকত।’
ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবার একটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন একজন আদর্শ মাতা। তিনি তার সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় মানুষ করেছেন, দিয়েছেন মানবিক গুণাবলিও। ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনার মাঝে অনুরূপ গুণাবলি প্রতীয়মান। তিনি সেই নৈতিক শিক্ষা আর মানবিক গুণাবলি দিয়ে জয়-পুতুলকেও গড়ে তুলেছেন। শিশু রাসেল বেঁচে থাকলে আজকের ৫৬ বছরের মানুষটিও হতেন এক অন্যন্য গুণাবলির ব্যক্তিত্ব।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারের চিহ্নটুকুও নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। আর তাদের ওই ঘৃণ্য অপচেষ্টা যে শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এটি আজ প্রমাণিত। শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবোধসম্পন্ন মানুষের কাছে একটি আদর্শ ও ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকারবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম থেকে শহর তথা বাংলাদেশের প্রতিটি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ুক রাসেলের নাম। আর এখানেই গবেষণা করে মানবতার প্রতীকি শিশু শেখ রাসেলের জীবনীর প্রতিটি দিনক্ষণের গল্পগুলো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
[লেখক : মোঃ হায়দার আলী, প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গোদাগাড়ী, রাজশাহী। ও সহঃ সাধারন সম্পাদক, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী জেলা শাখা ]
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)