ঢাকা ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের গর্ব

মো: হায়দার আলী
  • আপডেট সময় : ১২:৪৬:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
  • / ৪৮৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
সে যাই হউক কি বিষয়ে লিখব, তা চিন্তা করছিলাম, পরে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের একটি সম্পর্কে  লিখবো চিন্তাভাবনা করলাম। এ বিষয়ে লিখার জন্য চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আমার স্ত্রী মোসাঃ জোহরুন নেসা মারাত্বকভাবে অসুস্থ্য হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২ ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে।  অসুস্থ হওয়ার কারণে লিখার সময়ও ছিল না, মানষিক অবস্থাও ভাল ছিল না। তাই এখন আল্লাহর  নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম।
এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য। বাংলা ও বাঙালির অহংকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একদিকে অনন্ত প্রেম, অন্যদিকে বিদ্রোহ। কী কবিতায়, কী গানে, উপন্যাসে, গল্পে সর্বত্রই মানবমুক্তি প্রেমময় বাণী ও দ্রোহের বাণী। দুই-ই ঝঙ্কৃত হয়েছে জাতীয় কবি নজরুলের সৃষ্টিতে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা, কুসংস্কার, হীনম্মন্যতার বিরুদ্ধেও শিখিয়েছেন রুখে দাঁড়াতে। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে ১৮৯৯) এক ঝড়ের রাতে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহান এই প্রতিভা। চরম দারিদ্র্য ও বহু বাধা অতিক্রম করে একসময় তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন। কবিতায় বিদ্রোহী সুরের জন্য তার পরিচিতি বিদ্রোহী কবি। জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জাতীয় কবি নজরুল দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও ছিলেন অসাম্য, অসুন্দর ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অক্লান্ত বিদ্রোহী চির উন্নত শির। বাংলা কাব্যে এক নতুন যুগের স্রষ্টা নজরুল পরাধীন ব্রিটিশ ভারতে মুক্তির বাণী বয়ে এনেছিলেন তার কাব্যে। সূচনা করেছিলেন এক নতুন যুগের। ‹অগ্নিবীণা›, ‹বিষের বাঁশী› আর ‹ভাঙ্গার গান› ‘যৌবনের জয়গান’ গেয়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি গোটা উপমহাদেশের মানুষকে। ১৯২১ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে সে সময়ে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছেন। ব্রিটিশ বিরোধী কবিতার জন্য করেছিলেন কারাবরণ। কিন্তু কখনোই ঔপনিবেশিক শাসনের কাছে মাথা নত করেননি। ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য উজ্জ্বীবিত করতে বারবার গেয়েছেন, বলবীর, বল উন্নত মম শির। শির নেহারি আমারি নতশির, ওই শিখর হিমাদ্রির। বাংলা গানের জগতে নজরুল সুর ও বাণীর ক্ষেত্রে ঘটিয়েছেন এক অনন্য বিপ্লব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে ঘোষণা করা হয় জাতীয় কবি হিসেবে। ১৯৭৬ সালে মৃত্যু বরণ করলে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি লিখেছিলেন- “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে হতে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।
জাতীয়ভাবে নজরুল রজজয়ন্তী পালনসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংগঠন দিনটিকে স্মরণ করবে নানা আয়োজনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে নজরুলের মাজারে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবিকে নিয়ে নিবন্ধ। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান মালা।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপি (২৫ থেকে ২৭ মে) অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। আজ বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে। এছাড়াও ময়মনসিংহ, জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান।
অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। নজরুলের সাম্যবাদ নিয়ে এ আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন ‘মুক্ত আসর’।
উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগাল থেকে ৩২ জন নজরুল গবেষক, লেখক ও নজরুল সংগীত শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিও কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছেন।
