ঢাকা ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাকশি রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী শিপন আলীর নানা অনিয়ম, দুর্নীতি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৬৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : 
রেল ভবনের এক কর্মকর্তা কতৃক ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর এক মহিলাকে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ঢাকায় নিজের বাসাবাড়িতে কাজ করানোর ঘটনার রেশ  কাটেনি এখনো। এরই মধ্যে একই রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন রেলওয়ে পাকশী বিভাগের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) মোঃ শিপন আলী।
(এইএন) শিপন আলীর নিজের বোনের ছেলে মোঃ সবুজকে নিজের ক্ষমতাবলে সুকৌশলে রেলের ট্রলি ম্যান হিসেবে যোগদান করান । কিন্তু গত দুই বছর (২৪ মাস) সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থেকেছেন সবুজ। আর কর্মকর্তা মামা এইএন শিপন আলী অপর টলিম্যান বিধানের মাধ্যমে ভাগ্নের বেতন উত্তোলন করিয়েছেন নিয়মিত। নিজের হাত দিয়ে সেই বেতনের টাকা গেছে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ভাগ্নে সবুজের হাতে।
আবার রেলওয়ের কর্মচারীদের দিয়ে নিজেরসহ পারিবারিক কাজ করানো, অফিস না করিয়েই বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাভোগে সহায়তা করা, ট্রলিম্যানদের টিএ বিলের টাকা আত্মসাত, ইচ্ছেমত ওয়েম্যান ও খালাশিদের বদলীসহ হয়রানি করার নানা অভিযোগ রয়েছে এইএন শিপন আলীর বিরুদ্ধে। আর এই দূর্নীতিবাজ এইএনের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দিলেন রেলওয়ের বিতর্কিত ঠিকাদার পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক জহুরুল ইসলাম মালিথা।
রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সরকার দলের পাকশীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আঁতাত করে পাকশি রেলওয়ে কার্যালয়কে অনেকটাই কুক্ষিগত করে রেখেছেন শিপন আলী । সরকারী নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রেলের ক্ষতি হলেও নিজের সুবিধার্থে রাজনৈতিক নেতাদের নানা সুবিধা দিয়ে ইতোমধ্যেই পাকশি রেলওয়ে অফিসের কর্তা বনে গেছেন তিনি। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার সঙ্গে সক্ষতা থাকার সুবাদে দাপট দেখিয়ে নিজ কার্যালয়ে অনেক অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন । এখানে সরকারী নিয়মের চেয়েও বেশী চলে শিপন আলীর তৈরী নিয়ম।
কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলীর বোনের ছেলে মোঃ সবুজকে নিজের ক্ষমতাবলে সুকৌশলে রেলের ট্রলি ম্যান হিসেবে যোগদান করান । কিন্তু যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই গত দুই বছর (২৪ মাস) সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থেকেই তার মাসিক বেতন উত্তোলন করছেন সবুজ। এ অনিয়ম দেখার কেউ নেই!
শুধু সবুজই নয়, ট্রলিম্যানের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার পরও ট্রলিম্যান বিধানকে দিয়ে অফিসের পিয়নের কাজ করাচ্ছেন শিপন আলী। অফিসের কাজের পাশাপাশি তার পারিবারিক নানা কাজেই বিধানকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ট্রলিম্যান জানান, অফিসের নির্ধারিত ট্রলিম্যান না থাকার পরও ট্রলি ম্যানদের নিয়ে এইএন তার পারিবারিক এবং অফিসের কাজ করান যার প্রভাব পড়ে আমাদের উপর। এসময় তারা আরও বলেন, লোকবল সংকটের কারনে আমাদের বেশী বেশী ডিউটি করতে হয়। কিন্তু ডিউটি অনুযায়ী এইএন আমাদের সঠিক মাইলেজ এবং টিএ প্রদান করেন না।
এ বিষয়ে ট্রলিম্যান বিধান বলেন, স্যারের বোনের ছেলে হওয়ার সুবাদে সবুজকে কোন ডিউটি করতে হয়না এবং সে এখানে কখনো আসেও না । তবে এইএন স্যারের নির্দেশেই আমি সবুজের বেতন তুলে স্যারের হাতে এনে দিতাম প্রতি মাসে।
জানতে চাইলে, পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী সত্যতা স্বীকার করে বলেন,  আমার বোনের ছেলে সবুজকে নিয়ে বিতর্কের কারণে তাকে এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সবুজের পরিবর্তে গেদাবাবু নামের একজন অবসর প্রাপ্ত সাবেক রেল কর্মচারীকে অস্থায়ী হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে।
