ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কাজী মকবুল, গাজীপুর প্রতিনিধি :

আজ শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে টঙ্গীতে টানা তিনদিন ব্যাপী তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্বের বিশ্ব এজতেমা শুরু হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ব এজতেমার আয়োজন গত দুইবছর বন্ধ ছিল। তীব্র শীত এবং নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলীগ জামাতের এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারীদের দু’দিন করে পৃথক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এবারের বিশ্ব এজতেমায় দু’টি আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার হতে শুরু হওয়া প্রথম ধাপের এজতেমা রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। প্রথম ধাপের নেতৃত্বে থাকছেন জোবায়ের পন্থী আলেম ওলামা কওমীপন্থী তাবলীগ অনুসারী মুসল্লীগণ। প্রথম ধাপের আখেরী মোনাজাতের পর ৪দিন বিরতি দিয়ে আগামী শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) হতে শুরু হবে পরবর্তী দ্বিতীয় ধাপের তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব এজতেমা। দ্বিতীয় ধাপের নেতৃত্বে থাকছেন সা’দ অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তাবলীগ অনুসারীরা।

এবারের বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নানা বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে শুক্রবারেও টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে ছুটে আসেন। এদিন জুমা’বার হওয়ায় সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার লাখো মুসল্লীর ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই এজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। কোথাও তিল ধারনের জায়গা ছিল না। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লি¬রা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়ক ও গলিগুলোর ওপওে অবস্থান নেন। আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার প্রথম দিনে বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব এজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকে জোবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার বয়ান শুরু হয়েছে। রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের তিনদিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে যথারীতি তাবলীগের ৬ উসূল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে এজতেমার প্রথম পর্বের ৩দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদীর পূর্ব পাশে নির্মিত মিম্বরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং উত্তর-পশ্চিমে বিদেশি মুসল্লিদের কামড়ার পাশে বয়ান মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করবেন। আখেরি মোনাজাত বয়ান মঞ্চ থেকে পরিচালনা করা হবে। এজতেমা মাঠের প্রায় ২বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি।

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) মাওলানা জোবায়ের অনুসারিগণের আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মোনাজাত শেষে জোবায়ের অনুসারিগণ ময়দান ছেড়ে চলে গেলে চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) থেকে মাওলানা সা’দ অনুসারিদের পরিচালনায় দ্বিতীয় ধাপের এজতেমা শুরু হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি মাওলানা সাদ পন্থীদের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব এজতেমা।

জোবায়ের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা জহির ইবনে মুসলিম বলেন, সাথীরা সকাল থেকেই স্রোতের মতো আসতে শুরু করেছেন। আশা করছি এবার রেকর্ডসংখ্যক লোক হবে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। মুসল্লীরা তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান। বিদেশিরা এজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থান নিচ্ছেন।

জুম্মার নামাজে ভিআইপি’দের অংশ গ্রহণ :
শুক্রবার জুম্মার নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হযরত মাওলানা জোবায়ের। এদিন বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এজতেমা ময়দানে জুম্মার নামাজে শরীক হন।

এজতেমার আনুষ্ঠানিকতা :
বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বীরা জানান, শুক্রবার বাদ ফজর উর্দূতে চূড়ান্ত আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বএজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক মূল বয়ান শুরু করেন। এজতেমাস্থলের বয়ান মঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দূতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ প্রায় ২৪টি ভাষায় তা তরজমা করা হচ্ছে। পরে তাবলিগ মারকাজের শূরা সদস্য ও বুজুর্গরা ঈমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে ফজিলতপূর্ণ সারগর্ভ বয়ান করেন।

সকাল ১০টায় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন আলীগড়ের প্রফেসর সানাউল্লাহ। একই সময় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন পাকিস্তানের ড. নওশাদ। মাঠে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন হায়দরাবাদের মাওলানা আকবর শরীফ। আরব জামাতের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। জুমার আগের বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের জুমার খুতবা পড়েন এবং জুমার নামাজের ইমামতি করেন। জুমার পর মাঠের মূলমঞ্চ থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। এরপর বাদ-আসর মাওলানা জোবায়ের আহমদ ও বাদ-মাগরিব ভারতের মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করেন। বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক।
আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরি হবে। তবে এ বছরও এজতেমার দ্বিতীয় দিনে যৌতুকবিহীন বিয়ে হবে না।

বয়ান :
শুক্রবার বয়ানে বলা হয়, ‘পৃথিবীতে ঈমানের মূল্য অনেক বেশি। ঈমানকে মজবুত করতে হলে আমাদের দাওয়াতি কাজে সময় লাগাতে হবে। আমরা যেন আল্লাহপাকের হুকুম মতো সারাজীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। নিজের আমল দিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল যে কাজে খুশি হন তা আমাদের বেশি বেশি করতে হবে। আমাদের সকলের আখেরাতের চিরস্থায়ী জিন্দিগীর জন্য আবাদ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য সেবা :
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বববধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এ হাসপাতালে এজতেমা উপলক্ষ্যে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে মুসুল্লীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিতে এজতেমা ময়দান ও আশেপাশের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ওইসব ক্যাম্প থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরের ন্যায় বিন্যামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

ভ্রাম্যমান আদালত :
বিশ্ব ইজতেমায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি এবং অতিরিক্ত দামে কম্বল বিক্রির অভিযোগে তিন ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচলনা করা হয়।

ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন জানান, পঁচা-বাসি খিচুড়ি বিক্রির অপরাধে মুন্নু সিরামিকস গেইট সংলগ্ন আল্লাহর দান হোটেলকে ৫ হাজার টাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেজুর বিক্রির অপরাধে বিক্রেতাকে এক হাজার টাকা এবং অতিরিক্ত দামে কম্বল বিক্রির অপরাধে বিক্রেতাকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়।

এসময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি না করার জন্য ইজতেমা এলাকার হোটেল মালিক, অন্যান্য খাবার ও ফল বিক্রেতাদেরকে সচেতন করা হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা :
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, জুম্মার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার অনেক মুল্লিরা এখানে আসেন। জু’মার নামাজ উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যানজটমুক্তভাবে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ রাখা হয়েছে। এজতেমার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে পুরো টঙ্গী জুড়ে। এজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় ছিনতাই-পকেটমারসহ অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে টহলটিম রয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। র‌্যাব ও এজতেমা ময়দানে ওয়াচ-টাওয়ার সিসি ক্যামেরা ও কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, রবিবার আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লি ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এজতেমা এলাকায় আসেন। সেটির জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুসুল্লীদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারন করা হয়েছে। শনিবার মধ্যরাত হতে টঙ্গী ব্রীজ, কামারপাড়া ব্রীজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরেরবাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে এজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এজতেমা শেষে যাওয়ার সময় একই ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে আশা করব তারা যেন সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য। রাস্তায় যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ।

এদিকে তিনি বৃহস্পতিবার টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে এজতেমার প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে পুলিশ সদস্যর প্যারেড ব্রিফিংয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে জিএমপি কমিশনার বলেন, বিশ্ব এজতেমার নিরাপত্তায় পুলিশের কারো কোনো রকম অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার চাকরি থাকবে না। এখানে লাখ লাখ মানুষ আসবে এজতেমায় অংশ নিতে। আমাদের কাজ হলো যেকোনো মূল্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, মুসল্লিদের যাতায়তের জন্য বিশেষ ট্রেন, পর্যাপ্ত বিআরটিসি বাস ও লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো এজতেমা ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এজন্য পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এজতেমা মাঠে মোতায়েন রয়েছে। তিনি জানান, এজতেমায় আগত মুসল্লিদের চলাচলের জন্য প্রবেশ পথে আর্চওয়ে ও ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ খাবার ও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন ৩০টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

বিদেশী মুসল্লি :
পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, এজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিন আমেরিকা, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৮০টি দেশের প্রায় দুই হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।

কন্ট্রোল রুম :
বিশ্ব এজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা ও মুসল্লিদের খেদমতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের (ডেসকো) পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এজতেমার মুরুব্বীদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে এজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ী ভাবে এজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

 

বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

আপডেট সময় : ০৬:৩৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩

কাজী মকবুল, গাজীপুর প্রতিনিধি :

আজ শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে টঙ্গীতে টানা তিনদিন ব্যাপী তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্বের বিশ্ব এজতেমা শুরু হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ব এজতেমার আয়োজন গত দুইবছর বন্ধ ছিল। তীব্র শীত এবং নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলীগ জামাতের এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারীদের দু’দিন করে পৃথক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এবারের বিশ্ব এজতেমায় দু’টি আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার হতে শুরু হওয়া প্রথম ধাপের এজতেমা রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। প্রথম ধাপের নেতৃত্বে থাকছেন জোবায়ের পন্থী আলেম ওলামা কওমীপন্থী তাবলীগ অনুসারী মুসল্লীগণ। প্রথম ধাপের আখেরী মোনাজাতের পর ৪দিন বিরতি দিয়ে আগামী শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) হতে শুরু হবে পরবর্তী দ্বিতীয় ধাপের তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব এজতেমা। দ্বিতীয় ধাপের নেতৃত্বে থাকছেন সা’দ অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তাবলীগ অনুসারীরা।

এবারের বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নানা বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে শুক্রবারেও টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে ছুটে আসেন। এদিন জুমা’বার হওয়ায় সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার লাখো মুসল্লীর ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই এজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। কোথাও তিল ধারনের জায়গা ছিল না। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লি¬রা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়ক ও গলিগুলোর ওপওে অবস্থান নেন। আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার প্রথম দিনে বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব এজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকে জোবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার বয়ান শুরু হয়েছে। রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের তিনদিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে যথারীতি তাবলীগের ৬ উসূল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে এজতেমার প্রথম পর্বের ৩দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদীর পূর্ব পাশে নির্মিত মিম্বরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং উত্তর-পশ্চিমে বিদেশি মুসল্লিদের কামড়ার পাশে বয়ান মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করবেন। আখেরি মোনাজাত বয়ান মঞ্চ থেকে পরিচালনা করা হবে। এজতেমা মাঠের প্রায় ২বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি।

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) মাওলানা জোবায়ের অনুসারিগণের আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মোনাজাত শেষে জোবায়ের অনুসারিগণ ময়দান ছেড়ে চলে গেলে চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) থেকে মাওলানা সা’দ অনুসারিদের পরিচালনায় দ্বিতীয় ধাপের এজতেমা শুরু হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি মাওলানা সাদ পন্থীদের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব এজতেমা।

জোবায়ের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা জহির ইবনে মুসলিম বলেন, সাথীরা সকাল থেকেই স্রোতের মতো আসতে শুরু করেছেন। আশা করছি এবার রেকর্ডসংখ্যক লোক হবে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। মুসল্লীরা তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান। বিদেশিরা এজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থান নিচ্ছেন।

জুম্মার নামাজে ভিআইপি’দের অংশ গ্রহণ :
শুক্রবার জুম্মার নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হযরত মাওলানা জোবায়ের। এদিন বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এজতেমা ময়দানে জুম্মার নামাজে শরীক হন।

এজতেমার আনুষ্ঠানিকতা :
বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বীরা জানান, শুক্রবার বাদ ফজর উর্দূতে চূড়ান্ত আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বএজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক মূল বয়ান শুরু করেন। এজতেমাস্থলের বয়ান মঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দূতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ প্রায় ২৪টি ভাষায় তা তরজমা করা হচ্ছে। পরে তাবলিগ মারকাজের শূরা সদস্য ও বুজুর্গরা ঈমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে ফজিলতপূর্ণ সারগর্ভ বয়ান করেন।

সকাল ১০টায় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন আলীগড়ের প্রফেসর সানাউল্লাহ। একই সময় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন পাকিস্তানের ড. নওশাদ। মাঠে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন হায়দরাবাদের মাওলানা আকবর শরীফ। আরব জামাতের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। জুমার আগের বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের জুমার খুতবা পড়েন এবং জুমার নামাজের ইমামতি করেন। জুমার পর মাঠের মূলমঞ্চ থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। এরপর বাদ-আসর মাওলানা জোবায়ের আহমদ ও বাদ-মাগরিব ভারতের মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করেন। বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক।
আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরি হবে। তবে এ বছরও এজতেমার দ্বিতীয় দিনে যৌতুকবিহীন বিয়ে হবে না।

