ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আবাসন ও ইটভাটায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে তিন ফসলী জমি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:০০:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০২৩
  • / ৪৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

পাবনা জেলায় আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। ফসলের মাঠে গড়ে উঠছে নতুন বসতি, ইটভাটা, পুকুর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়ে বিভিন্ন কাজে ফসলি ব্যবহার বেড়েছে চরমাত্রায়। কৃষি জমি সুরক্ষা আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে ফসলি জমির যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে। এভাবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। এতে প্রতিবছর কমছে আবাদি জমি, কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন।
সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের (এসআরডিআই) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্যক গষেণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল পরবর্তী ১২ বছরে দেশে প্রতিবছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ কাজের কারণে প্রতিবছর তিন হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে কৃষিজমি কৃষিকাজ ব্যতীত অন্যকোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্যকোন অকৃষি স্থাপনা কোনভাবে নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ করে একটি নামেমাত্র আইন আছে। তবে সেই আইনের যথাযথ প্রযোগ নেই।
কৃষকের আয়ের উৎস কৃষি জমি হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তিন ফসলি জমিতে দেদারছে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলা ও ১১টি থানা মিলে বৈধ ও অবৈধ মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৯৩টি। এর মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৪০টি। আর অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৫৩টি। বেড়া উপজেলায় ১৬টি ভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ৪টি ভাটা। পাবনা সদর উপজেলায় ৭১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ভাটা ১৫টি। ঈশ্বরদীতে ৫০টি ভাটার মধ্যে বৈধ ভাটা ৫টি। আটঘরিয়া উপজেলায় বৈধ ১টি, অবৈধ ১টি। চাটমোহরে ৬টি ভাটার মধ্যে ৪টি বৈধ। সুজানগরে ১৭টি ভাটার ৯টি বৈধ। ভাঙ্গুড়ায় ৭টির মধ্যে বৈধ ভাটা ২টি। ফরিদপুর ও সাঁথিয়া উপজেলাতে ১১টি করে মোট ২২টি ইটভাটা থাকলেও একটিরও অনুমোদন নেই। আর ইটভাটা মালিকদের দেয়া তথ্যে জেলায় বর্তমানে ২৮০টি ইটভাটা রয়েছে। ধাপে ধাপে টাকা খরচ করে অবৈধ ইটভাটাগুলো চলছে।
ইটভাটা মালিকদের দেয়া তথ্যে জেলায় বর্তমানে ২৮০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে যদি ১০ বিঘা করে জমির লাগে, সেই হিসাবে ২৮০টি ইটভাটা স্থাপনে দুই হাজার ৮০০ বিঘা জমি ব্যবহার করা হয়েছে। আবাসিক এলাকা ও ফসলী জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হৃস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। এছাড়া ইট তৈরির প্রধান উপকরণ বিপুল পরিমান মাটির যোগান দিতে প্রতি বছর ৩০০-৪০০ বিঘা তিন ফসলি জমি পুকুরে পরিনত হচ্ছে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুই হাজার ৩৭১ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পাবনা জেলায় প্রায় ৩১ লাখ মানুষের বাস। জেলায় পাঁচ বছর আগে আবাদি জমি ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর। এখন তা কমে এক লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৭ দশমিক ২৯ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর অকৃষি কাজে কমছে কৃষিজমি।
জানা যায়, প্রভাবশালী মালিকেরা ইটভাটার আশেপাশের জমি ক্রয় করে আবার কোথাও জমির উপরিভাগের মাটি কিনে সেই মাটি কেটে ইট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহার করছে। টপ সয়েল কেটে নেয়ায় কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতা। এভাবে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। ইভাটার কারণে সবচেয়ে দূষিত হচ্ছে বাতাস। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে গাছ, গাছের ফলমুল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ সর্দি-কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাটায় ইট পোড়ানো কয়লা থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বন-মনোক্সাইড নির্গত হয়। এতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। আবার ইটভাটায় কয়লার ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকলেও বেশি লাভের আশায় কয়লার পরিবর্তে অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। নিধন করা হচ্ছে গাছপালা।

 

 

বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মানিক হোসেন আঙুল উঁচিয়ে আলহেরানগর দেখিয়ে বলেন, দু-চোখের সামনে যা দেখছেন তা ছিল দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। ফাঁকে ফাঁকে ছিল হাতেগোনা কয়েকটি গৃহস্তের বাড়ি। আগ্রাসী জমি ব্যবসায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। সড়কের দুপাশে বেশ ক’টি বেসরকারি ক্লিনিক, স্কুল থেকে শুরু করে নানা ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দেখে মনে হয় বাণিজ্যিক এলাকা। ভেতরে তিন ফসলী আবাদি জমির ওপর গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। এই এলাকায় মানুষ বাড়লেও স্থানীয় লোকের দেখা মেলা ভার। এক সময়ের কৃষিপ্রধান আলহেরানগর এলাকায় কমেছে কৃষিকাজ। আশঙ্কাজনক হারে কৃষি জমি সঙ্কুচিত হয়ে প্রসারিত হচ্ছে আলহেরানগরের সীমানা।
পাবনার কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ইটভাটাই সরাসরি কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে। বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুরসহ ৯টি উপজেলায় প্রভাবশালীরা ইটভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা আইন পাশ কাটিয়ে আবাসিক এলাকায় তিন ফসলী জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলছে ভাটাগুলো। প্রতিদিন প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন কায়লা পোড়ানো হচ্ছে ওই সব ভাটায়। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণী জগতে।
মাসুমদিয়ার কৃষক মনসুর আলীরা ৫ ভাই। তাদের আবাদি জমির পরিমান ছিল ১৫ বিঘা। প্রত্যেকে ভাগে তিন বিঘা করে জমি পেয়েছেন। ভাইয়েরা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। ছোট বাড়ীতে এখন আর সংকুলান হচ্ছে না। তাই বসতির জন্য বাধ্য হয়ে বাড়ি করতে হয়েছে আবাদি জমিতে। সময়ের প্রযোজনেই একান্নবর্তী এই পরিবারটি ভেঙে এখন পাঁচ ভাগ হয়েছে। পাকা ধানের হাসির বদলে এখন নতুন ভিটায় শোভা পাচ্ছে আধাপাকা ঘর। বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া গ্রামের কৃষক মনসুর আলীর মতো জেলায় প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে আবাসন। কমছে কৃষি জমি।
পাবনা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মতিন জানান, কৃষিজমি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে প্রধানত কয়েকটি কারণে আর তা হলো-কৃষকের দূরদর্শী জ্ঞনের অভাব, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, ভূমিখেকো ও অসাধু ইটভাটা মালিকদের আগ্রাসন। তিনি বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন অনুয়ায়ী, কৃষি জমি নষ্ট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা এবং অন্যান্য অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এ আইন অমান্য করলে কারাদন্ড, ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে যাদের ৩ থেকে ৫ শতক কৃষিজমি আছে তার অপরিহার্য ক্ষেত্রে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে আইনের বিধান অনুয়ায়ী ভূমি জোনিং মানচিত্র অনুযায়ী তা করতে পারবেন।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাঃ সবুর আলী জানান, দেশে প্রতিদিন শতকরা প্রায় এক শতাংশ হারে কৃষি জমি হৃস পাচ্ছে। পাবনা জলায় তিন ফসলী জমিতে ইটভাটা, বসতবাড়ি ও শিল্প-কারখানা তৈরি হওয়ায় আবাদ বিপর্যয়ের মখে পড়েছে। এছাড়া ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। তিনি বলেন, বালু ও জমির মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

আবাসন ও ইটভাটায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে তিন ফসলী জমি

আপডেট সময় : ০৬:০০:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০২৩

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

পাবনা জেলায় আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। ফসলের মাঠে গড়ে উঠছে নতুন বসতি, ইটভাটা, পুকুর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়ে বিভিন্ন কাজে ফসলি ব্যবহার বেড়েছে চরমাত্রায়। কৃষি জমি সুরক্ষা আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে ফসলি জমির যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে। এভাবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। এতে প্রতিবছর কমছে আবাদি জমি, কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন।
সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের (এসআরডিআই) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্যক গষেণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল পরবর্তী ১২ বছরে দেশে প্রতিবছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ কাজের কারণে প্রতিবছর তিন হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে কৃষিজমি কৃষিকাজ ব্যতীত অন্যকোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্যকোন অকৃষি স্থাপনা কোনভাবে নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ করে একটি নামেমাত্র আইন আছে। তবে সেই আইনের যথাযথ প্রযোগ নেই।
কৃষকের আয়ের উৎস কৃষি জমি হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তিন ফসলি জমিতে দেদারছে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলা ও ১১টি থানা মিলে বৈধ ও অবৈধ মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৯৩টি। এর মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৪০টি। আর অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৫৩টি। বেড়া উপজেলায় ১৬টি ভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ৪টি ভাটা। পাবনা সদর উপজেলায় ৭১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ভাটা ১৫টি। ঈশ্বরদীতে ৫০টি ভাটার মধ্যে বৈধ ভাটা ৫টি। আটঘরিয়া উপজেলায় বৈধ ১টি, অবৈধ ১টি। চাটমোহরে ৬টি ভাটার মধ্যে ৪টি বৈধ। সুজানগরে ১৭টি ভাটার ৯টি বৈধ। ভাঙ্গুড়ায় ৭টির মধ্যে বৈধ ভাটা ২টি। ফরিদপুর ও সাঁথিয়া উপজেলাতে ১১টি করে মোট ২২টি ইটভাটা থাকলেও একটিরও অনুমোদন নেই। আর ইটভাটা মালিকদের দেয়া তথ্যে জেলায় বর্তমানে ২৮০টি ইটভাটা রয়েছে। ধাপে ধাপে টাকা খরচ করে অবৈধ ইটভাটাগুলো চলছে।
ইটভাটা মালিকদের দেয়া তথ্যে জেলায় বর্তমানে ২৮০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে যদি ১০ বিঘা করে জমির লাগে, সেই হিসাবে ২৮০টি ইটভাটা স্থাপনে দুই হাজার ৮০০ বিঘা জমি ব্যবহার করা হয়েছে। আবাসিক এলাকা ও ফসলী জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হৃস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। এছাড়া ইট তৈরির প্রধান উপকরণ বিপুল পরিমান মাটির যোগান দিতে প্রতি বছর ৩০০-৪০০ বিঘা তিন ফসলি জমি পুকুরে পরিনত হচ্ছে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুই হাজার ৩৭১ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পাবনা জেলায় প্রায় ৩১ লাখ মানুষের বাস। জেলায় পাঁচ বছর আগে আবাদি জমি ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর। এখন তা কমে এক লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৭ দশমিক ২৯ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর অকৃষি কাজে কমছে কৃষিজমি।
জানা যায়, প্রভাবশালী মালিকেরা ইটভাটার আশেপাশের জমি ক্রয় করে আবার কোথাও জমির উপরিভাগের মাটি কিনে সেই মাটি কেটে ইট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহার করছে। টপ সয়েল কেটে নেয়ায় কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতা। এভাবে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। ইভাটার কারণে সবচেয়ে দূষিত হচ্ছে বাতাস। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে গাছ, গাছের ফলমুল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ সর্দি-কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাটায় ইট পোড়ানো কয়লা থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বন-মনোক্সাইড নির্গত হয়। এতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। আবার ইটভাটায় কয়লার ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকলেও বেশি লাভের আশায় কয়লার পরিবর্তে অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। নিধন করা হচ্ছে গাছপালা।

