ঢাকা ১২:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মাসিক চুক্তিতেই ঈশ্বরদীতে উৎপাদিত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৫০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩
  • / ৪৪২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
// ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি //
মাসিক চুক্তিতে সবকুল ঠিক রেখেই ঈশ্বরদীতে উৎপাদন হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন। ব্যাগ হিসেবে ছেঁয়ে গেছে বাজার। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে ব্যবহারের পলিথিন উৎপাদনের জন্য ঈশ্বরদীতে কাউকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আর পলিথিন উৎপাদনকারী বলেছেন, পলিথিন উৎপাদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেয়া আছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনসহ সবকুলকে মাসোয়ারার চুক্তিতে ঠিক রেখেই তিনি পলিথিন উৎপাদন করছেন। আর দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এই অবৈধ পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করেই শিল্পপতিষ্ঠান, দামী গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন ঈশ্বরদী শহরের শৈলপাড়ার নওফেল মালিথার ছেলে মোঃ শিপন আলী মালিথা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের শৈলপাড়া এলাকায় নওফেল মালিথার ছেলে শিপন আলী মালিথা নিজ বাড়িতে উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদনের বিশাল কারখানা স্থাপন করেছেন। ভেতর থেকে তালা মেরে প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আর ভেতরে মাসিক কোটি টাকার লক্ষ্য নিয়ে উৎপাদিত হচ্ছে পলিথিন। আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে শিপনের নিযুক্ত করা নজরদারী করা লোকজন। এই কারখানায় শিপন সুপার ১ নং কোয়ালিটি নামে উৎপাদিত পলিথিন ঈশ্বরদীসহ আশেপাশের পাবনা, নাটোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া জেলার উপজেলার হাট বাজার, শফিংমলে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আবাসিক এলাকার মধ্যে অবৈধভাবে পরিবেশ নষ্টকারী পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছে। এলাকার মাটির গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করলে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোকজন এসে কারখানা ঘুরে চলে যান। এরপর পলিথিন কারখানার মালিক শিপন আলী মালিথার লোকজন অভিযোগকারীদের উপর নির্যাতন চালান। এই কারণে ভয়ে এখন আর কেউ শিপন আলী মালিথার পলিথিন কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ভয় পান। কারণ স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে শিপন আলীর রয়েছে মাসিক চুক্তি। এই চুক্তির লেনদেনের কারণেই তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিশেষ সখ্যতা।
পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা শাখার সহকারী পরিচালকের কার্যালয় সুত্র জানায়, শিপন আলী মালিথা নামক এক ব্যক্তি শিপন এন্টারপ্রাইজের নামে গবাদি পশু হাঁস, মুরগি ও মাছের খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ( ফিড মিলস) লাইলনের বস্তার ভেতর ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত “ ইনার লাইনার” পলিথিন উৎপাদনের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। সেই ছাড়পত্র দেখিয়ে তিনি সবজি ও শপিং মলসহ দোকানপাটে ব্যবহার যোগ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন।
সুত্র মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন বন্ধের জন্য প্রায় প্রত্যেক বছরই অভিযান চালনা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতে জেল ও জরিমানা করা হয়। উৎপাদিত পলিথিন জব্দ ও কারখানা সিলগালা করা হয়। কিছুদিন পর আদালত থেকে জামিনে এসে আবার পলিথিন উৎপাদন করেন। এভাবেই তিনি পলিথিন উৎপাদন করে আসছেন।
পলিথিন কারখানার মালিক শিপন আলী মালিথা মুঠোফোনে জানান, পলিথিন উৎপাদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর শাখা থেকে ছাড়পত্র নেওয়া আছে। তার কারখানায় ছোট নয় বড় পলিথিন তৈরী করা হয়। ছোট পলিথিন তিনি ঢাকা থেকে কিনে আনে। সেই পলিথিন স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করেন বলে দাবী করেন শিপন আলী মালিথা।
তবে প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার মধ্যে নিজস্ব ঝামেলা থেকে তার পলিথিন কারখানাতে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়েছে দাবী করে শিপন আলী মালিথা জানান, তার কারখানায় পলিথিন উৎপাদনের ছাড়পত্র থাকায় অভিযানের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জব্দকৃত পলিথিন ফেরতও দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা শাখার পরিদর্শক জিএম নজরুল ইসলাম জানান, পলিথিন কারখানার মালিকের সঙ্গে মাসোয়ারার চুক্তির কারণে অভিযান চালানো হয় না, এটা সঠিক না। মুলত জনবলের সংকটের কারণেই নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা শাখার সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হোসাইন জানান, ঈশ্বরদীতে শিপন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ফিড মিলের বস্তার ভিতরে থাকা বড় পলিথিন তৈরীর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি সেই ছাড়পত্র দেখিয়ে এখন  সরকারীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন করছেন। এই খবরটি জানা ছিলো না। এই বিষয়ে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত টিএম রাহসিন কবির জানান, ঈশ্বরদীতে ভূমির উর্বতা ও পরিবেশ নষ্টকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদনের বিষয়টি জানা ছিলো না। খোঁজ নিয়ে অবশ্যয় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে।
বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

মাসিক চুক্তিতেই ঈশ্বরদীতে উৎপাদিত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন

আপডেট সময় : ০৪:৫০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩
// ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি //
মাসিক চুক্তিতে সবকুল ঠিক রেখেই ঈশ্বরদীতে উৎপাদন হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন। ব্যাগ হিসেবে ছেঁয়ে গেছে বাজার। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে ব্যবহারের পলিথিন উৎপাদনের জন্য ঈশ্বরদীতে কাউকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আর পলিথিন উৎপাদনকারী বলেছেন, পলিথিন উৎপাদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেয়া আছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনসহ সবকুলকে মাসোয়ারার চুক্তিতে ঠিক রেখেই তিনি পলিথিন উৎপাদন করছেন। আর দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এই অবৈধ পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করেই শিল্পপতিষ্ঠান, দামী গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন ঈশ্বরদী শহরের শৈলপাড়ার নওফেল মালিথার ছেলে মোঃ শিপন আলী মালিথা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের শৈলপাড়া এলাকায় নওফেল মালিথার ছেলে শিপন আলী মালিথা নিজ বাড়িতে উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদনের বিশাল কারখানা স্থাপন করেছেন। ভেতর থেকে তালা মেরে প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আর ভেতরে মাসিক কোটি টাকার লক্ষ্য নিয়ে উৎপাদিত হচ্ছে পলিথিন। আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে শিপনের নিযুক্ত করা নজরদারী করা লোকজন। এই কারখানায় শিপন সুপার ১ নং কোয়ালিটি নামে উৎপাদিত পলিথিন ঈশ্বরদীসহ আশেপাশের পাবনা, নাটোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া জেলার উপজেলার হাট বাজার, শফিংমলে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আবাসিক এলাকার মধ্যে অবৈধভাবে পরিবেশ নষ্টকারী পলিথিন উৎপাদন করা হচ্ছে। এলাকার মাটির গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করলে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোকজন এসে কারখানা ঘুরে চলে যান। এরপর পলিথিন কারখানার মালিক শিপন আলী মালিথার লোকজন অভিযোগকারীদের উপর নির্যাতন চালান। এই কারণে ভয়ে এখন আর কেউ শিপন আলী মালিথার পলিথিন কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ভয় পান। কারণ স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে শিপন আলীর রয়েছে মাসিক চুক্তি। এই চুক্তির লেনদেনের কারণেই তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিশেষ সখ্যতা।
পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা শাখার সহকারী পরিচালকের কার্যালয় সুত্র জানায়, শিপন আলী মালিথা নামক এক ব্যক্তি শিপন এন্টারপ্রাইজের নামে গবাদি পশু হাঁস, মুরগি ও মাছের খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ( ফিড মিলস) লাইলনের বস্তার ভেতর ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত “ ইনার লাইনার” পলিথিন উৎপাদনের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। সেই ছাড়পত্র দেখিয়ে তিনি সবজি ও শপিং মলসহ দোকানপাটে ব্যবহার যোগ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন।
সুত্র মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন বন্ধের জন্য প্রায় প্রত্যেক বছরই অভিযান চালনা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতে জেল ও জরিমানা করা হয়। উৎপাদিত পলিথিন জব্দ ও কারখানা সিলগালা করা হয়। কিছুদিন পর আদালত থেকে জামিনে এসে আবার পলিথিন উৎপাদন করেন। এভাবেই তিনি পলিথিন উৎপাদন করে আসছেন।
পলিথিন কারখানার মালিক শিপন আলী মালিথা মুঠোফোনে জানান, পলিথিন উৎপাদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর শাখা থেকে ছাড়পত্র নেওয়া আছে। তার কারখানায় ছোট নয় বড় পলিথিন তৈরী করা হয়। ছোট পলিথিন তিনি ঢাকা থেকে কিনে আনে। সেই পলিথিন স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করেন বলে দাবী করেন শিপন আলী মালিথা।
তবে প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার মধ্যে নিজস্ব ঝামেলা থেকে তার পলিথিন কারখানাতে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়েছে দাবী করে শিপন আলী মালিথা জানান, তার কারখানায় পলিথিন উৎপাদনের ছাড়পত্র থাকায় অভিযানের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জব্দকৃত পলিথিন ফেরতও দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা শাখার পরিদর্শক জিএম নজরুল ইসলাম জানান, পলিথিন কারখানার মালিকের সঙ্গে মাসোয়ারার চুক্তির কারণে অভিযান চালানো হয় না, এটা সঠিক না। মুলত জনবলের সংকটের কারণেই নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনা শাখার সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হোসাইন জানান, ঈশ্বরদীতে শিপন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ফিড মিলের বস্তার ভিতরে থাকা বড় পলিথিন তৈরীর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি সেই ছাড়পত্র দেখিয়ে এখন  সরকারীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন করছেন। এই খবরটি জানা ছিলো না। এই বিষয়ে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত টিএম রাহসিন কবির জানান, ঈশ্বরদীতে ভূমির উর্বতা ও পরিবেশ নষ্টকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদনের বিষয়টি জানা ছিলো না। খোঁজ নিয়ে অবশ্যয় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে।
বা/খ: এসআর।