ঢাকা ০৪:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সিরাজগঞ্জের চলনবিলে শুটকি তৈরির ধুম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:০২:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৫৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিশেষ প্রতিনিধি:

উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলে শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের চার শতাধিক শুটকি চাঁতালে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বির্স্তীণ এলাকার বিভিন্ন স্থানে শুটকি উৎপাদনে চাতাল তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

তাড়াশ মহিষলুটির শুটকি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘শুটকি ব্যবসায় অনেক লাভ রয়েছে। তা ছাড়া চলনবিলের মাছের শুটকির চাহিদাও সারাদেশে ব্যাপক। চাতাল গুলোতে টেংরা, পুটি, খলসে,বাতাসী, চেলা, মলা, ঢেলা ,টাকি, গুতম, চিংরী ,টাকি সহ নানা মাছ চাটাইয়ে শুকানোর জন্য ছিটিয়ে রাখা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কানায় কানায় ভরে ওঠে দেশের বৃহত্তম এ বিল ও আশপাশের সব জলাশয়। সে সময়েও সংযুক্ত সব নদ-নদীগুলো থেকে আসা বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ ধরা পড়ে এ বিলে। বর্তমানে বিলের পানি একদম কমে তলাদেশে চলে গেছে। তাই এই সময় বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ ধরা পড়েছে। তাই জেলেরা মাছ ধরে চাতাল মালিকদের কাছে বিক্রি করছে।’

এসব চাঁতালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশীয় প্রজাতির টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, গুতম, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈ, নন্দই, বেলেসহ নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছের শুটকি করা হচ্ছে।

শুটকি উৎপাদনের সময় সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত । এসময় শুটকি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাছের আড়তের আশপাশে চাঁতাল তৈরি করে এসব শুটকি উৎপাদন করেন। প্রতি চাঁতালে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে অবশ্য সংখ্যায় নারী শ্রমিক বেশি। এসব চাঁতালে তৈরি শুটকি এলাকার চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। প্রতিমণ কাঁচা মাছ ৫হাজার’ থেকে ৮ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। পরে প্রতি ৩ কেজি কাঁচা মাছ থেকে ১ কেজি শুটকি তৈরি করা হয়। এসব শুটকি মাছ প্রকারভেদে ২ হাজার টাকা থেকে ১৮ হাজার মণ দরে পাইকারি বিক্রি করেন তারা।

শুটকি ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, বর্ষা  মৌসুমে চলনবিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পরে। সকালে কিংবা বিকেলে এসব মাছ স্থানীয় আড়ত থেকে কিনে আনেন তারা। পরে চাঁতালে নিয়ে শুকিয়ে শুটকি করেন। তবে শহরাঞ্চলে এর দাম একটু বেশি। চলনবিলে শুটকি তৈরি শুরু হলেও তা বাজারজাত করতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। তারা শুটকি তৈরি করে প্যাকেট জাত করে। তারপর শুস্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। আবার কেউ কেউ চাতালে তৈরি শুটকি মাছ গুলো ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে চাতাল থেকেই পাইকারদের নিকট বিক্রি থাকেন।

তাড়াশ উপজেলার মান্নানগর এলাকার জেলে শ্যামল হাওলাদা জানান, শুকনো মৌসুমে তারা ক্ষেতে-খামারে মজুর খেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকায় রাতভর খড়া জাল দিয়ে চলনবিল থেকে মাছ শিকার করেন। অনেকে মাছ শিকারের পর আড়তে বিক্রি করেন। আবার তারা মাছগুলো শুটকির চাঁতালে বিক্রি করেন।

মহিষলুটি বাজারের ব্যবসায়ী আলম প্রামানিক বলেন, এখানে কোন ব্যাংক নেই। ভালো হোটেল নেই। আবাসীক সুযোগ সুবিধা নেই। যেকারনে দুর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ঝামেলায় পড়েন। টাকা নিয়ে ঝুকি থাকে। তাই আমরা সরকারের কাছে এ সকল সমস্যা সমাধানের দাবী জানাই।

শুটকি ব্যবসায়ী তোজাম্মেল বলেন, শুটকি মাছ সংরক্ষনের জন্য শেড দরকার। শেড থাকলে খোলা বাজারে বিক্রির সুবিধা পেতেন। কিন্তু শেড না থাকায় তারা খোলা আকাশের নীচে শুটকি মাছ রাখতে বাধ্য হয়।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অফিসার মশগুল আজাদ জানান, শুধু গতবছরে তাড়াশ উপজেলাতেই ৯৫ মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদন হয়। এবছর চলনবিলে যেহেতু এখনো পানি বেশি আছে। সেহেতু শুটকির উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

