ঢাকা ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শরৎকালেই পদ্মা-যমুনার প্লাবনভূমি বড়াল নদী পানি শুন্য হয়ে পড়ছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৯৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম : পদ্মা-যমুনার প্লাবনভূমি চলনবিলের প্রাণ বড়াল নদী শরৎকালেই পানি শুন্য হয়ে পড়ছে। এই নদী রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে ২০৪ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে পাবনার বেড়ার মোহনগঞ্জে যমুনায় মিলিত হয়েছে। চারঘাটে বড়াল নদীর উৎস্য মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করায় বড়াল মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। শরৎকালেই বড়াল সংযুক্ত বিল, নদী ও খাড়ীগুলোর বেশিরভাগ অংশই পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে কমেছে মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও জলজ গুল্মলতা। পানির অভাবে নদী-বিল কেন্দ্রিক ব্যবসা-বানিজ্য ও চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি অর্থনীতির ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

চলনবিলের অভ্যন্তরে অসংখ্য ১৬টি নদী, ৩৯ বিল ও ২২টি খাল বা খাড়ি রয়েছে। এসব বিল ও খাল প্রাকৃতিক। আবার বিল থেকেও ছোট নদীর উৎপত্তি হয়েছে। নদী থেকে খালও হয়েছে। এক কথায় বলা চলে চলনবিল হচ্ছে অসংখ্য স্রোতের জাল। আর এই জালের প্রধান সূত্র হচ্ছে বড়াল নদী। শরৎকালেই চলনবিলের অধিকাংশ নদী-বিল-খাড়ি নব্যতা সংঙ্কটে নৌপথ কেন্দ্রিক ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। বহুলাংশে কমে গেছে মাছ, ঝিনুক, শামুক, কাঁকড়াসহ জলজ প্রাণীর বংশ বিস্তার ও উৎপাদন।

১৯৮৫ সালে চারঘাটে বড়াল নদীর উৎস্য মুখে নির্মাণ করা হয় তিন দরজা বিশিষ্ট স্লুইস গেট। পরে ১৯৯৫-৯৬ সালে নাটোরের আটঘড়ি নামকস্থানে স্লুইস গেট নির্মাণ করে পদ্মা নদী থেকে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া বড়াল
নদী’র স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করা হয়। এই গেইটটি নির্মাণের ফলে দক্ষিণ দিকের অংশে পানি থাকলেও উত্তর দিকের অংশে পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এখানেই বড়াল দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এক ভাগ নন্দকুজা অপর ভাগ বড়াল।

বড়ালের উৎস্য মুখে চারঘাটে স্লুইস গেইট নির্মাণ করায় ভাটির বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায়
নদী অস্তিত্তহীন হয়ে পড়েছে। বনপাড়ার ভাটিতে বড়াল নদীতে তৃতীয় ও চতুর্থ স্লুইস গেইট নির্মাণ করা হয়
ভাঙ্গুড়া এবং চাটমোহরের দহপাড়ার নিকটে। দহপাড়ার নিকটবর্তী স্লুইস গেইটটির উভয় পার্শ্বই শুকিয়ে যায় শুস্ক মওসুমে। অনেকেই নদী দখল করে ঘর-বাড়ি, দোকান-গুদাম উঠিয়েছে। নদীর মধ্যে চাষাবাদ করা হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ করছে।

রাজশাহীর চারঘাট থেকে জন্ম নিয়ে বড়াল নদী নাটোরের গুরুদাসপুরের কাছে আত্রাই নদীতে মিশেছে। এই অংশকে আপার বড়াল বলা হয়। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৮৪ কিলোমিটার। বড়াইগ্রামের আটঘড়ি থেকে বেড়িয়ে বনপাড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া হয়ে শাহাজাদপুরের বাঘাবাড়ী ঘারে ভাটিতে চয়ড়ায় হুড়াসাগর নদের সাথে মিলিত হয়ে যমুনা নদীতে মিশেছে। এই অংশ লোয়ার বড়াল নামে পরিচিত। লোয়ার বড়ালের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। বড়াল নদীর মোট অববাহিকা হচ্ছে এক হাজার ৫৪২ বর্গকিলোমিটার। আপার বড়ালের গড় প্রস্ত ৬০ মিটার, গড় গভীরতা ৫ মিটার। লোয়ার বড়ালে গড় প্রস্ত ১২০ মিটার, গভীরতা ৯ দশমিক ৯০ মিটার। বড়ালের দুটি শাখা নদী হচ্ছে মুসা খা এবং নন্দকুজা। মুসা খাঁ নদীর উৎপত্তি নাটোরের বাগাতিপাড়া হাপানিয়ায়। পাইকপাড়া গিয়ে মুসা খাঁ নদী থেকে উৎপত্তি হয়েছে নারোদ নদীর। এই নদীটি নন্দকুজা নদী হয়ে আত্রাই নদীতে মিশেছে। বড়ালের একটি প্রশাখা নাগর নদী। বড়ালের শাখা নন্দকুজার উৎপত্তি নাটোরের আটঘড়িতে। নদীটি নাটোর হয়ে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈরে আত্রাই নদীর সাথে মিশেছে। নন্দকুজা এবং আত্রাইয়ের মিলিত প্রবাহ গুমানী নাম ধারণ করে চাটমোহরের নুননগরে বড়ালে মিশে বড়াল নামেই বাঘাবাড়ী চলে গেছে। বাঘাবাড়ীর ভাটিতে বড়াল এবং করতোয়ার মিলিত প্রবাহ হুড়াসাগর নাম ধারণ করে ৮ কিলোমিটার ভাটিতে যমুনায় মিলেছে। বড়াল অববাহিকার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

আশি’র দশক পর্যন্ত বড়াল ছিল স্থানীয় যোগাযোগ ও বাণিজ্যের চালিকাশক্তি তেমনি ছিল সংস্কৃতি ও বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র। বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা, বার্জ, জাহাজ, কার্গোজাহাজে পণ্য সামগ্রী আনা-নেয়া হতো বড়াল নদী পথে। চলতো বড় বড় লঞ্চ ও ষ্টিমার। এই অঞ্চলের শতকরা নব্বইভাগ অধিবাসীই ছিল বড়াল নদীর উপর নির্ভরশীল। চারঘাটে স্লুইস গেইট নির্মাণ করার ফলে নদী সংঙ্কুচিত হতে থাকে, পানি প্রবাহ হৃস পায়। এর ফলে পরিবর্তিত হতে থাকে পরিবেশ ও বড়াল পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। বড়াল অববাহিকার অর্থনীতি মূলত কৃষি, মৎস্য ও গবাদীপশুসম্পদ নির্ভর। ধান, চাল, মসুর, খেসারী, সরিষা, মাসকালাই, পাট প্রভৃতি উৎপাদনের জন্য বড়াল অববাহিকার সুখ্যাতি ছিল। নৌপথে বড়াল পাড়ের ফসল যেত চাঁদপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

১৯৬০ এর দশকে বড়ালে যখন পানির প্রবাহ ছিল স্বাভাবিক তখন শুস্ক মওসুমে নদী তীরের জমিতে নদীর পানি পাওয়ার পাম্প দ্বারা সেচ দেয়া হতো। নালা বা খালে পানির প্রবাহ ছিল। তাতে বিলের অভ্যন্তরের জমিতে সেচ দেয়া যেত। নদীতে ক্লোজার নির্মাণ করার পর পানি না থাকায় সেচ হয়েছে শ্যালো বা ডিপ মেশিন নির্ভর। বড়াল নদী অববাহিকায় এখন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদী মরে যাওয়ায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে বিশাল চলনবিলে।

চলনবিলের প্রসিদ্ধ মৎস্য সম্পদ হৃস পেয়েছে। হাঁস পালন কমেছে। বিশাল গোচারণভূমিতে আগের মতো
মাসকালাই ও খেসারী ঘাস জন্মে না। তাতে গবাদীপশু সম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আগের মতো বড়ালে পানি প্রবাহ না থাকায় বিল শুকিয়ে যায়। এতে চাষী ও মৎস্যজীবীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। জেলে সম্প্রদায় এখন বিলুপ্ত প্রায়। মৎস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত চলনবিলে ৭০ থেকে ৭৫ প্রকার মাছ পাওয়া যেত। এখন তার অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির তালিকায় নাম উঠেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শরৎকালেই পদ্মা-যমুনার প্লাবনভূমি বড়াল নদী পানি শুন্য হয়ে পড়ছে