প্রেমের, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে ভারতবাসীকে জাগিয়ে দিয়েছিল। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহী কবিতে। সামরাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে কবি লিখে গেছেন অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান।
চির প্রেমের কবি নজরুল। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রুপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই তিনি অনায়াসে বলে গেছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কম মানুষই আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সম্পর্কে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পরতে পারেন।
বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মত। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভুত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙ্গিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে।
কোন সঞ্জীবনি মন্ত্রে তিনি উচ্চকন্ঠে বলতে পারেন ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ অথবা মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না /অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের  বস্তুনিষ্ঠ জীবনী লেখার ইচ্ছে অনেক দিনের, অনেকেই লিখেছেন  কিন্তু আমার  সময় হয়ে উঠেনি। বর্ণাঢ্য কবিজীবনকে সব শ্রেণির পাঠকের জন্য সহজ করে, প্রামাণ্যতা অক্ষুণœ রেখে উপস্থাপনের চেষ্টা মাত্র।  তাঁর নজরুল জীবনকথা (প্রথমা প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ ২০১৬, ২য় মুদ্রণ, মার্চ ২০১৭) বইয়ে। ৩২টি অধ্যায়ে সাতাত্তর বছরের এক মহাজীবনকে তিনি ধাপে ধাপে বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেছেন।
নজরুলের জন্মগ্রাম চুরুলিয়ার নিকটবর্তী সাঁওতাল পরগনার বিদ্রোহী প্রতিবেশকে লেখক বিদ্রোহী নজরুলের প্রাথমিক চেতনাভূমি হিসেবে শনাক্ত করেন: ‘নজরুলের জন্মের দশ বছর আগেই এই অঞ্চলে ঘটে মুন্ডা বিদ্রোহ। এসব বিদ্রোহের গল্প ও গান চুরুলিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চলের, বিশেষ করে একটু বেশি বয়সী মানুষের মুখে মুখে ফিরত। বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ছোটবেলায় এসব লড়াই-সংগ্রামের গল্প শুনেছেন বলে মনে হয়। তাঁর মনের গঠনে নিশ্চয়ই তা কমবেশি প্রভাব ফেলেছিল।
শিয়ারশোল স্কুলের দুজন শিক্ষক-সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল ও হাফিজ নূরন্নবীর কথা আমাদের বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেন লেখক; যাঁদের কাছ থেকে হিন্দুপুরাণ ও মুসলিম ঐতিহ্যের সমন্বয়ী সুর উপহার পেয়েছেন কবি।
এ বছরের ডিসেম্বরে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার শতবর্ষ পূর্ণ হবে। ১০০ বছর আগে এই কবিতা লেখার সেই স্মরণীয় রজনী যেন ছবির মতো অক্ষরে এঁকেছেন মোরশেদ শফিউল হাসান: ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির যে ঘরটিতে নজরুল ও মুজফফর আহমদ থাকতেন, সেখানে বসেই ১৯২১ সালের বড়দিনের ছুটির সময় এক রাতে নজরুল তাঁর “বিদ্রোহী” কবিতাটি লেখেন। কবিতাটি তিনি প্রথমে লেখেন পেনসিল দিয়ে। সেকালে বলপেন এমনকি ফাউন্টেন পেনেরও চল ছিল না। দোয়াতে বারবার কলম ডুবিয়ে লিখতে হতো। মুজফফর আহমদের মতে, এভাবে লিখতে গিয়ে পাছে তাঁর ভাবনায় ছেদ পড়ে, তাই নজরুল পেনসিল দিয়েই পুরো কবিতাটি লিখেছিলেন।’
এ বছর নজরুলের কুমিল্লা আগমনেরও শতবর্ষ। তার জীবন ও সৃষ্টিতে ‘কুমিল্লা’ এক বিশিষ্ট অধ্যায় হয়ে আছে। ১৯২১ সালে কয়েক দফা কুমিল্লা আগমন ও অবস্থান, দুই ভুবনের দুই নারীনার্গিস ও প্রমীলার সঙ্গে সহৃদয় সংযোগের পাশাপাশি তৎকালীন কুমিল্লার বিপ্লবী আবহে লেখক তুলে ধরেছেন নজরুল ইসলামকে:
‘সময়টা তখন অসহযোগ আন্দোলনের। মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সারা দেশে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সে আন্দোলনের ঢেউ ত্রিপুরার মহকুমা শহর কুমিল্লাতেও এসে লেগেছে। নজরুলকেও এ সময় রাজনৈতিক নানা সভা-মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেল। মিছিলের সামনে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে নিজের লেখা গান গাইতে গাইতে শহর প্রদক্ষিণ করছেন তিনি। সেই গানের কথা ছিল:
ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও!
