ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

রাজশাহীতে নবজাতক চুরির ঘটনায় মোটা অংকের উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩
  • / ৪৬৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
// মাসুদ পারভেজ, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি //
রাজশাহীতে নবজাতক চুরি ঘটনায় সুকৌশলে মামলা গ্রহন ও আসামী গ্রেফতার না করে  মোটা অংকের উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মাদকসহ ডা: রিমনকে আটক করে ঘটনাস্থলে ১ লাখ টাকায় ছেড়ে আসে রাজপাড়া থানা পুলিশ। পরে অবশ্য আইওয়াশের নামে মানবপাচারের মামলা নেয় থানা পুলিশ। রাজপাড়া থানার ওসি অস্থায়ী দ্বায়িত্ব পালনকারী এস আই কাজন নন্দী রয়েল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে উক্ত টাকা গ্রহন করেন তথ্য উপাত্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷
২১ মে (রোববার) লক্ষিপুর রয়েল হাসপাতালে নবজাতক চুরি’র ঘটনায় এমন বাণিজ্য হয়েছে। কয়েক দফায় এস আই কাজল নন্দি’র সঙ্গে বৈঠক শেষে উক্ত ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
অবশ্য উক্ত ঘটনায় নবজাতকের মা, নগরীর তালাইমারী এলাকার সৈয়দা তামান্না আখতার বাদী হয়ে  চারজনকে আসামী করে মামলা করেন।
থানা সুত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া এলাকার রয়েল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা ও অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমনসহ চার জনকে আসামি করা হয়েছে। মানবপাচার আইনে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, তামান্না আখতারের গর্ভে দুটি সন্তান ছিল। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সৈয়দা তামান্না আখতারের প্রসব বেদনা উঠলে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার রয়েল হাসপাতালে যান। এক ঘণ্টা পর রোগীকে ওটি থেকে বের করা হয়। সেখানে ওটিতে নেওয়ার পর রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশনও দেওয়া হয়। এরপর তিনি বাচ্চা প্রসব করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সেই বাচ্চা চুরি করেছে।
সৈয়দ তামান্না আখতার বলেন, আমি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তসত্ত্বা ছিলাম। এর আগেও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। আলট্রাসনোগ্রামে দেখা গেছে যে একটি ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তির পর আমাকে ওটিতে নেওয়া হয়। এর আগে আমার সব কাগজপত্র জমা দিলে আমাকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ওটিতে নেওয়ার পর তারা আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসক ডাক্তার নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, এদিকে দেখেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার পুরো শরীর ঝাঁকি দিচ্ছে। মনে হলো বাচ্চা টেনে বের করে নেওয়া হচ্ছে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি জানতে পারলাম আমার পেটে নাকি কোনো বাচ্চা ছিল না। এই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি কামনা করছি। তৎক্ষনাৎ পুলিশ সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে খালি গায়ে নিজ চেম্বারে মদ পান অবস্থায় ডা: রিমনকে দেখতে পায়। কিন্তু পরক্ষণে পুলিশ সেখান থেকে অজ্ঞাত কারণে চলে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়েল হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়ার চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমন বলেন, রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। তার ভাইয়ের কাছে শুনেছেন তার পেটে দুইটা বাচ্চা ছিল। তাই তিনি অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেন।
তবে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, একজন নারী প্রেগন্যান্সির সব সিম্পটম নিয়ে এখানে এসেছিলেন। তিনি দাবি করেন, রোগীর স্বজনরা কোনো কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। তার কাছে কোনো পরামর্শও নেওয়া হয়নি।
রোগীকে অজ্ঞান রেখে রয়েল হাসপাতালে ওটিতে বসে সিগারেট ও মদ পান করতেছিলো ডা: রিমন।  সে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে। সে সময় সেখানে উপস্থিত হয় রাজপাড়া থানার পুলিশ এস আই কাজল নন্দি। তারাও সেখানে ডা: রিমনকে মদসহ আটক করেন। অজ্ঞাত কারণে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আসামীদের ছেড়ে দেয় বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবার। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, দুটি পাঁচশ’ টাকার বান্ডিলে মোট ১ লক্ষ টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে আসেন পুলিশ। পরে অবশ্য সাংবাদিক ও স্থানীয় লোকজন এবং ভুক্তভোগী পরিবাবের চাপে মামলা নেয় রাজপাড়া থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে কথা বলতে ওসি রাজপাড়া থানার ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, ভারপ্রাপ্ত ওসি এস আই কাজল নন্দি বলেন,  টাকা নেওয়ার বিষয়টি ১০০% মিথ্যা কথা। ঘটনায় ভুক্তভোগী মামলা করেছেন, তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

