ঢাকা ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ধার পরিশোধের জন্য নবজাতক চুরি, স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:২৫:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৬৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকার ধামরাইয়ে সাত দিনের নবজাতক শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় জড়িত মো. রুবেল শেখ (৩৫) ও তানিয়া আফরোজ (২৩) দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা অপহরণের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার রুবেল ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। তবে ধারের টাকা পরিশোধের জন্যই সাত দিনের শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেন বলে জানায় এলিট ফোর্স।

শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

শুক্রবার (৩ মার্চ) রাতে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। এ সময় অপহৃত নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন জানান, ভুক্তভোগী মিলি আক্তার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢুলিভিটা বাজারের পাশে থাকার কারণে একই এলাকার ভাড়াটিয়া রুবেল ও তার স্ত্রীর সাথে তার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেফতারকৃত রুবেল মিলি আক্তারকে ফুফু বলে ডাকতেন। তিনি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রুবেল ও তার স্ত্রী ভুক্তভোগীর সাথে দেখা করতে তার বাসায় আসেন। ভুক্তভোগী অসুস্থ থাকায় তার সাত দিনের নবজাতক শিশুকে রুবেল ও তার স্ত্রীর কাছে রেখে ওষুধ কেনার জন্য টাকা আনতে তিনি যে বাসায় কাজ করেন ওই বাসায় যান এবং টাকা নিয়ে ওষুধ কিনতে বাসায় ফিরে আসেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ২০ মিনিট পর বাসায় ফিরে ভুক্তভোগী মিলি আক্তার রুবেল ও তার স্ত্রীকে তার বাসায় নবজাতকসহ তাদের না পেয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেন। পরে ঢুলিভিটা বাজার কমিটির সহায়তায় রুবেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান এবং রুবেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। রুবেল মোবাইল ফোন চালু করলে প্রথমে নবজাতক শিশুকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন বন্ধ করে দেন। পরবর্তী সময়ে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে বুধবার (১ মার্চ) ফোন করে ভুক্তভোগীর কাছে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা ২-৩ মাস যাবত ঢুলিভিটা বাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। রুবেল ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় তিনি ঢুলিভিটা এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কৌশলে মিলি আক্তারের নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তারা ভুক্তভোগীর বাসায় যান। ভুক্তভোগী ওষুধ কিনতে বাইরে গেলে তারা সুযোগ বুঝে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হয়ে যান এবং ধামরাই এলাকা থেকে প্রথমে বাসে করে খুলনায় যান। সেখানে আত্মগোপনের জন্য তারা সুবিধামত ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকেন। পরে খুলনার অদূরে রূপসা নদীর অপর পাশে যশোরের আমতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্নভাবে শিশুটির মাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে নবজাতক শিশুটি তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবেন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার রুবেল খুলনার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। জীবিকার তাগিদে ৭/৮ বছর আগে রাজধানী ঢাকায় আসেন। তিনি পেশায় একজন গামেন্টসকর্মী। পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। রুবেল একাধিক বিবাহ করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও তিনি ইতঃপূর্বে ধর্ষণচেষ্টা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন।

আর গ্রেফতার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিন বছর আগে পরিবারের অমতে রুবেলকে বিয়ে করে ধামরাই ঢুলিভিটা এলাকায় বসবাস করতে থাকেন।

গ্রেফতাররা বিভিন্নভাবে শিশুটির মাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। মায়ের অনুপস্থিতিতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ধার পরিশোধের জন্য নবজাতক চুরি, স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

আপডেট সময় : ০৪:২৫:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকার ধামরাইয়ে সাত দিনের নবজাতক শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় জড়িত মো. রুবেল শেখ (৩৫) ও তানিয়া আফরোজ (২৩) দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা অপহরণের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার রুবেল ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। তবে ধারের টাকা পরিশোধের জন্যই সাত দিনের শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেন বলে জানায় এলিট ফোর্স।

শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

শুক্রবার (৩ মার্চ) রাতে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। এ সময় অপহৃত নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন জানান, ভুক্তভোগী মিলি আক্তার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢুলিভিটা বাজারের পাশে থাকার কারণে একই এলাকার ভাড়াটিয়া রুবেল ও তার স্ত্রীর সাথে তার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেফতারকৃত রুবেল মিলি আক্তারকে ফুফু বলে ডাকতেন। তিনি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রুবেল ও তার স্ত্রী ভুক্তভোগীর সাথে দেখা করতে তার বাসায় আসেন। ভুক্তভোগী অসুস্থ থাকায় তার সাত দিনের নবজাতক শিশুকে রুবেল ও তার স্ত্রীর কাছে রেখে ওষুধ কেনার জন্য টাকা আনতে তিনি যে বাসায় কাজ করেন ওই বাসায় যান এবং টাকা নিয়ে ওষুধ কিনতে বাসায় ফিরে আসেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ২০ মিনিট পর বাসায় ফিরে ভুক্তভোগী মিলি আক্তার রুবেল ও তার স্ত্রীকে তার বাসায় নবজাতকসহ তাদের না পেয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেন। পরে ঢুলিভিটা বাজার কমিটির সহায়তায় রুবেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান এবং রুবেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। রুবেল মোবাইল ফোন চালু করলে প্রথমে নবজাতক শিশুকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন বন্ধ করে দেন। পরবর্তী সময়ে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে বুধবার (১ মার্চ) ফোন করে ভুক্তভোগীর কাছে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা ২-৩ মাস যাবত ঢুলিভিটা বাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। রুবেল ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় তিনি ঢুলিভিটা এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কৌশলে মিলি আক্তারের নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তারা ভুক্তভোগীর বাসায় যান। ভুক্তভোগী ওষুধ কিনতে বাইরে গেলে তারা সুযোগ বুঝে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হয়ে যান এবং ধামরাই এলাকা থেকে প্রথমে বাসে করে খুলনায় যান। সেখানে আত্মগোপনের জন্য তারা সুবিধামত ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকেন। পরে খুলনার অদূরে রূপসা নদীর অপর পাশে যশোরের আমতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্নভাবে শিশুটির মাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে নবজাতক শিশুটি তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবেন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার রুবেল খুলনার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। জীবিকার তাগিদে ৭/৮ বছর আগে রাজধানী ঢাকায় আসেন। তিনি পেশায় একজন গামেন্টসকর্মী। পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। রুবেল একাধিক বিবাহ করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও তিনি ইতঃপূর্বে ধর্ষণচেষ্টা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন।

আর গ্রেফতার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিন বছর আগে পরিবারের অমতে রুবেলকে বিয়ে করে ধামরাই ঢুলিভিটা এলাকায় বসবাস করতে থাকেন।

গ্রেফতাররা বিভিন্নভাবে শিশুটির মাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। মায়ের অনুপস্থিতিতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।