ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৩৯:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪৪৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার। ভয়াবহ আগুনে পুড়লো রাজধানীর বঙ্গবাজার। ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের মার্কেট ভবনেও। ভোর থেকেই নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট। যোগ দেন সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যরাও।

বাতাসের জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং বিজিবির চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সকাল ৬টা ১০ মিনিটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করে। বঙ্গবাজারের টিনশেড দোতলা মার্কেট পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

এরই মধ্যে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে দেখা দেয় পানির সংকট। আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি আনা হচ্ছে। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি ছিটানো হয়। এদিকে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) আগুনে সকাল থেকে ধোঁয়ায় পুরো আকাশ কালো হয়ে যায়। এসময় পোশাক ব্যবসায়ীদের হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায়।

বঙ্গবাজার মার্কেটের কিছু অংশ ছিল তিন তলা এবং কিছু অংশ ছিল চার তলা। ব্যবসায়ীরা বলছেন সেখানে অন্তত সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার দোকান ছিল। তবে ভয়াবহ আগুনে একেবারে ভস্ম হয়ে গেছে সব। মাটিতে মিশে গেছে পুরো মার্কেট।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিটি দোকানই ছিল তৈরি পোশাকসহ ঈদ সামগ্রিতে ভরপুর। ব্যবসায়ীদের এ ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়, বলছিলেন বঙ্গবাজারের দোকানদার আবুল কাশেম।

আবুল কাশেম জানান, বঙ্গবাজার হচ্ছে মূলত সারা দেশের জন্য একটি পাইকারি মার্কেট। এখান থেকেই সারা দেশের জুতা, তৈরি পোশাক, কম্বলসহ বিভিন্ন জিনিস কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিটি দোকানেই কোটি টাকার বেশি মালামাল থাকে।

বঙ্গবাজারের ইভা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম জানান, আসন্ন ঈদের আগে নতুন মালামালসহ তার দোকানে ২০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মালামাল ছিল। কিন্তু আজ সকালের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও জানান, আগুনে কয়েকশ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আরেক দোকান মালিক বলেন, আমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কীভাবে পরিবারের ভরণপোষণ করব জানি না।

ইমরান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, শুধু তিনি নন তাদের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের এখানে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে তারা দোকানে নতুন মালামাল তুলেছেন। এজন্য কেউ-কেউ ধার-দেনাও করেছেন। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে ঈদ কেন্দ্রিক তাদের এ স্বপ্ন।

নুর আলম নামে একজন ব্যবসায়ী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সব শেষ ভাই, আর কিছু নাই, দুই দোকানের কিছুই বাইর করতে পারিনি। ব্যাংক ঋণ বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়ে এবার মালামাল উঠাইছিলাম। এখন সব শেষ, এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’

আগুনের সূত্রপাত মার্কেটের ভেতরে হলেও দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে পাশের এনেক্সকো টাওয়ার, বরিশাল মার্কেট এবং ইসলামিয়া সুপার মার্কেটেও।

এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে চোখের সামনে আগুনে সব পুড়ে যেতে দেখে ব্যবসায়ীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বঙ্গবাজারের উল্টোদিকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে। এতে তিন জন ফায়ার কর্মী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ঘটনার ২ ঘণ্টার মাথায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই হামলা হয়। আধাঘণ্টা ধরে এ হামলা চলে। এ সময় সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

আগুন নিয়ন্ত্রণে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করে পুলিশ।

ছেলে, মেয়েদের প্যান্ট, শার্টসহ কাপড়ের জন্য ঢাকার বিখ্যাত বঙ্গবাজারের মার্কেট। মঙ্গলবার ভোরের আগুনে পুড়ছে মার্কেটটির বেশিরভাগ দোকান। আসছে ঈদকে কেন্দ্র করে সব দোকানেই মজুত করে রাখা হয়েছিল বিপুল কাপড়। আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়লে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ভয় করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে পথে বসার আশঙ্কা করছেন তারা।

এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই

আপডেট সময় : ০১:৩৯:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার। ভয়াবহ আগুনে পুড়লো রাজধানীর বঙ্গবাজার। ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের মার্কেট ভবনেও। ভোর থেকেই নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট। যোগ দেন সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যরাও।

বাতাসের জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং বিজিবির চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সকাল ৬টা ১০ মিনিটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করে। বঙ্গবাজারের টিনশেড দোতলা মার্কেট পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

এরই মধ্যে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে দেখা দেয় পানির সংকট। আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি আনা হচ্ছে। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি ছিটানো হয়। এদিকে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) আগুনে সকাল থেকে ধোঁয়ায় পুরো আকাশ কালো হয়ে যায়। এসময় পোশাক ব্যবসায়ীদের হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায়।

বঙ্গবাজার মার্কেটের কিছু অংশ ছিল তিন তলা এবং কিছু অংশ ছিল চার তলা। ব্যবসায়ীরা বলছেন সেখানে অন্তত সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার দোকান ছিল। তবে ভয়াবহ আগুনে একেবারে ভস্ম হয়ে গেছে সব। মাটিতে মিশে গেছে পুরো মার্কেট।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিটি দোকানই ছিল তৈরি পোশাকসহ ঈদ সামগ্রিতে ভরপুর। ব্যবসায়ীদের এ ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়, বলছিলেন বঙ্গবাজারের দোকানদার আবুল কাশেম।

আবুল কাশেম জানান, বঙ্গবাজার হচ্ছে মূলত সারা দেশের জন্য একটি পাইকারি মার্কেট। এখান থেকেই সারা দেশের জুতা, তৈরি পোশাক, কম্বলসহ বিভিন্ন জিনিস কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিটি দোকানেই কোটি টাকার বেশি মালামাল থাকে।

বঙ্গবাজারের ইভা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম জানান, আসন্ন ঈদের আগে নতুন মালামালসহ তার দোকানে ২০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মালামাল ছিল। কিন্তু আজ সকালের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও জানান, আগুনে কয়েকশ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আরেক দোকান মালিক বলেন, আমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কীভাবে পরিবারের ভরণপোষণ করব জানি না।

ইমরান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, শুধু তিনি নন তাদের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের এখানে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে তারা দোকানে নতুন মালামাল তুলেছেন। এজন্য কেউ-কেউ ধার-দেনাও করেছেন। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে ঈদ কেন্দ্রিক তাদের এ স্বপ্ন।

নুর আলম নামে একজন ব্যবসায়ী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সব শেষ ভাই, আর কিছু নাই, দুই দোকানের কিছুই বাইর করতে পারিনি। ব্যাংক ঋণ বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়ে এবার মালামাল উঠাইছিলাম। এখন সব শেষ, এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’

আগুনের সূত্রপাত মার্কেটের ভেতরে হলেও দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে পাশের এনেক্সকো টাওয়ার, বরিশাল মার্কেট এবং ইসলামিয়া সুপার মার্কেটেও।

এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে চোখের সামনে আগুনে সব পুড়ে যেতে দেখে ব্যবসায়ীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বঙ্গবাজারের উল্টোদিকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে। এতে তিন জন ফায়ার কর্মী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ঘটনার ২ ঘণ্টার মাথায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই হামলা হয়। আধাঘণ্টা ধরে এ হামলা চলে। এ সময় সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

আগুন নিয়ন্ত্রণে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করে পুলিশ।

ছেলে, মেয়েদের প্যান্ট, শার্টসহ কাপড়ের জন্য ঢাকার বিখ্যাত বঙ্গবাজারের মার্কেট। মঙ্গলবার ভোরের আগুনে পুড়ছে মার্কেটটির বেশিরভাগ দোকান। আসছে ঈদকে কেন্দ্র করে সব দোকানেই মজুত করে রাখা হয়েছিল বিপুল কাপড়। আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়লে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ভয় করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে পথে বসার আশঙ্কা করছেন তারা।

এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি।