ঢাকা ০৫:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভাসমান ডেরায় ২৬ বছর বসবাস

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৪২:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩
  • / ৪৬৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// জালাল উদ্দিন, সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি //

‘আমি একা কোথাও যেতে পারিনা। দীর্ঘদিন আগে অজ্ঞাত অসুখে আমার দুটি পা কেঁটে ফেলতে হয়েছে। তিন শতক জায়গার ওপর আছে একটি বাড়ি, তাতে ছেলেদেরই জায়গা হয় না। তিন ছেলে চার মেয়ের সংসার ছিল আমার। ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই।তারা সবাই তাদেরমত ব্যাস্ত। দু’পা হারিয়ে আজ ২৬ বছর হলো পানিতেই বসবাস করছি।’ কথাগুলো বলছিলেন পাবনার বেড়ার কৈটোলা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৬০)।

সিরাজুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অজ্ঞাত রোগে সিরাজুল ইসলাম দুটি পা হারান ছাব্বিশ বছর আগে। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেড়ার কৈটোলা পাম্পিং স্টেশনের পাশে কাগেশ্বরী নদীতে প্লাস্টিকের তেলের ড্রামের ওপর ভাসমান ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি। নদীতে মাছ শিকার করে চলছে তার জীবনজীবিকা। ভাসমান জীবনই মানিয়ে নিয়েছেন তিনি।

সিরাজুল ইসলাম জানান, এক সময় সাত সন্তান নিয়ে সুখেই দিন যাপন করতেন তিনি। হঠাৎ করে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। অজ্ঞাত এক রোগে পচন ধরে দু’পায়ে।বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের দারস্ত হয়েও কোন কাজ হয়নি তার।পরে এলাকাবাসীর সাহায্য সহযোগীতায় পা দুটি কেটে ফেলেন। অভাবের সংসারে তখন সবার কাছে বোঝা হয়ে ওঠেন তিনি। পেটে ভাত জোটেনা এক বেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে দিন পার করেন তিনি। দু’পা বিহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটি সরকারি সহায়তা হিসেবে পান প্রতিবন্ধী ভাতা। এ টাকা দিয়ে ওষুধও কেনা হয়না।

সিরাজুলের ভাষ্য, আমি আল্লাহর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, কেননা আল্লাহ শুধু আমার পা দুটোই নিয়েছেন, হাত তো আর নেননি। হাত আছে বলেই আজ কিছু একটা করে দু’মুঠো ভাত খেতে পারি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমরা প্রায় ছাব্বিশ বছর দেখছি সিরাজুল এভাবে নদীতে বসবাস করছে।আমরা যখন গাছের নিচে ছায়ায় বসে কথা বলি সিরাজ মিয়া তখন নৌকা নিয়ে এগিয়ে এসে কথা বলে। স্থায়ীভাবে বসবাস করার একটু জায়গা আর ঘর এবং কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা হলে তার জন্য ভালো হয়।

সিরাজুলের স্ত্রী জয়নব বেগম বলেন, অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তাকে দেখভাল করতে কষ্ট হয়। প্রকৃতির ডাকে শৌচাগারে নেওয়া যায়না। এখানে কয়েক জন মিলে প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ঝুপড়ি ঘড় বানিয়ে দিয়েছে। সে এখানেই থাকেন।’

কৈটোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন উদ্দিন বলেন, সিরাজুল ইসলামকে সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা করবেন। ঘড় বরাদ্দের কোন প্রকল্প আসলে সিরাজুলকে দেওয়া হবে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোহা. সবুর আলী বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভাসমান ডেরায় ২৬ বছর বসবাস

আপডেট সময় : ০৩:৪২:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩

// জালাল উদ্দিন, সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি //

‘আমি একা কোথাও যেতে পারিনা। দীর্ঘদিন আগে অজ্ঞাত অসুখে আমার দুটি পা কেঁটে ফেলতে হয়েছে। তিন শতক জায়গার ওপর আছে একটি বাড়ি, তাতে ছেলেদেরই জায়গা হয় না। তিন ছেলে চার মেয়ের সংসার ছিল আমার। ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই।তারা সবাই তাদেরমত ব্যাস্ত। দু’পা হারিয়ে আজ ২৬ বছর হলো পানিতেই বসবাস করছি।’ কথাগুলো বলছিলেন পাবনার বেড়ার কৈটোলা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৬০)।

সিরাজুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অজ্ঞাত রোগে সিরাজুল ইসলাম দুটি পা হারান ছাব্বিশ বছর আগে। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেড়ার কৈটোলা পাম্পিং স্টেশনের পাশে কাগেশ্বরী নদীতে প্লাস্টিকের তেলের ড্রামের ওপর ভাসমান ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি। নদীতে মাছ শিকার করে চলছে তার জীবনজীবিকা। ভাসমান জীবনই মানিয়ে নিয়েছেন তিনি।

সিরাজুল ইসলাম জানান, এক সময় সাত সন্তান নিয়ে সুখেই দিন যাপন করতেন তিনি। হঠাৎ করে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। অজ্ঞাত এক রোগে পচন ধরে দু’পায়ে।বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের দারস্ত হয়েও কোন কাজ হয়নি তার।পরে এলাকাবাসীর সাহায্য সহযোগীতায় পা দুটি কেটে ফেলেন। অভাবের সংসারে তখন সবার কাছে বোঝা হয়ে ওঠেন তিনি। পেটে ভাত জোটেনা এক বেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে দিন পার করেন তিনি। দু’পা বিহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটি সরকারি সহায়তা হিসেবে পান প্রতিবন্ধী ভাতা। এ টাকা দিয়ে ওষুধও কেনা হয়না।

সিরাজুলের ভাষ্য, আমি আল্লাহর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, কেননা আল্লাহ শুধু আমার পা দুটোই নিয়েছেন, হাত তো আর নেননি। হাত আছে বলেই আজ কিছু একটা করে দু’মুঠো ভাত খেতে পারি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমরা প্রায় ছাব্বিশ বছর দেখছি সিরাজুল এভাবে নদীতে বসবাস করছে।আমরা যখন গাছের নিচে ছায়ায় বসে কথা বলি সিরাজ মিয়া তখন নৌকা নিয়ে এগিয়ে এসে কথা বলে। স্থায়ীভাবে বসবাস করার একটু জায়গা আর ঘর এবং কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা হলে তার জন্য ভালো হয়।

সিরাজুলের স্ত্রী জয়নব বেগম বলেন, অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তাকে দেখভাল করতে কষ্ট হয়। প্রকৃতির ডাকে শৌচাগারে নেওয়া যায়না। এখানে কয়েক জন মিলে প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ঝুপড়ি ঘড় বানিয়ে দিয়েছে। সে এখানেই থাকেন।’

কৈটোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন উদ্দিন বলেন, সিরাজুল ইসলামকে সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা করবেন। ঘড় বরাদ্দের কোন প্রকল্প আসলে সিরাজুলকে দেওয়া হবে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোহা. সবুর আলী বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।