মালানের সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের জয়
- আপডেট সময় : ০৮:২০:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
- / ৪৪৯ বার পড়া হয়েছে
স্পোর্টস ডেস্ক :
কম রানের পুঁজি নিয়েও আশা জাগিয়েছিলো বাংলাদেশ। তবে পারলো না আর, বলা যায় বাংলাদেশকে পারতে দিলো না এক ডেভিড মালান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট ফেলে দিলেও টাইগার বোলারদের সামনে যেন ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মালান। চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ডেভিড মালান দলকে জয় উপহার দিলেন। ২১০ রানের টার্গেটে এক মালানের সেঞ্চুরিতেই ৮ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেটে টাইগারদের হারিয়ে সিরিজে শুভসূচনা করলো থ্রি লায়নসরা।
বুধবার (১ মার্চ) মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় সংগ্রহের আশা দেখিয়েও অল্পতেই থামে বাংলাদেশ। এক নাজমুল হোসেন শান্তর অর্ধশতকে ভর করে ইংল্যান্ডকে ২১০ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ।
অল্প পুঁজি নিয়ে শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। টাইগার অধিনায়ক শুরুতেই ভরসার জায়গা সাকিব আল হাসানকে দিয়ে ম্যাচ ওভার শুরু করান। সাকিব অবশ্য তার যোগ্য প্রমান করেছেন। প্রথম ওভারেই ব্রেক থ্রু এনে দেন।ওভারের প্রথম বলটিতেই পেতে পারতেন উইকেট। সাকিবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন জেসন রয়। তবে সেই ক্যাচটি সাকিব ধরে রাখতে পারেননি।
শেষ বলে আরও একবার ভুল করে বসেন রয়। এবার সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে ক্যাচ তুলে দেন ইংলিশ ওপেনার। তামিম ইকবাল ধরেন সেই ক্যাচ। এসে সাকিবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাতেন উদযাপনে। রয় আউট হন ৪ রানে। ৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
সাকিব প্রথম ওভারে আঘাত হানার পর অনেকটা সময় উইকেট টিকিয়ে রেখেছিল ইংল্যান্ড। অবশেষে নবম ওভারে এসে বাংলাদেশ শিবিরে হাসি ফেরান তাইজুল ইসলাম।
তাইজুলের ঘূর্ণি ডেলিভারি মিস করে লেগস্টাম্প হারান ফিল সল্ট। বোল্ড হওয়া ইংলিশ ওপেনার ১৯ বলে করেন ১২ রান। তাইজুল অল্প সময়ের ব্যবধানে তুলে নেন তার দ্বিতীয় উইকেট। বাঁহাতি স্পিনারের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে এবার স্টাম্পিং হন জেমস ভিন্স (৬)। ১৩তম ওভারে ৪৫ রানে ইংল্যান্ড হারায় ৩ উইকেট।
ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ১৭তম ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানান ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’। ১০ বলে ৯ রান করেই সাজঘরের পথ ধরেন বিপদজনক এই ব্যাটার।
৩৫ রানে ৪ ইকেট হারালেও বাংলাদেশের পথের কাটা হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন মালান, অভিষিক্ত উইল জ্যাকসের সঙ্গে মিলে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিতে থাকেন মালান। দুজন মিলে গড়েন ৩৮ রানের জুটি। অবশেষে ২৬তম ওভারে জ্যাকসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের আশা ফিরিয়ে আনেন মেহেদি মিরাজ। ৩১ বলে ২৬ করে ফিরে যান জ্যাকস।
তবে ক্রিজের অপর প্রান্ত আগলে রেখে ইংলিশদের হয়ে লড়াই করে সেতে থাকেন মালান,। তুলে নেনে নিজের অর্ধশতকও। মঈন আলীর সঙ্গে মিলে গড়েন আরেকটি জুটি। ৩৫ তম ওভারে মঈনকেও ১৪ রানে ফেরান মিরাজ। ১৪১ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
৩৯ তম ওভারে ইংল্যান্ডকে আরেকবার ধাক্কা দেন ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করা তাইজুল। ওভারের শেষ বলে মিড-অন দিয়ে চিপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় উপরে। ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ১৬১ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে আরও বিপদে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। তবে ইংলিশদের আশার প্রদীপ হয়ে ৮০ রান নিয়ে তখনও উইকেটে টিকে আছেন মালান।
অষ্টম উইকেট জুটিতে আদিল রশিদকে সঙ্গে নিয়ে ইংলিশদের জয়ের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন মালান। তাসকিনের করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে তাসকিনকে বাউন্ডারি ছাড়া করে নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। ১৩৪ বলে ৬ চার আর ৪ ছক্কায় তিন অংকে পৌঁছান বাংলাদেশকে হার উপহার দেওয়া এই ব্যাটার।
শেষ পর্যন্ত আদিল রশিদকে নিয়ে ৫১ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩ উইকেটের জয় এনে দিয়েই মাঠ ছাড়েন মালান। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়াইড মিড-অন দিয়ে শান্তকে বাউন্ডারি ছাড়া করে দলের জয় নিশ্চিত করেন মালান। ১৪৫ বলে ৮ চার আর ৪ ছক্কায় ১১৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। আদিল রশিদ করেন ২৯ বলে অপরাজিত ১৭ রান।
এদিকে দিনের প্রথমে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে থেকেই দেখে-শুনে খেলতে থাকেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে উইকেটের অপরপ্রান্তে থাকা আরেক ওপেনার লিটন দাসকে যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। সবশেষ ১৫ বলে ৭ রান করে ওকসের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মার্ক উডের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত-মুশফিকের ব্যাটে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করলেও দলীয় ৯৩ রানে মিস্টার ডিপেন্ডেবলের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
মাত্র ৮ রান করে মঈন আলীর বলে সাজঘরে ফিরেন সাকিব। পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শান্ত কিছুটা আশার আলো দেখালেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুজন।
৫৩ রানের জুটি ভাঙেন ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদ। নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক তুলে ৫৮ রানে সাজঘরে ফিরেন শান্ত। এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ফেরার পর ২৩ রানে আরও তিন উইকেট হারিয়ে দুইশর আগে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা।
শেষ দিকে তাসকিন-তাইজুলের ব্যাটে ২০০ রান পার করে বাংলাদেশ। ৪৮তম ওভারে ২০৯ রান তুলে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন শান্ত। ইংলিশদের হয়ে দুইটি করে উইকেট নেন মার্ক উড, আদিল রশিদ, মঈন আলী ও জফরা আর্চার।