সবুজ নেই তবুও তার নামে গত ২ বছর বেতন উত্তোলন করা হচ্ছে কিভাবে জানতে চাইলে, এইএন শিপন আলী বলেন, যেহেতু সবুজের পরিবর্তে গেদাবাবুকে কাজ করানো হচ্ছে তাই সবুজের নামের বেতনের টাকাটা ট্রলিম্যান বিধানের মাধ্যমে তুলে সেটা গেদা বাবুকে তার পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। তবে ট্রলিম্যানদের টিএ এবং মাইলেজের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে গেদাবাবু বলেন, আমাকে অফিসের প্রয়োজনেই রাখা হয়েছে । তবে আমাকে কারো পরিবর্তে রাখা হয়নি। গেদা বাবুকে তার মাসিক পারিশ্রমিক হিসেবে তিন হাজার টাকা (৩০০০/=) করে দেয়া হয় বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলীর বিরুদ্ধে এত অনিয়ম এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী ডিইএন-২  বীরবল মন্ডল বলেন, আমি সবেমাত্র কয়েক দিন হল এসেছি। তাই এসমস্ত অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে অবশ্যই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।
এদিকে এই সংবাদ সংগ্রহ শেষে কার্যালয়ে গিয়ে  পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলীর বক্তব্য নিয়ে ফেরার পথে পাকশি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জহুরুল মালিথা মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন,  এইএন শিপন আলীর বিরুদ্ধে বা রেলওয়ে অফিসের বিরুদ্ধে কেউ যদি কিছু লিখতে আসে, তবে তাকে চরম প্রতিদান দিতে হবে। আর একান্তই এখানে আসতে চাইলে আমার অনুমতি নিয়েই আসতে হবে বলেও মোবাইলে চরম উদ্ধত্ত্যপূর্ণ আচরণ করেন রেলওয়ের চরম বিতর্কিত ঠিকাদার ও আওয়ামীলীগের এই নেতা।
বা/খ : জই

নিউজটি শেয়ার করুন

পাকশি রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী শিপন আলীর নানা অনিয়ম, দুর্নীতি

আপডেট সময় : ০৬:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : 
রেল ভবনের এক কর্মকর্তা কতৃক ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর এক মহিলাকে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ঢাকায় নিজের বাসাবাড়িতে কাজ করানোর ঘটনার রেশ  কাটেনি এখনো। এরই মধ্যে একই রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন রেলওয়ে পাকশী বিভাগের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) মোঃ শিপন আলী।
(এইএন) শিপন আলীর নিজের বোনের ছেলে মোঃ সবুজকে নিজের ক্ষমতাবলে সুকৌশলে রেলের ট্রলি ম্যান হিসেবে যোগদান করান । কিন্তু গত দুই বছর (২৪ মাস) সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থেকেছেন সবুজ। আর কর্মকর্তা মামা এইএন শিপন আলী অপর টলিম্যান বিধানের মাধ্যমে ভাগ্নের বেতন উত্তোলন করিয়েছেন নিয়মিত। নিজের হাত দিয়ে সেই বেতনের টাকা গেছে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ভাগ্নে সবুজের হাতে।
আবার রেলওয়ের কর্মচারীদের দিয়ে নিজেরসহ পারিবারিক কাজ করানো, অফিস না করিয়েই বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাভোগে সহায়তা করা, ট্রলিম্যানদের টিএ বিলের টাকা আত্মসাত, ইচ্ছেমত ওয়েম্যান ও খালাশিদের বদলীসহ হয়রানি করার নানা অভিযোগ রয়েছে এইএন শিপন আলীর বিরুদ্ধে। আর এই দূর্নীতিবাজ এইএনের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দিলেন রেলওয়ের বিতর্কিত ঠিকাদার পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক জহুরুল ইসলাম মালিথা।
রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সরকার দলের পাকশীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আঁতাত করে পাকশি রেলওয়ে কার্যালয়কে অনেকটাই কুক্ষিগত করে রেখেছেন শিপন আলী । সরকারী নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রেলের ক্ষতি হলেও নিজের সুবিধার্থে রাজনৈতিক নেতাদের নানা সুবিধা দিয়ে ইতোমধ্যেই পাকশি রেলওয়ে অফিসের কর্তা বনে গেছেন তিনি। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার সঙ্গে সক্ষতা থাকার সুবাদে দাপট দেখিয়ে নিজ কার্যালয়ে অনেক অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন । এখানে সরকারী নিয়মের চেয়েও বেশী চলে শিপন আলীর তৈরী নিয়ম।
কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলীর বোনের ছেলে মোঃ সবুজকে নিজের ক্ষমতাবলে সুকৌশলে রেলের ট্রলি ম্যান হিসেবে যোগদান করান । কিন্তু যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই গত দুই বছর (২৪ মাস) সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থেকেই তার মাসিক বেতন উত্তোলন করছেন সবুজ। এ অনিয়ম দেখার কেউ নেই!
