ঢাকা ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সাঁথিয়ায় ৬ বিলে ১০ হাজার বিঘা জমি অনাবাদি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৪:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

পাবনার সাঁথিয়ায় বিল পাড়ের প্রায় ১০ হাজার বিঘা তিন ফসলি জমি পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। এতে চাষিরা প্রায় ৫০ হাজার টন ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে বিল পাড়ের সহস্রাধিক স্বচ্ছল চাষি পরিবার এখন অভাব-অনটনে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এক সময়ের শষ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বিল পাড়ের এসব জমি সারাবছর কচুরিপানা ও ঘাসে ভরে থাকে। ফসলের জমির পরিস্কারের খরচ না ওঠায় ‘পতিত’ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। ফলে এসব উর্বর জমি এখন শুধুই গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলার আর-আতাইকুলা ইউনিয়নের গ্যারকা, বয়সা, পচাশিঙা, মোল্লাগাড়া, ডিবিরগাড়া, মিরধাগাড়ি বিলপাড়ের জমি তিন ফসলি। এক সময় এসব জমিতে ফেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, পাট, ধানসহ নানা ধরনের ফসল ফলানো হতো। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে জমিগুলোতে কচুরিপানা ও বিভিন্ন ঘাসে ছেয়ে গেছে। চাষিরা এক বছর পরিস্কার করলে পরের বছর একই অবস্থা তৈরি হয়। খরচ বাড়ায় তারা চাষাবাদ বন্ধ রেখেছেন। বিল পাড়ের উচু এলাকায় হরেক রকমের ফসল চাষ হচ্ছে। অন্যদিকে নিচু অংশের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিতে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন ঘাসে ছেয়ে আছে। বছরের পর বছর অনাবাদি থাকায় কচুরিপানা ও ঘাসের বড় বড় স্তুপ হয়েছে। এসব উর্বর জমি এখন শুধুই গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

চাষিরা জানান, বর্ষা মৌসুমে এসব জমি প্লাবিত হয়। তখন মরা কচুরিপানা সজীব হয়ে ওঠে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানা নিচু এলাকায় জমতে থাকে। নানা রকম ঘাসে ভরে যায় নিচু জমিগুলো। জমির ঘাস অপসারণ করতে ১৮ থেকে ২০ জন শ্রমিক প্রযোজন। এক জন শ্রমিকের মজুরি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এক বিঘা জমি পরিস্কার করতে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সারা বছর ফসল আবাদ করে বিঘাপ্রতি ১২ হাজার টাকা লাভও থাকে না। তাছাড়া অনেক ফসল চাষ করে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্তও হন। লোকসান এড়াতে এসব জমি পতিত ফেলে রেখেছেন তারা।

মাধপুর নতুনপাড়া গ্রামের কৃষক আজগর আলী বলেন, বিলে আমার চার বিঘা জমি পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি রয়েছে। এতে আমি চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছি। তাই কচুরিপানা পরিস্কার করতে পারছি না। চরপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা জমিতে আটকে থাকে। নিজেদের চেষ্টায় প্রথম এক বছর পরিস্কার করলেও পরে আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় আর পরিস্কার করতে পারিনি।
সোহরাব আলী বলেন, বিলে আমার আট বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। এখন ভ্যানের চাকায় জীবিকা চলে। চাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, বিলে অন্যদের মতো আমার জমিও পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। ফসল আবাদ করতে না পারায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। পদ্মবিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, এক বিঘা জমি থেকে কচুরিপানা পরিস্কার করতে প্রায় ১১-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই টাকা খরচ করার সামর্থ অধিকাংশ কৃষকের নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীন সরদার বলেন, বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন বিল পাড়ের চাষিরা। আমাদের বিল পরিস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে সরকার উদ্যোগ নিয়ে বিলের সব জমি একসঙ্গে পরিস্কার করলে কচুরিপানা নিমূল হতে পারে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী আব্দুল খালেক খান বলেন, জেলার উৎপাদিত ধানের বিরাট অংশ গ্যারকা, বয়সা, পচাশিঙা, মোল্লাগাড়া, ডিবিরগাড়া, মিরধাগাড়িবিল থেকে আসে। কচুরিপানা ও ঘাস জটে খাদ্যশষ্য উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া ঐতিহ্যবাহী বিলগুলো যৌবন হারাচ্ছে। এতে হুমকীর মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। বর্ষা এলেই কৃষকদের মধ্যে কচুরিপানা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। বর্ষার পর তাদের জমি পতিত থাকে।

বিলপাড় এলাকার বাসিন্দা কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুস সালাম বলেন, বেশ কয়েকটি বিলের প্রায় ১ হাজার ৩৩৩ হেক্টর (১০ হাজার বিঘা) জমি ৫ বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। বিঘাপ্রতি ২৫ মণ ধরে প্রতি বছর চাষিরা ১০ হাজার বিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টন ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই হিসেবে চাষিরা গত ৫ বছরে কচুরিপানা জটে ৫০ হাজার টন ফসল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে বিলপাড়ের চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহবান অনুযায়ী সব জায়গায় ফসল উৎপাদন চলমান রাখার জন্য সাঁথিয়ার এ বিলগুলোর জমি চাষযোগ্য করা জরুরি। এ জন্য সরকারিভাবে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হলে কৃষরা এ দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বাড়বে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার ঘোস্বামী বলেন, মাঠকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। পতিত জমির তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব জমি আবাদযোগ্য করার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। তবে কচুরিপানা পরিস্কার করতে অনেক খরচ হবে। এ বিষয়ে চাষিদের আর্থিক সহায়তার চেষ্টা চলছে।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে পতিত জমির তালিকা সংগ্রহ করেছি। চাষিদের আর্থিক সহায়তার জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

সাঁথিয়ায় ৬ বিলে ১০ হাজার বিঘা জমি অনাবাদি

আপডেট সময় : ০৮:৩৪:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি :

পাবনার সাঁথিয়ায় বিল পাড়ের প্রায় ১০ হাজার বিঘা তিন ফসলি জমি পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। এতে চাষিরা প্রায় ৫০ হাজার টন ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে বিল পাড়ের সহস্রাধিক স্বচ্ছল চাষি পরিবার এখন অভাব-অনটনে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এক সময়ের শষ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বিল পাড়ের এসব জমি সারাবছর কচুরিপানা ও ঘাসে ভরে থাকে। ফসলের জমির পরিস্কারের খরচ না ওঠায় ‘পতিত’ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। ফলে এসব উর্বর জমি এখন শুধুই গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলার আর-আতাইকুলা ইউনিয়নের গ্যারকা, বয়সা, পচাশিঙা, মোল্লাগাড়া, ডিবিরগাড়া, মিরধাগাড়ি বিলপাড়ের জমি তিন ফসলি। এক সময় এসব জমিতে ফেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, পাট, ধানসহ নানা ধরনের ফসল ফলানো হতো। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে জমিগুলোতে কচুরিপানা ও বিভিন্ন ঘাসে ছেয়ে গেছে। চাষিরা এক বছর পরিস্কার করলে পরের বছর একই অবস্থা তৈরি হয়। খরচ বাড়ায় তারা চাষাবাদ বন্ধ রেখেছেন। বিল পাড়ের উচু এলাকায় হরেক রকমের ফসল চাষ হচ্ছে। অন্যদিকে নিচু অংশের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিতে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন ঘাসে ছেয়ে আছে। বছরের পর বছর অনাবাদি থাকায় কচুরিপানা ও ঘাসের বড় বড় স্তুপ হয়েছে। এসব উর্বর জমি এখন শুধুই গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

চাষিরা জানান, বর্ষা মৌসুমে এসব জমি প্লাবিত হয়। তখন মরা কচুরিপানা সজীব হয়ে ওঠে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানা নিচু এলাকায় জমতে থাকে। নানা রকম ঘাসে ভরে যায় নিচু জমিগুলো। জমির ঘাস অপসারণ করতে ১৮ থেকে ২০ জন শ্রমিক প্রযোজন। এক জন শ্রমিকের মজুরি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এক বিঘা জমি পরিস্কার করতে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সারা বছর ফসল আবাদ করে বিঘাপ্রতি ১২ হাজার টাকা লাভও থাকে না। তাছাড়া অনেক ফসল চাষ করে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্তও হন। লোকসান এড়াতে এসব জমি পতিত ফেলে রেখেছেন তারা।

মাধপুর নতুনপাড়া গ্রামের কৃষক আজগর আলী বলেন, বিলে আমার চার বিঘা জমি পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি রয়েছে। এতে আমি চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছি। তাই কচুরিপানা পরিস্কার করতে পারছি না। চরপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা জমিতে আটকে থাকে। নিজেদের চেষ্টায় প্রথম এক বছর পরিস্কার করলেও পরে আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় আর পরিস্কার করতে পারিনি।
সোহরাব আলী বলেন, বিলে আমার আট বিঘা জমি পতিত পড়ে আছে। এখন ভ্যানের চাকায় জীবিকা চলে। চাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, বিলে অন্যদের মতো আমার জমিও পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। ফসল আবাদ করতে না পারায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। পদ্মবিলা গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, এক বিঘা জমি থেকে কচুরিপানা পরিস্কার করতে প্রায় ১১-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই টাকা খরচ করার সামর্থ অধিকাংশ কৃষকের নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীন সরদার বলেন, বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন বিল পাড়ের চাষিরা। আমাদের বিল পরিস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে সরকার উদ্যোগ নিয়ে বিলের সব জমি একসঙ্গে পরিস্কার করলে কচুরিপানা নিমূল হতে পারে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী আব্দুল খালেক খান বলেন, জেলার উৎপাদিত ধানের বিরাট অংশ গ্যারকা, বয়সা, পচাশিঙা, মোল্লাগাড়া, ডিবিরগাড়া, মিরধাগাড়িবিল থেকে আসে। কচুরিপানা ও ঘাস জটে খাদ্যশষ্য উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া ঐতিহ্যবাহী বিলগুলো যৌবন হারাচ্ছে। এতে হুমকীর মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। বর্ষা এলেই কৃষকদের মধ্যে কচুরিপানা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। বর্ষার পর তাদের জমি পতিত থাকে।

বিলপাড় এলাকার বাসিন্দা কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুস সালাম বলেন, বেশ কয়েকটি বিলের প্রায় ১ হাজার ৩৩৩ হেক্টর (১০ হাজার বিঘা) জমি ৫ বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। বিঘাপ্রতি ২৫ মণ ধরে প্রতি বছর চাষিরা ১০ হাজার বিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টন ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই হিসেবে চাষিরা গত ৫ বছরে কচুরিপানা জটে ৫০ হাজার টন ফসল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে বিলপাড়ের চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহবান অনুযায়ী সব জায়গায় ফসল উৎপাদন চলমান রাখার জন্য সাঁথিয়ার এ বিলগুলোর জমি চাষযোগ্য করা জরুরি। এ জন্য সরকারিভাবে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হলে কৃষরা এ দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বাড়বে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার ঘোস্বামী বলেন, মাঠকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। পতিত জমির তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব জমি আবাদযোগ্য করার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। তবে কচুরিপানা পরিস্কার করতে অনেক খরচ হবে। এ বিষয়ে চাষিদের আর্থিক সহায়তার চেষ্টা চলছে।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে পতিত জমির তালিকা সংগ্রহ করেছি। চাষিদের আর্থিক সহায়তার জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

বা/খ: এসআর।