আপডেট সময় : ১২:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২

শফিউল আযম : পদ্মা-যমুনার প্লাবনভূমি চলনবিলের প্রাণ বড়াল নদী শরৎকালেই পানি শুন্য হয়ে পড়ছে। এই নদী রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে ২০৪ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে পাবনার বেড়ার মোহনগঞ্জে যমুনায় মিলিত হয়েছে। চারঘাটে বড়াল নদীর উৎস্য মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করায় বড়াল মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। শরৎকালেই বড়াল সংযুক্ত বিল, নদী ও খাড়ীগুলোর বেশিরভাগ অংশই পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে কমেছে মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও জলজ গুল্মলতা। পানির অভাবে নদী-বিল কেন্দ্রিক ব্যবসা-বানিজ্য ও চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি অর্থনীতির ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

চলনবিলের অভ্যন্তরে অসংখ্য ১৬টি নদী, ৩৯ বিল ও ২২টি খাল বা খাড়ি রয়েছে। এসব বিল ও খাল প্রাকৃতিক। আবার বিল থেকেও ছোট নদীর উৎপত্তি হয়েছে। নদী থেকে খালও হয়েছে। এক কথায় বলা চলে চলনবিল হচ্ছে অসংখ্য স্রোতের জাল। আর এই জালের প্রধান সূত্র হচ্ছে বড়াল নদী। শরৎকালেই চলনবিলের অধিকাংশ নদী-বিল-খাড়ি নব্যতা সংঙ্কটে নৌপথ কেন্দ্রিক ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। বহুলাংশে কমে গেছে মাছ, ঝিনুক, শামুক, কাঁকড়াসহ জলজ প্রাণীর বংশ বিস্তার ও উৎপাদন।

১৯৮৫ সালে চারঘাটে বড়াল নদীর উৎস্য মুখে নির্মাণ করা হয় তিন দরজা বিশিষ্ট স্লুইস গেট। পরে ১৯৯৫-৯৬ সালে নাটোরের আটঘড়ি নামকস্থানে স্লুইস গেট নির্মাণ করে পদ্মা নদী থেকে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া বড়াল
নদী’র স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করা হয়। এই গেইটটি নির্মাণের ফলে দক্ষিণ দিকের অংশে পানি থাকলেও উত্তর দিকের অংশে পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এখানেই বড়াল দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এক ভাগ নন্দকুজা অপর ভাগ বড়াল।

বড়ালের উৎস্য মুখে চারঘাটে স্লুইস গেইট নির্মাণ করায় ভাটির বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায়
নদী অস্তিত্তহীন হয়ে পড়েছে। বনপাড়ার ভাটিতে বড়াল নদীতে তৃতীয় ও চতুর্থ স্লুইস গেইট নির্মাণ করা হয়
ভাঙ্গুড়া এবং চাটমোহরের দহপাড়ার নিকটে। দহপাড়ার নিকটবর্তী স্লুইস গেইটটির উভয় পার্শ্বই শুকিয়ে যায় শুস্ক মওসুমে। অনেকেই নদী দখল করে ঘর-বাড়ি, দোকান-গুদাম উঠিয়েছে। নদীর মধ্যে চাষাবাদ করা হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ করছে।