রাজশাহীতে নবজাতক চুরির ঘটনায় মোটা অংকের উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ 

আপডেট সময় : ০৫:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০২৩
// মাসুদ পারভেজ, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি //
রাজশাহীতে নবজাতক চুরি ঘটনায় সুকৌশলে মামলা গ্রহন ও আসামী গ্রেফতার না করে  মোটা অংকের উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মাদকসহ ডা: রিমনকে আটক করে ঘটনাস্থলে ১ লাখ টাকায় ছেড়ে আসে রাজপাড়া থানা পুলিশ। পরে অবশ্য আইওয়াশের নামে মানবপাচারের মামলা নেয় থানা পুলিশ। রাজপাড়া থানার ওসি অস্থায়ী দ্বায়িত্ব পালনকারী এস আই কাজন নন্দী রয়েল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে উক্ত টাকা গ্রহন করেন তথ্য উপাত্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷
২১ মে (রোববার) লক্ষিপুর রয়েল হাসপাতালে নবজাতক চুরি’র ঘটনায় এমন বাণিজ্য হয়েছে। কয়েক দফায় এস আই কাজল নন্দি’র সঙ্গে বৈঠক শেষে উক্ত ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
অবশ্য উক্ত ঘটনায় নবজাতকের মা, নগরীর তালাইমারী এলাকার সৈয়দা তামান্না আখতার বাদী হয়ে  চারজনকে আসামী করে মামলা করেন।
থানা সুত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া এলাকার রয়েল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা ও অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমনসহ চার জনকে আসামি করা হয়েছে। মানবপাচার আইনে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, তামান্না আখতারের গর্ভে দুটি সন্তান ছিল। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সৈয়দা তামান্না আখতারের প্রসব বেদনা উঠলে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার রয়েল হাসপাতালে যান। এক ঘণ্টা পর রোগীকে ওটি থেকে বের করা হয়। সেখানে ওটিতে নেওয়ার পর রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশনও দেওয়া হয়। এরপর তিনি বাচ্চা প্রসব করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সেই বাচ্চা চুরি করেছে।
সৈয়দ তামান্না আখতার বলেন, আমি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তসত্ত্বা ছিলাম। এর আগেও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। আলট্রাসনোগ্রামে দেখা গেছে যে একটি ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তির পর আমাকে ওটিতে নেওয়া হয়। এর আগে আমার সব কাগজপত্র জমা দিলে আমাকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ওটিতে নেওয়ার পর তারা আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসক ডাক্তার নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, এদিকে দেখেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার পুরো শরীর ঝাঁকি দিচ্ছে। মনে হলো বাচ্চা টেনে বের করে নেওয়া হচ্ছে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি জানতে পারলাম আমার পেটে নাকি কোনো বাচ্চা ছিল না। এই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি কামনা করছি। তৎক্ষনাৎ পুলিশ সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে খালি গায়ে নিজ চেম্বারে মদ পান অবস্থায় ডা: রিমনকে দেখতে পায়। কিন্তু পরক্ষণে পুলিশ সেখান থেকে অজ্ঞাত কারণে চলে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়েল হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়ার চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমন বলেন, রোগীর অবস্থা গুরুতর ছিল। তার ভাইয়ের কাছে শুনেছেন তার পেটে দুইটা বাচ্চা ছিল। তাই তিনি অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেন।
তবে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, একজন নারী প্রেগন্যান্সির সব সিম্পটম নিয়ে এখানে এসেছিলেন। তিনি দাবি করেন, রোগীর স্বজনরা কোনো কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। তার কাছে কোনো পরামর্শও নেওয়া হয়নি।
রোগীকে অজ্ঞান রেখে রয়েল হাসপাতালে ওটিতে বসে সিগারেট ও মদ পান করতেছিলো ডা: রিমন।  সে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে। সে সময় সেখানে উপস্থিত হয় রাজপাড়া থানার পুলিশ এস আই কাজল নন্দি। তারাও সেখানে ডা: রিমনকে মদসহ আটক করেন। অজ্ঞাত কারণে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আসামীদের ছেড়ে দেয় বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবার। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, দুটি পাঁচশ’ টাকার বান্ডিলে মোট ১ লক্ষ টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে আসেন পুলিশ। পরে অবশ্য সাংবাদিক ও স্থানীয় লোকজন এবং ভুক্তভোগী পরিবাবের চাপে মামলা নেয় রাজপাড়া থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে কথা বলতে ওসি রাজপাড়া থানার ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, ভারপ্রাপ্ত ওসি এস আই কাজল নন্দি বলেন,  টাকা নেওয়ার বিষয়টি ১০০% মিথ্যা কথা। ঘটনায় ভুক্তভোগী মামলা করেছেন, তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।