সিরাজগঞ্জের চলনবিলে শুটকি তৈরির ধুম

আপডেট সময় : ০১:০২:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধি:

উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলে শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের চার শতাধিক শুটকি চাঁতালে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বির্স্তীণ এলাকার বিভিন্ন স্থানে শুটকি উৎপাদনে চাতাল তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

তাড়াশ মহিষলুটির শুটকি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘শুটকি ব্যবসায় অনেক লাভ রয়েছে। তা ছাড়া চলনবিলের মাছের শুটকির চাহিদাও সারাদেশে ব্যাপক। চাতাল গুলোতে টেংরা, পুটি, খলসে,বাতাসী, চেলা, মলা, ঢেলা ,টাকি, গুতম, চিংরী ,টাকি সহ নানা মাছ চাটাইয়ে শুকানোর জন্য ছিটিয়ে রাখা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কানায় কানায় ভরে ওঠে দেশের বৃহত্তম এ বিল ও আশপাশের সব জলাশয়। সে সময়েও সংযুক্ত সব নদ-নদীগুলো থেকে আসা বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ ধরা পড়ে এ বিলে। বর্তমানে বিলের পানি একদম কমে তলাদেশে চলে গেছে। তাই এই সময় বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ ধরা পড়েছে। তাই জেলেরা মাছ ধরে চাতাল মালিকদের কাছে বিক্রি করছে।’

এসব চাঁতালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশীয় প্রজাতির টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, গুতম, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈ, নন্দই, বেলেসহ নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছের শুটকি করা হচ্ছে।

শুটকি উৎপাদনের সময় সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত । এসময় শুটকি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাছের আড়তের আশপাশে চাঁতাল তৈরি করে এসব শুটকি উৎপাদন করেন। প্রতি চাঁতালে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে অবশ্য সংখ্যায় নারী শ্রমিক বেশি। এসব চাঁতালে তৈরি শুটকি এলাকার চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। প্রতিমণ কাঁচা মাছ ৫হাজার’ থেকে ৮ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। পরে প্রতি ৩ কেজি কাঁচা মাছ থেকে ১ কেজি শুটকি তৈরি করা হয়। এসব শুটকি মাছ প্রকারভেদে ২ হাজার টাকা থেকে ১৮ হাজার মণ দরে পাইকারি বিক্রি করেন তারা।

শুটকি ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, বর্ষা  মৌসুমে চলনবিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পরে। সকালে কিংবা বিকেলে এসব মাছ স্থানীয় আড়ত থেকে কিনে আনেন তারা। পরে চাঁতালে নিয়ে শুকিয়ে শুটকি করেন। তবে শহরাঞ্চলে এর দাম একটু বেশি। চলনবিলে শুটকি তৈরি শুরু হলেও তা বাজারজাত করতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। তারা শুটকি তৈরি করে প্যাকেট জাত করে। তারপর শুস্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। আবার কেউ কেউ চাতালে তৈরি শুটকি মাছ গুলো ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে চাতাল থেকেই পাইকারদের নিকট বিক্রি থাকেন।

তাড়াশ উপজেলার মান্নানগর এলাকার জেলে শ্যামল হাওলাদা জানান, শুকনো মৌসুমে তারা ক্ষেতে-খামারে মজুর খেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকায় রাতভর খড়া জাল দিয়ে চলনবিল থেকে মাছ শিকার করেন। অনেকে মাছ শিকারের পর আড়তে বিক্রি করেন। আবার তারা মাছগুলো শুটকির চাঁতালে বিক্রি করেন।

মহিষলুটি বাজারের ব্যবসায়ী আলম প্রামানিক বলেন, এখানে কোন ব্যাংক নেই। ভালো হোটেল নেই। আবাসীক সুযোগ সুবিধা নেই। যেকারনে দুর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ঝামেলায় পড়েন। টাকা নিয়ে ঝুকি থাকে। তাই আমরা সরকারের কাছে এ সকল সমস্যা সমাধানের দাবী জানাই।

শুটকি ব্যবসায়ী তোজাম্মেল বলেন, শুটকি মাছ সংরক্ষনের জন্য শেড দরকার। শেড থাকলে খোলা বাজারে বিক্রির সুবিধা পেতেন। কিন্তু শেড না থাকায় তারা খোলা আকাশের নীচে শুটকি মাছ রাখতে বাধ্য হয়।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অফিসার মশগুল আজাদ জানান, শুধু গতবছরে তাড়াশ উপজেলাতেই ৯৫ মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদন হয়। এবছর চলনবিলে যেহেতু এখনো পানি বেশি আছে। সেহেতু শুটকির উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছি।