ঢাকা ০৭:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪৫ বার পড়া হয়েছে

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৬ মার্চ গ্রেফতার করে পাকিস্তানের একটি কারাগারে নিয়ে বন্দি করে রেখেছিল। তাকে শুধু বন্দি করেই রাখা হয়নি, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয়েছিল। এমনকি জেলাখানার পাশে কবরও তৈরি করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তি পেয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের (পরিবারের) কাছে আসেননি, বাংলার মাটিতে ফিরে বঙ্গবন্ধু যান মানুষের কাছে, রেসকোর্স ময়দান। লাখো জনতার সামনে তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন কীভাবে, কী নীতি আদর্শে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চলবে। রূপরেখা দিয়েছিলেন দেশ গড়ার।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দেশে ফিরে আসার পরই বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন পূর্ণতা পায়। ওই দিন তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান। সেদিন তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে কথাগুলো বলেছিলেন, একে একে সব করেছিলেন। মাত্র ৯ মাসে সংবিধান দিয়েছিলেন। অথচ, পাকিস্তানের সংবিধান দিতে ১১ বছর লেগেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে কেউ এত দ্রুত গড়ে তুলতে পারেনি। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কেবল বঙ্গবন্ধুর আমলেই ৯ শতাংশের বেশি হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বিদেশি ব্যক্তি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী দেশে দেশে ধরনা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের চাপেই শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র পাঁচ বছর সময় পেয়েছিলেন। আর কয়েকটি বছর যদি তিনি (বঙ্গবন্ধু) হাতে সময় পেতেন, স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারত। সেই সাহস, কর্মদক্ষতা, সেই পরিকল্পনা তার ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা স্বাধীনতাই চায়নি, যারা আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রই চায়নি, তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। সেই সঙ্গে তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ ছিল। যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারকে হত্যা করল। আমরা পরিবার হারিয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তো তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্নকেই হারিয়েছে।

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয়

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছিলেন এই ঘুণে ধরা সমাজ পরিবর্তন করতে। চেয়েছিলেন সেই ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশ আমলে গড়ে তোলা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও আধা ঔপনিবেশিক শক্তি তথা পাকিস্তানের মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাত গড়ে ওঠা যে শাসন ব্যবস্থা, সেগুলো ভেঙে দিয়ে তৃণমূলের মানুষকে শক্তিশালী করতে। গ্রামের মানুষের কাছে তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার পৌঁছে দিতে চেয়েছেন জাতির পিতা। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে তিনি দেশকে গড়ে তুলছিলেন। তার ভরসা ছিল একমাত্র মানুষ। তিনি বলেছিলেন- আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। সেই মাটি-মানুষ দিয়েই তিনি দেশ গড়ে তুলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ (১০ ডিসেম্বর) নিয়ে। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে। সেটা আমি বলতে চাই না। সেখানে যেতে হলো।

তিনি বলেন, এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার সাথে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান। সব অতিরা এক জায়গায় হয়ে, আতি-পাতি নেতা হয়ে, তারা নাকি একেবারে ক্ষমতা থেকে আমাদের উৎখাত করবে।

আওয়ামী লীগকে উৎখাত সহজ নয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা আমি বলে দিতে চাই। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল, এত সহজ নয়।

তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতাকে বা কেউ যদি ভোট চুরি করে- তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো সেটা আওয়ামী লীগ পারে, এটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বার বার। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা নিজের দলে করি। দেশেও গণতন্ত্র চর্চা করি। বর্তমান সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।

২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বল্প আসনে পাওয়া বিএনপির ভরাডুবি এবং আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তুলতে পারে না। বিএনপি কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিটে ২৯টা, বাই ইলেকশনের আরেকটা মিলিয়ে ৩০টা পায়। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। ক্ষমতায় আসার পর জনগণের স্বার্থে কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, আর্থসামাজিক উন্নতি করে জনগণের কল্যাণ সাধন করেছি বলেই আজ জনগণ ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাল্লাহ অব্যাহত থাকবে।

কিছু ভাড়াটে লোক সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার অধীনে দুই দুইটি নির্বাচন। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আর ২০০৬ সালের জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তো বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। বার বার যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, বিতাড়িত, তারা গণতন্ত্রটা চর্চা করলো কবে?
তিনি বলেন, তাদের নিজেদেরই গণতন্ত্র নেই। তাদের দলের কোনো ঠিকানা নেই। তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে, দেশে-বিদেশে বসে সোশ্যাল মিডিয়াতে সারাদিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবে, আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের আগেও ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল জিয়া-এরশাদ, খালেদারা। তারা কেন পারেনি দেশকে উন্নত করতে। তারা আজ গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের জন্ম হয়েছে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে। এরা তো ভাসমান। তাদের বাংলাদেশের প্রতি কেন দরদ থাকবে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ইতিহাসে একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, সেটা ২০০১ সালে। এর আগেও হয়নি, পরেও হয়নি। খালেদার অধীনে দুটি নির্বাচনই বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে, একটা ১৯৯৬ সালে আরেকটি ২০০৭ সালে।

ছবি: ফোকাস বাংলা

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ওয়াদা করেছিল দেশের উন্নতি করবে; আমরাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিলাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম, কমিউনিটি ক্লিনিক করেছিলাম। মানুষের সেবা করাটা যে একটা সরকারি দায়িত্ব, এটা প্রথম ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই মানুষ উপলব্ধি করেছিল।

তিনি বলেন, অন্যদিকে ২০০১-২০০৮ সালে আরেকটি কালো অধ্যায় বাংলাদেশের জীবনে আসে। এরপর ২০০৮-এর যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১। ২০২১ আমরা এ জন্য ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব। কিন্তু সুবর্ণজয়ন্তী যখন আমরা পালন করব, যুদ্ধবিধ্বস্ত যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশকে আমরা আরও এক ধাপ ওপরে নিয়ে যেতে চাই। আল্লাহর রহমতে যে ওয়াদা আওয়ামী লীগ দেয়, সেই ওয়াদা আওয়ামী লীগ রাখে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ২০২১-এ আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করি, তখনই কিন্তু আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। অর্থাৎ, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এক ধাপ ওপরে স্থান করে নিয়েছি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ঘুণেধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে, চেয়েছিলেন ঔপনিবেশিক সময়ের সংস্কার ভেঙে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা তাকে সেই কাজ সম্পন্ন করতে দেয়নি।

তিনি বলেন, আমরা গণতেন্ত্রর চর্চা নিজের দলে করি, দেশেও করি। আজকে নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ইভিএম সবই আমরা চালু করেছি যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। ভোট দিয়ে যে রেজাল্ট আসবে সেটাই মানতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বারবার যারা জনগণের হাতে বিতাড়িত তারা গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে। যাদের নিজেদেরই গণতন্ত্র নেই, তাদের দলের কোনো ঠিকানা নেই। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। তাদের কিছু ভাড়াটে লোক দেশে-বিদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সারাদিন আমাদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে। আর মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছি, তার সবই করছি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছি। আমরা চাই, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গড়ে তুলতে, মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ জীবন দিতে।

আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতা অধ্যাপক মো. আলী আরাফাত, তারানা হালিম, অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, রামেন্দ্র মজুমদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।

নিউজটি শেয়ার করুন

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয় : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৬:৩৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৬ মার্চ গ্রেফতার করে পাকিস্তানের একটি কারাগারে নিয়ে বন্দি করে রেখেছিল। তাকে শুধু বন্দি করেই রাখা হয়নি, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয়েছিল। এমনকি জেলাখানার পাশে কবরও তৈরি করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তি পেয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের (পরিবারের) কাছে আসেননি, বাংলার মাটিতে ফিরে বঙ্গবন্ধু যান মানুষের কাছে, রেসকোর্স ময়দান। লাখো জনতার সামনে তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন কীভাবে, কী নীতি আদর্শে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চলবে। রূপরেখা দিয়েছিলেন দেশ গড়ার।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দেশে ফিরে আসার পরই বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন পূর্ণতা পায়। ওই দিন তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান। সেদিন তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে কথাগুলো বলেছিলেন, একে একে সব করেছিলেন। মাত্র ৯ মাসে সংবিধান দিয়েছিলেন। অথচ, পাকিস্তানের সংবিধান দিতে ১১ বছর লেগেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে কেউ এত দ্রুত গড়ে তুলতে পারেনি। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কেবল বঙ্গবন্ধুর আমলেই ৯ শতাংশের বেশি হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বিদেশি ব্যক্তি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী দেশে দেশে ধরনা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের চাপেই শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র পাঁচ বছর সময় পেয়েছিলেন। আর কয়েকটি বছর যদি তিনি (বঙ্গবন্ধু) হাতে সময় পেতেন, স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারত। সেই সাহস, কর্মদক্ষতা, সেই পরিকল্পনা তার ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা স্বাধীনতাই চায়নি, যারা আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রই চায়নি, তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। সেই সঙ্গে তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ ছিল। যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারকে হত্যা করল। আমরা পরিবার হারিয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তো তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্নকেই হারিয়েছে।

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয়

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছিলেন এই ঘুণে ধরা সমাজ পরিবর্তন করতে। চেয়েছিলেন সেই ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশ আমলে গড়ে তোলা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও আধা ঔপনিবেশিক শক্তি তথা পাকিস্তানের মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাত গড়ে ওঠা যে শাসন ব্যবস্থা, সেগুলো ভেঙে দিয়ে তৃণমূলের মানুষকে শক্তিশালী করতে। গ্রামের মানুষের কাছে তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার পৌঁছে দিতে চেয়েছেন জাতির পিতা। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে তিনি দেশকে গড়ে তুলছিলেন। তার ভরসা ছিল একমাত্র মানুষ। তিনি বলেছিলেন- আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। সেই মাটি-মানুষ দিয়েই তিনি দেশ গড়ে তুলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ (১০ ডিসেম্বর) নিয়ে। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে। সেটা আমি বলতে চাই না। সেখানে যেতে হলো।