বয়ান :
শুক্রবার বয়ানে বলা হয়, ‘পৃথিবীতে ঈমানের মূল্য অনেক বেশি। ঈমানকে মজবুত করতে হলে আমাদের দাওয়াতি কাজে সময় লাগাতে হবে। আমরা যেন আল্লাহপাকের হুকুম মতো সারাজীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। নিজের আমল দিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল যে কাজে খুশি হন তা আমাদের বেশি বেশি করতে হবে। আমাদের সকলের আখেরাতের চিরস্থায়ী জিন্দিগীর জন্য আবাদ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য সেবা :
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বববধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এ হাসপাতালে এজতেমা উপলক্ষ্যে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে মুসুল্লীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিতে এজতেমা ময়দান ও আশেপাশের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ওইসব ক্যাম্প থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরের ন্যায় বিন্যামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

ভ্রাম্যমান আদালত :
বিশ্ব ইজতেমায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি এবং অতিরিক্ত দামে কম্বল বিক্রির অভিযোগে তিন ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচলনা করা হয়।

ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন জানান, পঁচা-বাসি খিচুড়ি বিক্রির অপরাধে মুন্নু সিরামিকস গেইট সংলগ্ন আল্লাহর দান হোটেলকে ৫ হাজার টাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেজুর বিক্রির অপরাধে বিক্রেতাকে এক হাজার টাকা এবং অতিরিক্ত দামে কম্বল বিক্রির অপরাধে বিক্রেতাকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়।

এসময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি না করার জন্য ইজতেমা এলাকার হোটেল মালিক, অন্যান্য খাবার ও ফল বিক্রেতাদেরকে সচেতন করা হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা :
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, জুম্মার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার অনেক মুল্লিরা এখানে আসেন। জু’মার নামাজ উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যানজটমুক্তভাবে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ রাখা হয়েছে। এজতেমার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে পুরো টঙ্গী জুড়ে। এজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় ছিনতাই-পকেটমারসহ অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে টহলটিম রয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। র‌্যাব ও এজতেমা ময়দানে ওয়াচ-টাওয়ার সিসি ক্যামেরা ও কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, রবিবার আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লি ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এজতেমা এলাকায় আসেন। সেটির জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুসুল্লীদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারন করা হয়েছে। শনিবার মধ্যরাত হতে টঙ্গী ব্রীজ, কামারপাড়া ব্রীজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরেরবাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে এজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এজতেমা শেষে যাওয়ার সময় একই ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে আশা করব তারা যেন সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য। রাস্তায় যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ।

এদিকে তিনি বৃহস্পতিবার টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে এজতেমার প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে পুলিশ সদস্যর প্যারেড ব্রিফিংয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে জিএমপি কমিশনার বলেন, বিশ্ব এজতেমার নিরাপত্তায় পুলিশের কারো কোনো রকম অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার চাকরি থাকবে না। এখানে লাখ লাখ মানুষ আসবে এজতেমায় অংশ নিতে। আমাদের কাজ হলো যেকোনো মূল্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, মুসল্লিদের যাতায়তের জন্য বিশেষ ট্রেন, পর্যাপ্ত বিআরটিসি বাস ও লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো এজতেমা ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এজন্য পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এজতেমা মাঠে মোতায়েন রয়েছে। তিনি জানান, এজতেমায় আগত মুসল্লিদের চলাচলের জন্য প্রবেশ পথে আর্চওয়ে ও ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ খাবার ও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন ৩০টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

বিদেশী মুসল্লি :
পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, এজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিন আমেরিকা, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৮০টি দেশের প্রায় দুই হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।

কন্ট্রোল রুম :
বিশ্ব এজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা ও মুসল্লিদের খেদমতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের (ডেসকো) পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এজতেমার মুরুব্বীদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে এজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ী ভাবে এজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

 

বা/খ: জই