শুধু সবুজই নয়, ট্রলিম্যানের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার পরও ট্রলিম্যান বিধানকে দিয়ে অফিসের পিয়নের কাজ করাচ্ছেন শিপন আলী। অফিসের কাজের পাশাপাশি তার পারিবারিক নানা কাজেই বিধানকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ট্রলিম্যান জানান, অফিসের নির্ধারিত ট্রলিম্যান না থাকার পরও ট্রলি ম্যানদের নিয়ে এইএন তার পারিবারিক এবং অফিসের কাজ করান যার প্রভাব পড়ে আমাদের উপর। এসময় তারা আরও বলেন, লোকবল সংকটের কারনে আমাদের বেশী বেশী ডিউটি করতে হয়। কিন্তু ডিউটি অনুযায়ী এইএন আমাদের সঠিক মাইলেজ এবং টিএ প্রদান করেন না।
এ বিষয়ে ট্রলিম্যান বিধান বলেন, স্যারের বোনের ছেলে হওয়ার সুবাদে সবুজকে কোন ডিউটি করতে হয়না এবং সে এখানে কখনো আসেও না । তবে এইএন স্যারের নির্দেশেই আমি সবুজের বেতন তুলে স্যারের হাতে এনে দিতাম প্রতি মাসে।
জানতে চাইলে, পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী সত্যতা স্বীকার করে বলেন,  আমার বোনের ছেলে সবুজকে নিয়ে বিতর্কের কারণে তাকে এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সবুজের পরিবর্তে গেদাবাবু নামের একজন অবসর প্রাপ্ত সাবেক রেল কর্মচারীকে অস্থায়ী হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে।
সবুজ নেই তবুও তার নামে গত ২ বছর বেতন উত্তোলন করা হচ্ছে কিভাবে জানতে চাইলে, এইএন শিপন আলী বলেন, যেহেতু সবুজের পরিবর্তে গেদাবাবুকে কাজ করানো হচ্ছে তাই সবুজের নামের বেতনের টাকাটা ট্রলিম্যান বিধানের মাধ্যমে তুলে সেটা গেদা বাবুকে তার পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। তবে ট্রলিম্যানদের টিএ এবং মাইলেজের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে গেদাবাবু বলেন, আমাকে অফিসের প্রয়োজনেই রাখা হয়েছে । তবে আমাকে কারো পরিবর্তে রাখা হয়নি। গেদা বাবুকে তার মাসিক পারিশ্রমিক হিসেবে তিন হাজার টাকা (৩০০০/=) করে দেয়া হয় বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলীর বিরুদ্ধে এত অনিয়ম এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী ডিইএন-২  বীরবল মন্ডল বলেন, আমি সবেমাত্র কয়েক দিন হল এসেছি। তাই এসমস্ত অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে অবশ্যই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।
এদিকে এই সংবাদ সংগ্রহ শেষে কার্যালয়ে গিয়ে  পাকশী রেলওয়ের উর্ধতন সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলীর বক্তব্য নিয়ে ফেরার পথে পাকশি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জহুরুল মালিথা মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন,  এইএন শিপন আলীর বিরুদ্ধে বা রেলওয়ে অফিসের বিরুদ্ধে কেউ যদি কিছু লিখতে আসে, তবে তাকে চরম প্রতিদান দিতে হবে। আর একান্তই এখানে আসতে চাইলে আমার অনুমতি নিয়েই আসতে হবে বলেও মোবাইলে চরম উদ্ধত্ত্যপূর্ণ আচরণ করেন রেলওয়ের চরম বিতর্কিত ঠিকাদার ও আওয়ামীলীগের এই নেতা।
বা/খ : জই