তিনি বলেন, এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার সাথে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান। সব অতিরা এক জায়গায় হয়ে, আতি-পাতি নেতা হয়ে, তারা নাকি একেবারে ক্ষমতা থেকে আমাদের উৎখাত করবে।

আওয়ামী লীগকে উৎখাত সহজ নয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা আমি বলে দিতে চাই। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল, এত সহজ নয়।

তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতাকে বা কেউ যদি ভোট চুরি করে- তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো সেটা আওয়ামী লীগ পারে, এটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বার বার। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা নিজের দলে করি। দেশেও গণতন্ত্র চর্চা করি। বর্তমান সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।

২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বল্প আসনে পাওয়া বিএনপির ভরাডুবি এবং আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তুলতে পারে না। বিএনপি কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিটে ২৯টা, বাই ইলেকশনের আরেকটা মিলিয়ে ৩০টা পায়। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। ক্ষমতায় আসার পর জনগণের স্বার্থে কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, আর্থসামাজিক উন্নতি করে জনগণের কল্যাণ সাধন করেছি বলেই আজ জনগণ ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাল্লাহ অব্যাহত থাকবে।

কিছু ভাড়াটে লোক সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার অধীনে দুই দুইটি নির্বাচন। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আর ২০০৬ সালের জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তো বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। বার বার যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, বিতাড়িত, তারা গণতন্ত্রটা চর্চা করলো কবে?
তিনি বলেন, তাদের নিজেদেরই গণতন্ত্র নেই। তাদের দলের কোনো ঠিকানা নেই। তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে, দেশে-বিদেশে বসে সোশ্যাল মিডিয়াতে সারাদিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবে, আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের আগেও ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল জিয়া-এরশাদ, খালেদারা। তারা কেন পারেনি দেশকে উন্নত করতে। তারা আজ গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের জন্ম হয়েছে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে। এরা তো ভাসমান। তাদের বাংলাদেশের প্রতি কেন দরদ থাকবে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ইতিহাসে একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, সেটা ২০০১ সালে। এর আগেও হয়নি, পরেও হয়নি। খালেদার অধীনে দুটি নির্বাচনই বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে, একটা ১৯৯৬ সালে আরেকটি ২০০৭ সালে।

ছবি: ফোকাস বাংলা

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ওয়াদা করেছিল দেশের উন্নতি করবে; আমরাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিলাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম, কমিউনিটি ক্লিনিক করেছিলাম। মানুষের সেবা করাটা যে একটা সরকারি দায়িত্ব, এটা প্রথম ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই মানুষ উপলব্ধি করেছিল।

তিনি বলেন, অন্যদিকে ২০০১-২০০৮ সালে আরেকটি কালো অধ্যায় বাংলাদেশের জীবনে আসে। এরপর ২০০৮-এর যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১। ২০২১ আমরা এ জন্য ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব। কিন্তু সুবর্ণজয়ন্তী যখন আমরা পালন করব, যুদ্ধবিধ্বস্ত যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশকে আমরা আরও এক ধাপ ওপরে নিয়ে যেতে চাই। আল্লাহর রহমতে যে ওয়াদা আওয়ামী লীগ দেয়, সেই ওয়াদা আওয়ামী লীগ রাখে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ২০২১-এ আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করি, তখনই কিন্তু আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। অর্থাৎ, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এক ধাপ ওপরে স্থান করে নিয়েছি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ঘুণেধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে, চেয়েছিলেন ঔপনিবেশিক সময়ের সংস্কার ভেঙে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা তাকে সেই কাজ সম্পন্ন করতে দেয়নি।

তিনি বলেন, আমরা গণতেন্ত্রর চর্চা নিজের দলে করি, দেশেও করি। আজকে নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ইভিএম সবই আমরা চালু করেছি যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। ভোট দিয়ে যে রেজাল্ট আসবে সেটাই মানতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বারবার যারা জনগণের হাতে বিতাড়িত তারা গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে। যাদের নিজেদেরই গণতন্ত্র নেই, তাদের দলের কোনো ঠিকানা নেই। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। তাদের কিছু ভাড়াটে লোক দেশে-বিদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সারাদিন আমাদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে। আর মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছি, তার সবই করছি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছি। আমরা চাই, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গড়ে তুলতে, মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ জীবন দিতে।

আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতা অধ্যাপক মো. আলী আরাফাত, তারানা হালিম, অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, রামেন্দ্র মজুমদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।