ফিরে চাও ওগো পুরবাসী
সন্তান দ্বারে উপবাসী…’
লেখক নজরুলের জীবনী লিখতে গিয়ে তাঁর সমসাময়িক কাল সম্পর্কেও সম্পূর্ণ সচেতন। তাই ধূমকেতু পত্রিকায় ১৯২২-এর ১৩ অক্টোবর ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়ে লেখা নজরুলের সম্পাদকীয় প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি উর্দু কবি ও রাজনীতিক হসরত মোহানির প্রসঙ্গ, যিনি এর আগে ১৯২১-এর ডিসেম্বরে একই দাবি উত্থাপন করেছিলেন: ‘যত দূর জানা যায়, বাঙলা দেশে নজরুলই প্রথম, এমনকি সমগ্র ভারতবর্ষেও মওলানা হসরত মোহানির পর দ্বিতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, যিনি প্রকাশ্যে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানান।
হুগলিতে বসবাসকালে হুগলি, নৈহাটির শ্রমিকদের কবিতা পড়ে শোনানো, তাঁদের শ্রান্তি বিনোদনের জন্য বাংলা ও হিন্দি গান গাওয়া, চটকল শ্রমিকদের ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলে নামার তথ্য প্রমাণ করে নজরুল শুধু লেখাতেই নয়, বাস্তবেও ছিলেন মাটির কাছাকাছি কবি। ১৯২৭ সালে গণ-বাণী পত্রিকায় ‘অন্তর-ন্যাশনাল সঙ্গীত’ শিরোনামে শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিক সংগীতের নজরুল-কৃত বাংলা রূপান্তর প্রকাশ পায়: ‘জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত/ জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত।
নজরুলের প্রাণছোঁয়া অনুবাদ বিষয়ে লেখকের পর্যবেক্ষণ: ‘এই অনুবাদটি করার সময় নজরুল ইউজেন পত্তিয়েরের লেখা মূল ফরাসি গানটির কিংবা তার ইংরেজি বা অন্য কোনো অনুবাদের নোটেশন বা স্বরলিপি দেখার সুযোগ পাননি। তার পরও নজরুলের অনুবাদ সম্পর্কে মুজফফর আহমদ বলেছেন: “বাংলা ভাষায় সর্বোৎকৃষ্ট তো বটেই, আমার বিশ্বাস ভারতীয় ভাষাগুলিতে যতসব অনুবাদ হয়েছে সে-সবের সেরা”।
নজরুল-জীবনের অনেক অজ্ঞাত বা স্বল্পজ্ঞাত তথ্যের সমাহার এই বই। যেমন ১৯২৯ সালে এক কৃষক সম্মেলনে কুষ্টিয়া সফরকালে চারণকবি মুকুন্দ দাসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ও সখ্যের বিবরণ পাই: ‘নজরুলের কুষ্টিয়া অবস্থানকালীন কুমারখালীতে তাকে একটি সংবর্ধনা দেওয়া হয়। চারণকবি মুকুন্দ দাস সে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনার উত্তরে দেওয়া বক্তৃতায় নজরুল মুকুন্দ দাসকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, “যাঁরা গান বা বক্তৃতা দ্বারা দেশের জাগরণ আনতে চেষ্টা করেন তারা সকলেই চারণ। আপনি, আমি, আমরা সবাই চারণ, তবে আপনি আমাদের সম্রাট, অর্থাৎ চারণসম্রাট”।
বাংলা গানের বুলবুল নজরুলের সংগীতজীবন নিয়ে তিনি বিশদ ও মনোহর আলোচনা করেছেন। নজরুলের রাগরাগিণীর তত্ত্বীয় প্রসঙ্গের সমান্তরালে অনায়াসে আসে ১৯৩৪ সালে কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে ‘কলগীতি’ নামে নজরুলের গ্রামোফোন যন্ত্র ও রেকর্ড বিক্রির দোকান খোলার অনুষঙ্গ। দাবা খেলার আমুদে খতিয়ানের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার গুরুদায়িত্ব পালনের কথাও। রঙ্গমঞ্চের নজরুলও থাকেননি অনালোচিত। নজরুল জীবনকথায় পাই সর্বত্রগামী এমন নজরুলকে:
‘নজরুলের লেখা গীতিনাট্য মধুবালার অভিনয় দিয়েই ১৯৪০-এর দশকের গোড়ায় নাট্যভারতী থিয়েটার তার যাত্রা শুরু করে। এতে গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন হরিমতী ও রাধারাণী দেবী। মধুবালা যে চল্লিশ রজনী চলেছিল, তা এই গানগুলোর আকর্ষণেই।
এই বইয়ে কিছু প্রচলিত ভ্রান্তি দূর করেছেন মোরশেদ শফিউল হাসান। ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’ শিরোনামে ১৯৪১-এর এপ্রিলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির রজতজয়ন্তী উৎসবে প্রদত্ত সভাপতির অভিভাষণকে অনেকেই তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ বা বক্তৃতা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। তবে নজরুল জীবনকথায় লেখক জানাচ্ছেন, এর কয়েক মাস পর ১৯৪১-এর সেপ্টেম্বরে হাওড়ায় রবীন্দ্র-স্মরণ অনুষ্ঠানে এবং একই সালের ২৯ নভেম্বর হাজী মোহাম্মদ মুহসীনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভাতেও তিনি বক্তৃতা প্রদান করেন।
এরপর ৩৫ বছরের নিস্তব্ধতা। নজরুল বেঁচেছিলেন ১৯৭৬ পর্যন্ত কিন্তু ১৯৪২ থেকেই তার অসুস্থতার শুরু। লেখক এই সময়কালে নজরুলের চিকিৎসা তৎপরতা এবং ১৯৪৭-এ বিভক্ত বাংলার দুই অংশে নজরুলচর্চার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন। একদিকে কায়েমি স্বার্থবাদী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর খ-িত নজরুলকে সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধিতে ব্যবহারের চেষ্টা আর অন্যদিকে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে পূর্ব বাংলার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-পাড়া-মহল্লায় ‘রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তজয়ন্তী’ পালনের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনা শাণিত করার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
১৯৭২ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ‘জ্যৈষ্ঠের ঝড়’ নজরুল কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আসেন। ঝোড়ো জীবনের শেষভাগে ঢাকায় অবস্থান, সংবর্ধনা ও কবিকে ঘিরে জনতার বিপুল আগ্রহের কথা সবিস্তার এসেছে বইয়ের শেষ দুই অধ্যায়ে। ঢাকার বাইরে কবিকে প্রদত্ত দুটো সংবর্ধনার কৌতূহলোদ্দীপক বিবরণ দিয়েছেন লেখক:
১৯৭৪ সালেই ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইলে ও নারায়ণগঞ্জেও কবিকে দুটি সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল সেখানকার “শাপলা” নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রণেশ দাশগুপ্ত, অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সেদিন কবিকে দেখতে আসা মানুষের ভিড়ের চাপে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের দেয়াল ভেঙে পড়েছিল।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১২ই ভাদ্র ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নজরুল।
কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
কবি নজরুল তার ৭৭ বছরের জীবনকালের ৩৪ বছরই ছিলেন নির্বাক (১৯৪২-১৯৭৬)। বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম, অভাব-অনটন, নানা প্রতিকূলতা, জেলজুলুম ও হুলিয়ার মধ্যেই তাঁর সাহিত্যচর্চার সময় ছিল মাত্র ২৪ বছর (১৯১৯-১৯৪২)।
এই ২৪ বছরে নজরুল সৃষ্টি করে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, সাড়ে ৩ হাজার, মতান্তরে ৭ হাজার গানসহ ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ ও ৩টি উপন্যাস গ্রন্থ, ৩টি নাটক, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৫টি প্রবন্ধ, ২টি কিশোর নাটিকা, ২টি কিশোর কাব্য, ৭টি চলচ্চিত্র কাহিনীসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা।
তাই তো একাধারে তিনি ছিলেন কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, স্বরলিপিকার, গীতিনাট্যকার, গীতালেখ্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, বাদক, সঙ্গীতজ্ঞ ও অভিনেতা।
[লেখক : মোঃ হায়দার আলী, প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গোদাগাড়ী, রাজশাহী। ও সহঃ সাধারন সম্পাদক, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী জেলা শাখা ]
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের গর্ব

আপডেট সময় : ১২:৪৬:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
সে যাই হউক কি বিষয়ে লিখব, তা চিন্তা করছিলাম, পরে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের একটি সম্পর্কে  লিখবো চিন্তাভাবনা করলাম। এ বিষয়ে লিখার জন্য চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আমার স্ত্রী মোসাঃ জোহরুন নেসা মারাত্বকভাবে অসুস্থ্য হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২ ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে।  অসুস্থ হওয়ার কারণে লিখার সময়ও ছিল না, মানষিক অবস্থাও ভাল ছিল না। তাই এখন আল্লাহর  নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম।
এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য। বাংলা ও বাঙালির অহংকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একদিকে অনন্ত প্রেম, অন্যদিকে বিদ্রোহ। কী কবিতায়, কী গানে, উপন্যাসে, গল্পে সর্বত্রই মানবমুক্তি প্রেমময় বাণী ও দ্রোহের বাণী। দুই-ই ঝঙ্কৃত হয়েছে জাতীয় কবি নজরুলের সৃষ্টিতে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা, কুসংস্কার, হীনম্মন্যতার বিরুদ্ধেও শিখিয়েছেন রুখে দাঁড়াতে। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে ১৮৯৯) এক ঝড়ের রাতে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহান এই প্রতিভা। চরম দারিদ্র্য ও বহু বাধা অতিক্রম করে একসময় তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন। কবিতায় বিদ্রোহী সুরের জন্য তার পরিচিতি বিদ্রোহী কবি। জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জাতীয় কবি নজরুল দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও ছিলেন অসাম্য, অসুন্দর ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অক্লান্ত বিদ্রোহী চির উন্নত শির। বাংলা কাব্যে এক নতুন যুগের স্রষ্টা নজরুল পরাধীন ব্রিটিশ ভারতে মুক্তির বাণী বয়ে এনেছিলেন তার কাব্যে। সূচনা করেছিলেন এক নতুন যুগের। ‹অগ্নিবীণা›, ‹বিষের বাঁশী› আর ‹ভাঙ্গার গান› ‘যৌবনের জয়গান’ গেয়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি গোটা উপমহাদেশের মানুষকে। ১৯২১ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে সে সময়ে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছেন। ব্রিটিশ বিরোধী কবিতার জন্য করেছিলেন কারাবরণ। কিন্তু কখনোই ঔপনিবেশিক শাসনের কাছে মাথা নত করেননি। ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য উজ্জ্বীবিত করতে বারবার গেয়েছেন, বলবীর, বল উন্নত মম শির। শির নেহারি আমারি নতশির, ওই শিখর হিমাদ্রির। বাংলা গানের জগতে নজরুল সুর ও বাণীর ক্ষেত্রে ঘটিয়েছেন এক অনন্য বিপ্লব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে ঘোষণা করা হয় জাতীয় কবি হিসেবে। ১৯৭৬ সালে মৃত্যু বরণ করলে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি লিখেছিলেন- “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে হতে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।
জাতীয়ভাবে নজরুল রজজয়ন্তী পালনসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংগঠন দিনটিকে স্মরণ করবে নানা আয়োজনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে নজরুলের মাজারে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবিকে নিয়ে নিবন্ধ। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান মালা।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপি (২৫ থেকে ২৭ মে) অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। আজ বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে। এছাড়াও ময়মনসিংহ, জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান।
অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। নজরুলের সাম্যবাদ নিয়ে এ আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন ‘মুক্ত আসর’।
উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগাল থেকে ৩২ জন নজরুল গবেষক, লেখক ও নজরুল সংগীত শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিও কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছেন।
প্রেমের, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে ভারতবাসীকে জাগিয়ে দিয়েছিল। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহী কবিতে। সামরাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে কবি লিখে গেছেন অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান।
চির প্রেমের কবি নজরুল। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রুপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই তিনি অনায়াসে বলে গেছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কম মানুষই আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সম্পর্কে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পরতে পারেন।
বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মত। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভুত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙ্গিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে।
কোন সঞ্জীবনি মন্ত্রে তিনি উচ্চকন্ঠে বলতে পারেন ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ অথবা মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না /অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের  বস্তুনিষ্ঠ জীবনী লেখার ইচ্ছে অনেক দিনের, অনেকেই লিখেছেন  কিন্তু আমার  সময় হয়ে উঠেনি। বর্ণাঢ্য কবিজীবনকে সব শ্রেণির পাঠকের জন্য সহজ করে, প্রামাণ্যতা অক্ষুণœ রেখে উপস্থাপনের চেষ্টা মাত্র।  তাঁর নজরুল জীবনকথা (প্রথমা প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ ২০১৬, ২য় মুদ্রণ, মার্চ ২০১৭) বইয়ে। ৩২টি অধ্যায়ে সাতাত্তর বছরের এক মহাজীবনকে তিনি ধাপে ধাপে বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেছেন।
নজরুলের জন্মগ্রাম চুরুলিয়ার নিকটবর্তী সাঁওতাল পরগনার বিদ্রোহী প্রতিবেশকে লেখক বিদ্রোহী নজরুলের প্রাথমিক চেতনাভূমি হিসেবে শনাক্ত করেন: ‘নজরুলের জন্মের দশ বছর আগেই এই অঞ্চলে ঘটে মুন্ডা বিদ্রোহ। এসব বিদ্রোহের গল্প ও গান চুরুলিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চলের, বিশেষ করে একটু বেশি বয়সী মানুষের মুখে মুখে ফিরত। বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ছোটবেলায় এসব লড়াই-সংগ্রামের গল্প শুনেছেন বলে মনে হয়। তাঁর মনের গঠনে নিশ্চয়ই তা কমবেশি প্রভাব ফেলেছিল।
শিয়ারশোল স্কুলের দুজন শিক্ষক-সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল ও হাফিজ নূরন্নবীর কথা আমাদের বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেন লেখক; যাঁদের কাছ থেকে হিন্দুপুরাণ ও মুসলিম ঐতিহ্যের সমন্বয়ী সুর উপহার পেয়েছেন কবি।
এ বছরের ডিসেম্বরে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার শতবর্ষ পূর্ণ হবে। ১০০ বছর আগে এই কবিতা লেখার সেই স্মরণীয় রজনী যেন ছবির মতো অক্ষরে এঁকেছেন মোরশেদ শফিউল হাসান: ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির যে ঘরটিতে নজরুল ও মুজফফর আহমদ থাকতেন, সেখানে বসেই ১৯২১ সালের বড়দিনের ছুটির সময় এক রাতে নজরুল তাঁর “বিদ্রোহী” কবিতাটি লেখেন। কবিতাটি তিনি প্রথমে লেখেন পেনসিল দিয়ে। সেকালে বলপেন এমনকি ফাউন্টেন পেনেরও চল ছিল না। দোয়াতে বারবার কলম ডুবিয়ে লিখতে হতো। মুজফফর আহমদের মতে, এভাবে লিখতে গিয়ে পাছে তাঁর ভাবনায় ছেদ পড়ে, তাই নজরুল পেনসিল দিয়েই পুরো কবিতাটি লিখেছিলেন।’
এ বছর নজরুলের কুমিল্লা আগমনেরও শতবর্ষ। তার জীবন ও সৃষ্টিতে ‘কুমিল্লা’ এক বিশিষ্ট অধ্যায় হয়ে আছে। ১৯২১ সালে কয়েক দফা কুমিল্লা আগমন ও অবস্থান, দুই ভুবনের দুই নারীনার্গিস ও প্রমীলার সঙ্গে সহৃদয় সংযোগের পাশাপাশি তৎকালীন কুমিল্লার বিপ্লবী আবহে লেখক তুলে ধরেছেন নজরুল ইসলামকে:
‘সময়টা তখন অসহযোগ আন্দোলনের। মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সারা দেশে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সে আন্দোলনের ঢেউ ত্রিপুরার মহকুমা শহর কুমিল্লাতেও এসে লেগেছে। নজরুলকেও এ সময় রাজনৈতিক নানা সভা-মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেল। মিছিলের সামনে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে নিজের লেখা গান গাইতে গাইতে শহর প্রদক্ষিণ করছেন তিনি। সেই গানের কথা ছিল:
ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও!