রাজশাহীর চারঘাট থেকে জন্ম নিয়ে বড়াল নদী নাটোরের গুরুদাসপুরের কাছে আত্রাই নদীতে মিশেছে। এই অংশকে আপার বড়াল বলা হয়। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৮৪ কিলোমিটার। বড়াইগ্রামের আটঘড়ি থেকে বেড়িয়ে বনপাড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া হয়ে শাহাজাদপুরের বাঘাবাড়ী ঘারে ভাটিতে চয়ড়ায় হুড়াসাগর নদের সাথে মিলিত হয়ে যমুনা নদীতে মিশেছে। এই অংশ লোয়ার বড়াল নামে পরিচিত। লোয়ার বড়ালের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। বড়াল নদীর মোট অববাহিকা হচ্ছে এক হাজার ৫৪২ বর্গকিলোমিটার। আপার বড়ালের গড় প্রস্ত ৬০ মিটার, গড় গভীরতা ৫ মিটার। লোয়ার বড়ালে গড় প্রস্ত ১২০ মিটার, গভীরতা ৯ দশমিক ৯০ মিটার। বড়ালের দুটি শাখা নদী হচ্ছে মুসা খা এবং নন্দকুজা। মুসা খাঁ নদীর উৎপত্তি নাটোরের বাগাতিপাড়া হাপানিয়ায়। পাইকপাড়া গিয়ে মুসা খাঁ নদী থেকে উৎপত্তি হয়েছে নারোদ নদীর। এই নদীটি নন্দকুজা নদী হয়ে আত্রাই নদীতে মিশেছে। বড়ালের একটি প্রশাখা নাগর নদী। বড়ালের শাখা নন্দকুজার উৎপত্তি নাটোরের আটঘড়িতে। নদীটি নাটোর হয়ে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈরে আত্রাই নদীর সাথে মিশেছে। নন্দকুজা এবং আত্রাইয়ের মিলিত প্রবাহ গুমানী নাম ধারণ করে চাটমোহরের নুননগরে বড়ালে মিশে বড়াল নামেই বাঘাবাড়ী চলে গেছে। বাঘাবাড়ীর ভাটিতে বড়াল এবং করতোয়ার মিলিত প্রবাহ হুড়াসাগর নাম ধারণ করে ৮ কিলোমিটার ভাটিতে যমুনায় মিলেছে। বড়াল অববাহিকার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

আশি’র দশক পর্যন্ত বড়াল ছিল স্থানীয় যোগাযোগ ও বাণিজ্যের চালিকাশক্তি তেমনি ছিল সংস্কৃতি ও বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র। বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা, বার্জ, জাহাজ, কার্গোজাহাজে পণ্য সামগ্রী আনা-নেয়া হতো বড়াল নদী পথে। চলতো বড় বড় লঞ্চ ও ষ্টিমার। এই অঞ্চলের শতকরা নব্বইভাগ অধিবাসীই ছিল বড়াল নদীর উপর নির্ভরশীল। চারঘাটে স্লুইস গেইট নির্মাণ করার ফলে নদী সংঙ্কুচিত হতে থাকে, পানি প্রবাহ হৃস পায়। এর ফলে পরিবর্তিত হতে থাকে পরিবেশ ও বড়াল পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। বড়াল অববাহিকার অর্থনীতি মূলত কৃষি, মৎস্য ও গবাদীপশুসম্পদ নির্ভর। ধান, চাল, মসুর, খেসারী, সরিষা, মাসকালাই, পাট প্রভৃতি উৎপাদনের জন্য বড়াল অববাহিকার সুখ্যাতি ছিল। নৌপথে বড়াল পাড়ের ফসল যেত চাঁদপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

১৯৬০ এর দশকে বড়ালে যখন পানির প্রবাহ ছিল স্বাভাবিক তখন শুস্ক মওসুমে নদী তীরের জমিতে নদীর পানি পাওয়ার পাম্প দ্বারা সেচ দেয়া হতো। নালা বা খালে পানির প্রবাহ ছিল। তাতে বিলের অভ্যন্তরের জমিতে সেচ দেয়া যেত। নদীতে ক্লোজার নির্মাণ করার পর পানি না থাকায় সেচ হয়েছে শ্যালো বা ডিপ মেশিন নির্ভর। বড়াল নদী অববাহিকায় এখন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদী মরে যাওয়ায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে বিশাল চলনবিলে।

চলনবিলের প্রসিদ্ধ মৎস্য সম্পদ হৃস পেয়েছে। হাঁস পালন কমেছে। বিশাল গোচারণভূমিতে আগের মতো
মাসকালাই ও খেসারী ঘাস জন্মে না। তাতে গবাদীপশু সম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আগের মতো বড়ালে পানি প্রবাহ না থাকায় বিল শুকিয়ে যায়। এতে চাষী ও মৎস্যজীবীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। জেলে সম্প্রদায় এখন বিলুপ্ত প্রায়। মৎস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত চলনবিলে ৭০ থেকে ৭৫ প্রকার মাছ পাওয়া যেত। এখন তার অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির তালিকায় নাম উঠেছে।