ঢাকা ০৪:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কটিয়াদীতে ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী আলী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪৩৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে সন্তানকে ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রেখেছেন মা-বাবা। ঘটনাটি উপজেলার চান্দপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের গালিমকারবাগ গ্রামে। শিকলবন্দী ছেলের নাম মোহাম্মদ আলী (৩৫)। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এ অবস্থায় থাকলেও মিলেনি কোন সহায়তা। ফলে নিভৃতে এমন দুর্বিষহ অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে তরতাজা একজন মানুষের জীবন। বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাবার ভয়ে তাকে শিকলবন্দী করে রাখছে বাবা-মা। চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে সে। ছেলের এমন অবস্থায়ও বাবা-মায়ের কাছে চোখের মণি। দরিদ্র পিতা-মাতা সাধ্যমতো যত্নে রাখার চেষ্টা করে তাকে। নিরুপায় হয়ে বাড়িতে শিকলবন্দী করে রেখেছে তাকে। তার চার ভাই এবং তিন বোন ।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর ধরে মোহাম্মদ আলী শিকলবন্দী অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা খালেক, জসিম ও কালাম মিয়া জানান, অনেক কষ্ট করে জীবন পার করছে মোহাম্মদ আলী । তার শিকলবন্দী জীবন দেখে প্রতিবেশীসহ সবার খারাপ লাগে। তবে কিছু করার নেই। সঠিক চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

শিকলবন্দী আলীর পিতা বৃদ্ধ আবুল শহিদ বলেন, ছেলের ৭ বছর বয়স থেকেই ভীন্ন আচরণ করতো। তাকে বিভিন্ন কবিরাজ দেখিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। আমার শুধু বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করতে পারছিনা। কেউ দয়া করে সহায়তা করলে উপকৃত হব। বাধ্য হয়ে তাকে প্রায় ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রেখেছি।মোহাম্মদ আলীর মা বলেন, ছেড়ে দিলে তাকে খুঁজে পেতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। তাকে ছাড়া আমরা থাকতে পারি না। বাধ্য হয়ে সকালে তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির পেছনে বাঁশঝাড়ের কাছে শিকলবন্দী করে রাখি। সন্ধ্যায় তাকে উঠিয়ে নিজ হাতে গোসল করিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। তারপর ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখি। গত ১৪ বছর যাবত এই কাজ আমি করে আসছি। সে যদি মারা যায় তাহলে আমার কাছে থেকে মারা যাক। তবুও তাকে আমি দূরে যেতে দিতে চাই না। আমাদের বয়স হয়েছে, আর কুলিয়ে উঠতে পারছিনা।’

এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাজরীনা তৈয়ব বলেন’এভাবে শিকলবন্দী করে রাখা কোন সমাধান নয়। এই সমস্যার জন্য স্থানীয়ভাবে তার ভালো চিকিৎসা সম্ভব না। তাকে জরুরি মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে সহায়তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক একজন মানুষকে ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রাখা ঠিক না। মিডিয়ার জন্য ঘটনাটি সামনে আসলো। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

কটিয়াদীতে ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী আলী

আপডেট সময় : ০৭:০৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে সন্তানকে ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রেখেছেন মা-বাবা। ঘটনাটি উপজেলার চান্দপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের গালিমকারবাগ গ্রামে। শিকলবন্দী ছেলের নাম মোহাম্মদ আলী (৩৫)। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এ অবস্থায় থাকলেও মিলেনি কোন সহায়তা। ফলে নিভৃতে এমন দুর্বিষহ অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে তরতাজা একজন মানুষের জীবন। বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাবার ভয়ে তাকে শিকলবন্দী করে রাখছে বাবা-মা। চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে সে। ছেলের এমন অবস্থায়ও বাবা-মায়ের কাছে চোখের মণি। দরিদ্র পিতা-মাতা সাধ্যমতো যত্নে রাখার চেষ্টা করে তাকে। নিরুপায় হয়ে বাড়িতে শিকলবন্দী করে রেখেছে তাকে। তার চার ভাই এবং তিন বোন ।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর ধরে মোহাম্মদ আলী শিকলবন্দী অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা খালেক, জসিম ও কালাম মিয়া জানান, অনেক কষ্ট করে জীবন পার করছে মোহাম্মদ আলী । তার শিকলবন্দী জীবন দেখে প্রতিবেশীসহ সবার খারাপ লাগে। তবে কিছু করার নেই। সঠিক চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

শিকলবন্দী আলীর পিতা বৃদ্ধ আবুল শহিদ বলেন, ছেলের ৭ বছর বয়স থেকেই ভীন্ন আচরণ করতো। তাকে বিভিন্ন কবিরাজ দেখিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। আমার শুধু বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করতে পারছিনা। কেউ দয়া করে সহায়তা করলে উপকৃত হব। বাধ্য হয়ে তাকে প্রায় ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রেখেছি।মোহাম্মদ আলীর মা বলেন, ছেড়ে দিলে তাকে খুঁজে পেতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। তাকে ছাড়া আমরা থাকতে পারি না। বাধ্য হয়ে সকালে তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির পেছনে বাঁশঝাড়ের কাছে শিকলবন্দী করে রাখি। সন্ধ্যায় তাকে উঠিয়ে নিজ হাতে গোসল করিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। তারপর ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখি। গত ১৪ বছর যাবত এই কাজ আমি করে আসছি। সে যদি মারা যায় তাহলে আমার কাছে থেকে মারা যাক। তবুও তাকে আমি দূরে যেতে দিতে চাই না। আমাদের বয়স হয়েছে, আর কুলিয়ে উঠতে পারছিনা।’

এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাজরীনা তৈয়ব বলেন’এভাবে শিকলবন্দী করে রাখা কোন সমাধান নয়। এই সমস্যার জন্য স্থানীয়ভাবে তার ভালো চিকিৎসা সম্ভব না। তাকে জরুরি মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে সহায়তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক একজন মানুষকে ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রাখা ঠিক না। মিডিয়ার জন্য ঘটনাটি সামনে আসলো। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।