ফিরে চাও ওগো পুরবাসী
সন্তান দ্বারে উপবাসী…’
লেখক নজরুলের জীবনী লিখতে গিয়ে তাঁর সমসাময়িক কাল সম্পর্কেও সম্পূর্ণ সচেতন। তাই ধূমকেতু পত্রিকায় ১৯২২-এর ১৩ অক্টোবর ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়ে লেখা নজরুলের সম্পাদকীয় প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি উর্দু কবি ও রাজনীতিক হসরত মোহানির প্রসঙ্গ, যিনি এর আগে ১৯২১-এর ডিসেম্বরে একই দাবি উত্থাপন করেছিলেন: ‘যত দূর জানা যায়, বাঙলা দেশে নজরুলই প্রথম, এমনকি সমগ্র ভারতবর্ষেও মওলানা হসরত মোহানির পর দ্বিতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, যিনি প্রকাশ্যে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানান।
হুগলিতে বসবাসকালে হুগলি, নৈহাটির শ্রমিকদের কবিতা পড়ে শোনানো, তাঁদের শ্রান্তি বিনোদনের জন্য বাংলা ও হিন্দি গান গাওয়া, চটকল শ্রমিকদের ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলে নামার তথ্য প্রমাণ করে নজরুল শুধু লেখাতেই নয়, বাস্তবেও ছিলেন মাটির কাছাকাছি কবি। ১৯২৭ সালে গণ-বাণী পত্রিকায় ‘অন্তর-ন্যাশনাল সঙ্গীত’ শিরোনামে শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিক সংগীতের নজরুল-কৃত বাংলা রূপান্তর প্রকাশ পায়: ‘জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত/ জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত।
নজরুলের প্রাণছোঁয়া অনুবাদ বিষয়ে লেখকের পর্যবেক্ষণ: ‘এই অনুবাদটি করার সময় নজরুল ইউজেন পত্তিয়েরের লেখা মূল ফরাসি গানটির কিংবা তার ইংরেজি বা অন্য কোনো অনুবাদের নোটেশন বা স্বরলিপি দেখার সুযোগ পাননি। তার পরও নজরুলের অনুবাদ সম্পর্কে মুজফফর আহমদ বলেছেন: “বাংলা ভাষায় সর্বোৎকৃষ্ট তো বটেই, আমার বিশ্বাস ভারতীয় ভাষাগুলিতে যতসব অনুবাদ হয়েছে সে-সবের সেরা”।
নজরুল-জীবনের অনেক অজ্ঞাত বা স্বল্পজ্ঞাত তথ্যের সমাহার এই বই। যেমন ১৯২৯ সালে এক কৃষক সম্মেলনে কুষ্টিয়া সফরকালে চারণকবি মুকুন্দ দাসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ও সখ্যের বিবরণ পাই: ‘নজরুলের কুষ্টিয়া অবস্থানকালীন কুমারখালীতে তাকে একটি সংবর্ধনা দেওয়া হয়। চারণকবি মুকুন্দ দাস সে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনার উত্তরে দেওয়া বক্তৃতায় নজরুল মুকুন্দ দাসকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, “যাঁরা গান বা বক্তৃতা দ্বারা দেশের জাগরণ আনতে চেষ্টা করেন তারা সকলেই চারণ। আপনি, আমি, আমরা সবাই চারণ, তবে আপনি আমাদের সম্রাট, অর্থাৎ চারণসম্রাট”।
বাংলা গানের বুলবুল নজরুলের সংগীতজীবন নিয়ে তিনি বিশদ ও মনোহর আলোচনা করেছেন। নজরুলের রাগরাগিণীর তত্ত্বীয় প্রসঙ্গের সমান্তরালে অনায়াসে আসে ১৯৩৪ সালে কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে ‘কলগীতি’ নামে নজরুলের গ্রামোফোন যন্ত্র ও রেকর্ড বিক্রির দোকান খোলার অনুষঙ্গ। দাবা খেলার আমুদে খতিয়ানের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার গুরুদায়িত্ব পালনের কথাও। রঙ্গমঞ্চের নজরুলও থাকেননি অনালোচিত। নজরুল জীবনকথায় পাই সর্বত্রগামী এমন নজরুলকে:
‘নজরুলের লেখা গীতিনাট্য মধুবালার অভিনয় দিয়েই ১৯৪০-এর দশকের গোড়ায় নাট্যভারতী থিয়েটার তার যাত্রা শুরু করে। এতে গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন হরিমতী ও রাধারাণী দেবী। মধুবালা যে চল্লিশ রজনী চলেছিল, তা এই গানগুলোর আকর্ষণেই।