 

 

বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মানিক হোসেন আঙুল উঁচিয়ে আলহেরানগর দেখিয়ে বলেন, দু-চোখের সামনে যা দেখছেন তা ছিল দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। ফাঁকে ফাঁকে ছিল হাতেগোনা কয়েকটি গৃহস্তের বাড়ি। আগ্রাসী জমি ব্যবসায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। সড়কের দুপাশে বেশ ক’টি বেসরকারি ক্লিনিক, স্কুল থেকে শুরু করে নানা ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দেখে মনে হয় বাণিজ্যিক এলাকা। ভেতরে তিন ফসলী আবাদি জমির ওপর গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। এই এলাকায় মানুষ বাড়লেও স্থানীয় লোকের দেখা মেলা ভার। এক সময়ের কৃষিপ্রধান আলহেরানগর এলাকায় কমেছে কৃষিকাজ। আশঙ্কাজনক হারে কৃষি জমি সঙ্কুচিত হয়ে প্রসারিত হচ্ছে আলহেরানগরের সীমানা।
পাবনার কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ইটভাটাই সরাসরি কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে। বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুরসহ ৯টি উপজেলায় প্রভাবশালীরা ইটভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা আইন পাশ কাটিয়ে আবাসিক এলাকায় তিন ফসলী জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলছে ভাটাগুলো। প্রতিদিন প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন কায়লা পোড়ানো হচ্ছে ওই সব ভাটায়। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণী জগতে।
মাসুমদিয়ার কৃষক মনসুর আলীরা ৫ ভাই। তাদের আবাদি জমির পরিমান ছিল ১৫ বিঘা। প্রত্যেকে ভাগে তিন বিঘা করে জমি পেয়েছেন। ভাইয়েরা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। ছোট বাড়ীতে এখন আর সংকুলান হচ্ছে না। তাই বসতির জন্য বাধ্য হয়ে বাড়ি করতে হয়েছে আবাদি জমিতে। সময়ের প্রযোজনেই একান্নবর্তী এই পরিবারটি ভেঙে এখন পাঁচ ভাগ হয়েছে। পাকা ধানের হাসির বদলে এখন নতুন ভিটায় শোভা পাচ্ছে আধাপাকা ঘর। বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া গ্রামের কৃষক মনসুর আলীর মতো জেলায় প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে আবাসন। কমছে কৃষি জমি।
পাবনা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মতিন জানান, কৃষিজমি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে প্রধানত কয়েকটি কারণে আর তা হলো-কৃষকের দূরদর্শী জ্ঞনের অভাব, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, ভূমিখেকো ও অসাধু ইটভাটা মালিকদের আগ্রাসন। তিনি বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন অনুয়ায়ী, কৃষি জমি নষ্ট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা এবং অন্যান্য অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এ আইন অমান্য করলে কারাদন্ড, ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে যাদের ৩ থেকে ৫ শতক কৃষিজমি আছে তার অপরিহার্য ক্ষেত্রে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে আইনের বিধান অনুয়ায়ী ভূমি জোনিং মানচিত্র অনুযায়ী তা করতে পারবেন।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাঃ সবুর আলী জানান, দেশে প্রতিদিন শতকরা প্রায় এক শতাংশ হারে কৃষি জমি হৃস পাচ্ছে। পাবনা জলায় তিন ফসলী জমিতে ইটভাটা, বসতবাড়ি ও শিল্প-কারখানা তৈরি হওয়ায় আবাদ বিপর্যয়ের মখে পড়েছে। এছাড়া ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। তিনি বলেন, বালু ও জমির মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
বা/খ: এসআর।