ঢাকা ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মরণনেশা ইয়াবা ও জুয়ার গ্রাসে তাহিরপুরের শ্রীপুর বাজার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪১:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • / ৪৩৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ :
সব ধরণের মাদকে সয়লাব সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম। এছাড়া জুয়ারি আর নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী-মাদক সেবনকারীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এ জনপদ।
উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে এর প্রাদূর্ভাব দেখা দিলেও পুরো জনপদ জুড়ে প্রতিনিয় বিস্তৃত হচ্ছে অপরাধকান্ড।
জানা গেছে, সীমান্ত পথে আসা বিভিন্ন প্রকার মাদকের সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে মরণনেশা ইয়াবা এখানে বেশি সরবরাহ করে আসছেন ইয়াবা কারবারিরা। নিজেদের পকেটভারীর আশায় এ মরণনেশায় আসক্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে ইয়াবা কারবারিরা। এদিকে গেল ২০ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহ্ ক্বারী নুর আলী (রহঃ) মাজারে ওরস মাহফিল চলাকালে মধ্যরাতে ডাব্বা খেলা নিয়ে হাতাহাতি হয় জুয়া বোর্ড মালিক ও জুয়াড়িদের মধ্যে। পরবর্তীতে  সকালে সংঘর্ষে রূপ নেয়। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘটিত সংঘর্ষ এলাকাবাসী সামালে ব্যর্থ হলে পুলিশ এসে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।
“জুয়া-মাদকের আখড়া শ্রীপুর বাজার” শিরোনামে গেল বছরের ২৫ ডিসেম্বর একাধিক অনলাইন নিউজপোর্টাল ও জাতীয় দৈনিকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে একাধিকবার অভিযানে নামে পুলিশ। সর্বশেষ ১লা মার্চ রাতে শ্রীপুর বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এসব অপরাধকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় তাহিরপুর থানা পুলিশ। এসময় বাজারের জনৈক ব্যবসায়ীর ঘরে ডাব্বা নামক জুয়া চলাকালীন সময়ে জুয়া বোর্ড থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করেন এএসআই শফিকুল ইসলাম। তবে জুয়ারিরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পরদিন (২ মার্চ) সন্ধ্যায় ফের জুয়ারি-মাদকসেবিদের উৎপাত চলমান থাকায় তাৎক্ষণিক জোয়াবাজদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে স্হানীয় যুবকদ্বয়।
এলাকাবাসী জানায়,“ক্যাসিনো-ডাব্বা আর শীলং তীর“ খেলায় মত্ত বিপথগামী যুবকদের অধিক মুনাফার লালসা দেখিয়ে পকেটভারী করছে জুয়াবাজচক্র। ফলে জুয়াদানে ফতুর হয়ে টাকা সংগ্রহে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। অপরদিকে রাতের আঁধারে বাজার ও আশপাশের এলাকা চলে যায় মরণ নেশা ইয়াবা, মদ-গাজাসেবীদের দখলে। তারা জানায়, মরণ নেশা ইয়াবার ক্রেতারা হলো এখানকার বিপথগামী যুবকরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রীপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামনুর আখঞ্জী বলেন, বাজারে চলা বিভিন্ন অন্যায় কর্মকান্ডে আমি বাধা দিয়েছি। আমাদের তো আর কাউকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা নাই। আমি এটা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অবগত করেছি।
তবে বাজার কমিটির সভাপতি ইমানুর মিয়া বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বাজার নিয়ে সমালোচনা বা খারাপ কথা যারা কয় এরা কোনো দোকানদার না। বাজারে কোন ধরণের অন্যায় হয় না। কিন্তু কিছু পোলাপান বলছে বাজারে খারাপ ঘটনা হয়। কিন্তু আমারে তো সরকার এই অনুমতি দিছেনা যে আমি একজনরে ঘরে যাইয়া ধরমু বা ঘরে যাইয়া মারমু। কিন্তু আমার সামনে পড়লে ঠিকই দৌড়াইয়া দেই। আমার ব্যাপারে বা বাজারের ব্যাপারে সমালোচনা করে কিছু দুর্নীর্তিবাজ লোক আছে এই দুর্নীতিবাজ লোকেরাই এগুলো রটায়। বাজার খুবই সুন্দর আছে, দোকানদার খুবই নিরাপদে আছে।। বাজারে কিছুই হয় না। হলে আমি যদি না পারি প্রশাসন, সাংবাদিক ও সরকারের সাহায্য নিব।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, আমি একাধিকবার এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাজারে মাইকিং করেছি, চেয়ারম্যান সাহেবও মাইকিং করাইছেন। বাজারে পুলিশ আসলে এসকল অপরাধীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। আবার পুলিশ চলে গেলেই শুরু হয় এসব কান্ড। পরে আমরা গিয়ে নিষেধ দিলে কিছু সময় পর আবার এসব অপরাধ কান্ড শুরু করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, শ্রীপুর বাজারে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড চলছে। আমরা বিভিন্ন সময় নিষেধ করেছি। প্রশাসনকে অবগত করলে  প্রশাসন একাধিকবার অভিযান করেছে। বর্তমানেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে তাহিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, মাদক ও জুয়াসহ বিভিন্ন অপরাধ বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করছেন।
বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

মরণনেশা ইয়াবা ও জুয়ার গ্রাসে তাহিরপুরের শ্রীপুর বাজার

আপডেট সময় : ১২:৪১:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ :
সব ধরণের মাদকে সয়লাব সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম। এছাড়া জুয়ারি আর নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী-মাদক সেবনকারীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এ জনপদ।
উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে এর প্রাদূর্ভাব দেখা দিলেও পুরো জনপদ জুড়ে প্রতিনিয় বিস্তৃত হচ্ছে অপরাধকান্ড।
জানা গেছে, সীমান্ত পথে আসা বিভিন্ন প্রকার মাদকের সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে মরণনেশা ইয়াবা এখানে বেশি সরবরাহ করে আসছেন ইয়াবা কারবারিরা। নিজেদের পকেটভারীর আশায় এ মরণনেশায় আসক্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে ইয়াবা কারবারিরা। এদিকে গেল ২০ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহ্ ক্বারী নুর আলী (রহঃ) মাজারে ওরস মাহফিল চলাকালে মধ্যরাতে ডাব্বা খেলা নিয়ে হাতাহাতি হয় জুয়া বোর্ড মালিক ও জুয়াড়িদের মধ্যে। পরবর্তীতে  সকালে সংঘর্ষে রূপ নেয়। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘটিত সংঘর্ষ এলাকাবাসী সামালে ব্যর্থ হলে পুলিশ এসে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।
“জুয়া-মাদকের আখড়া শ্রীপুর বাজার” শিরোনামে গেল বছরের ২৫ ডিসেম্বর একাধিক অনলাইন নিউজপোর্টাল ও জাতীয় দৈনিকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে একাধিকবার অভিযানে নামে পুলিশ। সর্বশেষ ১লা মার্চ রাতে শ্রীপুর বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এসব অপরাধকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় তাহিরপুর থানা পুলিশ। এসময় বাজারের জনৈক ব্যবসায়ীর ঘরে ডাব্বা নামক জুয়া চলাকালীন সময়ে জুয়া বোর্ড থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করেন এএসআই শফিকুল ইসলাম। তবে জুয়ারিরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পরদিন (২ মার্চ) সন্ধ্যায় ফের জুয়ারি-মাদকসেবিদের উৎপাত চলমান থাকায় তাৎক্ষণিক জোয়াবাজদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে স্হানীয় যুবকদ্বয়।
এলাকাবাসী জানায়,“ক্যাসিনো-ডাব্বা আর শীলং তীর“ খেলায় মত্ত বিপথগামী যুবকদের অধিক মুনাফার লালসা দেখিয়ে পকেটভারী করছে জুয়াবাজচক্র। ফলে জুয়াদানে ফতুর হয়ে টাকা সংগ্রহে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। অপরদিকে রাতের আঁধারে বাজার ও আশপাশের এলাকা চলে যায় মরণ নেশা ইয়াবা, মদ-গাজাসেবীদের দখলে। তারা জানায়, মরণ নেশা ইয়াবার ক্রেতারা হলো এখানকার বিপথগামী যুবকরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রীপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামনুর আখঞ্জী বলেন, বাজারে চলা বিভিন্ন অন্যায় কর্মকান্ডে আমি বাধা দিয়েছি। আমাদের তো আর কাউকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা নাই। আমি এটা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অবগত করেছি।
তবে বাজার কমিটির সভাপতি ইমানুর মিয়া বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বাজার নিয়ে সমালোচনা বা খারাপ কথা যারা কয় এরা কোনো দোকানদার না। বাজারে কোন ধরণের অন্যায় হয় না। কিন্তু কিছু পোলাপান বলছে বাজারে খারাপ ঘটনা হয়। কিন্তু আমারে তো সরকার এই অনুমতি দিছেনা যে আমি একজনরে ঘরে যাইয়া ধরমু বা ঘরে যাইয়া মারমু। কিন্তু আমার সামনে পড়লে ঠিকই দৌড়াইয়া দেই। আমার ব্যাপারে বা বাজারের ব্যাপারে সমালোচনা করে কিছু দুর্নীর্তিবাজ লোক আছে এই দুর্নীতিবাজ লোকেরাই এগুলো রটায়। বাজার খুবই সুন্দর আছে, দোকানদার খুবই নিরাপদে আছে।। বাজারে কিছুই হয় না। হলে আমি যদি না পারি প্রশাসন, সাংবাদিক ও সরকারের সাহায্য নিব।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, আমি একাধিকবার এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাজারে মাইকিং করেছি, চেয়ারম্যান সাহেবও মাইকিং করাইছেন। বাজারে পুলিশ আসলে এসকল অপরাধীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। আবার পুলিশ চলে গেলেই শুরু হয় এসব কান্ড। পরে আমরা গিয়ে নিষেধ দিলে কিছু সময় পর আবার এসব অপরাধ কান্ড শুরু করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, শ্রীপুর বাজারে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড চলছে। আমরা বিভিন্ন সময় নিষেধ করেছি। প্রশাসনকে অবগত করলে  প্রশাসন একাধিকবার অভিযান করেছে। বর্তমানেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে তাহিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, মাদক ও জুয়াসহ বিভিন্ন অপরাধ বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করছেন।
বা/খ: জই