এই বইয়ে কিছু প্রচলিত ভ্রান্তি দূর করেছেন মোরশেদ শফিউল হাসান। ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’ শিরোনামে ১৯৪১-এর এপ্রিলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির রজতজয়ন্তী উৎসবে প্রদত্ত সভাপতির অভিভাষণকে অনেকেই তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ বা বক্তৃতা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। তবে নজরুল জীবনকথায় লেখক জানাচ্ছেন, এর কয়েক মাস পর ১৯৪১-এর সেপ্টেম্বরে হাওড়ায় রবীন্দ্র-স্মরণ অনুষ্ঠানে এবং একই সালের ২৯ নভেম্বর হাজী মোহাম্মদ মুহসীনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভাতেও তিনি বক্তৃতা প্রদান করেন।
এরপর ৩৫ বছরের নিস্তব্ধতা। নজরুল বেঁচেছিলেন ১৯৭৬ পর্যন্ত কিন্তু ১৯৪২ থেকেই তার অসুস্থতার শুরু। লেখক এই সময়কালে নজরুলের চিকিৎসা তৎপরতা এবং ১৯৪৭-এ বিভক্ত বাংলার দুই অংশে নজরুলচর্চার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন। একদিকে কায়েমি স্বার্থবাদী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর খ-িত নজরুলকে সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধিতে ব্যবহারের চেষ্টা আর অন্যদিকে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে পূর্ব বাংলার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-পাড়া-মহল্লায় ‘রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তজয়ন্তী’ পালনের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনা শাণিত করার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
১৯৭২ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ‘জ্যৈষ্ঠের ঝড়’ নজরুল কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আসেন। ঝোড়ো জীবনের শেষভাগে ঢাকায় অবস্থান, সংবর্ধনা ও কবিকে ঘিরে জনতার বিপুল আগ্রহের কথা সবিস্তার এসেছে বইয়ের শেষ দুই অধ্যায়ে। ঢাকার বাইরে কবিকে প্রদত্ত দুটো সংবর্ধনার কৌতূহলোদ্দীপক বিবরণ দিয়েছেন লেখক:
১৯৭৪ সালেই ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইলে ও নারায়ণগঞ্জেও কবিকে দুটি সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল সেখানকার “শাপলা” নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রণেশ দাশগুপ্ত, অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সেদিন কবিকে দেখতে আসা মানুষের ভিড়ের চাপে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের দেয়াল ভেঙে পড়েছিল।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১২ই ভাদ্র ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নজরুল।
কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
কবি নজরুল তার ৭৭ বছরের জীবনকালের ৩৪ বছরই ছিলেন নির্বাক (১৯৪২-১৯৭৬)। বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম, অভাব-অনটন, নানা প্রতিকূলতা, জেলজুলুম ও হুলিয়ার মধ্যেই তাঁর সাহিত্যচর্চার সময় ছিল মাত্র ২৪ বছর (১৯১৯-১৯৪২)।
এই ২৪ বছরে নজরুল সৃষ্টি করে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, সাড়ে ৩ হাজার, মতান্তরে ৭ হাজার গানসহ ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ ও ৩টি উপন্যাস গ্রন্থ, ৩টি নাটক, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৫টি প্রবন্ধ, ২টি কিশোর নাটিকা, ২টি কিশোর কাব্য, ৭টি চলচ্চিত্র কাহিনীসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা।
তাই তো একাধারে তিনি ছিলেন কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, স্বরলিপিকার, গীতিনাট্যকার, গীতালেখ্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, বাদক, সঙ্গীতজ্ঞ ও অভিনেতা।
[লেখক : মোঃ হায়দার আলী, প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গোদাগাড়ী, রাজশাহী। ও সহঃ সাধারন সম্পাদক, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী জেলা শাখা ]
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলা খবর বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)